শিরোনামহীন
হাসনাত শোয়েব
সুইসাইড নোটের উপর ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে একটুখানি মদ গিলে ফেলি। মদ খেলে আমার হজমে সমস্যা হয়, দুদিন ধরে চোখে সর্ষে ফুল ছাড়া আর কিছুই দেখিনা। সেই সর্ষে ফুল দেখার সময়টুকুতে আমি প্রেমে পড়েছিলাম, গভীরতর সেই প্রেম। যেইসব প্রেমের ভিতর বাঘ লুকিয়ে থাকে। বাঘ আমি ভয় পাইনা যা কখনো দেখিনি তাকে ভয় পাব কেন?
সবার মধ্যে একটা গোপন ব্রিজ থাকে। আমারো আছে। মন খারাপের দিনগুলোতে আমি সেই ব্রিজে গিয়ে বসে থাকতাম। রাধাচূড়ার ফুল গুনে গুনে অপেক্ষা করতাম অদৃশ্য সেই বাঘের। সন্ধ্যা হলে বাড়ি ফিরে আসতাম। এইভাবে প্রতিদিন যেতাম। ছোট ছোট বাচ্চারা এসে আমকে দেখে যেত। তাদের খুব আনন্দিত দেখাত। একদিন একজনকে ডেকে জানতে চাইলাম - কি দেখ তোমরা?
-আপনাকে দেখি।
-আমাকে কেন দেখ?
- আপনি দেখতে বাঘের মত, তাই দেখি।
পরদিন থেকে আমি মুখোশ লাগিয়ে ব্রিজে যেতাম। দূরে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের কাঁদতে দেখি। এরপর থেকে কখনো তারা আর আসেনি। আমি যেতাম তারপরও যদি কোনো একদিন বাঘ আসে।
মায়ের ফোন আসত প্রায়-কিরে তুই বাড়ি আসবিনা?
-আসব মা, সামনের বন্ধেই আসব। অফিসে ভীষণ চাপ। তারা ব্যবসা ছাড়া কিছুই বুঝেনা। জানো মা, একদিন বইয়ের ভাঁজে আমি একফোঁটা রক্ত লাগিয়ে দিয়েছি। বইটি লজ্জায় মুখ ঢেকেছিল।
-কি আবোল তাবোল বকছিস। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। তোর চাকরি করা লাগবেনা।
আমি হাসতে হাসতে ফোন কেটে দিই। জানি মা কয়েকদিন ঘুমাতে পারবেনা। একে ওকে ফোন করবে, আমাকে দেখে রাখতে বলবে। মা জানে ছোট বেলা থেকেই আমি একটু এইরকম। সবকিছু ছেড়ে যাবার দিনে মা শুধু আমাকে ছেড়ে যায়নি। হয়ত মায়ের জন্যই আমি নিজেকে ছাড়তে পারিনি।
আমি রেগে গিয়েছিলাম- তুই স্বার্থপর কনক। ভীষণ রকম স্বার্থপর। নিজেকে রক্ষা করতে তুই আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিস। সেদিন আমি মরে গেলে কিচ্ছুটি যেত আসত না। বিনু আমাকে এখনো ক্ষমা করতে পারেনি। সামনে গেলে ভয়ঙ্কর ঘৃণা নিয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। শুনেছি সে নাকি কাকে বলেছিল আমি নাকি পিশাচ। যে আমার সাথে থাকে তাকে আমি খেয়ে ফেলি।
কথাগুলো শুনে কনক ধির পায়ে বেরিয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। উঠে গিয়ে মানিপ্ল্যান্টের গায়ে হাত ভুলিয়ে দিই। মনে হল সেটিও কাঁদছে। পড়ে শুনেছি গভির রাতে মানিপ্ল্যান্টও কাঁদে। কিসের দুঃখ তার? কখনো বুঝিনি। কাঁদুক! দুঃখ পেলে খানিকটা কেঁদে নেওয়া ভাল। মানুষ তো কাঁদতে ভুলে গেছে। আমার মনে হতে থাকে যেদিন মানুষ পুরোপুরি কাঁদতে ভুলে যাবে সেদিন থেকে সেদিন থেকে আর কেউ চোখে দেখবেনা। চোখ তো কাঁদার জন্যই নাকি?
কদিন আগে বাসে যাওয়ার সময় এক পকেটমার ধরা পড়েছিল। সবাই ইচ্ছামত পিটিয়েছিল। আমিও ছিলাম। এক লোকের ঘুষিতে তার ঠোঁট কেটে রক্ত সহ মাংস আমার মুখে ঢুকে গিয়েছিল। এই প্রথম নরমাংসের স্বাদ পেলাম। তারপর নিজেকে হরর মুভির ড্রাকুলা মনে হতে থাকে। বিনুর পিশাচ ডাকার কথাও মনে পড়ে।
ইদানিং বাইরে খুব একটা বেরুইনা। ব্রিজে যাওয়াও বন্ধ অনেকদিন।সারা শরীরে লোম গজিয়ে উঠছে। চোখ ঠোঁটের কাছাকাছি, ঠোঁট বুকের কাছাকাছি। সুইসাইড নোট, মদ, সর্ষে ফুল অনবরত পঁয়ত্রিশ বার ক্রীতদাস -ক্রীতদাসীর গল্প।
সারা শরীরে লোম গজিয়ে উঠছে। চোখ ঠোঁটের কাছাকাছি, ঠোঁট
বুকের কাছাকাছি। সুইসাইড নোট, মদ, সর্ষে ফুল অনবরত পঁয়ত্রিশ বার ক্রীতদাস -ক্রীতদাসীর গল্প।
সেদিন কনক আবার এসেছিল ঘুমের মধ্যে- তোকে বাঁচাতে আমি মরে গিয়েছিলাম। সেদিন যদি তোর হাত ধরে আমি টান না দিতাম তুই নিশ্চিত মরে যেতিস। অথচ তুই আমাকে একটুও মনে রাখিসনি।
পরদিন থেকে আমি মুখোশ লাগিয়ে ব্রিজে যেতাম। দূরে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের কাঁদতে দেখি। এরপর থেকে ...
সুইসাইড নোটের উপর ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে একটুখানি মদ গিলে ফেলি। মদ খেলে আমার হজমে সমস্যা হয়, দুদিন ধরে চোখে সর্ষে ফুল ছাড়া আর কিছুই দেখিনা। সেই সর্ষে ফুল দেখার সময়টুকুতে আমি প্রেমে পড়েছিলাম, গভীরতর সেই প্রেম। যেইসব প্রেমের ভিতর বাঘ লুকিয়ে থাকে। বাঘ আমি ভয় পাইনা যা কখনো দেখিনি তাকে ভয় পাব কেন?
সবার মধ্যে একটা গোপন ব্রিজ থাকে। আমারো আছে। মন খারাপের দিনগুলোতে আমি সেই ব্রিজে গিয়ে বসে থাকতাম। রাধাচূড়ার ফুল গুনে গুনে অপেক্ষা করতাম অদৃশ্য সেই বাঘের। সন্ধ্যা হলে বাড়ি ফিরে আসতাম। এইভাবে প্রতিদিন যেতাম। ছোট ছোট বাচ্চারা এসে আমকে দেখে যেত। তাদের খুব আনন্দিত দেখাত। একদিন একজনকে ডেকে জানতে চাইলাম - কি দেখ তোমরা?
-আপনাকে দেখি।
-আমাকে কেন দেখ?
- আপনি দেখতে বাঘের মত, তাই দেখি।
পরদিন থেকে আমি মুখোশ লাগিয়ে ব্রিজে যেতাম। দূরে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের কাঁদতে দেখি। এরপর থেকে কখনো তারা আর আসেনি। আমি যেতাম তারপরও যদি কোনো একদিন বাঘ আসে।
মায়ের ফোন আসত প্রায়-কিরে তুই বাড়ি আসবিনা?
-আসব মা, সামনের বন্ধেই আসব। অফিসে ভীষণ চাপ। তারা ব্যবসা ছাড়া কিছুই বুঝেনা। জানো মা, একদিন বইয়ের ভাঁজে আমি একফোঁটা রক্ত লাগিয়ে দিয়েছি। বইটি লজ্জায় মুখ ঢেকেছিল।
-কি আবোল তাবোল বকছিস। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। তোর চাকরি করা লাগবেনা।
আমি হাসতে হাসতে ফোন কেটে দিই। জানি মা কয়েকদিন ঘুমাতে পারবেনা। একে ওকে ফোন করবে, আমাকে দেখে রাখতে বলবে। মা জানে ছোট বেলা থেকেই আমি একটু এইরকম। সবকিছু ছেড়ে যাবার দিনে মা শুধু আমাকে ছেড়ে যায়নি। হয়ত মায়ের জন্যই আমি নিজেকে ছাড়তে পারিনি।
আমি রেগে গিয়েছিলাম- তুই স্বার্থপর কনক। ভীষণ রকম স্বার্থপর। নিজেকে রক্ষা করতে তুই আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিস। সেদিন আমি মরে গেলে কিচ্ছুটি যেত আসত না। বিনু আমাকে এখনো ক্ষমা করতে পারেনি। সামনে গেলে ভয়ঙ্কর ঘৃণা নিয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। শুনেছি সে নাকি কাকে বলেছিল আমি নাকি পিশাচ। যে আমার সাথে থাকে তাকে আমি খেয়ে ফেলি।
কথাগুলো শুনে কনক ধির পায়ে বেরিয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। উঠে গিয়ে মানিপ্ল্যান্টের গায়ে হাত ভুলিয়ে দিই। মনে হল সেটিও কাঁদছে। পড়ে শুনেছি গভির রাতে মানিপ্ল্যান্টও কাঁদে। কিসের দুঃখ তার? কখনো বুঝিনি। কাঁদুক! দুঃখ পেলে খানিকটা কেঁদে নেওয়া ভাল। মানুষ তো কাঁদতে ভুলে গেছে। আমার মনে হতে থাকে যেদিন মানুষ পুরোপুরি কাঁদতে ভুলে যাবে সেদিন থেকে সেদিন থেকে আর কেউ চোখে দেখবেনা। চোখ তো কাঁদার জন্যই নাকি?
কদিন আগে বাসে যাওয়ার সময় এক পকেটমার ধরা পড়েছিল। সবাই ইচ্ছামত পিটিয়েছিল। আমিও ছিলাম। এক লোকের ঘুষিতে তার ঠোঁট কেটে রক্ত সহ মাংস আমার মুখে ঢুকে গিয়েছিল। এই প্রথম নরমাংসের স্বাদ পেলাম। তারপর নিজেকে হরর মুভির ড্রাকুলা মনে হতে থাকে। বিনুর পিশাচ ডাকার কথাও মনে পড়ে।
ইদানিং বাইরে খুব একটা বেরুইনা। ব্রিজে যাওয়াও বন্ধ অনেকদিন।সারা শরীরে লোম গজিয়ে উঠছে। চোখ ঠোঁটের কাছাকাছি, ঠোঁট বুকের কাছাকাছি। সুইসাইড নোট, মদ, সর্ষে ফুল অনবরত পঁয়ত্রিশ বার ক্রীতদাস -ক্রীতদাসীর গল্প।
সারা শরীরে লোম গজিয়ে উঠছে। চোখ ঠোঁটের কাছাকাছি, ঠোঁট
বুকের কাছাকাছি। সুইসাইড নোট, মদ, সর্ষে ফুল অনবরত পঁয়ত্রিশ বার ক্রীতদাস -ক্রীতদাসীর গল্প।
সেদিন কনক আবার এসেছিল ঘুমের মধ্যে- তোকে বাঁচাতে আমি মরে গিয়েছিলাম। সেদিন যদি তোর হাত ধরে আমি টান না দিতাম তুই নিশ্চিত মরে যেতিস। অথচ তুই আমাকে একটুও মনে রাখিসনি।
পরদিন থেকে আমি মুখোশ লাগিয়ে ব্রিজে যেতাম। দূরে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের কাঁদতে দেখি। এরপর থেকে ...
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন