মরমী আলো...
শৌনক দত্ত তনু
এক.
আজকের দিনটি মনোরম।রোদ্দুরের তাপে জ্বালা নেই কিন্তু বাতাসে ভারী হয়ে আছে গোমট কান্নার বাষ্প।ফেলে যাওয়া স্মৃতি আর বসতবাটি।তবু আজ এক ভিনদেশ দর্শন যাত্রার উত্সব। অযোধ্যা থেকে একগোষ্টী যাত্রা করেছে পূর্ববঙ্গের দিকে।পরামরাজত্বের পথ মাড়িয়ে পায়ে হাঁটা পথের ক্লান্তি, নৌকাভ্রমন পেরিয়ে তারা বসত গড়ে তোলে দক্ষিণবঙ্গের যোশরে।তারপর সেখানেও বাজলো বিদায় সুর।আবার নতুন কোন সন্ধানে যাত্রা এবার নৌকাবহর যেখানে থামলো প্রাকৃতিক নৈস্বগে আর সুরমার তীর ঘেষা সুনামগঞ্জের তঘেরিয়ার লক্ষণছিরি পরগনায়।
নতুন জায়গা,নতুন মানুষ জীবিকা আর বেঁচে থাকার তাগিদে তারা তিলতিল করে গড়ে তুলো তাদের অবস্থান তাদের বেচে থাকার জমি।
সময় তার নিয়মে চলে চড়াই উত্রাই পার করে।বসন্ত যায় বর্ষা আসে আবার বসন্ত পাতা ঝরায় পলাশ ফোটে শিমুল ঝরে।হিন্দু এই জনগোষ্ঠী আপন করে নেয় অতীত স্মৃতি ভুলে নতুন ভূমি।সিলেটে তখন ইসলাম ধর্মের প্রবল চর্চ্চা।শাহসুলতান,শাহপরাণ সহ আরো মহাপুরুষরা তখন মানবতার বানী ছড়িয়ে বেরাচ্ছেন।মানবতার অহিংস নীতিতে মুগ্ধ হলেন অযোধ্যা থেকে আগত বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব মতান্তরে বাবু রায় চৌধুরী তিনি ধর্মান্তরিত হলেন শান্তির ধর্ম ইসলামে।
দুই,
পৌষের সকাল ঘন কুয়াশায় রোদের দেখা নেই।জমিদার বাড়িতে খেজুরের রস এসে পৌঁচ্ছেছে।প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরীর উপস্থিতিতে অন্দর মহল থমথমে।কিছুক্ষণ পরেই তিনি বৈঠকখানায় যাবেন।তৃতীয় সন্তানের গর্ভবতী জননীর খোঁজ খবর নিয়ে ক্যালেন্ডারে চোখ বুলিয়ে তৈরী হলেন দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী।খাজাঞ্চীকে ডেকে পাঠালেন খাজনা সংক্রান্ত হিসাবনিকাশের খতিয়ান নিয়ে বৈঠকখানায় আসতে।দুই পুত্রকেও ডেকে পাঠালেন।
১২৬১বঙ্গাব্দের ৭ই পৌষ(২১শে ডিসেম্বর ১৮৫৪)কর্মব্যস্ত জমিদার বাড়ী শিশুসন্তানের কান্নায় মুখোরিত হয়ে উঠে।সেরেস্থা থেকে দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী দৌড়ে যান অন্দর মহলে তৃতীয় পুত্র সন্তানের মুখ দর্শন করে আযান দেন।এবার শুরু হয় সদ্যজন্ম নেয়া পুত্র সন্তানের নামকরণের তোড়জোড়।আলী রাজা তার খালাতো ভাই আমরি বখশ চৌধুরীর নিঃসন্তান বিধবা হুরমত জাহান বিবিকে পরিণত বয়সে বিয়ে করেছিলেন।হুরমত জাহান বিবির গর্ভেই এই পুত্র সন্তানের জন্ম।পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী তার বৈমাতৃয় ভাই দেওয়ান ওবেদুর রাজা চৌধুরীর পরামর্শে নবজাতকের নামকরণ করলেন অহিদুর রাজা।
তিন,
সময় নিরন্তর হাঁটে তার পায়ে ধুলো উড়ে না ক্লান্তি নেই ঘুম নেই তার।অহিদুর রাজা বেড়ে উঠছে সময়ের নিয়মে।আরবী ফরসীর চর্চায় বড় হয়ে উঠা আহিদুর রাজা।সিলেটে তখন আরবী ফরাসীর প্রবলভাবে প্রচলন চলতো।বালক আহিদুর রাজাকে একদিন সিলেটের ডেপুটি কমিশনার অফিসার নাজির আব্দুল্লা বলে এক বিখ্যাত ফরাসি ভাষাবিদ পরামর্শ দিলেন আহিদুর রাজা বদলে দেন তার মতে আহিদুর রাজা হয়ে উঠলেন হাসন রাজা।সুদর্শন বালক হাসন রাজা যৌবনে পা রাখলেন।বহুলোকের মাঝে চোখে পড়ার মত সৌমদর্শন,দীর্ঘভূজ ধারাল নাসিকা,জ্যাতিরময় পিঙ্গল চোখ।একমাথা কাবলিচুল পারসিক দেহধারী।তা ছাড়া উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছিলেন বিশাল সম্পত্তির মালিক আর এই যৌবন এবং অর্থ তাকে করে তোলে ব্যভিচারী।ভোগবিলাস আর নারী সম্ভোগে তিনি হয়ে উঠলেন অক্লান্ত।নিজের এই লম্পট কে তিনি নিজেই একটি গানে লিখেছিলেন-'সর্বলোকে বলে হাসন রাজা লম্পটিয়া'নিত্য নতুন নারী সঙ্গী ও নতর্কী ভোগী হাসান রাজার ঘরে একদিন তার মা নতর্কীর বেশে এলেন।লম্পট ছেলে হাসন তার মা র এই আগমন তার মনে ঘৃণার সঞ্চার করলো এবং সেইদিন তার এতবছর ধরে করা অপরাধ তার মনমানসিকতায় তৈরী করলো বৈরাগ্য।পাখিপ্রেমী ও ঘোড়া প্রিয় হাসন রাজা।(কুড়া ছিল তার প্রিয় পাখির নাম আর ঘোড়াদের নামছিলো জং বাহাদুর এবং চানদমুশিক)আর আনন্দবিহারে বজরায় ভোগবিলাস নারীতে মদে মত্ত এবং প্রজাদের থেকে দূরে চলে যাওয়া হাসন এই ঘটনার পর ফিরে এলেন নতুন জীবনে প্রজাদের সুখ দুঃখের পাশে একজন যথার্থ জমিদারে রূপান্তরিত হয়ে।
চার,
বৈরাগ্যকালে তিনি দরবেশ জীবন পালন করতেন।বাইজীর গানে মত্ত হাসন রাজা মরমীসাধনার দিকে আত্ননিবেদন করলেন।মরমী সাধনা বাংলাদেশের দর্শনচেতনার সাথে ঘটালেন সঙ্গীতের এক অসামান্য সংযোগ।হাসন রাজা লালন শাহ এর প্রধান পথিকৃত এর পাশাপাশি নাম আসে দুদদু শাহ,পাঞজশাহ,পাগলা কানাই,রাধারমন,আরকুম শাহ,জালাল খাঁ আরো অনেকের।এতে একটি বিষয় পরিষ্কার দাবী রাখে ২০৬টি গান হাসন রাজার নয় বরং হাসন রাজা একটি মরমী সঙ্গীতসাধনার সময়কাল।প্রশ্ন উঠবে জানি কেন ২০৬টি গান হাসন রাজার নয়।তথ্য মতে হাসন রাজার দরবারে নানান মরমীসাধক যেতেন নিত্য গান হতো।জমিদারকে খুশি করতে মরমীসাধক গায়করা গান বাঁধার সময় হাসন রাজা নামটা জুড়ে দিতেই পারতেন।তবে এটাও সত্যি হাসন রাজা মুখেমুখে দর্শনপূর্ন মরমী গান রচনা করতেন আর তার সহযোগীরা তা লিখে রাখতেন।আর তাই গানে ছন্দপতন,শব্দপ্রয়োগে অসতর্কতা দেখা যায়।তার গানে দেখা যায় আঞ্চলিক বুলি,প্রবচন ও বাগধারার ব্যবহার।হাসন রাজা কোন পন্থার সাধক ছিলেন তা সুপষ্ট নয়।তার পদাবলীতে কোন গুরুর নাম ও পাওয়া যায় না।তাই জোর গলাতেই বলা যায় হাসন রাজা একটি সঙ্গীতসময়কাল।যদিও কেউ কেউ বলেন তিনি চিশতিয়া তরিকার সাধক ছিলেন।যদিও তিনি বাউল বাউল বলে কখনো কখনো উল্লেখ করেছেন।তবে তিনি বাউলদের সমগোত্রীয় হলেও নিজে আনুষ্ঠানিক বাউল ছিলেন না।সূফীমতের সঙ্গে দেশীয় লোকায়ত মরমীধারা ও নিজসব চিন্তা দর্শনের মেলবন্ধনে তার সাধনার পথ বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।তার সঙ্গীতরচনার পশ্চাতের একটি সাধন দশর্নের পরভাব বলা যায়।
পাঁচ
১৯শে ডিসেম্বর ১৯২৫খ্রীঃ Indian philosophical congress এর প্রথম অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন।সভাপতির অভিভাষনে তিনি প্রসঙ্গক্রমে হাসন রাজার দুটি গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে তার দর্শন চিন্তার পরিচয় দেন।
১৯৩০সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের'হিবার্ট লেকচারে'ও রবীন্দ্রনাথ'The Rellgion of Man'নামে যে বক্তৃতা দেন তাতেও তিনি হাসন রাজার দর্শন ও সঙ্গীতের উল্লেখ করেন।
মম
আঁখি হইতে পয়দা আসমান
জমিন
শরীরে করিল পয়দা শক্ত
আর নরম
আর
পয়দা করিয়াছে ঠান্ডা আর
গরম
নাকে পয়দা করিয়াছে খুসবয়
বদরয়।
এই সাধক কবি দেখিতেছেন যে,শাশ্বত পুরুষ তাঁহারই ভিতর হইতে বাহির হইয়া তাহার নয়ন পথে আর্বিভূত হইলেন।বৈদিক ঋষিও এমনভাবে বলিয়াছেন যে,যে পুরুষ তাঁহার মধ্যে তিনিই আধিত্যমন্ডলে অধিষ্ঠিত।
ছয়,
ডিসেম্বরের ৬ বাতাসে ঠান্ডা আভাস হেমন্তের শেষ।শেষ বেলার গোধুলিতে সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় ভেসে আসচ্ছে আযান আর উলুধ্বনি।কোথায় যেন একটা শূন্যতা।কুয়াশার ঘোরে দূর আর ও দূর থেকে নশ্বর এক দেহ দেহতত্ত্বের মরমী আলোয় ভেসে আসে অমর এক করুন মিনতি 'ছাড় ছাড় হাসন রাজা এ ভবরে আশা।
পরান বন্ধরে চরণ তলে কর গিয়া বাসা রে....'
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ
পিতা ভানু দত্ত এবং অম্লান সরকার শুভ,অমিত দত্ত।
এক.
আজকের দিনটি মনোরম।রোদ্দুরের তাপে জ্বালা নেই কিন্তু বাতাসে ভারী হয়ে আছে গোমট কান্নার বাষ্প।ফেলে যাওয়া স্মৃতি আর বসতবাটি।তবু আজ এক ভিনদেশ দর্শন যাত্রার উত্সব। অযোধ্যা থেকে একগোষ্টী যাত্রা করেছে পূর্ববঙ্গের দিকে।পরামরাজত্বের পথ মাড়িয়ে পায়ে হাঁটা পথের ক্লান্তি, নৌকাভ্রমন পেরিয়ে তারা বসত গড়ে তোলে দক্ষিণবঙ্গের যোশরে।তারপর সেখানেও বাজলো বিদায় সুর।আবার নতুন কোন সন্ধানে যাত্রা এবার নৌকাবহর যেখানে থামলো প্রাকৃতিক নৈস্বগে আর সুরমার তীর ঘেষা সুনামগঞ্জের তঘেরিয়ার লক্ষণছিরি পরগনায়।
নতুন জায়গা,নতুন মানুষ জীবিকা আর বেঁচে থাকার তাগিদে তারা তিলতিল করে গড়ে তুলো তাদের অবস্থান তাদের বেচে থাকার জমি।
সময় তার নিয়মে চলে চড়াই উত্রাই পার করে।বসন্ত যায় বর্ষা আসে আবার বসন্ত পাতা ঝরায় পলাশ ফোটে শিমুল ঝরে।হিন্দু এই জনগোষ্ঠী আপন করে নেয় অতীত স্মৃতি ভুলে নতুন ভূমি।সিলেটে তখন ইসলাম ধর্মের প্রবল চর্চ্চা।শাহসুলতান,শাহপরাণ সহ আরো মহাপুরুষরা তখন মানবতার বানী ছড়িয়ে বেরাচ্ছেন।মানবতার অহিংস নীতিতে মুগ্ধ হলেন অযোধ্যা থেকে আগত বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব মতান্তরে বাবু রায় চৌধুরী তিনি ধর্মান্তরিত হলেন শান্তির ধর্ম ইসলামে।
দুই,
পৌষের সকাল ঘন কুয়াশায় রোদের দেখা নেই।জমিদার বাড়িতে খেজুরের রস এসে পৌঁচ্ছেছে।প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরীর উপস্থিতিতে অন্দর মহল থমথমে।কিছুক্ষণ পরেই তিনি বৈঠকখানায় যাবেন।তৃতীয় সন্তানের গর্ভবতী জননীর খোঁজ খবর নিয়ে ক্যালেন্ডারে চোখ বুলিয়ে তৈরী হলেন দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী।খাজাঞ্চীকে ডেকে পাঠালেন খাজনা সংক্রান্ত হিসাবনিকাশের খতিয়ান নিয়ে বৈঠকখানায় আসতে।দুই পুত্রকেও ডেকে পাঠালেন।
১২৬১বঙ্গাব্দের ৭ই পৌষ(২১শে ডিসেম্বর ১৮৫৪)কর্মব্যস্ত জমিদার বাড়ী শিশুসন্তানের কান্নায় মুখোরিত হয়ে উঠে।সেরেস্থা থেকে দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী দৌড়ে যান অন্দর মহলে তৃতীয় পুত্র সন্তানের মুখ দর্শন করে আযান দেন।এবার শুরু হয় সদ্যজন্ম নেয়া পুত্র সন্তানের নামকরণের তোড়জোড়।আলী রাজা তার খালাতো ভাই আমরি বখশ চৌধুরীর নিঃসন্তান বিধবা হুরমত জাহান বিবিকে পরিণত বয়সে বিয়ে করেছিলেন।হুরমত জাহান বিবির গর্ভেই এই পুত্র সন্তানের জন্ম।পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী তার বৈমাতৃয় ভাই দেওয়ান ওবেদুর রাজা চৌধুরীর পরামর্শে নবজাতকের নামকরণ করলেন অহিদুর রাজা।
তিন,
সময় নিরন্তর হাঁটে তার পায়ে ধুলো উড়ে না ক্লান্তি নেই ঘুম নেই তার।অহিদুর রাজা বেড়ে উঠছে সময়ের নিয়মে।আরবী ফরসীর চর্চায় বড় হয়ে উঠা আহিদুর রাজা।সিলেটে তখন আরবী ফরাসীর প্রবলভাবে প্রচলন চলতো।বালক আহিদুর রাজাকে একদিন সিলেটের ডেপুটি কমিশনার অফিসার নাজির আব্দুল্লা বলে এক বিখ্যাত ফরাসি ভাষাবিদ পরামর্শ দিলেন আহিদুর রাজা বদলে দেন তার মতে আহিদুর রাজা হয়ে উঠলেন হাসন রাজা।সুদর্শন বালক হাসন রাজা যৌবনে পা রাখলেন।বহুলোকের মাঝে চোখে পড়ার মত সৌমদর্শন,দীর্ঘভূজ ধারাল নাসিকা,জ্যাতিরময় পিঙ্গল চোখ।একমাথা কাবলিচুল পারসিক দেহধারী।তা ছাড়া উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছিলেন বিশাল সম্পত্তির মালিক আর এই যৌবন এবং অর্থ তাকে করে তোলে ব্যভিচারী।ভোগবিলাস আর নারী সম্ভোগে তিনি হয়ে উঠলেন অক্লান্ত।নিজের এই লম্পট কে তিনি নিজেই একটি গানে লিখেছিলেন-'সর্বলোকে বলে হাসন রাজা লম্পটিয়া'নিত্য নতুন নারী সঙ্গী ও নতর্কী ভোগী হাসান রাজার ঘরে একদিন তার মা নতর্কীর বেশে এলেন।লম্পট ছেলে হাসন তার মা র এই আগমন তার মনে ঘৃণার সঞ্চার করলো এবং সেইদিন তার এতবছর ধরে করা অপরাধ তার মনমানসিকতায় তৈরী করলো বৈরাগ্য।পাখিপ্রেমী ও ঘোড়া প্রিয় হাসন রাজা।(কুড়া ছিল তার প্রিয় পাখির নাম আর ঘোড়াদের নামছিলো জং বাহাদুর এবং চানদমুশিক)আর আনন্দবিহারে বজরায় ভোগবিলাস নারীতে মদে মত্ত এবং প্রজাদের থেকে দূরে চলে যাওয়া হাসন এই ঘটনার পর ফিরে এলেন নতুন জীবনে প্রজাদের সুখ দুঃখের পাশে একজন যথার্থ জমিদারে রূপান্তরিত হয়ে।
চার,
বৈরাগ্যকালে তিনি দরবেশ জীবন পালন করতেন।বাইজীর গানে মত্ত হাসন রাজা মরমীসাধনার দিকে আত্ননিবেদন করলেন।মরমী সাধনা বাংলাদেশের দর্শনচেতনার সাথে ঘটালেন সঙ্গীতের এক অসামান্য সংযোগ।হাসন রাজা লালন শাহ এর প্রধান পথিকৃত এর পাশাপাশি নাম আসে দুদদু শাহ,পাঞজশাহ,পাগলা কানাই,রাধারমন,আরকুম শাহ,জালাল খাঁ আরো অনেকের।এতে একটি বিষয় পরিষ্কার দাবী রাখে ২০৬টি গান হাসন রাজার নয় বরং হাসন রাজা একটি মরমী সঙ্গীতসাধনার সময়কাল।প্রশ্ন উঠবে জানি কেন ২০৬টি গান হাসন রাজার নয়।তথ্য মতে হাসন রাজার দরবারে নানান মরমীসাধক যেতেন নিত্য গান হতো।জমিদারকে খুশি করতে মরমীসাধক গায়করা গান বাঁধার সময় হাসন রাজা নামটা জুড়ে দিতেই পারতেন।তবে এটাও সত্যি হাসন রাজা মুখেমুখে দর্শনপূর্ন মরমী গান রচনা করতেন আর তার সহযোগীরা তা লিখে রাখতেন।আর তাই গানে ছন্দপতন,শব্দপ্রয়োগে অসতর্কতা দেখা যায়।তার গানে দেখা যায় আঞ্চলিক বুলি,প্রবচন ও বাগধারার ব্যবহার।হাসন রাজা কোন পন্থার সাধক ছিলেন তা সুপষ্ট নয়।তার পদাবলীতে কোন গুরুর নাম ও পাওয়া যায় না।তাই জোর গলাতেই বলা যায় হাসন রাজা একটি সঙ্গীতসময়কাল।যদিও কেউ কেউ বলেন তিনি চিশতিয়া তরিকার সাধক ছিলেন।যদিও তিনি বাউল বাউল বলে কখনো কখনো উল্লেখ করেছেন।তবে তিনি বাউলদের সমগোত্রীয় হলেও নিজে আনুষ্ঠানিক বাউল ছিলেন না।সূফীমতের সঙ্গে দেশীয় লোকায়ত মরমীধারা ও নিজসব চিন্তা দর্শনের মেলবন্ধনে তার সাধনার পথ বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।তার সঙ্গীতরচনার পশ্চাতের একটি সাধন দশর্নের পরভাব বলা যায়।
পাঁচ
১৯শে ডিসেম্বর ১৯২৫খ্রীঃ Indian philosophical congress এর প্রথম অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন।সভাপতির অভিভাষনে তিনি প্রসঙ্গক্রমে হাসন রাজার দুটি গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে তার দর্শন চিন্তার পরিচয় দেন।
১৯৩০সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের'হিবার্ট লেকচারে'ও রবীন্দ্রনাথ'The Rellgion of Man'নামে যে বক্তৃতা দেন তাতেও তিনি হাসন রাজার দর্শন ও সঙ্গীতের উল্লেখ করেন।
মম
আঁখি হইতে পয়দা আসমান
জমিন
শরীরে করিল পয়দা শক্ত
আর নরম
আর
পয়দা করিয়াছে ঠান্ডা আর
গরম
নাকে পয়দা করিয়াছে খুসবয়
বদরয়।
এই সাধক কবি দেখিতেছেন যে,শাশ্বত পুরুষ তাঁহারই ভিতর হইতে বাহির হইয়া তাহার নয়ন পথে আর্বিভূত হইলেন।বৈদিক ঋষিও এমনভাবে বলিয়াছেন যে,যে পুরুষ তাঁহার মধ্যে তিনিই আধিত্যমন্ডলে অধিষ্ঠিত।
ছয়,
ডিসেম্বরের ৬ বাতাসে ঠান্ডা আভাস হেমন্তের শেষ।শেষ বেলার গোধুলিতে সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় ভেসে আসচ্ছে আযান আর উলুধ্বনি।কোথায় যেন একটা শূন্যতা।কুয়াশার ঘোরে দূর আর ও দূর থেকে নশ্বর এক দেহ দেহতত্ত্বের মরমী আলোয় ভেসে আসে অমর এক করুন মিনতি 'ছাড় ছাড় হাসন রাজা এ ভবরে আশা।
পরান বন্ধরে চরণ তলে কর গিয়া বাসা রে....'
কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ
পিতা ভানু দত্ত এবং অম্লান সরকার শুভ,অমিত দত্ত।
1 comments:
জীবনের বাকেঁ
মোঃ শওকত আলী
জীবনের বাকেঁ বাকেঁ আমার সপ্নের অজস্র পরিকল্পনাগুলো
ক্রমেই ক্ষয়ে হয়ে আসছে, হয়ে আসছে ম্রিয়মান ৷
এই আমি অসম্ভব সুন্দর আমি
যার ছিল সুন্দর দুটি চোখ,
ভাল লাগত সব কিছু,
মেঠোপথে চলতে ভালবাসতাম,
ভালবাসতাম সর্ষে ফুলের রঙে নিজের মুখ খানা রাঙ্গীয়ে নিতে,
নিয়ম করে শীত ফিরে আসে,বর্ষা ফিরে আসে,
বসন্তও আসে কিন্ত জোয়ার তো আসে না আমার হৃ্দয়ে,
আমার হৃ্দয়ের দরজায় কড়া নেড়ে নেড়ে অনেকেই ফিরে গেছে,
ওরা জানতনা আমার ঘর নেই,বাড়ী নেই,শুন্য হয়ে উজার হয়ে আছি,
সেই সব রাএীগুলো,সেই সব রাএীগুচ্ছগুলো,
চাঁদের দিকে তাকিয়ে থেকে পার করার মত রাএীগুচ্ছগুলো,
যখন ভিসুভিয়াসের আগ্নেয়গীরি বক্ষে ধারন করে সেজে ছিলাম জলন্ত চিতার সাজে,
চোখে পড়েনি সমঝদারের,
তার পর গোলাপদের কাটায়, আগাছায় জর্জরিত এই সাড়ে তিন হাত দেহ বল্ভব,
ছটফট কেরেছে তবুও নায়াগ্রার মরমর ধ্বনীর লোভ ছাড়তে পারিনি ৷
এক সময় বাধ ভেঙ্গে গেছে,
সমস্ত কষ্ট থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে চেয়ে ছিলাম,
ত্যাগ করে ছিলাম আমার ভালবাসার মৃতপাত্র.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন