সম্পাদকীয়
বিশ্বের এই বৃহত্তম গণতন্ত্রের দশা মোট ছেষট্টি বছরে যা হয়েছে, তা আশা করি স্বাধীনতার সময় কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। আজ, এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে একটি অসহযোগ আন্দোলন অথবা একটি ভারত ছাড়ো আন্দোলন হয়তো তখনকার থেকে ছেষট্টি গুণ কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সাথে এদেশের অর্থনীতি ঔপনিবেশিকতার গ্রাসে ছেষট্টি গুণ বেশী বন্দী। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম ছেষট্টি গুণ বেড়ে গিয়েছে। বিশ্বমুদ্রা ইউ. এস. ডলার ভারতীয় টাকার ছেষট্টি গুণ হয়ে যাবে অচিরেই। মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে গল্পমালা তো আঙুলেই রইল জপবন্দী হয়ে ! এ এমন এক অদ্ভূত দেশ, যেখানে দড়মার বেড়া আর খড় থেকে শুরু করে প্লাস্টিক পেন্ট পর্যন্ত সবই বাড়িঘর বানানোর কাজে লাগে। যত লোক ছাতের তলায় শোয়, তার প্রায় সমান বা আরো বেশী লোক আকাশের তলায় ! লিখতে লিখতেই হঠাৎ মনে পড়ে গেল, একবার কালিপূজোর মেলায় বাবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে পায়ের কাছে চোখে পড়ল, একটি ইঁটের উনুনে চাপানো কড়াই। বাবা আঙুল তুলে দেখাচ্ছেন, ‘দেখো বাবু, কি অভাগা দেশ ! একদিকে ফাস্ট ফুড কর্ণার, লোকে মহার্ঘ্য সব খাবার কিনে খাচ্ছে। আর তারই পাশে মহিলা আলুসেদ্ধ বিক্রি করে অন্নসংস্থান করতে বসেছেন।’ আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি, সেদিন মহিলা কি সেদ্ধ করছিলেন। আলু সেদ্ধ কি কেউ রাস্তায় পয়সা দিয়ে কেনে নাকি ? জানি, এই প্রশ্ন আদৌ নীরিহ নয় ! অর্থনীতি কান টেনে বলবে, ওই মহিলার মূলধন দিয়ে চাউমিন কর্নার বানানো যায়না, আলুসেদ্ধ-ই যায় ! কিন্তু, ছেষট্টি বছর পরেও এই যে তথাকথিত বৈষম্য চাক্ষুষ করছে এক কিশোর, তার শৈশবটিই তো এসব দৃশ্য দ্বারা সিজন্ড হয়ে গেল ! বড় হয়ে এই সহ্যক্ষমতা আমি পাচার করে দিচ্ছি আমার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে, এভাবেই চেন রিয়্যাকশনে সর্বংসহা হচ্ছে দেশ !
ক্ষেপচুরিয়াস গ্রুপ সারা বিশ্বের কবিতাপ্রিয় বাঙালীর খেলাঘর। তবু, ছেষট্টি আগে স্বাধীন হওয়া এই ভূখণ্ডে বসে যখন ক্ষেপচুরিয়ান্ ভারতের স্বাধীনতাদিবস সংখ্যার সম্পাদকীয় লিখছি, তখন শিহরন বইছেই মনে মনে। এহ বাহ্য, দুহাজার তেরো সনের ক্ষেপু ব্লগ অন্যান্য কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সাধের ক্ষেপচুরিয়াস আজ মুদ্রিতরূপে সেজে উঠেছে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটি ক্ষেপুর কাছে এ এক বিরাট খবর ! অনেক পরিশ্রম, অনেক মানঅভিমানে চয়িত এই গ্রুপের সর্বাঙ্গ যদিও, অনেকাংশে ধন্যবাদ রাখে, সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে – প্রতিটি ক্ষেপু কাছেই। এই স্বাধীনতা দিবসেই ক্ষেপচুরিয়াস প্রিন্টম্যাগ প্রকাশ হচ্ছে, আশা করা যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।
স্বাধীনতাদিবসে বিশেষ গদ্য সংখ্যা রাখা হল। বাছাই করে নয়, পুরোপুরি আমন্ত্রণের ভিত্তিতে ছোট গল্প, প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এই সংখ্যার জন্য। প্রতিটি লেখার নির্যাস, বলাই বাহুল্য, পনেরোই আগস্ট ! একই সাথে, এই সংখ্যা থেকে শুরু হল একটি নতুন বিভাগ, “হৃত বিস্মৃত হৃদবিধৃত”। বরনীয় বাংলা কবিদের কবিতায় স্মরণ করব আমরা, প্রতি সংখ্যায়, এই বিভাগে।
অলমতি বিস্তারেন, লেখারা নিজেদের কথা নিজেরাই বলবে। একটি প্রায়-অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে শেষ করি।
মফঃস্বল তো মফঃস্বলই থেকে যায় ! আজ নৈহাটী শহরে “এস্থেটিক” নামে একটি নতুন নাট্যদল আত্মপ্রকাশ করল। প্রথম উপস্থাপনা তাদের নিজস্ব একটি একাঙ্ক – ‘সাজানো নয়’। ‘সাজানো ঘটনা’ শব্দবন্ধটি ইদানিং বাংলার খবরবুভূক্ষু জনতা খুব খেয়েছে। খুব মোটা দাগের একটি পথনাটক, থার্ড থিয়েটারের দর্শক-অভিনেতা সংযোগের আদর্শ কারিকুরিসহ প্রসেনিয়ামে মঞ্চস্থ হল এবং অবধারিত হাততালি পেল প্রচুর। সমস্যা সেখানে নয় ! কথা হচ্ছে, এত ব্যাপকভাবে গণসংস্কৃতির স্রোত ধাবিত হতে বাধ্য হয় ধর্ষনের বিরোধীতা করতে, নারীনির্যাতন রুখতে। অশীতিপর কবিসাহিত্যিককে রাস্তায় নামতে হয় নারীর অসম্মানের প্রতিবাদ করতে ! এবং সেজন্যে তার নিন্দা করেও রীতিমত দৈনীকের সম্পাদকীয়, উত্তর-সম্পাদকীয় লেখা হয় ! এসব কথা যখন স্থির হয়ে ভাবতে বসি, প্রতিবাদ নয়, ঘৃণা নয়, একদলা লজ্জ্বা উঠে এসে বাকরুদ্ধ করে ! তখন মনে হয় – এ সমাজের আর কি অবশিষ্ট আছে, যে এখানে বসে এখনো সাহিত্যচর্চা ফলপ্রসূ হবে ?
বিশেষ গদ্য সংখ্যা
বিশ্বের এই বৃহত্তম গণতন্ত্রের দশা মোট ছেষট্টি বছরে যা হয়েছে, তা আশা করি স্বাধীনতার সময় কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। আজ, এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে একটি অসহযোগ আন্দোলন অথবা একটি ভারত ছাড়ো আন্দোলন হয়তো তখনকার থেকে ছেষট্টি গুণ কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সাথে এদেশের অর্থনীতি ঔপনিবেশিকতার গ্রাসে ছেষট্টি গুণ বেশী বন্দী। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম ছেষট্টি গুণ বেড়ে গিয়েছে। বিশ্বমুদ্রা ইউ. এস. ডলার ভারতীয় টাকার ছেষট্টি গুণ হয়ে যাবে অচিরেই। মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে গল্পমালা তো আঙুলেই রইল জপবন্দী হয়ে ! এ এমন এক অদ্ভূত দেশ, যেখানে দড়মার বেড়া আর খড় থেকে শুরু করে প্লাস্টিক পেন্ট পর্যন্ত সবই বাড়িঘর বানানোর কাজে লাগে। যত লোক ছাতের তলায় শোয়, তার প্রায় সমান বা আরো বেশী লোক আকাশের তলায় ! লিখতে লিখতেই হঠাৎ মনে পড়ে গেল, একবার কালিপূজোর মেলায় বাবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে পায়ের কাছে চোখে পড়ল, একটি ইঁটের উনুনে চাপানো কড়াই। বাবা আঙুল তুলে দেখাচ্ছেন, ‘দেখো বাবু, কি অভাগা দেশ ! একদিকে ফাস্ট ফুড কর্ণার, লোকে মহার্ঘ্য সব খাবার কিনে খাচ্ছে। আর তারই পাশে মহিলা আলুসেদ্ধ বিক্রি করে অন্নসংস্থান করতে বসেছেন।’ আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনি, সেদিন মহিলা কি সেদ্ধ করছিলেন। আলু সেদ্ধ কি কেউ রাস্তায় পয়সা দিয়ে কেনে নাকি ? জানি, এই প্রশ্ন আদৌ নীরিহ নয় ! অর্থনীতি কান টেনে বলবে, ওই মহিলার মূলধন দিয়ে চাউমিন কর্নার বানানো যায়না, আলুসেদ্ধ-ই যায় ! কিন্তু, ছেষট্টি বছর পরেও এই যে তথাকথিত বৈষম্য চাক্ষুষ করছে এক কিশোর, তার শৈশবটিই তো এসব দৃশ্য দ্বারা সিজন্ড হয়ে গেল ! বড় হয়ে এই সহ্যক্ষমতা আমি পাচার করে দিচ্ছি আমার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে, এভাবেই চেন রিয়্যাকশনে সর্বংসহা হচ্ছে দেশ !
ক্ষেপচুরিয়াস গ্রুপ সারা বিশ্বের কবিতাপ্রিয় বাঙালীর খেলাঘর। তবু, ছেষট্টি আগে স্বাধীন হওয়া এই ভূখণ্ডে বসে যখন ক্ষেপচুরিয়ান্ ভারতের স্বাধীনতাদিবস সংখ্যার সম্পাদকীয় লিখছি, তখন শিহরন বইছেই মনে মনে। এহ বাহ্য, দুহাজার তেরো সনের ক্ষেপু ব্লগ অন্যান্য কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সাধের ক্ষেপচুরিয়াস আজ মুদ্রিতরূপে সেজে উঠেছে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটি ক্ষেপুর কাছে এ এক বিরাট খবর ! অনেক পরিশ্রম, অনেক মানঅভিমানে চয়িত এই গ্রুপের সর্বাঙ্গ যদিও, অনেকাংশে ধন্যবাদ রাখে, সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে – প্রতিটি ক্ষেপু কাছেই। এই স্বাধীনতা দিবসেই ক্ষেপচুরিয়াস প্রিন্টম্যাগ প্রকাশ হচ্ছে, আশা করা যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।
স্বাধীনতাদিবসে বিশেষ গদ্য সংখ্যা রাখা হল। বাছাই করে নয়, পুরোপুরি আমন্ত্রণের ভিত্তিতে ছোট গল্প, প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এই সংখ্যার জন্য। প্রতিটি লেখার নির্যাস, বলাই বাহুল্য, পনেরোই আগস্ট ! একই সাথে, এই সংখ্যা থেকে শুরু হল একটি নতুন বিভাগ, “হৃত বিস্মৃত হৃদবিধৃত”। বরনীয় বাংলা কবিদের কবিতায় স্মরণ করব আমরা, প্রতি সংখ্যায়, এই বিভাগে।
অলমতি বিস্তারেন, লেখারা নিজেদের কথা নিজেরাই বলবে। একটি প্রায়-অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে শেষ করি।
মফঃস্বল তো মফঃস্বলই থেকে যায় ! আজ নৈহাটী শহরে “এস্থেটিক” নামে একটি নতুন নাট্যদল আত্মপ্রকাশ করল। প্রথম উপস্থাপনা তাদের নিজস্ব একটি একাঙ্ক – ‘সাজানো নয়’। ‘সাজানো ঘটনা’ শব্দবন্ধটি ইদানিং বাংলার খবরবুভূক্ষু জনতা খুব খেয়েছে। খুব মোটা দাগের একটি পথনাটক, থার্ড থিয়েটারের দর্শক-অভিনেতা সংযোগের আদর্শ কারিকুরিসহ প্রসেনিয়ামে মঞ্চস্থ হল এবং অবধারিত হাততালি পেল প্রচুর। সমস্যা সেখানে নয় ! কথা হচ্ছে, এত ব্যাপকভাবে গণসংস্কৃতির স্রোত ধাবিত হতে বাধ্য হয় ধর্ষনের বিরোধীতা করতে, নারীনির্যাতন রুখতে। অশীতিপর কবিসাহিত্যিককে রাস্তায় নামতে হয় নারীর অসম্মানের প্রতিবাদ করতে ! এবং সেজন্যে তার নিন্দা করেও রীতিমত দৈনীকের সম্পাদকীয়, উত্তর-সম্পাদকীয় লেখা হয় ! এসব কথা যখন স্থির হয়ে ভাবতে বসি, প্রতিবাদ নয়, ঘৃণা নয়, একদলা লজ্জ্বা উঠে এসে বাকরুদ্ধ করে ! তখন মনে হয় – এ সমাজের আর কি অবশিষ্ট আছে, যে এখানে বসে এখনো সাহিত্যচর্চা ফলপ্রসূ হবে ?
ক্ষেপচুরিয়াসের পক্ষে অত্রি ভট্টাচার্য্য