সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৩

ধারাবাহিক - সুবীর সরকার

এপিটাফ
সুবীর সরকার



২৮।


ফাঁকা প্রান্তর থেকে মিছিল উঠে আসছে।মিছিলের শ্রেণিচরিত্র এক ধরনের পূর্ণতা পেয়ে গেলেও আসলে মিছিলটা ব্যাপ্ত হতে হতে বৃহত ব্যাপ্তি পেয়ে যায়।তখন বিস্তারের ভিতর সন্তর্পণে সাপ ও সর্পগাথা ঢুকে পাড়ে।ডানকানসাহেব তার ঘোড়াটিকে ছেড়ে দেবার পর ঘোড়াটি পুলকিত হয়...... ঘুড়ি হয়ে যেন উড়তে থাকে।ফাঁকা প্রান্তরে তখন আর মিছিলের চিহ্নটুকুও দেখা যায় না।মিছিল বড় কোনও হাটের চৌহদ্দি পেরিয়ে একটা কিংবদন্তি খুজতে থাকে।পিছনে পড়ে থাকে শস্য সবুজ জনভূমি ... ইতিহাসপিছল বন্দুক।বন্দুক এমনই যা পরম্পরাগত হাতবদলে ইতিমধ্যে খ্যাতমানতা পেয়ে গেছে।লোককথা অতিকথা এমনকি ঘুমপাড়ানি গানের গায়েও বারংবার আছড়ে পড়ে বন্দুকটি তার যাবতীয় ইতিহাস ভূগোল জনগল্প নিয়ে।অথচ ডানকানসাহেবের হারিয়ে যাওয়াটুকু অখন্ড সিল্যুয়েট হয়ে থাকে।আবার বৃষ্টির ভিতর দিয়েই একা একা সাহেব চলে যেতে থাকেন সাহেবপাতার হাটে।হাট কখনও জীবন থেকে ফুরোয় না।কেবল হাটের গল্প হাটমিছিল হাটপুরাণের অতিকথা ঘুরে ফিরে বর্ণময়তার গড়ানে নুড়িপাথরসহ প্রবাহিত হতে থাকে।


২৯।


যদি প্রিপ্রেক্ষিতটা কালখন্ড দিয়ে সাজানো থাকে ...যদি ধুলোবালির সংকীর্ণতা দিয়ে দুচারটি হাটবাস যায় আর মেঘের আবডাল থেকে পুরানো গল্পগুলি মাটিপৃথিবীতে খুব মায়াময়তাসহ ফিরতে থাকে ... ফিরতে থাকাটা সাময়িক এমন ভাবনা স্থির হবার কোনও ফুরসতই পায় না যদিও জলবাহিত এক ভূগোল উপচে ফকির বাবার কন্ঠে গান বাজে......
শামুক খাজারে আমার বাড়ি আয়/কুচি
কুচি শামুক দিমু/হলদি দিমু গায়.........
গান গড়াতে থাকে গান মেদুর হয়ে ওঠে আর মেদুরতার পিচ্ছিল সীমান্তে প্রাচীনজঙ্গল থেকে হাওয়া আসে,হাওয়াকলের নীচে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকে ডানকানের বাদামি অশ্ব আর তার ধবল পেশির শূন্যতাটুকু বাদলা মেঘ হয়ে ভেসে যেতে থাকে আন্দুবস্তির নারী ও নদীর দিকেই।পর্ব থেকে পর্বে যেতে গিয়ে বিস্তর হেঁটে বহুলতার মধ্য দিয়ে যেতে গিয়েও প্ররোচনাহীন অসহায়তার প্রাবল্য সত্ত্বেও ডানকান সাহেব – সাহেবের বন্দুক ঘোড়া এবং বিস্তারময়তার মধ্যে বারংবার এলোমেলো গল্প টুকরোগুলি ফিরে ফিরে আসে আর আবহমানতা থাকে বলেই ডানকানসাহেব আর সামান্যতম চরিত্রে না থেকে নতুন গল্পের খোঁজে হাহাকারের কোরাসের ভিতর ডুবে যেতে থাকে।কুয়াশা কাটলে নতুনতর কোনও কুয়াশায় ঘোড়াসহ ডানকান হারিয়ে যেতে থাকেন......স্বপ্নোচ্চারণের মতো তখন মনে হয় সবকিছু।


৩০।


চলা তো শেষ হয় না কখনও ডানকানসাহেবের ।অন্তত আজ অব্দি হয়নি।সামান্য বিরতির পর নিশ্চিত তিনি ছুটবেন।আপাতত বন্দুক নামিয়ে রাখুন তিনি বড়াইকবাড়ির উঠোনে।আর ঘোড়াটি ছেড়ে দিন অতিকথনের এক দুনিয়ায়।নদী ও হাটের ...হাট ও জঙ্গলের ...নাচ ও গানের পরিসীমায় আর পরিসীমাহীনতায় সাহেবের ভুমাত্রিক ঘোড়াটি আরও বহুমাত্রিকতায় ঢুকে যাক।ধীরে ধীরে সময় গড়াক ......রাত্রি হোক......বড়াইবাড়ির চারপাশে হাওয়া ও আগুনের ঢেউ উঠুক।উপসংহারের বদলে আমরা পুনর্বার ঢেউহীনতার কথা লিখি।আশ্চর্য গান ও গল্পের কথা লিখি।গল্প দীর্ঘকাল শুয়ে থাকবার পর হয়তো আড়মোড়া ভাঙবে......গুটিকতক হাই তুলবে ... তারপর যথারীতি ঢুকে পড়বে ঢেউহীনতার বিস্তারে।