বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

কবিতা - পাবলো শাহি

পাবলো শাহি’র কবিতা




ভগ্নকথার কিচ্ছা


অসুখ বেঁচে খাই আমি, তাই ভগ্নকথাকে খুঁজতে যাই ছাতিমের কাছে;
দেখলাম খুব ধিরে বিচ্ছেদ জনিত কষ্ট নিয়ে ছাতিম দাঁড়িয়ে আছে
এই পৃথিবীর শ্মশান ঘাটে; দীর্ঘ অপেক্ষায় ছাতিমের পা ফুলে ঢোল;
তবু ভুল হয়ে যাওয়া ফুলগুলি আছে তার ডালে। তারপরও শৈশব
কেমন কোঁচাভরা একহাটু নদীর জল, এইকথা মনে পড়তেই-

আমি বকুল নামের ফুলের কথা ভাবি। আর ভালোবাসা মানে
মৃত্যুর গুড়ো, এইকথাকে মনেরেখে বলি শব্দ- অর্থ মহাপ্রাণধ্বনি।
তারপরও একদিন সবকিছু জেনেই মৃত্যুঘ্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে
ভাবি, ছাতিমগাছের ফুলেই মূলত হাওয়া বিবির বক্ষ। আর লিখে

ফেলি ভগ্নকথার অসুখ অথবা দুঃখী মানুষেরা যেখানে আশ্রয় পাই;
সেই বেনামী পদ্যের স্তুপ নিয়ে।






আমাদের জীবনের পৃষ্ঠাগুলি স্নায়ু কীটের নিঃসঙ্গকবর, তাকে যদি
চাঁদ জাগাতে চাই ধ্যানে- যদি ঘুণপোকা হয়ে শরীরের ভেতরে
ঢোকে, ‏ব্রহ্মাণ্ডের শঙ্খবাদক হয়ে গান শোনায়। তারপরও
বনমানুষের বীজের ভেতর থাকবে তার তমসামুণ্ডু। রাতের
অক্ষরে সে লিখবে সাইন বোর্ড, ডরমেটরি ও রূপকথার গল্প।
কেননা মানুষতো মধ্যাকর্ষণ দ্বারা চালিত, তারও ঝুলেথাকা আছে
বোটা ছেড়ে পড়া- পতন আছে, আছে নির্জন নারীদের বক্ষছিঁড়ে
নিয়ে এই মহাকালে প্রেমিকের ইতিহাস হবার কাহিনী। তারপরও
যারা জানেনা একথা তারা বলবে, জ্যোতিষীর দণ্ড বিধিতে হয়তো
একথা লেখা ছিল? নতুবা কী ক’রে জানা গেল, পৃথিবীতে একমাত্র
পাগলই স্স্থু মানুষ।


ছয়

অগ্নিদগ্ধ এই পথ আমাদের জন্য বিছিয়ে দেয় কাঁটার সুস্বাদু আস্বাদ।
যখন মানুষ ঘাতক কুঠারের আঘাতে ফুলের আগুন ছুড়ে মারে,
আর তখনই মানুষ প্রেমে পড়ে। খর ঋতুতে উলঙ্গ হাতিয়ারবিহীন
ভাবে হেঁটে আসে অশ্র“ধারার পৃথিবী। তখন তুমি বলো, এই অবাক
নগরে ঢুকে আমি বাইবেলের সাধু হয়ে উঠি। তারপরও একজন
সন্ন্যাসীর ধ্যানরত মুখমণ্ডলে লেখা থাকে চুমুর সংকলন। আর
সবাই জানে কাঁটার আঘাত পেতে কোন সাধু না মন্দিরে প্রার্থনা
করে। এভাবে ছোটবেলায় এক স্কুল বালকের ডাইরির পাতা ছিঁড়ে
ছিঁড়ে তৈরি হয় দুঃখের নদী। সে কাউকে ভুলতে পারে না। তার
দুঃখের নদীর একপিঠে রাজহাঁস অন্যপিঠে এজলাসের স্তব্ধ বিচারকের
বক্ষভারি বেদনা। তারপরও যে পথে মানুষ হাঁটে, সে পথ মৃত্যুদণ্ডের।
সে কথা জেনেও সে পেতে চাই গান আর নারী আর সুগন্ধী কাঁটার আঘাত।



সাত


আদি পাপের যে কাচঘর তার নাম তুমি দিয়েছো আমাদের পৃথিবী।
এখানে গাছের পাতায় মুড়ে আর মাছের কাঁটায় সেলাই করে চাঁদটাকে
রেখে দেই আমরা বুকের মধ্যে। তারপরও তুমি মাথায় পরো মেঘবজ্রের
পালক আর পাতায় আগুন শঙ্খ-নুড়িতে করে নিজেকে সাজাও।
তোমার বুকে থাকে বিচিত্র রঙের এ্যান্টেনা, আমি হাত দিয়ে
দেখি তোমার ভালোবাসার তীরধনুক, ঘুঘুর মতো আর্তনাদময়-
পাগলের মত ছিটগ্রস্থ। মানুষের বুকের ওপর মাথা রেখে সে অর্ধোন্মাদ
গান শোনায়। এখন বল, কি তোমারা আদিপাপ, কি তোমার বুকের
আড়িপাতা আর্তি। আর কাকেই বা আমরা বলছি বনমানুষের হাজারো
ভ্রান্তি। তার থেকে চলো আজ কাশবনের মাথার উপর দুঃখের কুড়েঘর
তুলি। সেখানে থাকবে ভালোবাসার নামে পৃথিবীর সমস্ত ব্যক্তি মন্দিরের অপরাধ বিজ্ঞান?