লেখা লিখতে কারোর 'ল' লাগে, কারোর পেন লাগে- অমিতাভ প্রহরাজ
প্লিজ ভাববেন না কোন তুলনা বা "দ্যাখ-কেমন-লাগে" টাইপের অঙ্গভঙ্গি করার চেষ্টা করছি এটা পোস্ট করে, নিছক ওই মিলের জায়গাটা কেমন কাকতাল জাতীয় পতনের মজা সেটা মনে পড়লো বলে বললাম... তুলনার কোন জায়গাই আসেনা, কারন আপনার লেখাটি, আপনার নিজস্ব লেখা, একটি স্বতন্ত্র সৎ সৃষ্টি, আর আমারটা জানিনা, তবে টুকে লেখা নয় এইটি জানি... এটি পোস্ট করে কোন উপদেশ, জ্ঞান বা বাণী বিতরণকরছিনা বা মডেল কবিতাও দেখাচ্ছি না... কেমন চিন্তাস্রোত, আমাদের অজান্তে তার বেস্ট ফ্রেন্ড 'সময়'কে নিয়ে অন্য চিন্তাস্রোতের সাথে লাইন মারে সেটাই দেখাচ্ছি... সেইজন্য, নিজের ভাবনা-চিন্তাকে একটু চোখে চোখে রাখবেন, ও খুব উড়ু উড়ু আর নিজেকে বেশ লায়েক ও সবজান্তা ভাবে, আপনার অজান্তেই... ও তো টীন-এজার থাকতে পছন্দ করে সবসময়, ব্রোঞ্জ এজার বা স্টোন এজার বা বাপ ঠাকুর্দা, প্যালিওলিথিক এজার, নিওলিথিক এজার দের দু চক্ষে দেখতে পারেনা... ওর মানসিকতাটা হচ্ছে যে "তুমি কবে কি একটা পাগলাচোদার মতো ভেবে দুটো পাথর ঠুকে ওই গা গরম করার আর রাত্রে দেখার জিনিস বানিয়েছিলে বা পুরো সার্কিটকাটার মতো পাথরে ঠুকে, হাতে কড়া ফেলে ওই মোষগুলোর মতো দেখতে কয়েকটা দাগ কেটেছিলে গুহার মধ্যে, সারাক্ষণ খালি তার কথা বলে যাবে, ওরকম হতে বলবে ওটা আমাদের ইন থিং নয়, জেনারেশান গ্যাপ... আমি বড় হয়ে জ্যাকসোন পোলক হবো... নাম শুনেছো কখনো? তোমার মতো মোষ আঁকেনি সারাজীবন ধরে, ওই আলতা ফালতা, মীরার ভজন আমাদের চলেনা..." এবং এই মানসিকতাটা ওর গ্রো করে আপনাকে না জানিয়েই, লুকিয়ে লুকিয়ে... হস্টেলে গেলে ছেলের যেমন পাখনা গজায়, তেমনি... তাই ভাবনাচিন্তা নামক কিশোর/কিশোরীটিকে স্নেহ ও আদরের সাথে সাথে শাসনও করতে হয়... বকতে হয়, অপদার্থ, নালায়েক, বাচাল, সবজান্তা বলে... এই শাসন করলে ওর মধ্যে বিনয়, অন্যকে শ্রদ্ধা করা, ঝগড়া না করা, মানুষকে ভালোবাসা এইসব ভালো গুনগুলো আসে... নইলে বখে যায়, উদ্ধত, দুর্বীনিত হয়ে ওঠে, আপনি হয়তো ওর দিকে নজর দেওয়ার সময় পাচ্ছেন না তার সুযোগ নিয়ে... আপনি ওকে হয়তো ভালো ভাল বইতে পাঠান ক্লাস করতে, ভালো সিনেমার কাছে কোচিং এ ভর্ত্তি করে দেন, ভাল গানকেও প্রাইভেট টিউটর রাখেন যাতে ও বড় হয়ে ভাল রেজাল্ট করে... ও ফাঁকতালে করে কি ওইসব কোচিং কেটে অহংকার সমিতি বা দর্প সংঘ ক্লাবে রকবাজি করছে, প্লাস বললাম তো ভাবনাচিন্তা বেসিক্যালি একটা বাচ্চা ছেলে তো, তাই একটু হীরো হওয়ার, ইমেজ তৈরী করার, হাতে বালা পরার, ট্যাটু করার প্রবল ইচ্ছে থাকে... স্বাভাবিক, রনবীর কাপুরের চুলের স্টাইল নকল করে, ওয়ার্ডরোবে জেনিফার এ্যানিস্টনের পোস্টার লাগিয়ে রাখে... কিন্তু এদিকে আপনি ওকে কোথাও নিয়ে যান সঙ্গে করে, তখন বলবে "এ্যান্থনি হপকিন্স আমার সবচেয়ে প্রিয় অভিনেতা, হুপি গোল্ডবার্গ আমার প্রিয় অভিনেত্রী, ব্রিটনিকে সহ্য করতে পারিনা", কারন খুব চালু তো, হবে নাই বা বা কেন? যার বাপের নাম ঘিলু মায়ের নাম অনুভূতি দেবী, যার ঠাকুর্দা রায়বাহাদুর অভিজ্ঞতা রায়, সে তো মহা চালু হবেই, বংশের ধারা... তাই সবার সামনে ইমেজের জন্য ওইসব, এদিকে ফিফিটি শেডস অফ গ্রে প্রথম দিনেই কেনা হয়ে গেছে আপনারই পকেট মেরে... আপনি হয়তো ভাবছেন যে না, ওকে আপনার মনের মতো তৈরী করবেন, কিন্তু বজ্জাত ছেলেটি, মানে ভাবনাচিন্তা, মহা ত্যাঁদড়... ওর একটা স্টেডি গার্লফ্রেন্ড আছে চেতনা নামে... তার কথাও আপনার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে... আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন, এদিকে বাবু চেতনার সাথে ফ্লার্ট করেই যাচ্ছেন সারারাত ধরে... আপনি সকালে দেখলেন ওর চোখ লাল, জিজ্ঞেস করলেন যে "কি হয়েছে রে? রাত্রে ঘুমস নি?" ও বলবে "না না, খুব দুঃখের স্বপ্ন দেখেছি একটা, দেখে কাঁদছিলাম"... ওই জন্য এক আধটু শাসন দরকার, বা কোন ডাক্তারজেঠু বা মাস্টারকাকু টাইপের কাউকে দরকার যাকে ও যমের মতো ভয় পায়... কারন অনেক সময় হয় কি, আপনার খুব স্নেহের পাত্র তো, আপনি জন্ম দেননি বটে কিন্তু বলতে গেলে কোলেপিঠে করে আপনিই মানুষ করেছেন... শরীর টরীর খারাপ হলে ওকে আপনি নিজে এ্যাসটেরিক্স কিনে দিয়েছেন, আনন্দমেলা দিয়েছেন... ও তো বড্ড মায়া কাড়ে আপনার... জানেন যে অর বাপ ঘিলু আর মা অনুভূতিদেবী ওকে জন্ম দিয়ে ফেলে রেখে নতুন এ্যাফেয়ার করতে চলে গেছে, বাবা মায়ের সান্নিধ্য পায়নি কোনদিন, তাই মায়া কাজ করে... অনেক সময় প্রাণে ধরে বকতে পারেন না... সেইজন্যই একজন কাউকে দরকার এ্যাটলিস্ট যার কথা না মানলেও অন্তত যেন শোনে... এতে ওরই ভালো হবে... আর ওই যে ইমেজ তৈরী বললাম, ওটা খুব খারাপ অভ্যেস, ওটাকে ছোটবেলাতেই বুঝিয়ে দেবেন যে ঠিক নয়... ভাবনাচিন্তাকেও ভাবতে শেখাবেন, ওর যেন এটা না মনে হয় যে "আমার নাম ভাবনা চিন্তা, আমার আর ভাবনাচিন্তার দোরোকার নেই"... আমার উপদেশ নয়, এটা আমি নিজে ভুগেছি বলেই বলছি... ফার্স্টহ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলছি... আমি বা আমরাও ভাবতাম ইংরেজিসাহিত্য সম্পর্কে জানা একটা খুব জরুরী ব্যাপার ক্রিয়েটিভ হতে গেলে... অলিখিত সিলেবাস ছিল যেন, যে তুমি অন্য লেভেলের ক্রিয়েটিভ মানুষ, সত্যিকারের ইন্টেলেকচুয়াল হতে চাও, তাহলে সেট ফরম্যাট যেন আছে
ক) "কম্যুনিজম, বিপ্লব, প্রতিবাদ ফরম্যাট, ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্ট্র্যাটেজি"- এই ফরম্যাটে ফার্স্ট ধাপ,
১) বাবা মা যদি ভগবানে বিশ্বাস করেন তো প্রথমেই নাস্তিক ডিক্লেয়ার করো নিজেকে, নাস্তিকের থেকেও ইম্পর্ট্যান্ট, বোল্ড আর আন্ডারলাইনে যেকোন জীবিত মানুষ (বয়সে বড়, বুড়ো হলে আরো ভালো) বলো "আমি ভগবানে বিশ্বাস করিনা। আমি ধর্ম মানিনা"
২) নেক্সট স্টেজ, প্রায় সব বাঙালীর বই আলমারীতে ন্যাপথলিনের সঙ্গে দু কপি ডাস ক্যাপিতা (বাঙালীরা যেটাকে দাস ক্যাপিট্যাল বা দাসদা ব্যাবসায় কত ইনভেস্ট করেছেন জাতীয় উচ্চারণ করে), সাদা মলাট দেওয়া, নীল প্যারালেল দাগ নীচে দুটো, ঠিক তার পাশে কুচকুচে নীল রঙের তিনটি বই থাকে, যাতে লেনিন শব্দটা পরিষ্কার চোখে পড়ে, বাকিটা খেয়াল করেনা (অনেকে লেনিন সমগ্র বা লেনিন অমনিবাস ও বলে), আর কিছু বাড়িতে তার পাশে এঙ্গেলেস লেখা একটি দামড়া বাংলা বইও থাকে, যেটা ছোটবেলা থেকেই দেখছেন
৩) প্রথম দু তিন বছর আপনি জানবেন যে মার্ক্স এঙ্গেলেস নামক একটি ভদ্রলোক একেবারে শোলে জাতীয় ব্যাপার পৃথিবীতে, কিন্তু ঘটনাটা কি ঘটিয়েছেন তারা খুব ক্লিয়ারলি জানবেন না, বাবা কাকাদের জিজ্ঞেস করলে পাকামির জন্য বকে। তবে এই জিনিসটা বুঝে যাবেন যে ওই লোকটা 'পার্টি' করতো এবং সিপিএম 'পার্টি' করতো, এবং জ্যোতি বসুর থেকেও বড় নেতা ছিল এবং সম্ভবতঃ ওই লোকটাই প্রথম ইনক্লাব জিন্দাবাদ বলেছিল। এবং এর পরেও অনেক অনেকগুলো এবং আছে, যে এবং গুলো জানতে চাইলে বাবা "এঁচোড়ে পাকা" বলে ঠাটিয়ে এক থাবড়া মারে
৪) কয়েকটা জিনিস আপনি ঠিক করে নেবেন, যে আপনিও বড় হয়ে পার্টি করবেন এবং অনেক লোকের সামনে বক্তৃতা দেবেন যেমন টিভিতে দেখায়, বাবার মতো বসার ঘরে বক্তৃতা দেবেন না। ইন-দ্য-মিন-টাইম এস এফ আই বলে একটা পার্টি থেকে একটি ধেড়ে ছেলে, লোক বা কাকুই বলা যায়, এসে বলবে আমি ভারতীয় ছাত্র ফেডারেশানের অমুক ব্লা ব্লা এবং আপনার কাছ থেকে দু টাকা নেবে চাঁদা বলে (১৯৯৪ সাল) আর একটা স্লিপ দেবে এবং আপনার মনে হবে আপনি স্বপ্ন দেখছেন, যখন দেখবেন ওই স্লিপটাতে সি পি এম পার্টির মতোই কাস্তে হাতুড়ি তারা প্লাস একটা ঘুঁষি ছাপা আছে। এবং কি অবিশ্বাস্য!!! ও বলবে আপনাকে সুলভ শৌচালয় চলো মিছিলে যদি আপনি আসেন তো বাধিত হবে। আপনি বুঝবেন যে আপনিও 'পার্টি' করছেন এবং বড়ো হয়ে গেছেন।
৫) এর পরের স্টেজটাই খুব ক্রুশিয়াল। এই স্টেজে একসাথে বহু ঘটনা ঘটবে। প্রথমতঃ এবার সত্যি সত্যি মধ্যে আপনার বাংলা সিলেবাসে প্রথম আধুনিক কবিতা আছে। সেইই আধুনিক কবিতা যা দেশে ছাপা হয় এবং বাবা পড়তে দেয়না বড়দের বই বলে আর মা বাবাকে বলে "আজকাল কবিতার কোন মাথামুন্ডু নেই, যা ইচ্ছে তাই লিখে দিলেই হলো, আধুনিক কবিতা তো!!" এবং একটু চাপা গলায় বলবে "এগুলো পড়া যায়না, সেক্স ঢুকিয়ে দিলেই আর বাজে কথা লিখে দিলেই আধুনিক কবিতা হয়ে যায়"। আপনি এই স্টেজে এসে আপনার মনে হবে একটা খুব খেলাধুলোর দোকান আপনার বাড়িতেই আছে কিন্তু সেটা আপনাকে বলা হয়না। সেক্স শব্দটা আপনার শোনা আগে এবং কেন সেক্স বলার সময় বাবা, মা বা ভালোজেঠুও ফিসফিস করে বলে বা খুব চাপা গলায় বলে। এবং এগুলোর সাথে সাথে আরো কয়েকটা ফিসফিস শব্দও কানে এসছে আপনার, যেমন "নিরোধ", "কণ্ডোম", "কপার-টি", "পিল" ইত্যাদি। আর এগুলোও মাকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে রামথাবড়া খেয়েছেন। এমন কি এরকমও একটা ব্যাপার হবে, আপনার মা হাস্পাতালে ভর্ত্তি হবেন একটা কিছুর জন্য, এবং কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে সবাই বলছে "ও একটা অসুখ হয়েছে" কিন্তু আপনি জেনে ফেলেছেন চুপিচুপি শুনে যে মায়ের নাকি "ইউটেরাস" বলে একটা জিনিস অপারেশান হবে এবং এটাও বুঝে ফেলেছেন যে সেক্স, কন্ডোম ইত্যাদির মতো ইউটেরাসও সবার সামনে বললে ক্যালানি খাবেন। এই পয়েন্টে এসে ছেলে আর মেয়ে একটা ফারাক হবে, আপনি যদি মেয়ে হন আপনি আরেকটি গোপন বিষয়ের নাম শুনবেন "গাইনী প্রবলেম"।
৬) যাক লেখার বিষয়ে আসি, এই সব মিলিয়ে যখন ভজকট, তখন আপনি সুকান্ত ভট্টাচার্যের "আঠারো বছর বয়স কি দুঃসহ" বা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর "অমলকান্তি" পড়বেন এবং আবিষ্কার করবেন যে এইরকম দেখতে শুনতে কবিতা লেখা বেশ সহজ। আর সেইরকম কয়েকটি কবিতা লিখে, "শুদ্ধরাগ সন্ধ্যে হতে চাইতো" বা "আমি আজীবন বিপ্লব করে যাবো" ধরনের, একটা কমপ্লিটলি নতুন ফীলিংস হচ্ছে। বেশ আনন্দ আনন্দ, কিন্তু নতুন ব্যাট কেনার আনন্দের মতো নয়, সামার ভেকেশান পড়ার আনন্দের মতো নয়, ক্লাসে সেকেন্ড হওয়ার আনন্দের মতো নয়, এমন কি প্রাইজ পাওয়ার আনন্দের মতো নয়। বাবা মা আদর করলে যে আনন্দ, তার মতো তো নয়ই, ইন ফ্যাক্ট ওতে আপনি এখন আনন্দ পাওয়াটা খুব একটা পছন্দ করেন না। মানে বাবা-মা আদর টাইপ টা। এমন কি আরেকটা নতুন আনন্দ যেটা আপনার মাসতুতো দাদা মুকুলদা শিখিয়েছে, দফা তিনশো দুই ম্যাগাজিন বা পেন্টহাউস লেটার্স পড়ে করতে হয়, সেটার মতোও নয়। এখানে এসে আপনি একটা মহাসমুদ্রে পড়ে যাবেন। একবার ভাববেন যে ওই সেক্স নামক রহস্যময় ব্যাপারটার মতো কি আনন্দটা? হয়তো তাই, কিন্তু এটার একটা বড় এ্যাডভান্টেজ দেখতে পাবেন যে ওইধরণের একটা হেবি আনন্দ যার জন্য আপনি যদি ছেলে হন তাহলে মেয়েদের বন্ধু করতে হয় বা মেয়ে হলে ছেলেদের বন্ধু করতে হয় (যেটা কদিন আগেও এমন কোন মুশকিল ছিল না, এখন আচমকা খুবই কঠিন কাজ হয়ে গেছে) এই বাধ্যতামূলক কন্ডিশনটা ছাড়াই একটা হাই ফাই আনন্দ হচ্ছে আধুনিক কবিতা লিখে। তারপর, একদম ধাপের পর ধাপ আসবে।
সেই লেখা অন্য কাউকে শোনালে আনন্দটা বেড়ে যাচ্ছে, বিশেষতঃ বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে শোনালে।
সেই লেখা দিয়ে আপনার পার্টি করার স্বপ্ন, যা এ্যাতোদিনে কয়েকটা নতুন নতুন জিনিস জেনে ফেলেছেন এস এফ আই এর সেন্টুদার কাছ থেকে। "রাজনীতি", "সাম্যবাদ", "সমাজবদল", "বিপ্লব"। শব্দগুলো শুনেই আপনার হেবি ভাল্লেগেছে, কথায় বার্তায় ইউজ করতে পারলে তো পুরো অমিতাভ বচ্চনের মতো মনে হয়। যেমন বন্ধুকে যদি সাথি বা কমরেড বলা যায় ব্যাপক লাগে। আর সবচেয়ে দারুন ব্যাপার এটা এরকমই ফাটাফাটি জিনিস যা দিয়ে বোসজেঠুকে কমরেড বিমানবাবু বলে ডাকা যায়, এবং সেটা খারাপ বলে না লোকে। বা "মানুষ" শব্দটা বললে তার আগে যদি "বঞ্চিত, শোষিত, অবহেলিত" যোগ করা যায় ত দারুন স্মার্ট লাগে নিজেকে। এটা অপূর্ব ব্যাপার আরো কয়েকটা দারুন কারনে। যেমন বাবা যদি এম-টিভি দেখতে বারণ করে তাতে "আমি তোমার কথা শুনবো না" বললে বেধড়ক ক্যালানি খেতে হয় শুধু নয়, কেউই সাপোর্ট করেনা, ঠাকুমাও না। বলে অবাধ্য হবেনা। কিন্তু এই নতুন জিনিসটা দিয়ে বাবাকে "মানছি না, মানবো না" বললে অভদ্রতা হয়না। তারপর স্বপ্নে টাইটানিকের কেট উইন্সলেট প্রায়শঃই উদোম হয়ে আসে এবং তার ফলে বেশ কিছু নতুন নতুন ব্যাপার হয়, যেগুলো কাউকে বলতে নেই। এবং "তুমি স্বপ্নই দেখে যাও সারাজীবন, বাস্তবে কোনদিন ফার্স্ট হতে হবে না" বলে বকাবকি করে সবাই। তাদেরকে যদি "আমি সমাজবদলের স্বপ্ন দেখি" বললে তার জন্য বকাবকি করাটা খুব মুশকিল হয়ে যায় বড়োদের, এটা লক্ষ্য করা গেছে। ক্লাসে স্যারের সাথে মুখে মুখে তর্ক করলে নীলডাউন করিয়ে দেয়, কিন্তু একই জিনিস যদি "আমি প্রতিবাদ করেছি" বলি, তবে বেশ বেকায়দায় পড়ে যান বাঘা বাঘা স্যারেরা পর্যন্ত। এই আবিষ্কার একটা রিভিলিশান হয়ে আসে আপনার কাছে।
৭) এবং পরের স্টেজে অবধারিতভাবে আপনি প্রেমে পড়বেন। কপাল না গোপাল তার ওপর ডিপেন্ড করবে ওটি ওয়ান ওয়ে না বোথ ওয়ে। কিন্তু সেটি যেরকমই হোক একটা জিনিস আপনি নজর করতে বাধ্য হবেন যে যেগুলো লিখে অন্যকে শুনিয়ে দিব্যি আনন্দ হয়, সেগুলির আরেকটা উপকারিতাও আছে ("সমাজে গরুর ভূমিকা" যেরকম)। বেশ কিছু ব্যাপার স্যাপার যেগুলো জানালে বাম্পার লাগে, যেমন "আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসি" বা "আমার তো দুঃখে বানানো জীবন" বা "আমি একদিন কোথায় হারিয়ে যাবো ঠিক নেই", এগুলো সোজাসাপটা জানানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। সিনেমা টিনেমায় খেয়াল করবেন এইসব পার্ট হীরো-হিরোইন ভাই বোনেরা গান দিয়ে সামলে দেয়। গান-টান আপনার জানা, কিন্তু তাও দুপুরবেলা পাশাপাশি সাইকেলে বেশ খানিকক্ষন কিচির মিচির করতে করতে আচমকা দুজনেই একসাথে চুপ, হাল্কা মাথা নীচু, বুঝতে পারছেন যে এটি পারফেক্ট টাইমিংস বার্তা দেওয়ার, সেসময়ে গলা ছেড়ে গান গেয়ে ওঠা যে কি বিটকেল পরিস্থিতি তৈরী করে তা একমাত্র যারা ফেস করেছে তারাই জানে। এই দুপুর, এই পাশাপাশি, এই ফেরত আলতো সাইকেল, এ যে কি দারুন সময় বলে ওঠার "আমার জীবনে খুব দুঃখ", বলে বোঝানো যাবেনা!! মুখ দিয়ে ওই বাক্য সরবেই না আর তখনই আপনি খেয়াল করবেন আধুনিক কবিতার আরেকটা ইউটিলিটি ফ্যাক্টর, এটা দিয়ে না-বলা, শক্ত-বলা কথাগুলোতো বেশ বলিয়ে দেওয়া যায়, এক নম্বর। দুই নম্বর, এটা তো বেশ পেন ড্রাইভের মতো যাতে ওই গা-শিরশির মোমেন্টসগুলো যা শুরু হওয়া মাত্রই "এই শেষ হয়ে গেল রে", "এই শেষ হয়ে গেল রে" ধুকপুক চালু হতো, সেগুলোকে স্টোর করে রাখা যায় পরের জন্য। এই ইউটিলিটি ফ্যাক্টরে এসে বেশীরভাগ জার্নি শেষ হয়ে যায়। কবিতাকে টা-টা, থ্যাংক ইউ, গুড বাই, ইউ আর মাই বেস্ট ফ্রেন্ড বলে বিদায় দিয়ে অন্যান্য নানান প্রাসঙ্গিক দুষ্টুমির ''আঙ্গিক'' নিয়ে মাথা ঘামানোর খেলা চলে আসে। কিন্তু একদল গাড়োল একটি নিরেট আকাট মার্কা কনক্লুসানে পৌঁছয়। সেটি হলো, এত বড় একটা সমস্যার সমাধান যখন কবিতা দিয়ে হয়ে গেল, তার মানে পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যার সমাধান কবিতা দিয়েই করা যাবে। আর এই ভাবার সাথেই সাথেই পড়ে যায় জীবনের সর্বডীপ গাড্ডায়। আর যেহেতু পতনশীল বস্তুর কোন ওজন ম্যাহসুস হয়না, সেহেতু কেউ নিজেকে ভেবে ফেলে পাখি, কেউ ভেবে ফেলে মেঘ, কেউ ভাবে আলো, কেউ ভাবে আকাশ। মোদ্দা কথা এতদিন একটা "নিজে" নিয়ে কাটানো উজবুক আরেকটা সেকেন্ড অলটারনেটিভ "নিজে" খুঁজে পায়, যে ওকে খুব মেনে চলে ঠিক যেমন ও বাবাকে মেনে চলে বা হেডস্যারকে। এইসব গাণ্ডুদের মধ্যে আমি একজন। আর আজ্ঞে হ্যাঁ, আপনিও একজন।