বাংলা রূপান্তর – নন্দিতা ভট্টাচার্য
এক
বাবা, একটা পুতুল কিনে দিবি? রাঙ্গানদীর পারে হাট বসেছে ইটখোলার পাশে। সোনা-দানা চুড়ি বালা মনি-মুক্তো কিছুই চাইনা আমি আমাকে একটা পুতুল দে, তিন টাকাতেই পাবি।
--- মামনি আমার! মৌজাদারের ঘরে গতর খেটে ত্রিশ টাকা পেলাম। ডালের দাম পঞ্চাশ টাকা কিলো। রেশনের চাল আনলাম। নুন খার দিয়ে ভাত খাব আজ। পুতুলের সাথে পরে খেলতে পারবি।
দুই
--- বাবা, একটা পুতুল কিনে দিবি ? মৌজাদারের মেয়ের মতো নয় – মোটাসোটা ভালুকের ছানা। হরেক মাল থেকেই কিনে দিতে পারবি। দশ টাকাতেই পাবি।
--- মামনি, মামনি! তোর মায়ের চাদর দেখ ফেসে গেছে। তোর জামাটিরও সেলাই খুলে গেছে। মৌজাদারের গোলামি করে টাকা কটা পেলে পুতুল নয়, জামার সঙ্গে চাদর কিনতে হবে।
তিন
--- বাবা, পুতুল কিনে দিবি? বলেন কাই-র দোকানে পাবি—নীল চোখের সোনালী চুল।
--- মা। মাগো! এখন তুই বড় হয়েছিস। পুতুলের বিয়ে কি করে দিবি? বাঁশের খুঁটির ভাড়ার ভেঙ্গে মেখলা-চাদর একজোড়া কিনে দেব। লাল রঙের পাথর বসানো আংটি ও মৌজাদারের মেয়ের মতো নখরঞ্জনী - এটা ওটা!
চার
--- ও বাবা, একটি পুতুল কিনে দিবি? মৌজাদারের মেয়ের মতো নখরঞ্জনী দরকার নেই — বাইরের বেড়ায় যে মেহেন্দির ঝাড় আছে সেই মেহেন্দি পাতা বেটে হাতে লাগাব নাহয় আমি।
--- মা, ও আইজনি! দৈর্ঘে – প্রস্থ্যে তো মায়ের সমান হয়েছিস। পুতুল নিয়ে কি করে খেলবি? দু’দিন দিন পর বিদায় করব। তারপর তো অন্য বাড়িতে গিয়ে তো হাড়ি কড়া ওথলাবি !
পাঁচ
--- বাবা, ও বাবা! একটি পুতুল কিনে দিবিনা? আমার জন্যে নয় আমার মেয়ের জন্যে। বাচ্চাটা বড় জ্বালাতন করে। বাপকে বললেও ক্ষেপে ওঠে। হাল - লাঙ্গল চালিয়ে যা জোটে তাতে দু’ মুঠো ভাত ই মুখে তুলতে পারিনা ...।
(চন্দনা পাঠক আসামের শূন্য দশকের বিখ্যাত লেখক )
(অলংকরণ – কৌশিক বিশ্বাস )
3 comments:
Abohomaan
ভালো লাগলো দিদি ।
গল্প এবং অনুবাদ দুটোই বেশ লাগল।দুই লেখিকাকে শুভেচ্ছা...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন