শিশুসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ – শিক্ষাতত্ত্ব - আনন্দের মোড়কে
পৃথা রায়চৌধুরী
ঠিক কি পড়ে শিশুরা? কিংবা, প্রশ্নটা এভাবেই মনে আসে, ছোটোদের ঠিক কি পড়তে দেয় বড়োরা? ছোটোদের জন্য লেখা ছোটোরা লেখেও না, বাছেও না। তাই ‘শিশুসাহিত্য’ রচনা করতে হলে লেখকের এক চোখ রাখতে হয় শিশু-পাঠকদের ওপর, আর অন্য চোখ রাখতে হয় তার অভিভাবকদের দিকে। কথাটি খুব সত্য। ছোটোদের জন্য কিছু লিখতে হলে একাধারে অভিভাবক এবং শিশু পাঠকদের মনোরঞ্জন করা দরকার। অর্থাৎ, সে লেখার মধ্যে শিক্ষা অ আনন্দ, উভয়ের সমাবেশ প্রয়োজন; এবং যিনি সত্যিকার শিশুসাহিত্যিক হবেন, তাঁকেও হতে হবে একাধারে শিক্ষক ও লেখক।
সৌভাগ্যক্রমে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে এই দুইয়েরই সমন্বয় ঘটেছিল। তাঁর জ্ঞানের শিখা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছে শিশুর মনস্তত্ত্বের স্তরে স্তরে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাতত্ত্বের মূল কথা ছিলো, স্বাধীনতা ও সংযম। আপাতদৃষ্টিতে এ দুটিকে পরস্পরবিরোধী মনে হলেও, রবীন্দ্রনাথ সংযম বলতে শুধুমাত্র শৃংখলা বোঝেননা, বরং তা যেন এক ধরনের আত্মপ্রতিষ্ঠা। শিশু ও বালকের দেহেমনে যে উদ্দাম আনন্দবেগ ক্ষণে ক্ষণে সৃষ্ট হয়, তাকে কবি উচ্ছৃঙ্খলতা বলতে রাজী নন। এই সহজ উচ্ছৃঙ্খলতাকে তিনি কোনোদিন কঠোর শাসন করতেও চাননি। কবির লক্ষ ছিলো শিশু ও বালকদের শিক্ষাদর্শে সংযম, আনন্দের মধ্যে সংযম, জীবনের প্রতি কর্মে, ভাবনায় সংযমের প্রবেশ ঘটানো। তাই শিশু মনিবের দাবি মেটানোর জন্য কবি লিখলেন ‘শিশু’, ‘শিশু ভোলানাথ’, ‘ছড়া’, ‘ছড়ার ছবি’ প্রভৃতি কাব্য ও ছড়া আর ‘সহজপাঠ’ ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তক।
রবীন্দ্রনাথ কাজ ও খেলার মধ্যে পার্থক্য টানতে চাননি। ‘খেলার জগতে শিশু হয়ে জন্মেছেন—এই ঘটনাটির মধ্যেই মানবজীবনের মূল সত্যটি আমাদের জীবনের ভুমিকারূপে লিখিত হয়েছে’ বলে কবির ধারণা। কবির ‘শিশু’ কাব্যগ্রন্থ তাঁর এই মনোভাবের পরিচায়ক।
‘শিশু’ কাব্য গ্রন্থের ‘বিচিত্র সাধ’ কবিতায় কখনো ফেরিওয়ালা, কখনো ফুলবাগানের মালী, আবার কখনো বা রাতের পাহারাওয়ালা হবার সাধ কবির শিশু মনে জেগে উঠেছে, আর এই সাধ তো কেবলমাত্র রবীকবির নয়- এ সাধ যেন চিরন্তন শিশুমনের।
‘বিজ্ঞ’ কবিতাটিতে কবি যেন ছোট্টো বোনের অতিবিজ্ঞ, পরিণত বয়স্ক—সে তার মাকে বলে ওঠে--
কবির বিখ্যাত ‘বীরপুরুষ” কবিতাটিতে শিশু কবি যেন মস্ত এক বীরপুরুষ—যার তলোয়ারের আঘাতে ডাকাতদল পালকী ছেড়ে পলায়ন করে—আর ‘মা’ যেন তাঁর চিরন্তন আকাঙ্খার প্রতিধ্বনি করে ওঠেন—“ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে”। মায়ের রক্ষাকর্তা হিসাবে শিশুমন নিজেকে কল্পনা করেছে।
‘মাঝি’ কবিতায় কবি শিশুমনের কল্পনায় মাঝি রূপে খেয়া পারাপার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ‘লুকোচুরি’ কবিতায়—“চাঁপা গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি”—কবির শিশুমন যেন মায়ের সঙ্গে চাঁপাফুল হয়ে লুকোচুরি খেলতে চায়।
শিশুমনের এই যে সমস্ত লাগামছাড়া ইচ্ছার বৈচিত্র্য—এসবের প্রকাশ কবির কবিতাগুলিতে সহজেই ঘটেছে—কারণ কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে একটি চিরন্তন শিশুসত্ত্বা সুপ্ত ছিলো এবং যার দাবী তাঁর কাছে ছিলো অগ্রগণ্য।
‘শিশু’র পরে তাঁর রচিত ‘শিশু ভোলানাথ’ কাব্যপর্যায়ের ‘রবিবার’, ‘অন্য মা’ এবং ‘রাজমিস্ত্রী’ কবিতাগুলি শিশুপাঠ্য অনবদ্য কবিতা।
‘রবিবার’ কবিতায় কবির মস্ত আক্ষেপ—
সপ্তাহান্তের ছুটির দিন রবিবারটির অপেক্ষায় শিশুমনের এমনই জিজ্ঞাসা বুঝি!
‘অন্য মা’ কবিতায় কবির শিশুমন কল্পনায় বিভোর—তার মা যদি অন্য কারও ‘মা’ হয়ে যায় কোনক্রমে—তবে কি ‘সেই অন্য মা’ তার এই পুত্রকে চিনবেনা? কবি কিন্তু নানা ভাবে তার মাকে বুঝিয়ে দেবে, যে সে তারই ছেলে—আদি এবং অকৃত্রিম।
কখনো বা কবির শিশুমন ‘রাজমিস্ত্রী’ কবিতায় ‘নোটো’ রাজমিস্ত্রী হতে চেয়েছে—ইঁটের পরে ইঁট গেঁথে বিশাল অট্টালিকা গড়ার স্বপ্ন দেখেছে।
কবি রবীন্দ্রনাথ শিশুমনের বিচিত্র কল্পনার জগতে অনায়াসে বিচরণ করেন। কবিতাগুলি পাঠ করলে আমাদের দায়িত্বশীল বয়স্ক মনও যেন সহসা বাল্যকালের অনাবিল আনন্দের জগতে ডুব দিতে চায়—শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও যেন কিছুক্ষণের জন্যে সমস্ত বিচক্ষণতা, সংযমের কঠিন বেড়া ভেঙ্গে শৈশবে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করি।
এগুলি ছাড়া কবি ‘খাপছাড়া’ কাব্যপর্য্যায়ে কিছু সংক্ষিপ্ত ছড়া রচনা করেছেন—যেগুলির অর্থোদ্ধার সমস্ত বুদ্ধির উর্দ্ধে, অথচ অপূর্ব শিশুপাঠ্য। একটির উল্লেখ করা যায়—
শিশুসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের শেষ দান পাঠ্যপুস্তক রচনা। পাঠ্যপুস্তক বলতে শিশু ও বালক-বালিকাদের মনে বিভীষিকার ভাব উদয় হয়। কবিরচিত ‘সহজপাঠ’ তেমন ভীতিপ্রদ গ্রন্থ নয়।
এ বিষয়ে শ্রদ্ধেয় প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের মন্তব্য উল্লেখ করা যায়—“ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এককালে বাঙ্গালী ছেলেকে ভাষার রাজ্যে প্রবেশাধিকার দেন, আমাদের যুগে রবীন্দ্রনাথ ভাবের রাজ্যে, ছন্দে আনন্দলোকে শিশুর মনকে মুক্ত করিলেন।“
শিশুদের বিজ্ঞান শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তাও কবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টির গোচরে ছিলো। তাই তিনি শিশুদের ‘বিশ্বপরিচয়’ নূতনভাবে লেখার জন্য বহু গ্রন্থ পাঠ করলেন। তাঁর প্রচেষ্টা ছিলো বিশ্বতত্ত্বের আধুনিকতম মতাদি সহজসরল ভাবে লেখা—যা শিশুমনকে আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় ঘটানোর কাজটিও করবে।
কবির শিশুমনটির গভীরে ডুব দিয়ে মণিমাণিক্যাদির আহরণের কাজটি আজও সম্পূর্ণ হয়েছে বলে মনে হয়না—কারণ তাঁর রচিত শিশুসাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক আলোচনা এখনো পর্য্যন্ত হয়নি।
বর্তমান যুগের কঠিন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থ মানসিক বিকাশের দিকটির কথা মনে রেখে রবীন্দ্রনাথ রচিত শিশু সাহিত্যের সামগ্রিক আলোচনা এক্ষণে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি।
ঠিক কি পড়ে শিশুরা? কিংবা, প্রশ্নটা এভাবেই মনে আসে, ছোটোদের ঠিক কি পড়তে দেয় বড়োরা? ছোটোদের জন্য লেখা ছোটোরা লেখেও না, বাছেও না। তাই ‘শিশুসাহিত্য’ রচনা করতে হলে লেখকের এক চোখ রাখতে হয় শিশু-পাঠকদের ওপর, আর অন্য চোখ রাখতে হয় তার অভিভাবকদের দিকে। কথাটি খুব সত্য। ছোটোদের জন্য কিছু লিখতে হলে একাধারে অভিভাবক এবং শিশু পাঠকদের মনোরঞ্জন করা দরকার। অর্থাৎ, সে লেখার মধ্যে শিক্ষা অ আনন্দ, উভয়ের সমাবেশ প্রয়োজন; এবং যিনি সত্যিকার শিশুসাহিত্যিক হবেন, তাঁকেও হতে হবে একাধারে শিক্ষক ও লেখক।
সৌভাগ্যক্রমে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে এই দুইয়েরই সমন্বয় ঘটেছিল। তাঁর জ্ঞানের শিখা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছে শিশুর মনস্তত্ত্বের স্তরে স্তরে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাতত্ত্বের মূল কথা ছিলো, স্বাধীনতা ও সংযম। আপাতদৃষ্টিতে এ দুটিকে পরস্পরবিরোধী মনে হলেও, রবীন্দ্রনাথ সংযম বলতে শুধুমাত্র শৃংখলা বোঝেননা, বরং তা যেন এক ধরনের আত্মপ্রতিষ্ঠা। শিশু ও বালকের দেহেমনে যে উদ্দাম আনন্দবেগ ক্ষণে ক্ষণে সৃষ্ট হয়, তাকে কবি উচ্ছৃঙ্খলতা বলতে রাজী নন। এই সহজ উচ্ছৃঙ্খলতাকে তিনি কোনোদিন কঠোর শাসন করতেও চাননি। কবির লক্ষ ছিলো শিশু ও বালকদের শিক্ষাদর্শে সংযম, আনন্দের মধ্যে সংযম, জীবনের প্রতি কর্মে, ভাবনায় সংযমের প্রবেশ ঘটানো। তাই শিশু মনিবের দাবি মেটানোর জন্য কবি লিখলেন ‘শিশু’, ‘শিশু ভোলানাথ’, ‘ছড়া’, ‘ছড়ার ছবি’ প্রভৃতি কাব্য ও ছড়া আর ‘সহজপাঠ’ ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তক।
রবীন্দ্রনাথ কাজ ও খেলার মধ্যে পার্থক্য টানতে চাননি। ‘খেলার জগতে শিশু হয়ে জন্মেছেন—এই ঘটনাটির মধ্যেই মানবজীবনের মূল সত্যটি আমাদের জীবনের ভুমিকারূপে লিখিত হয়েছে’ বলে কবির ধারণা। কবির ‘শিশু’ কাব্যগ্রন্থ তাঁর এই মনোভাবের পরিচায়ক।
‘শিশু’ কাব্য গ্রন্থের ‘বিচিত্র সাধ’ কবিতায় কখনো ফেরিওয়ালা, কখনো ফুলবাগানের মালী, আবার কখনো বা রাতের পাহারাওয়ালা হবার সাধ কবির শিশু মনে জেগে উঠেছে, আর এই সাধ তো কেবলমাত্র রবীকবির নয়- এ সাধ যেন চিরন্তন শিশুমনের।
‘বিজ্ঞ’ কবিতাটিতে কবি যেন ছোট্টো বোনের অতিবিজ্ঞ, পরিণত বয়স্ক—সে তার মাকে বলে ওঠে--
“তোমার খুকি চাঁদ ধরতে চায়
গণেশকে ও বলে যে মা গানুশ।
তোমার খুকি কিচ্ছু বোঝেনা মা
তোমার খুকি ভারি ছেলেমানুষ।“
গণেশকে ও বলে যে মা গানুশ।
তোমার খুকি কিচ্ছু বোঝেনা মা
তোমার খুকি ভারি ছেলেমানুষ।“
‘মাঝি’ কবিতায় কবি শিশুমনের কল্পনায় মাঝি রূপে খেয়া পারাপার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ‘লুকোচুরি’ কবিতায়—“চাঁপা গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি”—কবির শিশুমন যেন মায়ের সঙ্গে চাঁপাফুল হয়ে লুকোচুরি খেলতে চায়।
শিশুমনের এই যে সমস্ত লাগামছাড়া ইচ্ছার বৈচিত্র্য—এসবের প্রকাশ কবির কবিতাগুলিতে সহজেই ঘটেছে—কারণ কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে একটি চিরন্তন শিশুসত্ত্বা সুপ্ত ছিলো এবং যার দাবী তাঁর কাছে ছিলো অগ্রগণ্য।
‘শিশু’র পরে তাঁর রচিত ‘শিশু ভোলানাথ’ কাব্যপর্যায়ের ‘রবিবার’, ‘অন্য মা’ এবং ‘রাজমিস্ত্রী’ কবিতাগুলি শিশুপাঠ্য অনবদ্য কবিতা।
‘রবিবার’ কবিতায় কবির মস্ত আক্ষেপ—
“সোম মঙ্গল বুধ এরা সব
আসে তাড়াতাড়ি
এদের ঘরে আছে বুঝি
মস্ত হাওয়া গাড়ি?
রবিবার সে কেন মাগো,
এমন দেরি করে?
ধীরে ধীরে পৌঁছয় সে
সকল বারের পরে।”
আসে তাড়াতাড়ি
এদের ঘরে আছে বুঝি
মস্ত হাওয়া গাড়ি?
রবিবার সে কেন মাগো,
এমন দেরি করে?
ধীরে ধীরে পৌঁছয় সে
সকল বারের পরে।”
সপ্তাহান্তের ছুটির দিন রবিবারটির অপেক্ষায় শিশুমনের এমনই জিজ্ঞাসা বুঝি!
‘অন্য মা’ কবিতায় কবির শিশুমন কল্পনায় বিভোর—তার মা যদি অন্য কারও ‘মা’ হয়ে যায় কোনক্রমে—তবে কি ‘সেই অন্য মা’ তার এই পুত্রকে চিনবেনা? কবি কিন্তু নানা ভাবে তার মাকে বুঝিয়ে দেবে, যে সে তারই ছেলে—আদি এবং অকৃত্রিম।
কখনো বা কবির শিশুমন ‘রাজমিস্ত্রী’ কবিতায় ‘নোটো’ রাজমিস্ত্রী হতে চেয়েছে—ইঁটের পরে ইঁট গেঁথে বিশাল অট্টালিকা গড়ার স্বপ্ন দেখেছে।
কবি রবীন্দ্রনাথ শিশুমনের বিচিত্র কল্পনার জগতে অনায়াসে বিচরণ করেন। কবিতাগুলি পাঠ করলে আমাদের দায়িত্বশীল বয়স্ক মনও যেন সহসা বাল্যকালের অনাবিল আনন্দের জগতে ডুব দিতে চায়—শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও যেন কিছুক্ষণের জন্যে সমস্ত বিচক্ষণতা, সংযমের কঠিন বেড়া ভেঙ্গে শৈশবে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করি।
এগুলি ছাড়া কবি ‘খাপছাড়া’ কাব্যপর্য্যায়ে কিছু সংক্ষিপ্ত ছড়া রচনা করেছেন—যেগুলির অর্থোদ্ধার সমস্ত বুদ্ধির উর্দ্ধে, অথচ অপূর্ব শিশুপাঠ্য। একটির উল্লেখ করা যায়—
“ক্ষান্তবুড়ির দিদিশাশুড়ির
পাঁচ বোন থাকে কালনায়,
শাড়িগুলো তারা উনুনে বিছায়
হাঁড়িগুলো রাখে আলনায় ।”
অথবা
“পাড়াতে এসেছে এক
নাড়ীটেপা ডাক্তার,
দূর থেকে দেখা যায়
অতি উঁচু নাক তার ।”
পাঁচ বোন থাকে কালনায়,
শাড়িগুলো তারা উনুনে বিছায়
হাঁড়িগুলো রাখে আলনায় ।”
অথবা
“পাড়াতে এসেছে এক
নাড়ীটেপা ডাক্তার,
দূর থেকে দেখা যায়
অতি উঁচু নাক তার ।”
শিশুসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের শেষ দান পাঠ্যপুস্তক রচনা। পাঠ্যপুস্তক বলতে শিশু ও বালক-বালিকাদের মনে বিভীষিকার ভাব উদয় হয়। কবিরচিত ‘সহজপাঠ’ তেমন ভীতিপ্রদ গ্রন্থ নয়।
এ বিষয়ে শ্রদ্ধেয় প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের মন্তব্য উল্লেখ করা যায়—“ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এককালে বাঙ্গালী ছেলেকে ভাষার রাজ্যে প্রবেশাধিকার দেন, আমাদের যুগে রবীন্দ্রনাথ ভাবের রাজ্যে, ছন্দে আনন্দলোকে শিশুর মনকে মুক্ত করিলেন।“
শিশুদের বিজ্ঞান শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তাও কবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টির গোচরে ছিলো। তাই তিনি শিশুদের ‘বিশ্বপরিচয়’ নূতনভাবে লেখার জন্য বহু গ্রন্থ পাঠ করলেন। তাঁর প্রচেষ্টা ছিলো বিশ্বতত্ত্বের আধুনিকতম মতাদি সহজসরল ভাবে লেখা—যা শিশুমনকে আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় ঘটানোর কাজটিও করবে।
কবির শিশুমনটির গভীরে ডুব দিয়ে মণিমাণিক্যাদির আহরণের কাজটি আজও সম্পূর্ণ হয়েছে বলে মনে হয়না—কারণ তাঁর রচিত শিশুসাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক আলোচনা এখনো পর্য্যন্ত হয়নি।
বর্তমান যুগের কঠিন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থ মানসিক বিকাশের দিকটির কথা মনে রেখে রবীন্দ্রনাথ রচিত শিশু সাহিত্যের সামগ্রিক আলোচনা এক্ষণে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি।
1 comments:
বাহ! ভালো লাগলো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন