বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১২

হাসির গল্প - রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য

পিন্টুর মৎস্যরাজ
রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য


বাবা বাজার থেকে জিওল মাছ আনলেই পিন্টু সেগুলোকে প্যাট প্যাট করে চেয়ে দেখে । চিমটে দিয়ে ধরে কয়েকটাকে ছেড়েও দিয়েছে । কিন্তু, সেই মৎস্যরাজকে আর খুঁজেই পাচ্ছে না !

প্রত্যেকবার ভাবে, এবার বোধহয় ছাড়া পেয়ে মাছটা বলবে- পিন্টু, তুমি আমার প্রাণ বাঁচালে । তোমাকে আমি আশীর্বাদ করছি । এবার থেকে যা চাইবে খালি বলবে – মৎস্যরাজের আদেশে যেটা চাইছি সেটা হোক । কাজটা আপনা- আপনি হয়ে যাবে ।

সে সব তো হয়ই না, উল্টে রান্নার সাধনা মাসি মাছ কম পড়লে চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় করে । আর, কপালে জোটে মায়ের বকুনি !

মাছ ছাড়ার পর ভেবেছে, আরে ! কাছে পিঠে তো কোনো পুকুর- টুকুর নেই । তালে বাঁচবে কি করে ওরা?

বাবার মামা, ক্ষেতুদাদুর কাছ থেকে রাশিয়ান না চাইনিজ রূপকথাটা শুনেছিল পিন্টু । মৎস্যরাজ বলে নাকি সত্যিই আছে কোথাও ।

ক্ষেতু- দাদু হঠাৎ করে তার সন্ধান পেয়ে, অঙ্কেতে বড় পাশটাশ দিয়ে এক নামকরা কলেজে মাস্টারি করত । এখন অবসর নিয়েছেন ।

ক্লাস ওয়ার্ক কপিতে ম্যাডাম প্রশ্ন করেছিলেন – H2O র মানে লিখতে । পিন্টু লিখেছিল:- H- I- J- K- L- M- N -O ।

উত্তর দেখে ম্যাডাম বলেছিলেন :- পিন্টু, তুই দেখছি একদিন কেমিষ্ট্রিতে নোবেল প্রাইজ পাবি।

যত দোষ বঙ্কার । ওই তো বলেছিল নেটে নাকি জলের নতুন এম্পিরিক্যাল ফরমুলা বেরিয়েছে । H2O মানে জল ঠিকই, তবে আজকাল জলদূষণ হচ্ছে । তাই সহজ এই নতুন সিম্বল বেরিয়েছে । অ্যালফাবেটের লেটারগুলো ঠিক থাকল আর জলের দূষণটাও ঠিকঠাকভাবে লেখা গেল ।

অপমানের শোধ নেবার জন্য,বঙ্কার জন্য তলে তলে ফাঁদ পেতেছিল পিন্টু । সুযোগও এসে গেল । থার্ড ল্যাঙ্গোয়েজ ক্লাসে, হিন্দি ম্যাম একটা নোটস্ দিয়ে বলেছিলেন – এটার ফোটোকপি করেনিও তোমরা ।

ফাঁপরে পড়েছিল সবাই! পিন্টু বলেছিল- হিন্দি জেরক্স বা ফটোকপি তো সব জায়গায় হয় না! আমাকে দে, বাবাকে বলে ধর্মতলার আপিস চত্ত্বর থেকে চল্লিশটা কপি করিয়ে আনবো ।

পরে, ফোটোকপির ব্যাপারটা বঙ্কা বুঝে, কিছু না বললেও পিন্টুকে নাম দিয়েছিল- এইচ টু ও।

তারপর থেকেই পিন্টুকে ওর ক্লাস সেভেনের সবাই এইচ-টু-ও বলে ডাকতে শুরু করেছে । মৎস্যরাজকে একবার যদি পায়, তবে আর পড়াশোনাই করবে না । খালি কম্পুতে গেম খেলে, মৎস্যরাজের আদেশে মগজে সব পড়া সড়াৎ করে ঢুকে, পিন্টুকে সব বিষয়েই একশো তে একশো পাইয়ে দেবে । চাই কি পরে সত্যি সত্যি নোবেল পেয়ে ম্যাডামকে, অবাক করাতে পারে ।

ক্ষেতু- দাদুর কী মজা ! একদিন প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে একেবারে শুকনো অবস্থায় বাড়িতে এসেছিলেন ।

না ভিজে, কীভাবে শুকনোভাবে এসেছেন জিজ্ঞেস করাতে দাদু বলেছিল :-ওই যে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে যে ফাঁক গুলো আছে, সেগুলোর মধ্যে দিয়ে এসেছি । এটা সেই মৎস্যরাজের আদেশের কৃপার ফল- বুজলি, পিন্টু ! একটা জিওল মাছকে পুকুরে ছেড়ে দেওয়াতে এই বরটা পেয়েছিলাম । মাছটা ছিল, মাছেদের রাজা । এই রূপকথাটা ছোটবেলায় পড়েছিলাম । তারপর থেকেই তক্কে তক্কে ছিলাম । আর, হাতে চলে এলো বরটা ।

