শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সম্পাদকীয় - ৫ম সংখ্যা



কবিতা লোকে কেনই বা লেখেন, কেনই বা পড়েন! যিনি লিখছেন, কেনই বা লিখছেন? আর যিনি বা যারা কবিতা পড়ছেন, অতি জরুরী একটি কাজ ভুলে গিয়ে, তিনি বা তাঁরা? তাদেরই বা প্রত্যাশা কী? আমার কাছে, এ সত্যিই খুব বিষ্ময়কর। একজন যখন কলম ধরলেন, লিখে গেলেন কিছু শব্দ ভাষার আশ্রয়ে, সে আসলে কবিতার আড়ালে নিজেকে মুক্তি দিলেন। আর বিদগ্ধ পাঠক, কবিতাতে জীবন যুদ্ধে অবিরত থাকার বর্ম খুঁজে পেলেন। কবি মুক্তি দিলেন বোধের ছেঁড়া অংশ, আর পাঠক তাতে নিজেকে আবদ্ধ কোরে জুড়ে নিলেন তার বোধিতে। পুরো হলো বর্তনী। এর মাঝে সময়পোযোগী সমালোচকেরা তাদের আবিষ্কার অথবা তিরষ্কার অব্যাহত রাখুন কী না-রাখুন কবি বা পাঠকের আসলে সত্যিই দায় নেই কিছু। ব্যাপারটি হয়তো এমন, একদল পরিব্রাজক পথে যেতে যেতে কথার ছলে বিনা প্রয়োজনে গাছের পাতাটি ছিঁড়ে নিল; আঙ্গুলের পেষণে, নিজের পর্যবেক্ষণে পাতাটিকে একটি বর্ণনায় সীমা দিয়ে দিল। এতেই তাঁর মুক্তি, তাঁর জ্ঞানের, তাঁর অনুবীক্ষণের, পাতাটির করুণ পরিণতিতে। কিন্তু কবি ও পাঠকের বর্তনীর মাঝে ‘কবিতা’-কে এসব জ্ঞানী-গুণীজন সেভাবে হনন করতে পারেন না। তাদের প্রয়োজনে তারা তাদের মুক্তির আশ্রয় হিসেবে কবিতাকেই আঁকড়ে আছেন, আর কিছু নয়। সুতরাং, ‘কবি-কবিতা-পাঠক’, এই ত্রিভুজ প্রেমে আর সব কিছুই খলনায়কের ভূমিকায়। আমরা তাঁদের নিপুণ পারফরমেন্স দেখব, শুনব যার যার ভূমিকায়, তারপর ভুলে যাব সব।

‘ক্ষেপচুরিয়াস কবিতার পাগলামি গ্রুপম্যাগ’ - বলতে গেলে, ফেসবুকে সর্বাধিক স্বার্থক একটি কবিতার গ্রুপ, এখন পর্যন্ত। দুই বাংলার সীমাকে অতিক্রম করে একটি সার্বজনীন চেহারা দেবার এমন দুর্লভ প্রচেষ্টা যেসব তরুণ কবিরা করেছিলেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধায় আনত হই। তাদের তরুণ প্রাণ-প্রাচূর্যেই আপাত সম্ভব হয়েছে, ফেসবুকের মতো একটি জায়গায় একই সাথে কবি ও পাঠকের দুই রকম চাহিদা মেটানোর একটি ধারক ও বাহক হিসেবে ‘ক্ষেপচুরিয়াস’-কে প্রতিষ্ঠিত করা। গ্রুপটিতে নতুন কবিদের যেভাবে উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে নেবার চেষ্টা দেখেছি, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। দেখেছি জুবিনকে, যার ভেতরেই বিন্দু পরিমাণ সম্ভাবনা দেখেছে, ঝাঁপিয়ে পড়েছে কিভাবে, তাকে আরও একটু উৎসাহ দিয়ে পরিস্ফুরণে। দলীয় মতভেদ থাকেই সর্বত্র। তবুও গ্রুপটির সঞ্চালনে যারা দিনের দিনের পর দিন শ্রম আর মেধা দিয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে তাদের আন্তরিকতা ছাড়া ক্ষেপচুরিয়াসের এই অগ্রযাত্রা সম্ভব ছিল না কোনোভাবেই। গ্রুপের সব সদস্যকে অভিনন্দন জানাই।

বেরুচ্ছে ব্লগজিনের ৫ম সংখ্যা। সুমিত একাই সামলাচ্ছে মোটামুটি, জুবিন আছে ক্ষেপু সর্দার। অলংকরণে পাশে আছে, কৌশিক বিশ্বাস, মেঘ অদিতি। আর আছে সদস্যদের অংশগ্রহণ। গ্রুপের মতোই ‘ক্ষেপচুরিয়ান ব্লগজিন’-এও সদস্যরা প্রমাণ রেখেছে তাদের সুসংগঠিত ‘টিম ওয়ার্ক’। প্রত্যেককে আন্তরিক শুভেচ্ছা। আর পাশে থাকুন আপনারা ক্ষেপচুরিয়ান হয়ে। ধন্যবাদ।।


ক্ষেপচুরিয়ানস্‌ সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষে
অপরাজিতা ফেরদৌস




ঋপণ আর্য


ঋপন আর্য
রুদ্রপুর,৭৪৩২৭৪


(এক)
সমস্ত কুরিয়ার থেকে অনেক দূরে
শীতের মাঝামাঝি এখানে সস্তায় মাটি।
শক্তিমান লরি...বড় বড় পুকুর...আর
ক্রমশ পাড় ভাঙার শব্দ

পিওন গোবিন্দদা কখনও সখনও একটানা
কাঠঠোকরার শব্দ রেখে যান ঝুলবারান্দায়


(দুই)
আমার দিক দিয়ে তাকালে গ্রামটাকে ভাবাযাচ্ছে লম্বুগাছ।
অন্যান্য গাছের মাথা ছাড়িয়ে অনেকটা,
ঝড় এলে মাটি থেকে মাথার দূরত্ব যার
সব থেকে কম


(তিন)
আমার ঠিকানার ডাকনাম খাসপাড়া ।
হাবড়া ভ্যানস্ট্যান্ডও জানে। আমি সাইকেলেই...
গ্যারেজের মলয়দা অসংখ্য সাইকেলের মধ্যে
কী অদ্ভুত আমারটাকে চিনে নিচ্ছে !
না ফিরলে ঘরে তুলে রাখছে...

ফিরতেই হয়... রবিবার, মাঘমাস, জ্যামভর্তি বছর

ব্যবহৃত তারিখের মতোই ফেরনি আর...।
ব্যবহৃত তারিখ হয়ে থেকে গেছে
ভেঙে যাওয়া থার্মোমিটার


(চার)
ঝাঁপ খুল্লেই ছ’ফুট বাই ছ’ফুটের একটা জানলা।
কারো কোনো বিশেষ পরিস্থিতির দরজা, এই মুহূর্তে যেমন চালভাঙা মেশিনের একটানা ঝাঁঝাঁ। এমনিতেই ঝাঁপ খুল্লেই সরাসরি চোখে ঝাঁপিয়ে পড়ে চু-কিতকিত চুমুক নিয়ে অশ্বত্থ আর

পাখিদের শূণ্যতা
এয়ারগান নিষিদ্ধ হ’লেও ভাইভাই দোকানে ঝুলতে গুলতি
তারও অনেক আগে
গুলতি থেকে
বহু গান
লম্বু বাগান পেরিয়ে
পিয়ালীদের ছাদে


(পাঁচ)
পিয়ালির জন্য হলুদফুলকে ভাববো না,
হলুদফুলের জন্যই পিয়ালি ।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাছটি দেখেই মনে পড়লো
২৩শে জুন । অথচ
গাছটিতে একটাও হলুদফুল নেই



(ছয়)
বিগত কয়েক বছরে মায়ের অনেক চুল উঠে গেছে
উঠে যাওয়া চুল জমিয়ে ফিরিওলার কাছ থেকে
বিনিময়ে কখনো স্টিলের বাটি কখনো বা কাচের গ্লাস।
যার একটি গ্লাসে রোজ চা খাই আর ভাবি,
লেবেল ক্রসিংটাই পারস্পরিক ফারাক...

নিজের আদলে নির্জনতা খুঁজতে গিয়ে দেখছি,
প্রত্যেক দাবির পেছনে থেকে যাচ্ছে একটানা গোয়ার্তুমি
আর প্রত্যেক ঘুমের পেছনে নানান মাপের মুন গ্লাস

(সাত)
বিশ্বাস এখানেও পরভোজী । বনভূমি ভাসে শিরায় ।
টিপতে টিপতে মধ্যরাত্রি ঘরের তুচ্ছতায় আদর হচ্ছে...
প্রকৃত আদরে শব্দ থাকে না।
বাতাসের বিনিসুতোয় ঘটনার রটনা অনেক,
অন্যের ঘটনা সহজেই গায়ে জড়াচ্ছে এখানে।
কোনো কাঠামোই নীলকণ্ঠ ফুলগাছ হচ্ছে না !
মুখ থেকে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে সবুজ মাউথ অরগ্যান।

(আট)
রাতের পর রাত রাস্তা ডিঙিয়ে ঘর !
টেবিলভর্তি ক্লোজ শট ছড়িয়ে রেখে
একটা বোবা সফরে... আমি ঘুমিয়ে গেলে
শেষ আত্মরক্ষা মশারি।
কী অদ্ভুত, মশারির ভিতর থেমে যাওয়া
সময়টুকুই সম্পর্কের তলানি হয়ে থেকে যাচ্ছে

(নয়)
সপ্তাহ দুয়েক আগেই স্বদেশবাবুর সঙ্গে পরিচয়,
শিয়ালদহ টিকিট কাউন্টারে । এক সঙ্গের গল্প নিয়ে হাবড়ায়।
তার নাকি রোজ আমার বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত ।
মিথ্যে মনে হল, কোনোদিনই আমি তাকে দেখিনি... ।
অথচ পরিচয় হবার পর থেকে তাকে নিয়মিত দেখছি




ইন্দ্রনীল তেওয়ারী

এই সংখ্যার কবি



ইন্দ্রনীল তেওয়ারী
শিরোনামহীন -১

লেখা হোক আজ আমাকে।
লেখা হোক একা রাত।
একা চাঁদ.........

আমার প্রেমিকা কাপড় ছেড়ে তীব্র সকাল হয়ে গেছে।


শিরোনামহীন -২

কোথায় যে কার পেছনে ঢুকে যায় কামড়,
বোঝা দায়!

কথা তো বলি না কখনো,
বলিনি।
তবু তারা বলে ; দেখো মালটার গলায় ঢুকে আছে ভয়ের জিরাফ।

তবুও তো ভাষা আছে। থেকে যায়।

ভয়? সে তো তাহাদের থেকে সংক্রমিত।

হলুদ চোখ । মাথা লাট্টু, প্রলাপের কোনো বিপণন নেই।
অসুস্থ হতে হতে বুঝি সকলের পেছনে ঢুকে যাওয়া কামড়
হরবখত্‌ সুড়সুড়ি দিতে থাকে।


শিরোনামহীন -৩

যত পারো কম কথা বলো।
তুলে রেখো শব্দ।
কেন-না এখনও চোখ আছে
আর আছে গাছেদের বোবা হয়ে যাওয়া।

আসলে আমি তো একটি চোখওয়ালা গাছ
আর তুমি বোবা একটি মানুষ।


শিরোনামহীন -৪

তারও পরে কিছু কথা থেকে যায়।

জীবনের মদ নিঃশেষে
শেষ করে দেওয়ার পর
গভীর মাতাল
বেহুঁশ ঘুমিয়ে গেলে
দু-চারটে প্রলাপ জেগে থাকে।

অতএব কান পেতে রেখো,
তারও পরে কিছু কথা থেকে যায়।


শিরোনামহীন -৫

ওগো ডাকাত রত্নাকর,
প্রতি মুহূর্তে আমাদেরও কিছু গোপন সঙ্গম থাকে।

সেসব লুণ্ঠিত হলে, শোক থেকে শ্লোকে উত্তীর্ণ হও তুমি।

প্রতিনিয়ত লুঠ হয়ে যায় আমরা গভীর প্রণয়ের সময়।
অথচ সময়ের উই ঝেড়ে সকল দস্যু লিখে চলে রামায়ণ ।

শিরোনামহীন - ৬

সেই রাত আসে না আর।
আসে না  ভুল অন্ধকার
বিছানার রঙ লেগে আছে এখনও শরীরে।
জেগে আছে ঘুম আদরে আদরে।

কতদিন হল জমে গেছি পাথরের ঠান্ডায় আর তুমি শিশিরের জলে।


শিরোনামহীন -৭

এইবার ঘুম যাবো।
ঘুম।
এখনও তো ছুঁয়ে দেখো।
ছুঁয়ে দেখো চুম।

তোমার নাম ধরে রাত এসেছে, শেষ গো শেষ যে সময়।


শিরোনামহীন -৮

যতই লেখো গান,
লেখো স্বরলিপি
আসলে এই তো বিষণ্ণ শীত।
যখনই ভেবেছি সবই তো সুন্দর,
দেখি কুয়াশায় ভিজে গেছে জানালার কাঁচ।


শিরোনামহীন -৯

চোখের জলে আর শরাবে কোনো পার্থক্য নেই।
দুটোই চলকে ওঠে।
নেশায় মাথা ঘুরে যায়।
তাই সমস্ত মদ শালা ঘুরে ফিরে
এসেছি সাকী তোমার বেদনশালায়।

আজ মাতাল হওয়ার দিন। অশ্রু তে ছোঁয়াব শুকনো ঠোঁট।


শিরোনামহীন -১০

যেই ক্ষণে কমে যাবে রোদ,
আমি বিকেলের দিকে তাকিয়ে বলে যাবো
ভালো থেকো।
ভালো থেকো গাছ।
রাস্তা।

হয়তো তখন তুমি চোখে লাগাও অন্য ভোর খোঁজা রাত।


শিরোনামহীন -১১

কোনো ঘর নেই।
কোনো বসত...

যেন কোনো ট্রেন।

এই যে এতো ষ্টেশন, হল্ট।
ছুঁয়ে ছুঁয়ে দ্রুততর ট্রেন আমরণ ছুটে যায়।
লক্ষ্য
একটি নিশ্চিত মৃত্যুলোকে শেড্‌-গহ্বর। 


শিরোনামহীন -১২

গভীর অসুখ...
ক্রমশ ডুবে যাচ্ছি একটি থির জলে।

দেখো সমস্ত কুলির দল ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটে।
অন্ধকার ঝুঁকে থাকে, ঝুঁকে যাওয়া কোনো প্লাটফর্মে।

আর আমি কোনো গম্ভীর বিষাদ
উগরাতে উগরাতে শেডের ভিতর দাঁড় করায়
কোনো অসুস্থ ট্রেন।


শিরোনামহীন -১৩

তবুও ক্রমশ দুরেই চলে যেতে থাকি।

মুছে যেতে থাকে
ফিরতি ট্রেনের ফেরিওয়ালা।

আমিও অন্ধকারের ঠোঁটের ভেতর ডুবে যায়।

ফেরত ট্রেনের লোকেরা বলাবলি করবে,
ষ্টেশনটা আজও ওখানেই আছে,
শুধু লোকটাই চলে গেছে দূরে কুয়াশার ভিতর।


শিরোনামহীন -১৪

এবং কখনোই আমি ভালো নেই।

যতবার আমি নিজেকে ভরেছি জীবনে
ততবার উল্লাসে ঢক ঢক পান করে গেছে ঈশ্বর।

তবুও তো কিছু মদ ছুঁয়ে থাকে গেলাস।
দেখো,
দু-চার ফোঁটা জল ছুঁয়ে আছে আমার চোখ।

এবং এখনও আমি ভালো নেই।

শিরোনামহীন -১৫

নির্দিষ্ট কিছু সময় পার হয়ে গেলে
অবশ্যম্ভাবী রাত জেগে থাকে।
জেগে থাকে জমাট মাংসের মতো অন্ধকার।

তীক্ষ্ণ আমিষ গন্ধ
লেগে থাকে সুক্ষতম শরীরে।

আর যত ঘুম
হতচ্ছাড়া আলকাতরার মতো
বুজিয়ে রাখে চোখ।

কোনোদিন জেগে না ওঠার পণ
ধার করে  বেঁচে থাকে লাওয়ারিশ জীবন।


শিরোনামহীন -১৬

ভালোবাসা কোনো রঙ নয়,
‘দূর’ কোনো ছবি এঁকে দেবে কেও।
ভালোবাসা বন্ধু হোক তোমার

আমি কোনো আকাশের তলে ঘুম ছুঁয়ে যাব।


শিরোনামহীন  -১৭

ক্রমশ বিবস্ত্র হও,
হও নগ্ন রাত।
জ্বলন্ত অঙ্গারসম ছুঁয়ে যাব
ঘুমন্ত নাভি, আশ্চর্য উন্মুখ প্রদীপ।
থরথর ঝড় বেয়ে ঢুকে যাবো চৈতন্যর গর্ভে।

এইবার জন্ম হোক।
হোক মৃত্যু ক্রন্দন।


শিরোনামহীন -১৮

এই তবে শেষ হোক।
এই খানে, এই ক্ষণে।
দুই পথ।
তোমার থাকুক সকাল শুরুর ভোর।
আমি থাকি রাত্রি শেষের আলোয়।

কাল সকালে চোখে লাগাও অন্য প্রসাধনী।



অলংকরণ – মেঘ অদিতি



আপন মাহমুদ





আপন মাহমুদ এর একগুচ্ছ কবিতা 

মা প্রজাপতি অন্যান্য ছায়া 


মায়ের উদ্দেশে বাবা যে চুমুটা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন বাতাসে
শুনেছি, সেই হাওয়াইচুমুটা থেকেই জন্ম নিয়েছিলো
পৃথিবীর প্রথম প্রজাপতি
মা, পৃথিবীর যেকোনো নারী থেকে যাকে কখনোই আলাদা করা
যায় না_তাকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত-বিভ্রান্ত সেই প্রজাপতিটার
ডানা থেকে যখন টুপটাপ ঝরে পড়ছিল রঙের আকুতি_রঙের
সেই অপচয় ঘোচাতেই সম্ভবত জন্ম হয়েছিলো পৃথিবীর আর
সব প্রজাপতির
মাকে বাবা খুঁজে পেয়েছেন সেই কবে! অথচ, তার মুুখের দিকে
তাকিয়ে কখনোই মনে হয়নি_জীবনে একটাও প্রজাপতি তার
খোঁপায় বসেছে।



মা প্রজাপতি অন্যান্য ছায়া 


মায়ের মুখ মনে এলে নিজেকে রক্ষকশূন্য গোলবার মনে
হয়--মনে হয় সব কটি গোলই হয়ে যাচ্ছে--কিছুতেই
ঠেকাতে পারছি না--অথচ, রেফারির বাঁশি যে পক্ষেই
বাজুক তারই জেতার কথা

হার-জিত প্রসঙ্গে ইদানীং মা খুব একটা কথা বলেন না,
মাঝেমাঝে দূর দীর্ঘশ্বাসের পালক ঝরাতে ঝরাতে
বলেন, ‘যারা জিততে জিততে জিততে ভুলে গেছে--যারা
হারতে হারতে হারতে ভুলে গেছে--তাদের সবার উচ্চতাই
সমান

মানুষের উচ্চতা সমান ভেবেই আমাদের গান শুরু করার
কথা--অথচ রেফারির বাঁশি কেবল জেতাবার জন্যই
বাজে--হারাবার জন্যই বাজে!



মা প্রজাপতি অন্যান্য ছায়া-- 

আমার জন্মের রাতে একটাও নক্ষত্র খসে পড়েনি মাটিতে --  যদিও
আপন-আকাশ ভুলে মা আমাকেই তুলে ধরেছিলেন তার প্রার্থনার
করতলে-- প্রার্থনা শেষে মা আজো চোখ মুছেন -- যে চোখে খুব কাছের
নক্ষত্রটাকেও ঝাঁপসা দেখায়।

বাবা রাজমিস্ত্রি, দাদি আত্মহত্যা করেছেন পেটের পিড়ায়। তবু আমার
কখনো সাব-কন্ট্রাক্টর কিংবা এলএমএফ ডাক্তার হতে ইচ্ছে করেনি।
বরং নক্ষত্র হতে না-পারার অহেতুক বেদনা নিয়ে আমি আজো বেজে
চলেছি  সেই বেহালাবাদকের আঙুলে-- ঘনকুয়াশার দিকে নিরন্তর
হেঁটে যাওয়া যার অমোঘ নিয়তি।

আমার জন্মধ্বনিতে কাঁপেনি আকাশ, উতসবের একটাও বাতি
যায়নি নিভে-- কেবল কোকিল, কোকিল উড়ে গেছে দূরে...।

 

 

 

 

 

মা প্রজাপতি ও অন্যান্য ছায়া--চার



মা, তোমার বেজারমুখের প্রতিবেশী আমি এক চুপচাপ বালক--নিজেকে
হারিয়ে ফেলেছি সেই কবে, নবম শ্রেণীতে--নিজেকে ডুবিয়ে ফেলেছি
সেই কবে, জিল্লাল মিয়ার দিঘিতে--এখনো আনানসির মতো ঘুরছি
দ্যাখো, বন্ধুর লোভে...

মা, তোমার প্রসববেদনা থেকে সেই কবে পথের শুরু--হাঁটতে
হাঁটতে পৃথিবী দুপুর হয়ে গেছে--তবু, বন্ধুর মতো কোনো ছায়া
নেই চারপাশে--বটের ছায়াও কিনতে পাওয়া যায় না বাজারে।



বিলবোর্ড-বৃষ্টি
========
কোনো কোনো গান অংক পরীক্ষার চেয়েও ছোট ছিলো-- কোনো
গান ছিলো কচুপাতার পানি--কান্নাও একটা গানেরই নাম, যা ছিলো
তোমার আবেগ সমান--তুমি এখন মিসকলর মতো বড়-- হাঁটুতে
থুতনি কিছুটা জড়োসড়ো!

কোনো কোনো গান সুদীর্ঘ আপেল বাগান-- কোনো গান পুঁজি
তাড়িত বিলবোর্ড-বৃষ্টি--কোনোটা বা সাম্যের ঠিকানা খুঁজে খুঁজে
আজ কুয়াশা দৃষ্টি...

কোনো কোনো গান কাস্তের মতো বাঁকা--ক্ষুধার তীব্রতা
নিয়ে ফসলের মাঠ দেখা!

  

নাভীফুল 
======
আমাদের আঁকাআঁকির স্কুলে, ব্ল্যাকবোর্ডে যে কদমফুল এঁকেছিলেন
বর্ষা ম্যাডাম--তার ব্যাঞ্জনা কতটুকু, কার দিকে ছড়ালো-- এনিয়ে
কখনোই ভাবিনি-- কেনোনা, চকে আঁকা ওই ফুল মুছে গেলেও
বর্ষা ম্যাডাম থেকে যান-- আর রঙিন ছাতা মাথায় নেলপলিশ-পা
টিপে টিপে হেঁটে বেড়ান আমাদের কাদাজল পথে।

বর্ষা ম্যাডাম খুবই ম্যাডাম-- কেনো না, ব্ল্যাকবোর্ডের উঁচুতে  
কদমফুল মুছতে মুছতে তিনি আমাদের নাভীও দেখান।

আর কে না জানে, গভীরতা ও ব্যাঞ্জনার দিক থেকে নাভীফুলই
সবচেয়ে এগিয়ে।


প্রসঙ্গ; বর্ষামঙ্গল


আমাদের উদীচী ও চারুকলার আপুরা এবারও বেশ নাচ দেখালেন
বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানে--কেউ কেউ যথারীতি পুরনো রবিঠাকুরকেই নতুন করে
ঝরাতে চেষ্টা করলেন--মঞ্চ থেকে একটু দূরে, বৃষ্টি ও ভেজাবালিকাদের
প্রতি মুগ্ধতা রেখে আমরা গল্প করছিলাম-- আমাদের একজন সিগারেট
ধরাতে ধরাতে বলল,‘ ছাত্রী হোস্টেলের মেয়েরাই সবচে কার্যকর
বৃষ্টি--কেনো না, ওদের শুকাতে দেওয়া একটা পুরনোই ওড়না দেখেই
তুমুল ভিজে উঠি আমরা।

আরেকজন কিছুটা অনাসক্ত গলায় বলল,‘ বাদ দে, ওই সব বৃষ্টি-টিষ্টি--
কোথাও একটা কলার ভেলাও দেখছি না যে ভাসবো-- ভাসতে না জানলে
জাহাজ তো দূরের কথা একটা কাগজের নৌকাও হওয়া যায় না।

এভাবেই, একথায়-ওকথায় রাত বাড়ে-- আমাদের বর্ষাবিষয়ক আড্ডাও
যায় ভেঙে-- কেবল গল্প পড়ে থাকে ছাতা ব্যবসায়ীদের ঘিরে!



এক.

ও মেঘ, বউয়ের মতো মেঘ; আমাকে প্রেমিকার
মতো ভেজাও-দ্যাখো, চিন্তার সোনালি আঁশ শুকিয়ে
যাচ্ছে। আমি তেমন প্রার্থনা জানি না- বড়জোর
ছেলেব্যাঙ-মেয়েব্যাঙে বিয়ে দিতে পারি-থু লেপে
ভিজিয়ে দিতে পারি নিজের শুকনো ঠোঁট।

মেঘ, তুমিও কি অপচয়ের ভয়ে আর আগের মতো
ঝরো না- জলখরচের ভয়ে আমি যেমন কান্নাকে
দূরে রাখি- থাক অতো হিসাব-নিকাশ- দ্যাখো,
চালতাফুল তাকিয়ে আছে অবিবাহিত খালাতো
বোনের মতো! যদি ভেজাও তুমি- হবো শাপলায়
ভরে যাওয়া মাঠ।

শুনো; গল্পের উঠান কি একাই ভিজবে আমাদের
সর্দি-কাশির অজুহাতে! এসো, ছাতাহীন হাঁটুরের মতো
ভিজি- আরো কাছে গিয়ে দেখি আষাঢ়ের ভেজা বউদি।

ও মেঘ, বউয়ের মতো মেঘ; আমাকে প্রেমিকার
মতো ভেজাও।

দুই.

জানালা থেকে দুই মিনিট দূরে, যে মাঠ ঘাসের ভেতর একাকি
ভিজে- আমি তাকে ভগিনীর বয়ফ্রেন্ডের মতো হিংসা
করি। কেননা, ডাক্তার তাকে কখনোই ভিজতে নাকরেনি- তার
নেই সাইনোসাইটিস ঝামেলা, মোবাইল ভেজার ভয়।

সেদিন দূর থেকে তাকে ভিজতে দেখে আমি শেষ সিগারেটটিও
জ্বালিয়ে ফেলি- সিগারেটের সঙ্গে পুড়তে পুড়তে ভাবছিলাম: আগামী
আষাঢ়ের আগেই ঘরটা বাইরে নেওয়া যায় কি-না- ভাবতে ভাবতেই
পাড়ার মাস্তানের মতো ঝড়োহাওয়া এসে জানালা বন্ধ করার নির্দেশ
দিলো-আর আমি ভয় পেয়ে, গুমের ভেতর থেকে ঘুমের ভেতর চলে
গেলাম।

ঘুম থেকে বেরিয়ে দেখি, ওই বর্ষা-তৃপ্ত সবুজ মাঠেই একটা গরু ঘাস
খাচ্ছে একা- যার রাখাল হয়তো কখনোই খুঁজে পাবে না তার হারিয়ে
যাওয়া বাঁশি।

তিন.

আমাদের আঁকাআঁকির স্কুলে, ব্ল্যাকবোর্ডে যে কদমফুল এঁকেছিলেন
বর্ষা ম্যাডাম- তার ব্যাঞ্জনা কতটুকু, কার দিকে ছড়ালো- এনিয়ে
কখনোই ভাবিনি- কেনোনা, চকে আঁকা ওই ফুল মুছে গেলেও
বর্ষা ম্যাডাম থেকে যান- আর রঙিন ছাতা মাথায় নেলপলিশ-পা
টিপে টিপে হেঁটে বেড়ান পৃথিবীর পথে-পথে।

বর্ষা ম্যাডাম খুবই ম্যাডাম- কেনো না, ব্ল্যাকবোর্ডের উঁচুতে
কদমফুল মুছতে মুছতে তিনি আমাদের নাভীও দেখান।

আর কে না জানে, গভীরতা ও ব্যাঞ্জনার দিক থেকে নাভীফুলই
সবচেয়ে এগিয়ে।


চার.

আমাদের উদীচী ও চারুকলার আপুরা এবারও বেশ নাচ দেখালেন
বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানে- কেউ কেউ যথারীতি পুরনো রবিঠাকুরকেই নতুন করে
ঝরাতে চেষ্টা করলেন- মঞ্চ থেকে একটু দূরে, বৃষ্টি ও ভেজাবালিকাদের
প্রতি মুগ্ধতা রেখে আমরা গল্প করছিলাম- আমাদের একজন সিগারেট
ধরাতে ধরাতে বলল, ‘ছাত্রী হোস্টেলের মেয়েরাই সবচে কার্যকর
বৃষ্টি- কেননা, ওদের শুকাতে দেওয়া একটা পুরনো ওড়না দেখেই
তুমুল ভিজে উঠি আমরা।

আরেকজন কিছুটা অনাসক্ত গলায় বলল, ‘বাদ দে, ওই সব বৃষ্টি-টিষ্টি-
কোথাও একটা কলার ভেলাও দেখছি না যে ভাসবো- ভাসতে না জানলে
জাহাজ তো দূরের কথা একটা কাগজের নৌকাও হওয়া যায় না।

এভাবেই, একথায়-ওকথায় রাত বাড়ে- আমাদের বর্ষাবিষয়ক আড্ডাও
যায় ভেঙে- কেবল গল্প পড়ে থাকে ছাতা ব্যবসায়ীদের ঘিরে!


বেহালাবাদক

আমি আছি অজস্র পাতাঝরার শব্দ নিয়ে--এই শীতে যার
কিছুটা বিক্রি হবার কথা একজন বৃদ্ধ বেহালাবাদকের অবশিষ্ট
হাসিটির বিনিময়ে--শুনেছি, যেকোনো আত্মহননকারী
মানুষের কপালের ভাঁজেই এরকম একটি হাসি লুকিয়ে থাকে--
যা কিনা সুর ও শিল্পপ্রিয় মানুষের প্রতি ঈশ্বরের শেষ উপহার

ঈশ্বরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক পাশের বাড়ির অহংকারী ভালো
ছাত্রীটির মতো--যে আমাকে সঙ্গে নেযনি, আবার ফেলেও যাযনি

শীত থেকে বসন্ত এতো দূরে যে, সেই বৃদ্ধ বেহালাবাদকের সঙ্গে
আমার আর দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।


কথা, পাহাড়ের সঙ্গে


পাহাড়, তোমাকে কিছু বলতে ইচ্ছে করে--বিশেষত মনমরা বিকেলে
কী করো তুমি--কার কথা ভাবো--কে তোমার কান্নাকে প্রথম ঝরনা
বলেছিলো? আমি? আমি দু-চারটা সিগারেট বেশি খাই, চুপচাপ
ঘুরি-ফিরি--দাড়ি কেন কাটতে হবে, ভাবি...

মাঝেমাঝে নিজেকে শৈশবের হাতে তুলে দিয়ে ঘড়ি দেখি--ঘড়িতে
৩৪টা বাজে! ফুল পাখি নদী ওরা কেমন আছে?

পাহাড় তুমি কি জানো, রজনীগন্ধা সবজি নয় কেন!



লাল বাতির বায়োগ্রাফি 


কী হবে রঙের কথা বলে--রঙের যাদুকর প্রজাপতি--সেও জানে না কতটা বিভ্রান্তি নিয়ে তার ওড়াউড়ি! একদিন না-বুঝেই নীল-পেন্সিল হাতে এঁকে ফেলতে চেয়েছি নারীনাভির সবটুকু গভীরতা--সেই থেকে আমি অন্ধ--সেই থেকে যেকোনো গর্তই  আমাকে লাল বাতির বায়োগ্রাফি শোনায়

রঙের প্রসঙ্গ এলেই সেই বেহালাবাদকের কথা মনে পড়ে--বেহালা বাজাতে বাজাতে যে কি-না আকাশের সবটুকু নীল খসাতে চেয়েছিল--অথচ, সে এখন নীল-প্রতিবন্ধীদের সভায় নিয়মিত সভাপতিত্ব করে! আর সবুজ অথবা কালোর প্রসঙ্গ উঠলেই যে বাদক খুব বিজ্ঞের মতো মাথা দোলাতে থাকে--যা দেখে যেকারোই মনে হতে পারে রঙের যাবতীয় ভেলকিবাজির সঙ্গে তার গোপন আঁতাত রয়েছে--এসব জানি, জানি বলেই, রংবিষয়ক যেকোনো গল্প লিখেই আমি কেটে দিই-কারণ আমি তো জানি না--সাইমাদের বাম স্তনেযে তিলটা, তার মধ্যে অন্ধকার ছাড়া আর কী কী রঙের চাতুরি আছে!

হতে পারে রঙে আমার বিভ্রান্তি বড় বেশি--হতে পারে ভুলপাঠে রঙ মুগ্ধ করেছে আমাকে, কিন্তু তোমরা? তোমরা কেন আজো লাল জামা পরো--আজো কেন
লালের ভেতর, নীলের ভেতর তোমাদের ওঠা-নামার সিঁড়ি!


শিরনামহীন তিনটি কবিতা  

১.
একদিন সমস্ত কোলাহল থেকে দূরে, তনুশ্রীদের
ওড়নার মতো কোনো এক দ্বিধাগ্রস্ত বিকালে আমিও
বাজাবো বাঁশি। বাঁশি শুনে দুএকটা দার্শনিক গাছ
প্র্যাচের মতো মাথা ঝাঁকাবে, হয়তো ঝরে পড়বে
দুএকটি শুকনো পাতা

জেনে যাবো, ঝরে পড়ার আগে পাতাদের গান
কোথায় থাকে।

২.
আমাকে নিখোঁজ করে ফেলুন
জনাব-২০১২’--যেখানে কবিতা ছাড়া
আর কিছুই দেখা যাবে না--
দেখা যাবে না মানুষপোড়া ছাই--যেখান
থেকে চিৎকার
করে গালি দেওয়া যাবে প্রতিপক্ষকে--
লক্ষ লক্ষ ঘুণপোকাকে
প্রকাশ্যে দেখিয়ে দেওয়া যাবে স্বার্থান্বেষীদের
সংবিধান।
নিখোঁজ করে ফেলুন আমাকে, সেইখানে--
যেখানে আদালতের চোখ মানুষের
মতো--যেখানে ঔপনিবেশিক তৎপরতার
বদলে শিমফুলের বৃষ্টি হবে--পথ
ভুলে গেলে রাজহাঁস গলা উচিঁয়ে বলবে,‘
আসুন... এদিকে বন্দুক
নেই, আমরা একই গান সবাই গাই

৩.
গোলাপঅথবা চন্দ্রমল্লিকার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক কেমন ছিল জানি না। তবে কোনো এক শীতসকালে ঘরের পেছনে অকারণে ফুটে থাকা কিছু ঘাসফুলের সাথে মা আমার আলাপ করে দিয়ে বলেছিলেন, জীবনের যত কফ-থুথু আর উড়াল হারানোর বেদনা আমি জমা রেখেছিএই ঘাসফুলের কাছে এমনকি প্রসব বেদনাও'সেই থেকে যে কোনো নীলঘাসফুলই আমার মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে _যার আজো কোনো বাজারমূল্য নেই

এখনো শীত আসেপৃথিবীতে, আসে বসন্ত। গোলাপ অথবা চন্দ্রমল্লিকারা এখনো আলতা পরে পায়ে। তবু পৃথিবীর যত খুন, প্রতারণা আর ব্যর্থ-প্রেমের কবিতা নিয়ে আমি সেই ঘাসফুলের কাছেই যাই

চোখ বন্ধ করে একটু দাঁড়াই...


কবিতা
ডাকটিকিটের বদলে প্রশ্ন জমাই
প্রশ্নের উত্তরে লিখি কবিতা
কবিতা আমার অ্যান্টির নাম
শুনেছি তার একটি মেয়ে আছে
যাকে আমি কখনো দেখিনি ...

আলাপ
শীতে ঝরা নিরাপরাধ হলুদ পাতা
ঘূর্ণিবাতাসের সঙ্গে যার বারবার দেখা
আমি সেই---
আকাশের নীলে আমার ভাগ আছে--আমার জল
বেহালার চোখে

আমাকে শুভেচ্ছা পাঠাতে হলে ঝড়োবাতাসের সঙ্গে
আলাপ সেরে নিও



নীল পেন্সিল হাতে একদিন

http://cdn.somewhereinblog.net/gui/social_bar/delicious.png  http://cdn.somewhereinblog.net/gui/social_bar/digg.png  http://cdn.somewhereinblog.net/gui/social_bar/furl.png  http://cdn.somewhereinblog.net/gui/social_bar/blinklist.png  http://cdn.somewhereinblog.net/gui/social_bar/reddit.png  http://cdn.somewhereinblog.net/gui/social_bar/technorati.png  http://cdn.somewhereinblog.net/gui/social_bar/yahoomyweb.png  http://cdn.somewhereinblog.net/gui/social_bar/co.mments.gif  http://cdn.somewhereinblog.net/gui/social_bar/newsvine.png 
কী হবে রঙের কথা বলে রঙের যাদুকর প্রজাপতি সেও জানে না কতটা বিভ্রান্তি নিয়ে তার ওড়াওড়ি। একদিন না-বোজেই নীল পেন্সিল হাতে এঁেক ফেলতে চেয়েছি নারীনাভির সবটুকু গভীরতা সেই থেকে আমি অন্ধসেই থেকে যেকোনো গর্তই আমাকে লালবাতির বায়োগ্রাফি শুনায়।

রঙের প্রসঙ্গ আসলেই সেই বেহালাবাদকের কথা মনেপড়েÑবেহালা বাজাতে বাজাতে যে কি-না আকাশের সবটুকু নীল খসাতে চেয়েছিল। অথচ, সে এখন নীল-প্রতিবন্ধীদের সভায় নিয়মিত সভাপতিত্ব করে! আর সবুজ অথবা কালোর প্রসঙ্গ উঠলেই যে খুব বিজ্ঞের মতো মাথা দোলাতে থাকেÑ যা দেখে যে কারোই মনে হতে পারে রঙের যাবতীয় ভেলকিবাজির সঙ্গে তার গোপন আঁতাত রয়েছে।...এসব জানি বলেই, রঙ বিষয়ক যে কোনোগল্প লিখেই আমি কেটে দি-ই। কেন না আমি তো জানি না সাইমাদের বাম স্তনে যে তিলটা তার মধ্যে অন্ধকার ছাড়া আর কি কি রঙের চাতুরি ছিল।

হতে পারে রঙে আমার বিভ্রান্তি বড় বেশিÑ হতে পারে রঙ ভুলপাঠে মুগ্ধ করেছে আমাকে, কিন্তু তোমরা ? তোমরা কেন আজো লালজামা পরো আজো কেন লালের ভেতর- নীলের ভেতর তোমাদের ওঠানামার সিঁড়ি!