সম্পাদকীয়
১৯০৫ সালে বড়লাট কার্জনের আদেশে প্রথমবার বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার পর সবচে' প্রকট প্রতিবাদ আসে পশ্চিম বাংলা থেকে। কার্জন জানত -"বাঙ্গালিরা নিজেদের এক মহাজাতি মনে করে এবং এক বাঙ্গালি বাবুকে লাট সাহেবের গদীতে বসাতে চায়। " বৃটিশ আমলা রিজলি স্বীকার করেছেন -"সংযুক্ত বাংলা শক্তিশালী, বিভক্ত বাংলা বিভিন্ন দিকে আকৃষ্ট হবে। " তাদের উদ্দেশ্য ছিল "বৃটিশ রাজত্বের বিরোধী একটি সুসংহত দলকে টুকরো করে দুর্বল করে দেওয়া।" যা তারা করেছেন ভীত আত্মায়। কিন্তু সাহসী ভুখন্ডের বিপ্লবী 'অরবিন্দ ঘোষ'রা ঠিকই ওদের কালো ইচ্ছা রহিত করেছেন। শুধু তাই নয় , পশ্চিম বাংলার সেই রুখে দাড়ানো থেকেই ভারত ছাড়তে ব্রিটিশদের বাধ্য করার শক্তি পরিনতি পেয়েছে। পরাক্রমশালী বঙ্গবাসীর তোপ থেকে বাঁচতেই চালাক ব্রিটিশরা বাংলাকে কলা দেখিয়ে বিভক্ত করে পঙ্গু করে দিয়েছে। সেদিন বঙ্গভঙ্গ রহিতের স্লোগানকে শক্তি যোগাতে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছেন "আমার সোনার বাংলা "র মত কালোত্তীর্ণ সংগীতের আগুন। হেমচন্দ্রের বানানো বোমা ক্ষুদিরাম বিস্ফোরিত করেছেন ,যা ভারত ইতিহাসের প্রথম।রদ হয়েছে প্রথম বঙ্গভঙ্গ ;কিন্তু ৪৭' এ কেমন একটা নিরবতার মাঝেই যেন আলাদা হয়ে গেলো দুই সহোদর ! বৈষম্য আষ্ঠে-পিষ্ঠে ধরেছিল জমিদারির লোভ আর শাসন করার কালো আনন্দে।মনের ভেতরই যেন পৃথক হওয়ার তাড়না সৃষ্টি হয়েছিল। দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশ হয়ে গেল একা। অগোচরেই পিছে চলে গেল ভাই হারানোর অভাব।
রাজনৈতিক প্যাঁচাল অফ দেই। বাংলা সাহিত্যে তখন সুদিনের সূর্য। ফুটফুটে নবসাহিত্যজাতকের আগমনী কান্নার আওয়াজ রণিত হচ্ছিল বঙ্গ ঘরের কোনা থেকে অনেক দূরতক। 'বন্দ্যোপাধ্যায়' , 'চট্টোপাধ্যায় 'দের নাম জ্বলজ্বল করতো সাহিত্য পাতায়। অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বললেন , “তৎকালীন সাহিত্য গুলোতে যত গুলো চরিত্র আছে তাদের নাম পাশাপাশি রেখে পরিসংখ্যান করলেই দেখা যাবে রাম শাম যদু মধুদের সংখ্যা কত আর রহিম করিমের চরিত্রের সংখ্যা কত।" এর বদৌলতে লাভ করছি আমরা পাকিস্তান হিন্দুস্তান। হায় কপাল !
কিন্তু বঙ্গসাহিত্যের মহীরুহরা ঠিকই ছায়া ঢেলেছেন অকুন্ঠভাবে সাম্প্রদায়িকতা ভুলে। নজরুল চষে বেরিয়েছেন দুই বাংলা কোনো সীমানার চিহ্ন দেখেন নি। রবীন্দ্রনাথ পূর্ব বাংলার গরিব প্রজাদের কষ্টগুলোকে শিল্পের আঁচরে গেঁথেছেন। জীবনানন্দ , বুদ্ধ দেব আর তারপরে সৈয়দ শামসুল হক, মলয় রায় চৌধুরী , সুমীর রায় চৌধুরী , কাজল চক্রবর্তী , হাসান আজিজুল হক, সনত্ কুমার সাহা , রফিকুর রশীদসহ প্রথিতযশা কবি সাহিত্যিকগণ।
আজকের তরুণ প্রজন্মের চোখ এঁদের পায়ের মুড়ালিতেই রাখতে চাইছেন, আর এই দৃষ্টিকে সর্বদা পাহারা দেওয়া ও একনিষ্ঠ রাখার দ্বায়িত্বটা পালন করে যাচ্ছেন কিছু কাঁশফুল হৃদয়ের মানুষ -কালিমাটির কাজল সেন , আদরের নৌকার অভিক দত্ত , অন্যনিষাদের ফাল্গুনী মুখার্জি , বাক'এর অনুপম মুখোপাধ্যায় , কবিতা পাক্ষিকের মুরারি সিংহ , অনুপ্রাননের সরসিজ আলিম , সৃষ্টির বি ভি রঞ্জন , উত্তরাধিকারের সরকার আমিন , রচয়িতার আরিফুল ইসলাম, দ্রোহের ফয়সল অভি'সহ অনেক সাহিত্য পাগল।
আর এই সখের পাগলামিতে যেন সামনে থেকে স্লোগান টানতেই ভালবাসেন কবিতার পাগলাগারদ ক্ষেপচুরিয়াস। দুই বাংলার সাহিত্যিকদের মিলন উত্সব করার জন্য খেটে যাচ্ছেন ক্ষেপুর কতগুলো ক্ষেপা। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই বিশেষ "বাংলাদেশ সংখ্যা "র আয়োজন। দুই বাংলার সাহিত্য পিয়াসীদের এক টেবিলে সাহিত্য পান করার নিমিত্তে। বাংলাদেশের সাহিত্যরূপ তুলে ধরার চেষ্টায় অতিসাম্প্রতিক তরুনদের লেখার প্রাধান্যতা পেয়েছে এ সংখ্যায় । মূলত আজকের কবিতা ও কবিতা ভাবনার চিত্র অংকনে ব্রত হয়েছি।
আরেকটু সময় অপচয়ের স্পর্ধা করি। একান্নবর্তী ভারত থেকে নতুন বসত গড়া বাংলাদেশ শৈশব ফেরিয়ে যুবকে পরিনত। তাঁর এক হাত ভাঁজ করে নূড়ি পাথর, অন্যটি ছুড়ে মারে দুরে। তাঁর এক কান শুনে সত্য আর অন্যটি মিথ্যা।সত্য-মিথ্যার সংকরে নতুন একটি ব্যাধির নাম অভিধানে যোগ হচ্ছে ,এটা প্রচন্ড গতিতে মহামারীর প্রতিশব্দে বদল পাচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা , ধর্মান্ধতা ,মূর্খতা ,স্বার্থবাদিতা'কে পুজি করে এক ঝাঁক ভেড়ার পাল উঠোনটাকে করে দিচ্ছে নোংরা । কোমরটা সোজা করতে করতেও নুয়ে পড়ছে পিচ্ছিল এই ভয়ানক কালো পথে।স্বাধীনতার চার দশক পরে আমজনতার পরম চাওয়া "যুদ্ধপরাধীর বিচার" চালাচ্ছে সরকার। হিংস্র হয়ে উঠছে ৭১'এর সেই নরপিশাশের দল আবার। বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয় করে সৃষ্টি করছে দুর্যোগ। সামনে বাংলাদেশের আরেকটি যুদ্ধ অপেক্ষমান। আজ আর বঙ্গবন্ধু নেই , কিন্তু আছে ভাই প্রতিম কলকাতা, যে পূর্বেও রোদ্রদুপুরের বটগাছ হয়েছিল। আরেকবার একই মিছিলে থাকি দুজন। বিশেষতঃ সাহিত্যিক সিপাহীরা , একেক করে ছুড়ে মার কলমের বারুদ। বাংলার আকাশ থেকে কুলক্ষী সূর্যগ্রহণ কে তাড়াতে আর কে হতে পারে এত বিশ্বস্ত!
বিশেষ বাংলাদেশ সংখ্যা
১৯০৫ সালে বড়লাট কার্জনের আদেশে প্রথমবার বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার পর সবচে' প্রকট প্রতিবাদ আসে পশ্চিম বাংলা থেকে। কার্জন জানত -"বাঙ্গালিরা নিজেদের এক মহাজাতি মনে করে এবং এক বাঙ্গালি বাবুকে লাট সাহেবের গদীতে বসাতে চায়। " বৃটিশ আমলা রিজলি স্বীকার করেছেন -"সংযুক্ত বাংলা শক্তিশালী, বিভক্ত বাংলা বিভিন্ন দিকে আকৃষ্ট হবে। " তাদের উদ্দেশ্য ছিল "বৃটিশ রাজত্বের বিরোধী একটি সুসংহত দলকে টুকরো করে দুর্বল করে দেওয়া।" যা তারা করেছেন ভীত আত্মায়। কিন্তু সাহসী ভুখন্ডের বিপ্লবী 'অরবিন্দ ঘোষ'রা ঠিকই ওদের কালো ইচ্ছা রহিত করেছেন। শুধু তাই নয় , পশ্চিম বাংলার সেই রুখে দাড়ানো থেকেই ভারত ছাড়তে ব্রিটিশদের বাধ্য করার শক্তি পরিনতি পেয়েছে। পরাক্রমশালী বঙ্গবাসীর তোপ থেকে বাঁচতেই চালাক ব্রিটিশরা বাংলাকে কলা দেখিয়ে বিভক্ত করে পঙ্গু করে দিয়েছে। সেদিন বঙ্গভঙ্গ রহিতের স্লোগানকে শক্তি যোগাতে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছেন "আমার সোনার বাংলা "র মত কালোত্তীর্ণ সংগীতের আগুন। হেমচন্দ্রের বানানো বোমা ক্ষুদিরাম বিস্ফোরিত করেছেন ,যা ভারত ইতিহাসের প্রথম।রদ হয়েছে প্রথম বঙ্গভঙ্গ ;কিন্তু ৪৭' এ কেমন একটা নিরবতার মাঝেই যেন আলাদা হয়ে গেলো দুই সহোদর ! বৈষম্য আষ্ঠে-পিষ্ঠে ধরেছিল জমিদারির লোভ আর শাসন করার কালো আনন্দে।মনের ভেতরই যেন পৃথক হওয়ার তাড়না সৃষ্টি হয়েছিল। দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশ হয়ে গেল একা। অগোচরেই পিছে চলে গেল ভাই হারানোর অভাব।
রাজনৈতিক প্যাঁচাল অফ দেই। বাংলা সাহিত্যে তখন সুদিনের সূর্য। ফুটফুটে নবসাহিত্যজাতকের আগমনী কান্নার আওয়াজ রণিত হচ্ছিল বঙ্গ ঘরের কোনা থেকে অনেক দূরতক। 'বন্দ্যোপাধ্যায়' , 'চট্টোপাধ্যায় 'দের নাম জ্বলজ্বল করতো সাহিত্য পাতায়। অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বললেন , “তৎকালীন সাহিত্য গুলোতে যত গুলো চরিত্র আছে তাদের নাম পাশাপাশি রেখে পরিসংখ্যান করলেই দেখা যাবে রাম শাম যদু মধুদের সংখ্যা কত আর রহিম করিমের চরিত্রের সংখ্যা কত।" এর বদৌলতে লাভ করছি আমরা পাকিস্তান হিন্দুস্তান। হায় কপাল !
কিন্তু বঙ্গসাহিত্যের মহীরুহরা ঠিকই ছায়া ঢেলেছেন অকুন্ঠভাবে সাম্প্রদায়িকতা ভুলে। নজরুল চষে বেরিয়েছেন দুই বাংলা কোনো সীমানার চিহ্ন দেখেন নি। রবীন্দ্রনাথ পূর্ব বাংলার গরিব প্রজাদের কষ্টগুলোকে শিল্পের আঁচরে গেঁথেছেন। জীবনানন্দ , বুদ্ধ দেব আর তারপরে সৈয়দ শামসুল হক, মলয় রায় চৌধুরী , সুমীর রায় চৌধুরী , কাজল চক্রবর্তী , হাসান আজিজুল হক, সনত্ কুমার সাহা , রফিকুর রশীদসহ প্রথিতযশা কবি সাহিত্যিকগণ।
আজকের তরুণ প্রজন্মের চোখ এঁদের পায়ের মুড়ালিতেই রাখতে চাইছেন, আর এই দৃষ্টিকে সর্বদা পাহারা দেওয়া ও একনিষ্ঠ রাখার দ্বায়িত্বটা পালন করে যাচ্ছেন কিছু কাঁশফুল হৃদয়ের মানুষ -কালিমাটির কাজল সেন , আদরের নৌকার অভিক দত্ত , অন্যনিষাদের ফাল্গুনী মুখার্জি , বাক'এর অনুপম মুখোপাধ্যায় , কবিতা পাক্ষিকের মুরারি সিংহ , অনুপ্রাননের সরসিজ আলিম , সৃষ্টির বি ভি রঞ্জন , উত্তরাধিকারের সরকার আমিন , রচয়িতার আরিফুল ইসলাম, দ্রোহের ফয়সল অভি'সহ অনেক সাহিত্য পাগল।
আর এই সখের পাগলামিতে যেন সামনে থেকে স্লোগান টানতেই ভালবাসেন কবিতার পাগলাগারদ ক্ষেপচুরিয়াস। দুই বাংলার সাহিত্যিকদের মিলন উত্সব করার জন্য খেটে যাচ্ছেন ক্ষেপুর কতগুলো ক্ষেপা। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই বিশেষ "বাংলাদেশ সংখ্যা "র আয়োজন। দুই বাংলার সাহিত্য পিয়াসীদের এক টেবিলে সাহিত্য পান করার নিমিত্তে। বাংলাদেশের সাহিত্যরূপ তুলে ধরার চেষ্টায় অতিসাম্প্রতিক তরুনদের লেখার প্রাধান্যতা পেয়েছে এ সংখ্যায় । মূলত আজকের কবিতা ও কবিতা ভাবনার চিত্র অংকনে ব্রত হয়েছি।
আরেকটু সময় অপচয়ের স্পর্ধা করি। একান্নবর্তী ভারত থেকে নতুন বসত গড়া বাংলাদেশ শৈশব ফেরিয়ে যুবকে পরিনত। তাঁর এক হাত ভাঁজ করে নূড়ি পাথর, অন্যটি ছুড়ে মারে দুরে। তাঁর এক কান শুনে সত্য আর অন্যটি মিথ্যা।সত্য-মিথ্যার সংকরে নতুন একটি ব্যাধির নাম অভিধানে যোগ হচ্ছে ,এটা প্রচন্ড গতিতে মহামারীর প্রতিশব্দে বদল পাচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা , ধর্মান্ধতা ,মূর্খতা ,স্বার্থবাদিতা'কে পুজি করে এক ঝাঁক ভেড়ার পাল উঠোনটাকে করে দিচ্ছে নোংরা । কোমরটা সোজা করতে করতেও নুয়ে পড়ছে পিচ্ছিল এই ভয়ানক কালো পথে।স্বাধীনতার চার দশক পরে আমজনতার পরম চাওয়া "যুদ্ধপরাধীর বিচার" চালাচ্ছে সরকার। হিংস্র হয়ে উঠছে ৭১'এর সেই নরপিশাশের দল আবার। বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয় করে সৃষ্টি করছে দুর্যোগ। সামনে বাংলাদেশের আরেকটি যুদ্ধ অপেক্ষমান। আজ আর বঙ্গবন্ধু নেই , কিন্তু আছে ভাই প্রতিম কলকাতা, যে পূর্বেও রোদ্রদুপুরের বটগাছ হয়েছিল। আরেকবার একই মিছিলে থাকি দুজন। বিশেষতঃ সাহিত্যিক সিপাহীরা , একেক করে ছুড়ে মার কলমের বারুদ। বাংলার আকাশ থেকে কুলক্ষী সূর্যগ্রহণ কে তাড়াতে আর কে হতে পারে এত বিশ্বস্ত!
ক্ষেপচুরিয়াসের পক্ষে পাভেল আল ইমরান
বিভাগীয় সম্পাদক,সাহিত্য পাতা
মাসিক বিচরণ,মালেশিয়া।
বিভাগীয় সম্পাদক,সাহিত্য পাতা
মাসিক বিচরণ,মালেশিয়া।