সম্পাদকীয়
উন্নয়ন ও ভগবান
১৯৮০-৮১ সাল। বাবা-মায়ের হাত ধরে আমরা দুই ভাই গিয়েছিলাম কেদার-বদ্রী।কেদারনাথের পর বদ্রীতে যাওয়ার সময় যোশীমঠ ছাড়িয়ে রাস্তায় ভয়ঙ্কর ধস নামে। তিন দিন অপেক্ষার পর ফিরে আসতে বাধ্য হই।আজ আমার ভাই তার দুই সন্তানকে নিয়ে যখন আবার একই পথে যাবার কথা ভেবেছে তখন আর পথ নেই, বাস্তবিক এই মুহূর্তে উত্তরাখণ্ডে কিছুই অবশিষ্ট নেই । উত্তরাখণ্ড আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে বেশ কিছুদিন সময় নেবে । ধরে নেওয়া যায়, এবারের অনেকেই যারা ফিরে এসেছেন শিশুরা কেউ কেউ বাবাকে বলেছিলেন হয়তো ভগবানের ইচ্ছে ছিল না , কিন্তু পরে আবার যারা যাবেন তারাও যে এই মনুষ্যসৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্ঘটনার কবলে পড়বেন না সেই কথা আজ আর হলফ করে বলা যায় না।
পাঠক মাত্রই বুঝতে পারছেন আমি কোন দিকে ইঙ্গিত করছি। সেদিনের উত্তরপ্রদেশ,অধুনা উত্তরাখণ্ড এখন ১ কোটি মানুষের বাস,আর বছরে ২.৫ কোটি পর্যটক,এত চাপ কি ভগবানও নিতে পারেন?এই প্রসঙ্গে আরো কিছু জ্বলন্ত তথ্য উঠে আসছে।ভারতের ক্রম্পট্রোলার এণ্ড অডিটর জেনেরাল(CAG) গত এপ্রিল মাসেই জানিয়েছিলেন যে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের কোন DISASTER MANAGEMENT PLAN নেই।আজ সে রাজ্যের জেলাওয়াড়ী প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কর্মিসংখ্যার ৪৪% পদ শুন্য।বিগত ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের STATE DISASTER MANAGEMENT AUTHORITY তৈরী হয়েছিল,যাতে আজকের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়...আজ পর্যন্ত তাদের একটাও মিটিং হয় নি!!!কেন্দ্র বা রাজ্য,কোন সরকারই কোন পাহাড়ের জন্যই প্রয়োজনীয় ALL WEATHER PROOF রাস্তা বানাতে পারে নি,স্বাধীনতার ৬৬ বছর পরেও।
এহ বাহ্য!আজ উত্তরাখণ্ড রাজ্যের ১১ টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র,সরকারী,বেসরকারী বা আধা-সরকারী কিম্বা অধুনা প্রচলিত P.P.P(PRIVATE PUBLIC PARTNERSHIP) মডেলের, যেভাবে সুড়ংগ তৈরী করেছে পাহাড়কে ফাটিয়ে,তাতে ভূমিস্তর দুর্বল হতে বাধ্য।অথচ দিল্লী মেট্রো তৈরীর সময় এভাবে ভূতলকে ফাটাতে হয় নি।মজার কথা, এক চিত্র সংলগ্ন রাজ্য হিমাচল প্রদেশেও।গত শীতে শিমলার মত জেলায় এক মাসের মত বিদ্যুৎ ছিল না।বাকি জেলাগুলোর কথা থাক গে।রাজধানী দিল্লীর অবিশ্যি ঐ সময়ে বিদ্যুৎ পেতে কোনও অসুবিধা হয় নি।হিমাচলের (উদবৃত্ত )বিদ্যুৎ তো ছিলো।আজ আমরা মিডিয়ার দৌলতে পর্যটকদের কথাই ভাবি বা দেখি,কিন্তু পাহাড়ী মানুষ-জন,তাদের জন্য ভাবছি কি?আজ কটা লোক মরেছে আর কটা লোক স্রেফ ভ্যানিশ হয়ে গেল সেটা বোধ করি কাল নতুন কোন ইস্যুতে চাপা পড়ে যাবে। কার্যত,হড়পা বানের মত ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ে যে ভাবে পাহাড়ের পর পাহাড় ভেঙ্গে পড়ছে তাতে কিছু ত্রাণ বিলি বা বা উদ্ধারকাজের আড়ালে চলে যাবে মূল প্রশ্ন---এই উন্নয়ন,এত উন্নয়ন-- কার জন্য,কিসের জন্য??
পাঠককে মনে করাতে চাই যে আজ উন্নয়নের প্রশ্নে উত্তরাখণ্ড বা গুরগাঁও একই যায়গায় অবস্থান করছে।অপরিকল্পিত নগরায়ন,যথেচ্ছ সবুজের সংহার আর উন্নয়নের নামে ভূমিপুত্রদের উচ্ছেদ—আপনি আপনার দেশের বা রাজ্যের অন্যত্র একই চিত্র খুঁজে পাবেন,আমি নিশ্চিত।কাল তিস্তা বা তোর্সায় একই বিপদ হবে না, এটাও কেউ বলতে পারে না।ব্রাজিলের আমাজন অববাহিকায় কুখ্যাত “প্রজেক্ট পোলোনোরয়েস্তে”---RAIN FOREST(যেখানে বড় বড় গাছগুলো বাঁচে ও বাড়ে অত্যন্ত কম প্রাকৃতিক পুষ্টিতে) সাফ করে তৃণভূমি বানাও,ওই ঘাস খাইয়ে আমেরিকার খাবার জন্য ছাগল-ভেড়া চাষ করা হল,আর সেটা করতে গিয়ে দ্রুত ভূমিজ জলস্তর নেমে গেল,কারণ বড় গাছগুলো মাটির অনেক গভীরে শিকড় ঢুকিয়ে জল তুলতে পারতো,যা ঘাস বা গুল্ম পারে না।তাই আজ ঐ অঞ্চলে হাইওয়ের দুইধার মরুভূমি।আপনি আর আমি আজ ঠিক একই ভাবে উত্তরাখণ্ড রাজ্য,বা গোটা হিমালয়ভুক্ত বিভিন্ন রাজ্যের,অথবা বিশ্বায়িত হওয়ার দুর্দম বাসনারত গোটা ভারতবর্ষে উন্নয়নের নামে এই চুষে খাওয়াটা কি ধরতে পারছি?
আজ উত্তরাখণ্ডের বিপদে আমরা বিচলিত হয়ে কেউ চেক কাটছি প্রধানমন্ত্রীর রিলিফ ফাণ্ডে,কেউ টিভি দেখে হা-হুতাশ করছি,কেউ বা এত ভয়ঙ্কর বিপদেও কেদারনাথের মন্দিরটা বেঁচে যাওয়ায় ভগবানের লীলাকেই সাধুবাদ জানাচ্ছি—আমাদের মগজে কার্ফু—ধোঁকার টাটিটার কথা কেউ ভাবছি কি?
উন্নয়ন ও ভগবান
১৯৮০-৮১ সাল। বাবা-মায়ের হাত ধরে আমরা দুই ভাই গিয়েছিলাম কেদার-বদ্রী।কেদারনাথের পর বদ্রীতে যাওয়ার সময় যোশীমঠ ছাড়িয়ে রাস্তায় ভয়ঙ্কর ধস নামে। তিন দিন অপেক্ষার পর ফিরে আসতে বাধ্য হই।আজ আমার ভাই তার দুই সন্তানকে নিয়ে যখন আবার একই পথে যাবার কথা ভেবেছে তখন আর পথ নেই, বাস্তবিক এই মুহূর্তে উত্তরাখণ্ডে কিছুই অবশিষ্ট নেই । উত্তরাখণ্ড আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে বেশ কিছুদিন সময় নেবে । ধরে নেওয়া যায়, এবারের অনেকেই যারা ফিরে এসেছেন শিশুরা কেউ কেউ বাবাকে বলেছিলেন হয়তো ভগবানের ইচ্ছে ছিল না , কিন্তু পরে আবার যারা যাবেন তারাও যে এই মনুষ্যসৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্ঘটনার কবলে পড়বেন না সেই কথা আজ আর হলফ করে বলা যায় না।
পাঠক মাত্রই বুঝতে পারছেন আমি কোন দিকে ইঙ্গিত করছি। সেদিনের উত্তরপ্রদেশ,অধুনা উত্তরাখণ্ড এখন ১ কোটি মানুষের বাস,আর বছরে ২.৫ কোটি পর্যটক,এত চাপ কি ভগবানও নিতে পারেন?এই প্রসঙ্গে আরো কিছু জ্বলন্ত তথ্য উঠে আসছে।ভারতের ক্রম্পট্রোলার এণ্ড অডিটর জেনেরাল(CAG) গত এপ্রিল মাসেই জানিয়েছিলেন যে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের কোন DISASTER MANAGEMENT PLAN নেই।আজ সে রাজ্যের জেলাওয়াড়ী প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কর্মিসংখ্যার ৪৪% পদ শুন্য।বিগত ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের STATE DISASTER MANAGEMENT AUTHORITY তৈরী হয়েছিল,যাতে আজকের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়...আজ পর্যন্ত তাদের একটাও মিটিং হয় নি!!!কেন্দ্র বা রাজ্য,কোন সরকারই কোন পাহাড়ের জন্যই প্রয়োজনীয় ALL WEATHER PROOF রাস্তা বানাতে পারে নি,স্বাধীনতার ৬৬ বছর পরেও।
এহ বাহ্য!আজ উত্তরাখণ্ড রাজ্যের ১১ টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র,সরকারী,বেসরকারী বা আধা-সরকারী কিম্বা অধুনা প্রচলিত P.P.P(PRIVATE PUBLIC PARTNERSHIP) মডেলের, যেভাবে সুড়ংগ তৈরী করেছে পাহাড়কে ফাটিয়ে,তাতে ভূমিস্তর দুর্বল হতে বাধ্য।অথচ দিল্লী মেট্রো তৈরীর সময় এভাবে ভূতলকে ফাটাতে হয় নি।মজার কথা, এক চিত্র সংলগ্ন রাজ্য হিমাচল প্রদেশেও।গত শীতে শিমলার মত জেলায় এক মাসের মত বিদ্যুৎ ছিল না।বাকি জেলাগুলোর কথা থাক গে।রাজধানী দিল্লীর অবিশ্যি ঐ সময়ে বিদ্যুৎ পেতে কোনও অসুবিধা হয় নি।হিমাচলের (উদবৃত্ত )বিদ্যুৎ তো ছিলো।আজ আমরা মিডিয়ার দৌলতে পর্যটকদের কথাই ভাবি বা দেখি,কিন্তু পাহাড়ী মানুষ-জন,তাদের জন্য ভাবছি কি?আজ কটা লোক মরেছে আর কটা লোক স্রেফ ভ্যানিশ হয়ে গেল সেটা বোধ করি কাল নতুন কোন ইস্যুতে চাপা পড়ে যাবে। কার্যত,হড়পা বানের মত ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ে যে ভাবে পাহাড়ের পর পাহাড় ভেঙ্গে পড়ছে তাতে কিছু ত্রাণ বিলি বা বা উদ্ধারকাজের আড়ালে চলে যাবে মূল প্রশ্ন---এই উন্নয়ন,এত উন্নয়ন-- কার জন্য,কিসের জন্য??
পাঠককে মনে করাতে চাই যে আজ উন্নয়নের প্রশ্নে উত্তরাখণ্ড বা গুরগাঁও একই যায়গায় অবস্থান করছে।অপরিকল্পিত নগরায়ন,যথেচ্ছ সবুজের সংহার আর উন্নয়নের নামে ভূমিপুত্রদের উচ্ছেদ—আপনি আপনার দেশের বা রাজ্যের অন্যত্র একই চিত্র খুঁজে পাবেন,আমি নিশ্চিত।কাল তিস্তা বা তোর্সায় একই বিপদ হবে না, এটাও কেউ বলতে পারে না।ব্রাজিলের আমাজন অববাহিকায় কুখ্যাত “প্রজেক্ট পোলোনোরয়েস্তে”---RAIN FOREST(যেখানে বড় বড় গাছগুলো বাঁচে ও বাড়ে অত্যন্ত কম প্রাকৃতিক পুষ্টিতে) সাফ করে তৃণভূমি বানাও,ওই ঘাস খাইয়ে আমেরিকার খাবার জন্য ছাগল-ভেড়া চাষ করা হল,আর সেটা করতে গিয়ে দ্রুত ভূমিজ জলস্তর নেমে গেল,কারণ বড় গাছগুলো মাটির অনেক গভীরে শিকড় ঢুকিয়ে জল তুলতে পারতো,যা ঘাস বা গুল্ম পারে না।তাই আজ ঐ অঞ্চলে হাইওয়ের দুইধার মরুভূমি।আপনি আর আমি আজ ঠিক একই ভাবে উত্তরাখণ্ড রাজ্য,বা গোটা হিমালয়ভুক্ত বিভিন্ন রাজ্যের,অথবা বিশ্বায়িত হওয়ার দুর্দম বাসনারত গোটা ভারতবর্ষে উন্নয়নের নামে এই চুষে খাওয়াটা কি ধরতে পারছি?
আজ উত্তরাখণ্ডের বিপদে আমরা বিচলিত হয়ে কেউ চেক কাটছি প্রধানমন্ত্রীর রিলিফ ফাণ্ডে,কেউ টিভি দেখে হা-হুতাশ করছি,কেউ বা এত ভয়ঙ্কর বিপদেও কেদারনাথের মন্দিরটা বেঁচে যাওয়ায় ভগবানের লীলাকেই সাধুবাদ জানাচ্ছি—আমাদের মগজে কার্ফু—ধোঁকার টাটিটার কথা কেউ ভাবছি কি?
ক্ষেপচুরিয়াসের পক্ষে অরিন্দম চন্দ্র
১লা জুলাই ২০১৩
১লা জুলাই ২০১৩