শুক্রবার, ১৬ মে, ২০১৪

সম্পাদকীয় - ৪র্থ বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা

সম্পাদকীয়



নববর্ষের উৎসব পেরিয়ে শেষ হলো হলো ভোট উৎসব। কিন্তু বঙ্গ জীবনে উৎসবের খামতি নেই। তাই বৈশাখের প্রখর দাবদাহ উপেক্ষা করেই শুরু হয়েছে রসুন উৎসব।
বৈশাখের প্রথমার্ধেই রবীন্দ্রনাথ তারপর একে একে সুকান্ত এবং নজরুল সংক্ষেপে রসুন। চারিদিকে কান পাতলেই মাইকে বাজছে রবি ঠাকুরের গান। ঠাকুর প্রিয় বাঙালির তাই উৎসাহের অন্ত নেই। পাড়ার মোড়ে, মাচায় রবীন্দ্রসদনে এখন তাই বাঙ্গালীর বেস্ট সেলার রবি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। যে ভাবে বাঙালী চিরকাল আসল কথা কে উপেক্ষা করে শুধু পুজোতে মাতে এবারেও তার ব্যাতিক্রম নয়। সাধে কি বাঙালীর প্রানের ঠাকুর বলেছিলেন “তেত্রিশ কোটি সন্তানের রে মুদ্ধ জননী রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করো নি”। আমরা রবীন্দ্রনাথের গানে পাগল, কবিতায় পাগল তার শান্তিনিকেতনে পাগল কিন্তু এই পাগল বাঙালী রবীন্দ্রনাথের শিক্ষার পাগল হতে পারলো কই? “শিক্ষা কে আমরা বাহন না করিয়া বহন করিয়া চলি” এই আপ্ত বাক্য আপামর বাঙালী সে ভাবে মেনে চলল কই? রাস্তায় রবি, ব্রিজ এ রবি শান্তিনিকেতনের জুতোর দোকানে রবি স্কুল কলেজে রবি মায় বাঙালীর রান্না ঘরে রবি কিন্তু বাঙালীর মননে সে ভাবে রবির জায়গা কই? যে ভাবে আমরা আসল ধর্মকে উপেক্ষা করে ধার্মিক কু সংস্কার কে আকড়ে ধরে মুর্তি পুজোতে মগ্ন ঠিক একই ভাবে রবির গান অবির কবিতাকে আকড়ে ধরে আমরা সত্যিকারের রবি কে পুজলাম কই? এসব লেখা পড়লে পাঠক আমাকে গালাগাল দিতে পারেন এই বলে তুমি কে হে গঙ্গারাম? রবির তুমি কি চেনো হে? পাঠক কে দোষ দেওয়া যায় না। কারন বন্দনা করা চিরকালের হুজুগে বাঙালী সত্ত্বা তার বংশপরম্পরায় বিদ্যমান। কবিকে তারা সে ভাবে মন্থন করলো কই? শুধু কি রবীন্দ্রনাথ? তারপরের যারা তাদের ক্ষেত্রেও তো সেই একই দশা। শক্তি কে আমরা বাউন্ডুলে করে দিয়েছি, তার স্পর্ধা কে দুঃসাহস এর আখ্যা দিয়ে দূরে থেকেছি, নয়তো শুধু তার বোহেমিয়ানা কে অনুকরণ করে সেই বোহেমিয়ানার তার সেই নিয়ম ভাঙার ভেতরে যে নিয়ম তাকে ভুলে মেরে দিয়েছি। বাঙালী চিরকালের আত্মবিস্মৃত জাতি। নইলে আমরা জীবনানন্দের মতো কবি কে নির্জন আখ্যা দিয়ে বছরের পর বছর ভুল ধারনায় মগ্ন থেকেছি। এই সেদিন একটি মেয়ের সাথে কথা হচ্ছিল ফোনে। তার জীবন যন্ত্রনার কথার মাঝে উঠলো জীবননানন্দের কথা। সেই মেয়েটি হঠাৎ বলে উঠলো, দেখো তিনিও তো নির্জন দুঃখবাদী কবি, তাহলে তুমি আমাকে তার কবিতা পড়তে বলছো কি করে? হা হতস্মী। সেদিন নিজেকে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছিলো। আজকাল ফেসবুকে অনেক কবিকে দেখতে পাই, (সবাই নয় কিন্তু) তাদের বক্তব্য কবিতা লিখলে নাকি অনেক নারী সান্নিধ্য পাওয়া যায়। হায়রে আমার বাংলা সাহিত্য। সবাই কি আর চাইলেই সুনীল গাংগুলী হতে পারে? সুনীল গাংগুলী হবার পেছনে যে পরিশ্রম যে জ্ঞান, যে পড়াশুনা সেগুলো ছাড়াই কি সুনীল হওয়া যায়? পাঠক বেশ কিছুদিন যাবত এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমার জানা নেই আপনাদের জানা থাকলে যদি আমার সাথে শেয়ার করেন বাধিত থাকবো।

পরিশেষে বলি ক্ষেপু দেরীতে প্রকাশ হবার জন্য একান্ত ভাবেই আমি দায়ী। শুধুমাত্র আমিই দায়ী, কোন অজুহাত দেবোনা শুধ দায়টা স্বীকার করাটা ছাড়া। বৈশাখের দাবদাহ পেরিয়ে বর্ষা নামুক আপনাদের জীবনে এই কামনা করি।




                                                            ক্ষেপচুরিয়াসের পক্ষে ~  শুভেন্দু দেবনাথ

ধারাবাহিক – সৌমিত্র চক্রবর্তী

ধারাবাহিক

বহুগামীতায় থাক হে ঈশ্বরআট
সৌমিত্র চক্রবর্তী


(৮)

রোজই একটু করে গন্ডীটা ছোট হয়ে আসছে। চারদিক থেকে গুটিয়ে কেন্দ্রের দিকে
চেপে আসছে বৃত্ত। ছোট হচ্ছে পরিবার, ছোট হচ্ছে সামাজিক মেলামেশার পরিধি।
আগে পরিবারের কাজের লোকটা কিম্বা মেয়েটাকেও পরিবারেরই অন্যতম সদস্য মনে
করা হত। ছোটদের রীতিমত শাসন করতেও পারত তারা। পাড়ার কোনো বাচ্চা অন্যায়
করলে শাসন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতেন না অন্য বাড়ীর বড়রা। তাতে সেই
ছোটর বাড়ীর বড়রাও কিছুই মনে না করে খুব স্বাভাবিক ঘটনা মনে করতেন সেটা।
আর আজ বড় বেশি বিভাজন হয়ে গেছে আর্থ মানদন্ডে। নিজের স্টেটাস এর সমতূল্য
হলেই একমাত্র তার সঙ্গে সমানে সমানে আদান প্রদান চলতে পারে, নচেৎ নয়।
আবার আদান প্রদানেও চুলচেরা হিসেব। আদায় যতটা, দেওয়াও সেই বিচারে কাঁটায়
কাঁটায় ঠিক ততটাই হতে হবে। এক আশ্চর্য ভালোবাসাহীন জগৎ। মুখ দিয়ে হুউউউ
করে একটা আওয়াজের সঙ্গে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো লোকটার। কয়েকটা বুনো ঘুঘু
সেই আওয়াজে ফরফর করে উড়ে গেল।

বুনো শুঁড়ি পথের একপাশে একটা বড় আকাশছোঁয়া শালের গোড়ায় বসেছিল সে। যতদূর
দেখা যায় শুধু শাল পলাশের জঙ্গল। ছোটনাগপুর মালভূমির এই প্রান্ত শাল
সেগুন মহুয়া পলাশের জঙ্গলে বুনো ঘ্রাণ গায়ে মেখে স্বাভাবিক নির্জনতায়
দাঁড়িয়ে আছে সেই আদিম যুগ থেকেই। মাথার ওপরে গাছের পাতা আর ডালের ফাঁকে
উঁকি দিচ্ছে চৈত্র শেষের সূর্য। এই ঘন পত্রাবলীর চাদর ভেদ করে তার তেজ
পৌঁছে দেবার সাধ্য নেই। সামান্য আলো যেটুকু আসছে তাতেই তৈরী হয়েছে
আলোছায়ার এক অপূর্ব রূপকথার মায়া। নিচে মাটি ভরে আছে শুকনো পাতার
বিস্তীর্ণ আস্তরণে। শুধু শুঁড়ি পথ সাদা দাগ ফেলে এগিয়ে গেছে কোন
অনির্দেশ্যে তা হয়তো সে নিজেও জানেনা। খুব একটা হিংস্র জানোয়ার এইসব বনে
থাকেনা। খটাশ, কচিৎ গুলবাঘ, বুনো মুরগী আর ফসল সময়ে দলমার হাতি। এছাড়া বড়
জন্তু প্রায় নেই বললেই চলে। স্থানীয় মানুষের, অভাবী মানুষের বড় ভরসার
স্থল এই জঙ্গল। এখান থেকেই শালপাতা, কেন্দুপাতা, কাঠি সংগ্রহ করে তারা
জলের দামে বেচে দেয় গঞ্জের থালাপাতা কিম্বা বিড়ি তৈরীর কারখানায়। বিপুল
দামে কয়েকহাত ঘুরে সেসব পৌঁছয় সাধারণ মানুষের কাছে। এরা পড়ে থাকে জন্ম
অভাবে। অবশ্য তার জন্যে এদের খুব একটা আক্ষেপও নেই। আসলে এদের দৈনন্দিন
জীবনের বাইরে যে একটা বিশাল বিনোদনের জগৎ আছে তা এরা জানেই না। আর তাই
খিদে পেলে এরা বেরিয়ে পড়ে জঙ্গলে বুনো ইঁদুর, কন্দমূল, বুনো খামআলুর
সন্ধানে। পেলে পুড়িয়ে সবাই মিলে ভাগ করে খায়। কপটতা কিম্বা স্টেটাস
শব্দগুলো এদের ব্রহ্মান্ড বহির্ভূত। আদিম আর সরল এই জীবগুলো সত্যিকারের
সুখী।

ঝুলিটা তুলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে লোকটা। শেষ বসন্তের সকালে ফুরফুরে
হাওয়া এসে মুখে চোখে সস্নেহে চামর বুলিয়ে যাচ্ছে। বধূবরণের এই ছলছলে আলোয়
মনের সাতশো ফুট গভীরে অবাক করা ভালোবাসার ঢেউ বয়ে যায়। ভালোবাসা! এই
স্বয়ংসম্পূর্ণ বোধ তার জীবনে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে। বহুবার ছুঁয়ে দিয়ে
চলে গেছে দূরে। কখনো আবার স্পর্শ করলেও তার বোধ তখন সুপ্তির অতলে থাকায়
বুঝতেই পারেনি। কখনো রাত্রিচরা হয়ে ছটপট করে নিজের চামড়া নিজের নখেই
ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। আবার কখনো বা সমস্ত অনুভূতিকে ছুটি দিয়ে গভীর
কোমায় চলে গেছে মনন।  এত সুদীর্ঘ নদীপথ সাঁতরে এসেও এখনো ওই চার অক্ষরের
শব্দটাকে ঠিকমতো বুঝে উঠতেই পারলো না সে।

চোখের সামনে এক অদৃশ্য পর্দায় এক এক করে ছুটে যায় বহু চলচ্ছবি। সেই মধ্য
রাজস্থানে লবণ হ্রদের কূলে গরবিনী মেয়ে, যে বলতো কারো সাহায্যের দরকার
নেই আমার। আমি একাই একশো। অথচ চুমু খেলে খুব ভয়ে ভয়ে তাকাত চারপাশে।
কিম্বা আন্দামানের হোটেলের একাকী গ্যারাজে রূপমায়ায় জড়ানো শৌন্ড্র
কন্যাকে সুতীব্র আশ্লেষে জড়িয়ে সব কিছু শুষে নেবার ঘটনা, আজ যেন গল্পই
মনে হয়। হঠাৎই লালিকে মনে পড়ে গেল। মধ্যপ্রদেশের সেই প্রত্যন্ত লোহাখাদান
এলাকায় লালি তখন চোদ্দো আর সে নিজে ঝড় তোলা ষোলো। এমনি এক সকালে
কোয়ার্টার এর বাউন্ডারির গেট খুলে বাইরে বেরোনোর সময় কোথা থেকে যেন উড়ে
এসে সামনে পড়েছিল বুনোফুলের এক ছোট্ট গোছা। শিউরে উঠে পরম আদরে বহুদিন
খাতার ভাঁজে রাখা ছিল সেই ফুল। মুখোমুখি কোয়ার্টার ছিল তাদের। একদিন কি
কারনে যেন ডাকতে সদ্য স্নান করা পৃথিবী ঝলসানো রূপ দরজা খুলে দিয়ে
জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়েই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সেদিন ওদের বাড়িতে কেউই
ছিলনা। অবুঝ সময় কিভাবে যে সাইক্লোন সৃষ্টি করেই ফুরিয়ে গেছিল, তা জানতেই
পারেনি। কিন্তু একটা ব্যাপার সে সম্পূর্ণ উপলব্ধি করেছে, মেয়েরা যাকে
ভালোবাসে তাকে সবটুকু দিতে এতটুকু দ্বিধা করেনা। তখন তারা
বর্তমান-ভবিষ্যত কিছুই ভাবেনা। বড় একবগগা সেই চাওয়া তার পরম দয়িতকে।
সেখানে আর কাউকেই ভাগ দিতে কণামাত্র রাজী নয় সে। মনে পড়ে গেল কামু ওরাং
কে। আঠেরোর সেই নিষাদকন্যা অপূর্ব বার্ণিশ রঙ শরীর সবটুকু খুলে ফেলে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার ওপরে। নিজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই ছেড়ে
দিয়েছিল লোকটা পরম নির্ভরতায়। তার প্রত্যেক প্রত্যঙ্গ আদরে আদরে ছলছল
বানভাসি করে নিজের অন্দরে নিয়ে ফেলেছিল সেই আদিবাসী মেয়ে। নিজের হাতের
দিকে তাকিয়ে দেখলো লোকটা, লোমকূপ স্ফীত হয়ে লোম খাড়া হয়ে গেছে।

একটা বড়সড় ঝাঁকড়া গাছের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালো সে। নিচে রকমারী পাথর,
মাটির ঘোড়া হাতি আরো নানারকম মূর্তি সিঁদুরে মাখামাখি হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে
পড়ে আছে। কি দেবতা ইনি তাতে কিছু যায় আসেনা বাইরের পৃথিবীর। কিন্তু
স্থানীয় মানুষের কাছে সম্ভবত এই ঠাকুর পরম ভরসার স্থল। সেই আদিম যুগে যখন
ঝড় বৃষ্টির রাতে বাজ পড়ে মানুষ নামের সবচেয়ে দুর্বল জীবের হাড়হিম করে
দিত, কিম্বা শিকার অমিলে অনাহারের করাল ছায়া গ্রাস করতো গোষ্ঠীর আদি
মানবদের, তখন থেকেই মৌরসিপাট্টা এই অলৌকিক শক্তির। এখনো জগৎ এখানে
প্রাচীন সড়কেই হাঁটে। হেঁটে চলে শুধু চলতে হবে বলেই। শুধু জন্ম নিয়েছে
বলেই। মাঝেমাঝে সভ্য মানুষরা এসে এদের ভোগ করে চলে যায়। তাদের কাছে এরা
এন্টারটেনিং এলিমেন্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। মাথা ঝাঁকিয়ে আবার এগোয় লোকটা।

একটা পাটকিলে খরগোশ ছুটে রাস্তা পেরোতে গিয়ে তার লাল পুঁতির চোখ
ড্যাবড্যাব করে তাকাল এই বহিরাগতর দিকে। এই নগ্ন সারল্যের দুনিয়ায় এই
জামা কাপড় পরা জীবটা কি করতে এসেছে সেটাই ঠাহর করার চেষ্টা করলো ওটা।
যদিও ঝাঁকড়া চুল আর এই জঙ্গলের প্রতিরূপ দাড়ি গোঁফ ওয়ালাকে নিরিখ করে
একটা ছোট্ট বাইট দিয়েই আবার ছুট লাগালো সে। এই মেটে খরগোশ এখানকার
লোকেদের খুব প্রিয় খাদ্য। নিজেও দু এক বার খেয়েছে সে এর মাংস। কিন্তু এখন
খাদ্য খাদকের দৃষ্টিতে না তাকিয়ে কৌতুকের চোখেই তাকিয়ে দেখছিল লোকটা।
খরগোশটা তাকে বিন্দুমাত্রও ভয় পায়নি। ওটা যেতেই আবার এগিয়ে চলে লোকটা।
পলাশ গাছগুলোতে আগুন লেগে গেছে। বর্ণনার সাধ্যের বাইরে লাল রঙে সেজেছে
তারা। বিশাল পাতা ঝরিয়ে সেগুন আর শাল ব্যস্ত নতুন পাতার আবাহনে। খুব শক্ত
হয় এই পাতাগুলো। শুকনো পাতাও চট করে ভেঙে যায়না। সবচেয়ে ভঙ্গুর সম্ভবত
মানুষের গড়ে তোলা সম্পর্ক। কখন কিভাবে যে জোড়া লাগে আর কোন ঠুনকো আবেগে
যে ভেঙে যায় জীবনে বোঝা হোলনা আর।

বড় বিচিত্র এই মানুষের মনের অলিগলির চোরা স্রোত। খুব সহজেই একজনকে বলে
বসতে পারে আমি একান্তই তোমার। সেটা কি মিথ্যে না সত্যি তা খতিয়েও দেখেনা
কখনো। ছোট ছোট চাহিদা বা পাওনার ওপরে গড়ে ওঠা সুতোর বাঁধন শক্ত হবার আগেই
ছিঁড়ে যায় সামান্য টানে। তখন কিছুদিনের হাহাকার, হাহুতাশ। মনের অন্ধগলির
গোপন অন্ধকারে লুকিয়ে পড়ার ব্যর্থ চেষ্টা। আবার কিছুদিন গেলেই মিথ্যে
স্তোকে নিজেকে ভুলিয়ে নতুন সম্পর্ক খোঁজার পালা। কিন্তু ভোলা যায় কি কখনো
সত্যিকারের প্রেমকে? শরীরে হৃদয়ের অলিন্দে নিলয়ে আঁচড় কেটে যে গভীর দাগ
রেখে যায় তা তো চিরস্থায়ী, চিরদিনের। তাকে কেউ ভুলতে পারে কোনদিন?

অসম্ভব সুরেলা সুরে নাম না জানা একটা পাখি ডেকেই চলেছে। বোধহয় তার সাথীকে
হারিয়ে ফেলেছে সে। বেহালার কান্নার মত ছড়িয়ে পড়ছে সেই গান সারা জঙ্গল
জুড়ে। বিষন্ন হয়ে যায় শাল সেগুন। মাদকতার সীমার ওপারে বাস করা মহুয়ার
নেশার চটক ভেঙে যায় সেই গানে। বিষাদ আপাদমস্তক জড়িয়ে ধরে লোকটাকেও। বছর
বিদায় নিচ্ছে বিষাদগ্রস্ততায়। নতুন যে আসছে, সেও কি এই আচরাচর বিস্তৃত
বিষন্নতা কে টপকে আনতে পারবে নতুন আনন্দের বান? কে জানে এর উত্তর? লোকটা
এগিয়েই চলে, এগোতে হবে বলেই। এই বনসীমা অতিক্রম করতে হবে বলে। মানুষের
সমাজে আবার অনিচ্ছুক পা রাখতে হবে বলে। পাখিটা ডেকেই চলেছে, কেঁদেই চলেছে
সারা জঙ্গল কান্নায় ভাসিয়ে