বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

সম্পাদকীয় - ৩য় বর্ষ ১১তম সংখ্যা

সম্পাদকীয়



যাদের স্বপ্ন ছিল রবীন্দ্রনাথের
‘বাঁশিওয়ালার’ চেয়েও সুন্দর
একটি কবিতা রচনা করার,
সেই সব শহীদ ভাইয়েরা আমার
যেখানে তোমরা প্রাণ দিয়েছ
সেখানে হাজার বছর পরেও
সেই মাটি থেকে তোমাদের রক্তাক্ত চিহ্ন
মুছে দিতে পারবে না সভ্যতার কোনো পদক্ষেপ।
('আজ আমি এখানে কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি...')
-এভাবেই কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী ১৭ পৃষ্ঠার দীর্ঘ একটি কবিতা লিখেছিলেন ৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ওইদিন রাতেই, যা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ইতিহাস হয়ে আছে।
এমন পাগল আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনো। ভাষার জন্য পাগল। কথার জন্য পাগল। নিজ সত্তার জন্য পাগল। একটা নোংরামির মত করে , কিছুটা বুদ্ধি হীনতার মত , খামখেয়ালীর বশে ছোটলোক পাকিস্তানি গোষ্টি বাংলায় কথা বলতে বাঁধা দিয়েছিল ডানপিঠে বাঙালি জাতিকে। সে কি আর হয় ! দুরন্ত সুনামীকে কোন বাঁধ ঠেকাতে পারে ! পারেনি সে দিন। তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলায় কথা বলা!
বাংলার মানুষ এই দিনটিকে এতই শ্রদ্ধা করে যে , ২১ ফেব্রুয়ারী প্রাতে খালি পায়ে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। প্রভাত ফেরি করে শহীদ মিনারে ফুল দেয়। আজ এই দিনটি একটি উত্সবে পরিনত হয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিউল প্রমূখ দামাল ছেলেদের আবেগকে সম্মান জানানোর জন্যই এই আয়োজন।
কিন্তু ,বেদনার বিষয় হচ্ছে , বাংলাদেশ ছাড়া অন্যকোথায়ও এই সংস্কৃতিটা ধারণ করতে দেখা যায়না। বাংলাদেশের পথে প্রভাত ফেরিতে নেমে পড়া তরুণ-তরুনীদের মনে কতটুকু পুলক জাগে ,তা ভালবাসা দিবসে নাইটক্লাবে নাচা ছেলেমেয়েরা কখনই বুঝতে পারবেনা।
তা যাগগে, আমাদের বাংলা ভাষাভাষীরা-ইবা বাংলাকে কতটুকু ধরে রাখছি। কলকাতার লোকজন হিন্দিতে কথা বলতেই গর্ব বোধ করে। বাংলাদেশিরাও কখনো হিন্দী ,কখনো ইংরেজি মিশিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষা ব্যবহারে নিজেকে স্মার্ট হিসেবে জাহির করছে। অমৃতসম বাংলা ভাষা পুরান সুতি কাপড় হয়ে যাচ্ছে বাঙালিদের কাছে। সৃজন সেন তাঁর কবিতায় তাই লিখেছেন -
সেবার লন্ডনে
এক জাপানি শিল্পপতিকে
বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে
তার মাতৃভাষা জাপানিতে
অন্যদের সঙ্গে যখন অনর্গল কথা বলতে দেখেছিলাম
তখন আমার বুকের ভেতরে
কেমন যেন একটা কষ্ট হচ্ছিল,
ইংরাজিতে কথা বলতে না পারার জন্য
ওই মানুষটির ভেতরে কোনও লজ্জা ছিল না,
বরং মাতৃভাষায় কথা বলতে পারার অহমিকায়
মানুষটিকে যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখেছিলাম,

(--মাতৃভূমির জন্য-সৃজন সেন)
যাইহোক , ধন্যবাদ আমার শ্রদ্ধ্যেয় সাহিত্যিক ভাইদের ,যাঁদের অসামান্য সাহিত্য সৃষ্টির জন্য ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় এই ভাষার উপস্থিতি ছিল বেশ জোরালো। ফেব্রুয়ারী আমার কাছে বেহেস্তের জানালা মনে হয় যা খুলে দিতেই পৃথিবী সাজতে শুরু করে। বসন্ত - ভালবাসা দিবস ,সবই এই ফেব্রুয়ারিতে। এই ঋতুতে যেন সবার মন হালকা হয়ে উঠে পায়রার পালকের ন্যায়। রবীন্দ্রনাথ তাইতো গেয়েছেন -

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুন্ঠিত কুন্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীতমুখরিত গগনে
তব গন্ধ করঙ্গিয়া তুলিয়ো।
তরুণ তরুনীরা অভিসারে মিলে এই ঋতুতে। নানান কবি নানা ঢঙে রচনা করেছেন বসন্তকে। আমাদের এই সংখ্যায়ও লেখকরা লিখেছেন বসন্তের কথা। লিখেছেন বইমেলার কথা।

বাংলার মাঠে বইমেলা আজ আর নিছক মেলা নয়, আমেজ,উদযাপন আর উত্তেজনায় ঈদের খুশির মত। বইমেলা নয় "ঈদুল বইমেলা" এর নতুন নাম। বাংলাদেশে বইমেলা অনেককিছুর দিক ঘুরিয়ে দিতে পারে। রাজনীতিও তার বাইরে নয়।রাজনীতির কথা মনে পড়ল। অনেক দুর্গন্ধ ছড়ানো শেষে দেহের ক্ষতে শুকনো চর্মের প্রলেপ পড়ল। থমথমে পরিস্থিতে উতড়ে ঝর শেষের আকাশের মতই এই মুহুর্তের বাংলাদেশ। শুধু ৭১' এর রাজাকারদের বিচার কার্যকর হলেই হয়। রাজাকারহীন বাংলাদেশ দেখার অনেকদিনের স্বপ্ন। আমি বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই।



ক্ষেপচুরিয়ানস্ সম্পাদকমন্ডলীর পক্ষে
পাভেল আল ইমরান