আপন মাহমুদ এর একগুচ্ছ কবিতা
মা প্রজাপতি ও অন্যান্য ছায়া
মায়ের উদ্দেশে বাবা যে চুমুটা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন বাতাসে
শুনেছি, সেই হাওয়াইচুমুটা থেকেই জন্ম নিয়েছিলো
পৃথিবীর প্রথম প্রজাপতি
মা, পৃথিবীর যেকোনো নারী থেকে যাকে কখনোই আলাদা করা
যায় না_তাকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত-বিভ্রান্ত সেই প্রজাপতিটার
ডানা থেকে যখন টুপটাপ ঝরে পড়ছিল রঙের আকুতি_রঙের
সেই অপচয় ঘোচাতেই সম্ভবত জন্ম হয়েছিলো পৃথিবীর আর
সব প্রজাপতির
মাকে বাবা খুঁজে পেয়েছেন সেই কবে! অথচ, তার মুুখের দিকে
তাকিয়ে কখনোই মনে হয়নি_জীবনে একটাও প্রজাপতি তার
খোঁপায় বসেছে।
মা প্রজাপতি ও অন্যান্য ছায়া
মায়ের মুখ মনে এলে নিজেকে রক্ষকশূন্য গোলবার মনে
হয়--মনে হয় সব কটি গোলই হয়ে যাচ্ছে--কিছুতেই
ঠেকাতে পারছি না--অথচ, রেফারির বাঁশি যে পক্ষেই
বাজুক তারই জেতার কথা
হার-জিত প্রসঙ্গে ইদানীং মা খুব একটা কথা বলেন না,
মাঝেমাঝে দূর দীর্ঘশ্বাসের পালক ঝরাতে ঝরাতে
বলেন, ‘যারা জিততে জিততে জিততে ভুলে গেছে--যারা
হারতে হারতে হারতে ভুলে গেছে--তাদের সবার উচ্চতাই
সমান’
মানুষের উচ্চতা সমান ভেবেই আমাদের গান শুরু করার
কথা--অথচ রেফারির বাঁশি কেবল জেতাবার জন্যই
বাজে--হারাবার জন্যই বাজে!
মা প্রজাপতি ও অন্যান্য ছায়া--৩
আমার জন্মের রাতে একটাও নক্ষত্র খসে পড়েনি মাটিতে -- যদিও
আপন-আকাশ ভুলে মা আমাকেই তুলে ধরেছিলেন তার প্রার্থনার
করতলে-- প্রার্থনা শেষে মা আজো চোখ মুছেন -- যে চোখে খুব কাছের
নক্ষত্রটাকেও ঝাঁপসা দেখায়।
বাবা রাজমিস্ত্রি, দাদি আত্মহত্যা করেছেন পেটের পিড়ায়। তবু আমার
কখনো সাব-কন্ট্রাক্টর কিংবা এলএমএফ ডাক্তার হতে ইচ্ছে করেনি।
বরং নক্ষত্র হতে না-পারার অহেতুক বেদনা নিয়ে আমি আজো বেজে
চলেছি সেই বেহালাবাদকের আঙুলে-- ঘনকুয়াশার দিকে নিরন্তর
হেঁটে যাওয়া যার অমোঘ নিয়তি।
আমার জন্মধ্বনিতে কাঁপেনি আকাশ, উতসবের একটাও বাতি
যায়নি নিভে-- কেবল কোকিল, কোকিল উড়ে গেছে দূরে...।
মা প্রজাপতি ও অন্যান্য ছায়া--চার
মা, তোমার বেজারমুখের প্রতিবেশী আমি এক চুপচাপ বালক--নিজেকে
হারিয়ে ফেলেছি সেই কবে, নবম শ্রেণীতে--নিজেকে ডুবিয়ে ফেলেছি
সেই কবে, জিল্লাল মিয়ার দিঘিতে--এখনো আনানসির মতো ঘুরছি
দ্যাখো, বন্ধুর লোভে...
মা, তোমার প্রসববেদনা থেকে সেই কবে পথের শুরু--হাঁটতে
হাঁটতে পৃথিবী দুপুর হয়ে গেছে--তবু, বন্ধুর মতো কোনো ছায়া
নেই চারপাশে--বটের ছায়াও কিনতে পাওয়া যায় না বাজারে।
বিলবোর্ড-বৃষ্টি
========
কোনো কোনো গান অংক পরীক্ষার চেয়েও ছোট ছিলো-- কোনো
গান ছিলো কচুপাতার পানি--কান্নাও একটা গানেরই নাম, যা ছিলো
তোমার আবেগ সমান--তুমি এখন মিসকল’র মতো বড়-- হাঁটুতে
থুতনি কিছুটা জড়োসড়ো!
কোনো কোনো গান সুদীর্ঘ আপেল বাগান-- কোনো গান পুঁজি
তাড়িত বিলবোর্ড-বৃষ্টি--কোনোটা বা সাম্যের ঠিকানা খুঁজে খুঁজে
আজ কুয়াশা দৃষ্টি...
কোনো কোনো গান কাস্তের মতো বাঁকা--ক্ষুধার তীব্রতা
নিয়ে ফসলের মাঠ দেখা!
নাভীফুল
======
আমাদের আঁকাআঁকির স্কুলে, ব্ল্যাকবোর্ডে যে কদমফুল এঁকেছিলেন
বর্ষা ম্যাডাম--তার ব্যাঞ্জনা কতটুকু, কার দিকে ছড়ালো-- এনিয়ে
কখনোই ভাবিনি-- কেনোনা, চকে আঁকা ওই ফুল মুছে গেলেও
বর্ষা ম্যাডাম থেকে যান-- আর রঙিন ছাতা মাথায় নেলপলিশ-পা
টিপে টিপে হেঁটে বেড়ান আমাদের কাদাজল পথে।
বর্ষা ম্যাডাম খুবই ম্যাডাম-- কেনো না, ব্ল্যাকবোর্ডের উঁচুতে
কদমফুল মুছতে মুছতে তিনি আমাদের নাভীও দেখান।
আর কে না জানে, গভীরতা ও ব্যাঞ্জনার দিক থেকে নাভীফুলই
সবচেয়ে এগিয়ে।
প্রসঙ্গ; বর্ষামঙ্গল
আমাদের উদীচী ও চারুকলার আপুরা এবারও বেশ নাচ দেখালেন
বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানে--কেউ কেউ যথারীতি পুরনো রবিঠাকুরকেই নতুন করে
ঝরাতে চেষ্টা করলেন--মঞ্চ থেকে একটু দূরে, বৃষ্টি ও ভেজাবালিকাদের
প্রতি মুগ্ধতা রেখে আমরা গল্প করছিলাম-- আমাদের একজন সিগারেট
ধরাতে ধরাতে বলল,‘ ছাত্রী হোস্টেলের মেয়েরাই সব‘চে কার্যকর
বৃষ্টি--কেনো না, ওদের শুকাতে দেওয়া একটা পুরনোই ওড়না দেখেই
তুমুল ভিজে উঠি আমরা।’
আরেকজন কিছুটা অনাসক্ত গলায় বলল,‘ বাদ দে, ওই সব বৃষ্টি-টিষ্টি--
কোথাও একটা কলার ভেলাও দেখছি না যে ভাসবো-- ভাসতে না জানলে
জাহাজ তো দূরের কথা একটা কাগজের নৌকাও হওয়া যায় না।’
এভাবেই, একথায়-ওকথায় রাত বাড়ে-- আমাদের বর্ষাবিষয়ক আড্ডাও
যায় ভেঙে-- কেবল গল্প পড়ে থাকে ছাতা ব্যবসায়ীদের ঘিরে!
এক.
ও মেঘ, বউয়ের মতো মেঘ; আমাকে প্রেমিকার
মতো ভেজাও-দ্যাখো, চিন্তার সোনালি আঁশ শুকিয়ে
যাচ্ছে। আমি তেমন প্রার্থনা জানি না- বড়জোর
ছেলেব্যাঙ-মেয়েব্যাঙে বিয়ে দিতে পারি-থু লেপে
ভিজিয়ে দিতে পারি নিজের শুকনো ঠোঁট।
মেঘ, তুমিও কি অপচয়ের ভয়ে আর আগের মতো
ঝরো না- জলখরচের ভয়ে আমি যেমন কান্নাকে
দূরে রাখি- থাক অতো হিসাব-নিকাশ- দ্যাখো,
চালতাফুল তাকিয়ে আছে অবিবাহিত খালাতো
বোনের মতো! যদি ভেজাও তুমি- হবো শাপলায়
ভরে যাওয়া মাঠ।
শুনো; গল্পের উঠান কি একাই ভিজবে আমাদের
সর্দি-কাশির অজুহাতে! এসো, ছাতাহীন হাঁটুরের মতো
ভিজি- আরো কাছে গিয়ে দেখি আষাঢ়ের ভেজা বউদি।
ও মেঘ, বউয়ের মতো মেঘ; আমাকে প্রেমিকার
মতো ভেজাও।
দুই.
জানালা থেকে দুই মিনিট দূরে, যে মাঠ ঘাসের ভেতর একাকি
ভিজে- আমি তাকে ভগিনীর বয়ফ্রেন্ডের মতো হিংসা
করি। কেননা, ডাক্তার তাকে কখনোই ভিজতে ‘না’ করেনি- তার
নেই সাইনোসাইটিস ঝামেলা, মোবাইল ভেজার ভয়।
সেদিন দূর থেকে তাকে ভিজতে দেখে আমি শেষ সিগারেটটিও
জ্বালিয়ে ফেলি- সিগারেটের সঙ্গে পুড়তে পুড়তে ভাবছিলাম: আগামী
আষাঢ়ের আগেই ঘরটা বাইরে নেওয়া যায় কি-না- ভাবতে ভাবতেই
পাড়ার মাস্তানের মতো ঝড়োহাওয়া এসে জানালা বন্ধ করার নির্দেশ
দিলো-আর আমি ভয় পেয়ে, গুমের ভেতর থেকে ঘুমের ভেতর চলে
গেলাম।
ঘুম থেকে বেরিয়ে দেখি, ওই বর্ষা-তৃপ্ত সবুজ মাঠেই একটা গরু ঘাস
খাচ্ছে একা- যার রাখাল হয়তো কখনোই খুঁজে পাবে না তার হারিয়ে
যাওয়া বাঁশি।
তিন.
আমাদের আঁকাআঁকির স্কুলে, ব্ল্যাকবোর্ডে যে কদমফুল এঁকেছিলেন
বর্ষা ম্যাডাম- তার ব্যাঞ্জনা কতটুকু, কার দিকে ছড়ালো- এনিয়ে
কখনোই ভাবিনি- কেনোনা, চকে আঁকা ওই ফুল মুছে গেলেও
বর্ষা ম্যাডাম থেকে যান- আর রঙিন ছাতা মাথায় নেলপলিশ-পা
টিপে টিপে হেঁটে বেড়ান পৃথিবীর পথে-পথে।
বর্ষা ম্যাডাম খুবই ম্যাডাম- কেনো না, ব্ল্যাকবোর্ডের উঁচুতে
কদমফুল মুছতে মুছতে তিনি আমাদের নাভীও দেখান।
আর কে না জানে, গভীরতা ও ব্যাঞ্জনার দিক থেকে নাভীফুলই
সবচেয়ে এগিয়ে।
চার.
আমাদের উদীচী ও চারুকলার আপুরা এবারও বেশ নাচ দেখালেন
বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানে- কেউ কেউ যথারীতি পুরনো রবিঠাকুরকেই নতুন করে
ঝরাতে চেষ্টা করলেন- মঞ্চ থেকে একটু দূরে, বৃষ্টি ও ভেজাবালিকাদের
প্রতি মুগ্ধতা রেখে আমরা গল্প করছিলাম- আমাদের একজন সিগারেট
ধরাতে ধরাতে বলল, ‘ছাত্রী হোস্টেলের মেয়েরাই সব’চে কার্যকর
বৃষ্টি- কেননা, ওদের শুকাতে দেওয়া একটা পুরনো ওড়না দেখেই
তুমুল ভিজে উঠি আমরা।’
আরেকজন কিছুটা অনাসক্ত গলায় বলল, ‘বাদ দে, ওই সব বৃষ্টি-টিষ্টি-
কোথাও একটা কলার ভেলাও দেখছি না যে ভাসবো- ভাসতে না জানলে
জাহাজ তো দূরের কথা একটা কাগজের নৌকাও হওয়া যায় না।’
এভাবেই, একথায়-ওকথায় রাত বাড়ে- আমাদের বর্ষাবিষয়ক আড্ডাও
যায় ভেঙে- কেবল গল্প পড়ে থাকে ছাতা ব্যবসায়ীদের ঘিরে!
বেহালাবাদক
আমি আছি অজস্র পাতাঝরার শব্দ নিয়ে--এই শীতে যার
কিছুটা বিক্রি হবার কথা একজন বৃদ্ধ বেহালাবাদকের অবশিষ্ট
হাসিটির বিনিময়ে--শুনেছি, যেকোনো আত্মহননকারী
মানুষের কপালের ভাঁজেই এরকম একটি হাসি লুকিয়ে থাকে--
যা কিনা সুর ও শিল্পপ্রিয় মানুষের প্রতি ঈশ্বরের শেষ উপহার
ঈশ্বরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক পাশের বাড়ির অহংকারী ভালো
ছাত্রীটির মতো--যে আমাকে সঙ্গে নেযনি, আবার ফেলেও যাযনি
শীত থেকে বসন্ত এতো দূরে যে, সেই বৃদ্ধ বেহালাবাদকের সঙ্গে
আমার আর দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কথা, পাহাড়ের সঙ্গে
পাহাড়, তোমাকে কিছু বলতে ইচ্ছে করে--বিশেষত মনমরা বিকেলে
কী করো তুমি--কার কথা ভাবো--কে তোমার কান্নাকে প্রথম ঝরনা
বলেছিলো? আমি? আমি দু-চারটা সিগারেট বেশি খাই, চুপচাপ
ঘুরি-ফিরি--দাড়ি কেন কাটতে হবে, ভাবি...
মাঝেমাঝে নিজেকে শৈশবের হাতে তুলে দিয়ে ঘড়ি দেখি--ঘড়িতে
৩৪টা বাজে! ফুল পাখি নদী ওরা কেমন আছে?
পাহাড় তুমি কি জানো, রজনীগন্ধা সবজি নয় কেন!
লাল বাতির বায়োগ্রাফি
কী হবে রঙের কথা বলে--রঙের যাদুকর প্রজাপতি--সেও জানে না কতটা বিভ্রান্তি নিয়ে তার ওড়াউড়ি! একদিন না-বুঝেই নীল-পেন্সিল হাতে এঁকে ফেলতে চেয়েছি নারীনাভির সবটুকু গভীরতা--সেই থেকে আমি অন্ধ--সেই থেকে যেকোনো গর্তই আমাকে লাল বাতির বায়োগ্রাফি শোনায়
রঙের প্রসঙ্গ এলেই সেই বেহালাবাদকের কথা মনে পড়ে--বেহালা বাজাতে বাজাতে যে কি-না আকাশের সবটুকু নীল খসাতে চেয়েছিল--অথচ, সে এখন নীল-প্রতিবন্ধীদের সভায় নিয়মিত সভাপতিত্ব করে! আর সবুজ অথবা কালোর প্রসঙ্গ উঠলেই যে বাদক খুব বিজ্ঞের মতো মাথা দোলাতে থাকে--যা দেখে যেকারোই মনে হতে পারে রঙের যাবতীয় ভেলকিবাজির সঙ্গে তার গোপন আঁতাত রয়েছে--এসব জানি, জানি বলেই, রংবিষয়ক যেকোনো গল্প লিখেই আমি কেটে দিই-কারণ আমি তো জানি না--সাইমাদের বাম স্তনেযে তিলটা, তার মধ্যে অন্ধকার ছাড়া আর কী কী রঙের চাতুরি আছে!
হতে পারে রঙে আমার বিভ্রান্তি বড় বেশি--হতে পারে ভুলপাঠে রঙ মুগ্ধ করেছে আমাকে, কিন্তু তোমরা? তোমরা কেন আজো লাল জামা পরো--আজো কেন
লালের ভেতর, নীলের ভেতর তোমাদের ওঠা-নামার সিঁড়ি!
শিরনামহীন তিনটি কবিতা
১.
একদিন সমস্ত কোলাহল থেকে দূরে, তনুশ্রীদের
ওড়নার মতো কোনো এক দ্বিধাগ্রস্ত বিকালে আমিও
বাজাবো বাঁশি। বাঁশি শুনে দু’একটা দার্শনিক গাছ
প্র্যাচের মতো মাথা ঝাঁকাবে, হয়তো ঝরে পড়বে
দু’একটি শুকনো পাতা
জেনে যাবো, ঝরে পড়ার আগে পাতাদের গান
কোথায় থাকে।
২.
আমাকে নিখোঁজ করে ফেলুন
‘জনাব-২০১২’--যেখানে কবিতা ছাড়া
আর কিছুই দেখা যাবে না--
দেখা যাবে না মানুষপোড়া ছাই--যেখান
থেকে চিৎকার
করে গালি দেওয়া যাবে প্রতিপক্ষকে--
লক্ষ লক্ষ ঘুণপোকাকে
প্রকাশ্যে দেখিয়ে দেওয়া যাবে স্বার্থান্বেষীদের
সংবিধান।
নিখোঁজ করে ফেলুন আমাকে, সেইখানে--
যেখানে আদালতের চোখ মানুষের
মতো--যেখানে ঔপনিবেশিক তৎপরতার
বদলে শিমফুলের বৃষ্টি হবে--পথ
ভুলে গেলে রাজহাঁস গলা উচিঁয়ে বলবে,‘
আসুন... এদিকে বন্দুক
নেই, আমরা একই গান সবাই গাই’।
৩.
গোলাপঅথবা চন্দ্রমল্লিকার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক কেমন ছিল জানি না। তবে কোনো এক শীতসকালে ঘরের পেছনে অকারণে ফুটে থাকা কিছু ঘাসফুলের সাথে মা আমার আলাপ করে দিয়ে বলেছিলেন, জীবনের যত কফ-থুথু আর উড়াল হারানোর বেদনা আমি জমা রেখেছিএই ঘাসফুলের কাছে এমনকি প্রসব বেদনাও'। সেই থেকে যে কোনো নীলঘাসফুলই আমার মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে _যার আজো কোনো বাজারমূল্য নেই
এখনো শীত আসেপৃথিবীতে, আসে বসন্ত। গোলাপ অথবা চন্দ্রমল্লিকারা এখনো আলতা পরে পায়ে। তবু পৃথিবীর যত খুন, প্রতারণা আর ব্যর্থ-প্রেমের কবিতা নিয়ে আমি সেই ঘাসফুলের কাছেই যাই
চোখ বন্ধ করে একটু দাঁড়াই...
কবিতা
ডাকটিকিটের বদলে প্রশ্ন জমাই
প্রশ্নের উত্তরে লিখি কবিতা
কবিতা আমার অ্যান্টির নাম
শুনেছি তার একটি মেয়ে আছে
যাকে আমি কখনো দেখিনি ...
আলাপ
শীতে ঝরা নিরাপরাধ হলুদ পাতা
ঘূর্ণিবাতাসের সঙ্গে যার বারবার দেখা
আমি সেই---
আকাশের নীলে আমার ভাগ আছে--আমার জল
বেহালার চোখে
আমাকে শুভেচ্ছা পাঠাতে হলে ঝড়োবাতাসের সঙ্গে
আলাপ সেরে নিও
নীল পেন্সিল হাতে একদিন
কী হবে রঙের কথা বলে রঙের যাদুকর প্রজাপতি সেও জানে না কতটা বিভ্রান্তি নিয়ে তার ওড়াওড়ি। একদিন না-বোজেই নীল পেন্সিল হাতে এঁেক ফেলতে চেয়েছি নারীনাভির সবটুকু গভীরতা সেই থেকে আমি অন্ধসেই থেকে যেকোনো গর্তই আমাকে লালবাতির বায়োগ্রাফি শুনায়।
রঙের প্রসঙ্গ আসলেই সেই বেহালাবাদকের কথা মনেপড়েÑবেহালা বাজাতে বাজাতে যে কি-না আকাশের সবটুকু নীল খসাতে চেয়েছিল। অথচ, সে এখন নীল-প্রতিবন্ধীদের সভায় নিয়মিত সভাপতিত্ব করে! আর সবুজ অথবা কালোর প্রসঙ্গ উঠলেই যে খুব বিজ্ঞের মতো মাথা দোলাতে থাকেÑ যা দেখে যে কারোই মনে হতে পারে রঙের যাবতীয় ভেলকিবাজির সঙ্গে তার গোপন আঁতাত রয়েছে।...এসব জানি বলেই, রঙ বিষয়ক যে কোনোগল্প লিখেই আমি কেটে দি-ই। কেন না আমি তো জানি না সাইমাদের বাম স্তনে যে তিলটা তার মধ্যে অন্ধকার ছাড়া আর কি কি রঙের চাতুরি ছিল।
হতে পারে রঙে আমার বিভ্রান্তি বড় বেশিÑ হতে পারে রঙ ভুলপাঠে মুগ্ধ করেছে আমাকে, কিন্তু তোমরা ? তোমরা কেন আজো লালজামা পরো আজো কেন লালের ভেতর- নীলের ভেতর তোমাদের ওঠানামার সিঁড়ি!