সব চরিত্র কাল্পনিক
এক মসৃণত্বকা নারী চেয়ারে বসে আছেন, সামনে কাপড় ঢাকা টেবিল। সালাঙ্কার নারীর পরনে স্বচ্ছ শাড়ি। গায়ের অলঙ্কার বৈভবেব সাক্ষ্য দেয়। হাতদুটি টেবিলের উপর কাপড়ের ফালির উপর ন্যস্ত, অতি পরিচ্ছন্না। নারীটির ডানপাশে একটি হুলোবিড়াল উপস্থিত, মনে হবে টেবিলের প্রান্তে উঁকি মারছে অথবা টুলের উপর বসে আছে ...সর্বদা সঙ্গী। বামদিকে একটি বকগলা ফুলদানী আর তাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন ফুলগুচ্ছ দৃশমান। কটা কনীনিকা সমৃদ্ধা একমনে তাঁর গলার হার চিবুচ্ছে। পরিচ্ছন্ন কাজ। ছবিটিতে অদ্ভুতভাবে শাড়ির ভিতর দিয়ে শরীরী সম্পদ দৃশ্যমান। গণেশ পাইনের ছবি যারা দেখতে অভ্যস্থ তাদের নিশ্চয় এই ছবি অবাক করেছে। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তকে লেখা চিঠিসূত্রে আমরা জানতে পারি টেম্পারায় আঁকা এই ছবিটির রচনাকাল ১৯৭৯ সালের মাঝামাঝি। একই সূত্রে তিনি লিখেছেন " এখন যেটি আঁকছি তার খসড়া পাঠালাম। খুবই সাদামাটা, হয়তো ছবিটির নাম হবে 'Woman biting her necklace!' হাসছো ?"। সমালোচক এলা দত্ত লিখেছেন 'This painting is a rare instance of a work where he escapes from tragic intersity and indulges in a lighter mood of fun.' ছবিটি নিয়ে গণেশ পাইনের মনে দ্বিধা ছিলো এবং সমালোচক বা রসিকরা এটিকে হালকা মেজাজের ছবি হিসাবে নিয়েছেন। সত্যি কি ছবিটি হালকা মেজাজের !!! দীর্ঘদিনের মনোবেদনা চেপে রাখলে সেটি হাস্যরসে রূপান্তরিত হয়ে বেরিয়ে আসে, একথা যেকোনো ভুক্তভোগী জনই স্বীকার করবেন। ধনীর দুলালী কাম ঘরানী বসে বসে নিরস ঐশ্বর্য চিবুচ্ছে, পাশে কৃত্তিম সৌন্দর্য্য আঁধার ফুল এবং হুলোমুখী স্বামী/পোষ্য দেখে ব্লাক কমেডির অস্তিত্ব সমর্থনে দৃঢ় ধারণা জন্মায়। এক অসাধারণ কুৎসিত ফ্যামিলী ফোটো ফ্রেম, যার পরতে পরতে রয়েছে না পাওয়ার বেদনাকে কৃত্তিম সৌন্দর্য, বৈভব এবং আধুনিকতা দিয়ে ঢাকবার প্রবল চেষ্টা।
শিল্পীর নির্মাণ নিয়ে দর্শক এমন কি অন্য শিল্পীদেরও অল্পবিস্তর কৌতূহল থাকে, আর শিল্পী যদি সদ্যপ্রয়াত গণেশ পাইন হন তাহলে তো আগ্রহ শতগুণ বৃদ্ধি পাবে। আমরা জানি শিল্পী তাঁর ভাবনার নির্যাসকে ক্যানভাসে লিপিবদ্ধ করেন রঙ ও রেখাকে সম্বল করে। নিজের ছবির নির্মান সম্পর্কে বলতে গিয়ে গণেশ পাইন এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন "আধুনিক চিত্রকলার দুটি প্রধান প্রবণতা। এক ছবির গঠন নির্মাণ নিয়ে নতুন ভাবনা। দুই মনে অবচেতন স্তর সম্পর্কে আগ্রহ"। প্রথম প্রবণতাটি শিল্পীদের জন্য তোলা থাক, কারণ শুধু নিরস তত্ত্বকথা এই প্রবন্ধের পক্ষে অপ্রয়োজনীয়। আমাদের আগ্রহ দ্বিতীয় প্রবণতা অর্থাৎ 'মনের অবচেতন স্তরের সম্পর্কে আগ্রহ', কারণ আমরা জানি ওঁনার ছবি মূলত আত্মজৈবনিক। অবচেতন নিয়ে যাদের সামান্য আগ্রহ এবং পড়াশুনা আছে তারা জানেন যে আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে শুরু করে বাস্তবিক অপ্রাসঙ্গিক অপ্রয়োজনীয় কাজের মধ্যেও একপ্রকার অবচেতন মন-শৃঙ্খল থাকে। এইসব কাজ স্থির মাথায় বিচার বিশ্লেষণ করলে কোনো ব্যক্তি বিশেষ সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায় যা তারা নিজের অজান্তেই নিজেদের মনের গভীর কুঠুরীতে লুকিয়ে রাখেন। আমরা এখানে দেখার চেষ্টা করব গণেশ পাইনের বিখ্যাত চারটি কাজকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব (হোক না তা লেখকের কষ্টকল্পনা)। লেখার শুরুতে সেই চেষ্টাই আমরা করেছি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রক্তকরবী' নাটকের রঞ্জনের মৃত্যু নিয়ে ১৯৬১ সালে জলরঙে একটি ছবি এঁকেছিলেন গণেশ পাইন। ছবিটিতে দেখি রঞ্জনের মৃতদেহ পড়ে আছে মেঝেতে। তাঁর একপাশে সিঁড়ির মুখে এলিয়ে নতমস্তকে নন্দিনী বসে আছে। রঞ্জনের চিবুকটি অস্বাভাবিকভাবে উঁচু হয়ে আছে যেন বলছে মৃত কিন্তু মৃত্যুর কাছে হার মানে নি। নন্দিনীর ঠিক বিপরীতে অপর পাশে রাজবেশে মহাপরাক্রান্ত রাজা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর ব্রীজম্যান সদৃশ্য পেশীবহুল ডানহাতটি দৃশ্যমান। মাথার বদলে শূণ্যতা বিরাজ করছে। পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড নাটক বর্ণিত যান্ত্রিক সভ্যতার যন্ত্রণাময় উপস্থিতি। শিল্পীর বর্ণনা থেকে তাঁর এই ছবির করণকৌশল সম্পর্কে জানতে পারি। ড্রইং করার পরে সারারাত হলুদগোলা জলে কাগজটিকে ডুবিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ফলে হলদে রঙ কাগজের ফাইবারে ঢুকে যায়। এরপর সাদা রঙ দিয়ে এলোপাথাড়ি টেক্সচার করে নেন যা প্রথম পর্যায় থেকে ছবিতে রয়ে গেছে। এরপর অন্যান্য রঙ দিয়ে ছবিটিকে শেষ করেন তিনি। স্বভাবত মনে খটকা লাগে আপদমস্তক নিরীহ এবং ধীরস্থির শিল্পীর কি প্রয়োজন পড়লো কথিত 'এলোপাথাড়ি' টেক্সচারের যার আর কোনোদিন প্রয়োজন হয় নি শিল্পীর। প্রশ্নটি আপকে ভাবায় কি ?
আর্ট কলেজের শিক্ষা শেষ করে স্কুলশিক্ষকের চাকুরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে ওই কলেজেই একটি উড-ক্রাফসের কোর্স করেছিলেন গণেশ পাইন সালটি ১৯৫৯-৬০। সেই ক্লাসেই পরিচয় হয় সহপাঠিনী ধনীর দুলালী মীরাদেবীর(পোদ্দার) সঙ্গে। বন্ধুত্ব অচিরেই অনুচ্চারিত প্রেমে পরিণত হয় কিন্তু পূর্ণতায় পৌঁছনোর আগেই বিচ্ছেদ ঘটে। বাড়ির মনোনিত পাত্রের সঙ্গে শুভ পরিণয় ঘটে মীরাদেবীর। এই বিচ্ছেদ শিল্পীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে থাকবে, আর সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর শিল্পীসত্তা এই বিচ্ছেদকে ধংসাত্মক রূপ দেয় নি, টেনে নিয়ে গেছে শৈল্পিক মনন নির্মাণে। সেই নির্মাণ থেকেই গড়ে উঠেছে 'রক্তকরবী' নামক চিত্রকর্মটি। মনের গভীরে থাকা যন্ত্রণা মুক্তি খুঁজেছে এলোপাথাড়ি টেক্সচারে, প্রশমিত করেছেন মনকে,আত্মাকে। আবার শৈল্পিক মনন ওই ক্ষত ঢেকেছে অন্যান্য রঙের নির্মাণ দ্বারা। নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না আলোচনার শুরুর ছবি 'উওম্যান বাইটিং হার নেকলেস' সেই টানাপোড়েনের দ্বিতীয় উপলব্ধি, অনেকটাই প্রশমিত সিন্থেসাইজ রূপে। তাই হয়ত শিল্পীর চেতন মন অবচেতনের গভীরে থাকা বেদনাটিকে মনে করেছিলেন 'আহা বোধহয় খুবই সাদামাটা'।
তৃতীয় ছবিটির নাম 'ইভিল কনভহারসেশান', এটি মিশ্র মাধ্যমে আঁকা, রচনাকাল ১৯৮৫। একটা অপরাধবোধ ধীরে ধীরে পেয়ে বসেছে শিল্পীকে। তাঁর মনে হয়েছিল তিনি পরকীয়ায় মত্ত। ততোদিনে বিখ্যাত হয়েছেন তিনি, সমাজের মানী লোক তিনি, আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে, হুসেন স্বীকার করে নিয়েছেন ভারতের সেরা শিল্পী বলে, গুণমুগ্ধ সংখ্যাতিত। কিন্তু কিছুতেই মীরাদেবীকে মন থেকে মুছতে পারেন নি অর্থাৎ জীবনের দ্বিতীয় প্রেমকে (প্রথম প্রেম অবশ্যই ছবি)। তাই তলে তলে মীরাদেবীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো। ততোদিনে মীরাদেবী এক পুত্রের জননী, ভরা সংসার। কিন্তু ঠিক মানাতে পারছেন না। তাদের এই দেখা-সাক্ষাত বা অনুচ্চারিত প্রেমের উপর গড়ে উঠেছিল এই ছবিটি। তাই ছবিটিতে দেখতে পাই রক্তকরবী নন্দিনী যিনি কিছুকাল পরে হয়েছিলেন মসৃণত্বকা, এখানে তাঁর সেই রূপ কিছুটা প্রশমিত স্তিমিত, চেয়ারে বসে আছেন হাঁটুর উপর হাতদুটি রেখে। তাঁর চেয়ারের ডান হাতলে উপবিষ্ট নিশাচর পেঁচা। পশ্চাদপট অন্ধকার, কোথাও কোথাও গাঢ়। গভীর পেঁচা কখনই আমাদের মনে মিঠে বাতাস বয়ে আনে না, যা আনে তা যেন অনেকটাই নষ্ট বা সামাজিক ভাবে অপবিত্র। বিস্তারে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
যতদূর জানি মূলত আত্মজৈবনিক শিল্পী গণেশ পাইন ব্যক্তিগত ঘটনা নিয়ে আরো দুটি ছবি এঁকেছেন যেগুলি এই রচনায় অন্তর্ভূক্ত নয়। একটির নাম 'দ্য ডোর, দ্য উইন্ডো' আবাল্য সঙ্গী দাদা কার্তিক পাইনের অকাল মৃত্যুর অনুভূতি থেকে সৃষ্ট। দ্বিতীয়টি স্নেহময়ী মায়ের জীবনাবসান নিয়ে আঁকা, শিরোনাম 'দ্য উডেন হর্স'। এছাড়া নিজের প্রতিকৃতির বদলে বারংবার এঁকেছেন বাঁদরের মুখ, সে আলোচনা অন্য কোনোদিন।
শিল্পীর আঁকা ছবি সত্যিই কি কোনো অনুভূতি জাগ্রত করে দর্শকের মনে? সত্যিই করে, অন্তত আলোচ্য চতুর্থক্সম ছবিটি তো বটেই। একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিশ্চয় এক্ষেত্রে অতিকথন হয়ে যাবে না। জেলা গ্রন্থাগারে দেশ পত্রিকার একটি সংখ্যা হাতে পড়েছিল নতুন শতাব্দীর শুরুতে (৪ মার্চ ২০০০)। সেখানে একটি ছবি বিশেষভাবে দৃষ্টিগোচর হল। একটি ভেলায় নরকঙ্কাল শুয়ে আছে, সামান্য একটু লজ্জাবস্ত্র দৃশ্যত। তার পাশে এক সালাঙ্কার নারী মাথায় মঙ্গলঘট নিয়ে বসে আছেন। তপ্তলোহিত বর্ণের শাড়ি পড়া নারীটির ডানহাত কঙ্কালটির ডান হাতের উপর আস্থাজ্ঞাপন স্পর্শ করেছে। পশ্চাদপট নীলের পর্দা নদীর সঙ্গে মিশে এক আধাভৌতিক রহস্যময় পরিমন্ডল তৈরি করছে। দূরে কিছুটা সাদা নিষ্পাপ আলো ঝরে পড়ছে। অঙ্কনশৈলী শিল্পীর সাক্ষর বহন করছে। নিচে ছোটো হরফে লেখা আছে 'গণেশ পাইন, বেহুলা, টেম্পারা ১৯৯৯'। ছবিটি চোখে পড়ার পর প্রথম যে কথাটি মনে এসেছিল সেটি হলো গণেশ পাইন বিয়ে করেছেন। বন্ধুদের বললাম, তারা আমার মানসিক সুস্থিরতা সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহে খোঁজখবর নিলো। প্রমাণ করবার উপায় নেই, সত্যিকথা বলতে কি মফস্বল শহরের জেলা গ্রন্থাগারই ছিলো আমাদের ভরসাস্থল ২০০০ সাল নাগাদ, এখনকার মতো তথ্য-প্রযুক্তি সহজলভ্য নয়। সেই সময় গণেশ পাইনের সম্পর্কে ধারণা বলতে মৃণাল ঘোষের লেখা 'গণেশ পাইনের ছবি' (প্রথম সংস্করণ) যা লাইব্রেরীর রেফারেন্স রুমের অন্ধকার আলমারীর বাসিন্দার। সেদিন শিল্পকলার উপর আমার ধারণা আর ওনার বইয়ের ভরসাতেই মনে এসেছিলো ছবি দেখে শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনের এই বিশেষ ঘটনাটি। তখনও জানতাম না এই নারী সেই নারী কিনা যিনি বিভিন্ন রূপে পূর্বের আলোচিত তিনটি ছবিটে দৃশ্যত হয়েছেন। কিছুদিন পর মৃণাল ঘোষের অপর একটি বই থেকে জানতে পারলাম আমার ধারণা ঠিকই।
গণেশ পাইন বিবাহ করেছিলেন ১৯৯১ সালে সেপ্টেম্বব মাসে সেই নারী মীরাদেবীকেই। মৃণাল ঘোষকে দেওয়া একটা সাক্ষাতকারে শিল্পী জানিয়েছেন "এটা খুব দুঃখের ব্যাপার, এটা এক অনুচ্চারিত প্রেম-ভালোবাসার ব্যাপার ছিল। তার মীরা যেহেতু খুব বড় বংশের কন্যা, ওঁর বাবা একজন Successful লোক ছিলেন business world-এ, আমার মতো হতচ্ছাড়া লোকের সঙ্গে তো বিয়ে দেওয়ার কোনো কারণ ছিল না। তাই একটা দুঃখের জীবন কাটিয়েছে ও প্রথম বিয়ের পর। কিন্তু তলায় তলায় ছিল সম্পর্কটা খুবই। তারপর যখন ও divorce করল, সাহসিকতার ব্যাপার, অখন আর বাধাটা রইলো না।" এই বিশেষ ঘটনাটিকে দীর্ঘ আট বছর পর তিনি মূর্ত করলেন ক্যানভাসে, মেশালেন বাঙালির মধ্যযুগের লোকসাহিত্যের মিথকে, মিথ আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা একাকার হয়ে জন্ম নিলো বিখ্যাত সৃষ্টি The voyage যারই বাংলা শিরোনাম 'বেহুলা'।
মকবুল ফিদা হুসেন একবার গণেশ পাইন সম্পর্কে বলেছিলেন, “যে কোনো শিল্পকর্ম যখন শিল্পীর ব্যক্তিগত উপলব্ধি মন্থন করে সৃষ্ট হয় তখন তা অমৃতের সমান হয়ে ওঠে। আর তা যদি গণেশ পাইনের মত ভারত সেরা শিল্পী হন তাহলে তো কোনো প্রকার দ্বিমত থাকে না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মিথ, আধুনিক মনন জারিত হয়ে তা সর্বকালীন সেরা সম্ভারে পরিণত হয়। আরো একটি ছবির কথা আলোচনা করার বিশেষভাবে ইচ্ছা ছিলো কিন্তু না প্রাবন্ধিক না পাঠক কেউই এখন প্রস্তুত নন সেটার জন্যে। তাই জন্য আমাদের আরো কিছুকাল অপেক্ষা করতেই হবে। সেই ছবিটি(গান্ধারী) দেখে আমার এক শিল্পী ভাই গৌরব রায় বলে উঠেছিল আরে এটা তো মীরাদেবীর মুখ। আগ্রহী পাঠকদের কাছে একটি ছবির কোলাজ তুলে দিলুম, দেখুন যদি কিছু আবিষ্কার করতে পারেন, আর এই সব নিয়েই এই বিশেষ সংখ্যা যা আমাদের পক্ষ থেকে শিল্পী গণেশ পাইনকে আমাদের মত করে শ্রদ্ধা, তার জীবনকে তুলে ধরার চেষ্টা ।”
এবার শোনা যাক নিজের জীবন সম্পর্কে একবার সদ্যপ্রয়াত চিত্রশিল্পী গণেশ পাইন কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, "আমার জীবনে ব্যাপ্তি নেই,বৈচিত্র নেই, ভ্রমণে আমার প্রবল অনীহা, আমার আছে জন্মার্জিত একবোধ, যা প্রাচীন জলে ভেসে আসা কোনো গুল্মের মত; যার শেকড় সঞ্চার আমার মনের গভীর প্রদেশে অবিরাম ঘটে চলেছে। জীবন এবং শিল্প সংক্রান্ত আমার যাবতীয় স্মৃতি স্বপ্ন অভিজ্ঞতা সবই তার সংশ্লেষিত হয়েছে সেই বোধ্যে। সে সংশ্লেষের তাৎপর্য আমি সঠিক বুঝিনা, শুধু তার ক্রিয়া অনুভব করতে পারি"। গণেশ পাইনের প্রয়াণ বাংলা তথা ভারতের নক্ষত্র পতন। বাঙালি চিত্রকলাকে পরম্পরা এবং নিজস্ব মনন মেধা দিয়ে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি তা নবীনদের সমৃদ্ধ এবং উৎসাহিত করবেই। ক্ষেপচুরিয়াসের এই সংখ্যা ওনার উপর আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। এই সংখ্যায় কবি, শিল্পী, সমালোচক এবং মুগ্ধ দর্শকের কলমে তাই উঠে এসেছে গণেশ পাইনের শিল্প ও জীবনের নানাদিক। ওনার আঁকা শিল্পকর্মের কিছু নমুনা রসিকদের জন্য রয়েছে। শিল্পীরা গণেশ পাইনকে কিভাবে দেখেছেন, থাকছে তার কিছু অনুভব। আশা করছি ক্ষেপচুরিয়াসের অন্যান্য সংখ্যার মত এই সংখ্যাও পাঠকমহলে সমাদৃত হবে।
শিল্পীর নির্মাণ নিয়ে দর্শক এমন কি অন্য শিল্পীদেরও অল্পবিস্তর কৌতূহল থাকে, আর শিল্পী যদি সদ্যপ্রয়াত গণেশ পাইন হন তাহলে তো আগ্রহ শতগুণ বৃদ্ধি পাবে। আমরা জানি শিল্পী তাঁর ভাবনার নির্যাসকে ক্যানভাসে লিপিবদ্ধ করেন রঙ ও রেখাকে সম্বল করে। নিজের ছবির নির্মান সম্পর্কে বলতে গিয়ে গণেশ পাইন এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন "আধুনিক চিত্রকলার দুটি প্রধান প্রবণতা। এক ছবির গঠন নির্মাণ নিয়ে নতুন ভাবনা। দুই মনে অবচেতন স্তর সম্পর্কে আগ্রহ"। প্রথম প্রবণতাটি শিল্পীদের জন্য তোলা থাক, কারণ শুধু নিরস তত্ত্বকথা এই প্রবন্ধের পক্ষে অপ্রয়োজনীয়। আমাদের আগ্রহ দ্বিতীয় প্রবণতা অর্থাৎ 'মনের অবচেতন স্তরের সম্পর্কে আগ্রহ', কারণ আমরা জানি ওঁনার ছবি মূলত আত্মজৈবনিক। অবচেতন নিয়ে যাদের সামান্য আগ্রহ এবং পড়াশুনা আছে তারা জানেন যে আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে শুরু করে বাস্তবিক অপ্রাসঙ্গিক অপ্রয়োজনীয় কাজের মধ্যেও একপ্রকার অবচেতন মন-শৃঙ্খল থাকে। এইসব কাজ স্থির মাথায় বিচার বিশ্লেষণ করলে কোনো ব্যক্তি বিশেষ সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায় যা তারা নিজের অজান্তেই নিজেদের মনের গভীর কুঠুরীতে লুকিয়ে রাখেন। আমরা এখানে দেখার চেষ্টা করব গণেশ পাইনের বিখ্যাত চারটি কাজকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব (হোক না তা লেখকের কষ্টকল্পনা)। লেখার শুরুতে সেই চেষ্টাই আমরা করেছি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রক্তকরবী' নাটকের রঞ্জনের মৃত্যু নিয়ে ১৯৬১ সালে জলরঙে একটি ছবি এঁকেছিলেন গণেশ পাইন। ছবিটিতে দেখি রঞ্জনের মৃতদেহ পড়ে আছে মেঝেতে। তাঁর একপাশে সিঁড়ির মুখে এলিয়ে নতমস্তকে নন্দিনী বসে আছে। রঞ্জনের চিবুকটি অস্বাভাবিকভাবে উঁচু হয়ে আছে যেন বলছে মৃত কিন্তু মৃত্যুর কাছে হার মানে নি। নন্দিনীর ঠিক বিপরীতে অপর পাশে রাজবেশে মহাপরাক্রান্ত রাজা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর ব্রীজম্যান সদৃশ্য পেশীবহুল ডানহাতটি দৃশ্যমান। মাথার বদলে শূণ্যতা বিরাজ করছে। পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড নাটক বর্ণিত যান্ত্রিক সভ্যতার যন্ত্রণাময় উপস্থিতি। শিল্পীর বর্ণনা থেকে তাঁর এই ছবির করণকৌশল সম্পর্কে জানতে পারি। ড্রইং করার পরে সারারাত হলুদগোলা জলে কাগজটিকে ডুবিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ফলে হলদে রঙ কাগজের ফাইবারে ঢুকে যায়। এরপর সাদা রঙ দিয়ে এলোপাথাড়ি টেক্সচার করে নেন যা প্রথম পর্যায় থেকে ছবিতে রয়ে গেছে। এরপর অন্যান্য রঙ দিয়ে ছবিটিকে শেষ করেন তিনি। স্বভাবত মনে খটকা লাগে আপদমস্তক নিরীহ এবং ধীরস্থির শিল্পীর কি প্রয়োজন পড়লো কথিত 'এলোপাথাড়ি' টেক্সচারের যার আর কোনোদিন প্রয়োজন হয় নি শিল্পীর। প্রশ্নটি আপকে ভাবায় কি ?
আর্ট কলেজের শিক্ষা শেষ করে স্কুলশিক্ষকের চাকুরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে ওই কলেজেই একটি উড-ক্রাফসের কোর্স করেছিলেন গণেশ পাইন সালটি ১৯৫৯-৬০। সেই ক্লাসেই পরিচয় হয় সহপাঠিনী ধনীর দুলালী মীরাদেবীর(পোদ্দার) সঙ্গে। বন্ধুত্ব অচিরেই অনুচ্চারিত প্রেমে পরিণত হয় কিন্তু পূর্ণতায় পৌঁছনোর আগেই বিচ্ছেদ ঘটে। বাড়ির মনোনিত পাত্রের সঙ্গে শুভ পরিণয় ঘটে মীরাদেবীর। এই বিচ্ছেদ শিল্পীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে থাকবে, আর সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর শিল্পীসত্তা এই বিচ্ছেদকে ধংসাত্মক রূপ দেয় নি, টেনে নিয়ে গেছে শৈল্পিক মনন নির্মাণে। সেই নির্মাণ থেকেই গড়ে উঠেছে 'রক্তকরবী' নামক চিত্রকর্মটি। মনের গভীরে থাকা যন্ত্রণা মুক্তি খুঁজেছে এলোপাথাড়ি টেক্সচারে, প্রশমিত করেছেন মনকে,আত্মাকে। আবার শৈল্পিক মনন ওই ক্ষত ঢেকেছে অন্যান্য রঙের নির্মাণ দ্বারা। নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না আলোচনার শুরুর ছবি 'উওম্যান বাইটিং হার নেকলেস' সেই টানাপোড়েনের দ্বিতীয় উপলব্ধি, অনেকটাই প্রশমিত সিন্থেসাইজ রূপে। তাই হয়ত শিল্পীর চেতন মন অবচেতনের গভীরে থাকা বেদনাটিকে মনে করেছিলেন 'আহা বোধহয় খুবই সাদামাটা'।
তৃতীয় ছবিটির নাম 'ইভিল কনভহারসেশান', এটি মিশ্র মাধ্যমে আঁকা, রচনাকাল ১৯৮৫। একটা অপরাধবোধ ধীরে ধীরে পেয়ে বসেছে শিল্পীকে। তাঁর মনে হয়েছিল তিনি পরকীয়ায় মত্ত। ততোদিনে বিখ্যাত হয়েছেন তিনি, সমাজের মানী লোক তিনি, আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে, হুসেন স্বীকার করে নিয়েছেন ভারতের সেরা শিল্পী বলে, গুণমুগ্ধ সংখ্যাতিত। কিন্তু কিছুতেই মীরাদেবীকে মন থেকে মুছতে পারেন নি অর্থাৎ জীবনের দ্বিতীয় প্রেমকে (প্রথম প্রেম অবশ্যই ছবি)। তাই তলে তলে মীরাদেবীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো। ততোদিনে মীরাদেবী এক পুত্রের জননী, ভরা সংসার। কিন্তু ঠিক মানাতে পারছেন না। তাদের এই দেখা-সাক্ষাত বা অনুচ্চারিত প্রেমের উপর গড়ে উঠেছিল এই ছবিটি। তাই ছবিটিতে দেখতে পাই রক্তকরবী নন্দিনী যিনি কিছুকাল পরে হয়েছিলেন মসৃণত্বকা, এখানে তাঁর সেই রূপ কিছুটা প্রশমিত স্তিমিত, চেয়ারে বসে আছেন হাঁটুর উপর হাতদুটি রেখে। তাঁর চেয়ারের ডান হাতলে উপবিষ্ট নিশাচর পেঁচা। পশ্চাদপট অন্ধকার, কোথাও কোথাও গাঢ়। গভীর পেঁচা কখনই আমাদের মনে মিঠে বাতাস বয়ে আনে না, যা আনে তা যেন অনেকটাই নষ্ট বা সামাজিক ভাবে অপবিত্র। বিস্তারে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
যতদূর জানি মূলত আত্মজৈবনিক শিল্পী গণেশ পাইন ব্যক্তিগত ঘটনা নিয়ে আরো দুটি ছবি এঁকেছেন যেগুলি এই রচনায় অন্তর্ভূক্ত নয়। একটির নাম 'দ্য ডোর, দ্য উইন্ডো' আবাল্য সঙ্গী দাদা কার্তিক পাইনের অকাল মৃত্যুর অনুভূতি থেকে সৃষ্ট। দ্বিতীয়টি স্নেহময়ী মায়ের জীবনাবসান নিয়ে আঁকা, শিরোনাম 'দ্য উডেন হর্স'। এছাড়া নিজের প্রতিকৃতির বদলে বারংবার এঁকেছেন বাঁদরের মুখ, সে আলোচনা অন্য কোনোদিন।
শিল্পীর আঁকা ছবি সত্যিই কি কোনো অনুভূতি জাগ্রত করে দর্শকের মনে? সত্যিই করে, অন্তত আলোচ্য চতুর্থক্সম ছবিটি তো বটেই। একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিশ্চয় এক্ষেত্রে অতিকথন হয়ে যাবে না। জেলা গ্রন্থাগারে দেশ পত্রিকার একটি সংখ্যা হাতে পড়েছিল নতুন শতাব্দীর শুরুতে (৪ মার্চ ২০০০)। সেখানে একটি ছবি বিশেষভাবে দৃষ্টিগোচর হল। একটি ভেলায় নরকঙ্কাল শুয়ে আছে, সামান্য একটু লজ্জাবস্ত্র দৃশ্যত। তার পাশে এক সালাঙ্কার নারী মাথায় মঙ্গলঘট নিয়ে বসে আছেন। তপ্তলোহিত বর্ণের শাড়ি পড়া নারীটির ডানহাত কঙ্কালটির ডান হাতের উপর আস্থাজ্ঞাপন স্পর্শ করেছে। পশ্চাদপট নীলের পর্দা নদীর সঙ্গে মিশে এক আধাভৌতিক রহস্যময় পরিমন্ডল তৈরি করছে। দূরে কিছুটা সাদা নিষ্পাপ আলো ঝরে পড়ছে। অঙ্কনশৈলী শিল্পীর সাক্ষর বহন করছে। নিচে ছোটো হরফে লেখা আছে 'গণেশ পাইন, বেহুলা, টেম্পারা ১৯৯৯'। ছবিটি চোখে পড়ার পর প্রথম যে কথাটি মনে এসেছিল সেটি হলো গণেশ পাইন বিয়ে করেছেন। বন্ধুদের বললাম, তারা আমার মানসিক সুস্থিরতা সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহে খোঁজখবর নিলো। প্রমাণ করবার উপায় নেই, সত্যিকথা বলতে কি মফস্বল শহরের জেলা গ্রন্থাগারই ছিলো আমাদের ভরসাস্থল ২০০০ সাল নাগাদ, এখনকার মতো তথ্য-প্রযুক্তি সহজলভ্য নয়। সেই সময় গণেশ পাইনের সম্পর্কে ধারণা বলতে মৃণাল ঘোষের লেখা 'গণেশ পাইনের ছবি' (প্রথম সংস্করণ) যা লাইব্রেরীর রেফারেন্স রুমের অন্ধকার আলমারীর বাসিন্দার। সেদিন শিল্পকলার উপর আমার ধারণা আর ওনার বইয়ের ভরসাতেই মনে এসেছিলো ছবি দেখে শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনের এই বিশেষ ঘটনাটি। তখনও জানতাম না এই নারী সেই নারী কিনা যিনি বিভিন্ন রূপে পূর্বের আলোচিত তিনটি ছবিটে দৃশ্যত হয়েছেন। কিছুদিন পর মৃণাল ঘোষের অপর একটি বই থেকে জানতে পারলাম আমার ধারণা ঠিকই।
গণেশ পাইন বিবাহ করেছিলেন ১৯৯১ সালে সেপ্টেম্বব মাসে সেই নারী মীরাদেবীকেই। মৃণাল ঘোষকে দেওয়া একটা সাক্ষাতকারে শিল্পী জানিয়েছেন "এটা খুব দুঃখের ব্যাপার, এটা এক অনুচ্চারিত প্রেম-ভালোবাসার ব্যাপার ছিল। তার মীরা যেহেতু খুব বড় বংশের কন্যা, ওঁর বাবা একজন Successful লোক ছিলেন business world-এ, আমার মতো হতচ্ছাড়া লোকের সঙ্গে তো বিয়ে দেওয়ার কোনো কারণ ছিল না। তাই একটা দুঃখের জীবন কাটিয়েছে ও প্রথম বিয়ের পর। কিন্তু তলায় তলায় ছিল সম্পর্কটা খুবই। তারপর যখন ও divorce করল, সাহসিকতার ব্যাপার, অখন আর বাধাটা রইলো না।" এই বিশেষ ঘটনাটিকে দীর্ঘ আট বছর পর তিনি মূর্ত করলেন ক্যানভাসে, মেশালেন বাঙালির মধ্যযুগের লোকসাহিত্যের মিথকে, মিথ আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা একাকার হয়ে জন্ম নিলো বিখ্যাত সৃষ্টি The voyage যারই বাংলা শিরোনাম 'বেহুলা'।
মকবুল ফিদা হুসেন একবার গণেশ পাইন সম্পর্কে বলেছিলেন, “যে কোনো শিল্পকর্ম যখন শিল্পীর ব্যক্তিগত উপলব্ধি মন্থন করে সৃষ্ট হয় তখন তা অমৃতের সমান হয়ে ওঠে। আর তা যদি গণেশ পাইনের মত ভারত সেরা শিল্পী হন তাহলে তো কোনো প্রকার দ্বিমত থাকে না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মিথ, আধুনিক মনন জারিত হয়ে তা সর্বকালীন সেরা সম্ভারে পরিণত হয়। আরো একটি ছবির কথা আলোচনা করার বিশেষভাবে ইচ্ছা ছিলো কিন্তু না প্রাবন্ধিক না পাঠক কেউই এখন প্রস্তুত নন সেটার জন্যে। তাই জন্য আমাদের আরো কিছুকাল অপেক্ষা করতেই হবে। সেই ছবিটি(গান্ধারী) দেখে আমার এক শিল্পী ভাই গৌরব রায় বলে উঠেছিল আরে এটা তো মীরাদেবীর মুখ। আগ্রহী পাঠকদের কাছে একটি ছবির কোলাজ তুলে দিলুম, দেখুন যদি কিছু আবিষ্কার করতে পারেন, আর এই সব নিয়েই এই বিশেষ সংখ্যা যা আমাদের পক্ষ থেকে শিল্পী গণেশ পাইনকে আমাদের মত করে শ্রদ্ধা, তার জীবনকে তুলে ধরার চেষ্টা ।”
এবার শোনা যাক নিজের জীবন সম্পর্কে একবার সদ্যপ্রয়াত চিত্রশিল্পী গণেশ পাইন কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, "আমার জীবনে ব্যাপ্তি নেই,বৈচিত্র নেই, ভ্রমণে আমার প্রবল অনীহা, আমার আছে জন্মার্জিত একবোধ, যা প্রাচীন জলে ভেসে আসা কোনো গুল্মের মত; যার শেকড় সঞ্চার আমার মনের গভীর প্রদেশে অবিরাম ঘটে চলেছে। জীবন এবং শিল্প সংক্রান্ত আমার যাবতীয় স্মৃতি স্বপ্ন অভিজ্ঞতা সবই তার সংশ্লেষিত হয়েছে সেই বোধ্যে। সে সংশ্লেষের তাৎপর্য আমি সঠিক বুঝিনা, শুধু তার ক্রিয়া অনুভব করতে পারি"। গণেশ পাইনের প্রয়াণ বাংলা তথা ভারতের নক্ষত্র পতন। বাঙালি চিত্রকলাকে পরম্পরা এবং নিজস্ব মনন মেধা দিয়ে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি তা নবীনদের সমৃদ্ধ এবং উৎসাহিত করবেই। ক্ষেপচুরিয়াসের এই সংখ্যা ওনার উপর আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। এই সংখ্যায় কবি, শিল্পী, সমালোচক এবং মুগ্ধ দর্শকের কলমে তাই উঠে এসেছে গণেশ পাইনের শিল্প ও জীবনের নানাদিক। ওনার আঁকা শিল্পকর্মের কিছু নমুনা রসিকদের জন্য রয়েছে। শিল্পীরা গণেশ পাইনকে কিভাবে দেখেছেন, থাকছে তার কিছু অনুভব। আশা করছি ক্ষেপচুরিয়াসের অন্যান্য সংখ্যার মত এই সংখ্যাও পাঠকমহলে সমাদৃত হবে।
ক্ষেপচুরিয়ানসের পক্ষে অমিত বিশ্বাস