মার মুচকী হাসার কারণটা বুঝতে পারেনি পিন্টু । সাধনা মাসী ইশারায় বাবার গাড়ীটা যে কেন দেখালো, সেটা আজও বোঝেনি ।

দাদু এলে অনেক মজার ঘটনার কথাও জানা যায় । শান্তিনিকেতনের খোয়াইতে একটা মাঠে দুটো সাপকে দেখেছিল দাদু । একটা সাপ, আরেকটা সাপের ল্যাজ মুখে দিয়ে আছে । আবার ওই সাপটা প্রথম সাপটার ল্যাজ মুখে দিয়ে আছে । এই করে করে দুটো সাপনিজেদেরকে খেয়ে ফেলে অদৃশ্য হয়ে গেল ।

গাড়ীতে ফেরার পথে, রাস্তার গাড্ডাগুলোও আপনা- আপনি নিজেদের মতো করে সরে সরে রাস্তা করে দিচ্ছিল । ফলে কোনো ঝাঁকুনিও ছিল না । আরামসে একটুও ঝাঁকুনি না খেয়ে, দাদু ফিরে এসেছিল কোলকাতায় ।

ছোটবেলায় ইতিহাসে প্রশ্ন এসেছিল- প্রথম মুঘল সম্রাট বাবরের সম্বন্ধে যাহা জানো- লেখ ।

দাদু, খালি বইতে দেখা বাবরের ছবিটা এঁকে দিয়ে খাতা জমা দিয়েছিল মাষ্টারমশায়ের কাছে।

তারপর একশোতে একশো পাওয়া দাদুকে নিয়ে খুব হৈ চৈ হয়েছিল কয়েকদিন । পরীক্ষক নাকি ইতিহাস বইয়ের চারশো কুড়ি নম্বর পাতার পুরো লেখাটা হুবহু খাতায় লেখা দেখেছিলেন । বাবরের ছবিটা ভ্যানিস্ । এটা নাকি খবরের কাগজেও বেরিয়েছিল ।

দাদুরও নোবেল পাবার কথা । তবে, সেটা ভয়ে ছেড়ে দ্যায় । রবি ঠাকুরের নোবেল পদকটা চুরি যাবার পর এই রিস্কটা দাদু নেয়নি । একটা সম্পদ নষ্ট হবে ।

কেউ তো আর জানতো না, সবই মৎস্যরাজের কৃপা ! তাই পিন্টুর এই আপ্রাণ মৎস্যরাজের খোঁজ। পিন্টু আবার কিছুটা ভুলো । এই তো সেদিন ! অঙ্কের ক্লাস টেস্টে প্রশ্ন এসেছিল :-









অবশ্যম্ভাবী গার্জ্জেন কল ! ফলে, মায়ের মুখ গোমড়া আর বাবা হো হো করে দিলোখোলা হেসে বলেছিল- পিন্টুর মাথায় খেলেও বটে ।


ক্ষেতুদাদুকে অনুরোধ করে ডেকেছিল মা বাড়িতে । ঘিয়ে ভাজা ফুলকো লুচি আর সাদা তরকারি খাইয়ে বলেছিল মা :-

কি যে সব ঢোকান পিন্টুটার মাথায় ! আজগুবি সব ব্যাপার মাথায় নিয়ে ঘোরে বলে, এইসব উদ্ভট চিন্তা আসে ।

দাদু বলেছিলেন :- দ্যাখো বৌমা ! বাচ্চারা যদি কল্পনাপ্রবণ না হয়, তালে কোনো কাজই ঠিকঠাকভাবে করতে পারবে না । আগে ওদের কল্পনার সুযোগটা দাও ! তালেই দেখবে, ধীরে ধীরে বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার ফারাকটা বুঝতে পারবে । তবেই না, পড়াশোনা আসবে ? নো ইমাজিনেশান- হিউম্যান ক্যান নট এগজিড্‌ । পড়ার ব্যাগটা কাঁধে ঝুললে হবে না । প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে ।

খড়্গপুরের আইআইটির কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ারিংএর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পিন্টুর আজকাল ওই কথা গুলো মনে পড়লেই নিজের মনেই হাসে ।

মৎস্যরাজরা সত্যিই আছে- ক্ষেতুদাদুদের ছদ্মবেশে ।

4 comments:

Subrata Sanyal বলেছেন...

nijer chhotobelar kotha mone pore gelo...darun golpo !

madhumita বলেছেন...

darun...erokom Pintu sobar bhetore ekta kore achhe. Tobe tader niye Pintur abhibhabokder majhe majhe somosya hoy boiki. kintu shesh abdhi Pintuder e jeet hoy.

Du ekti typo chokhe porlo jemon 'exid', ota mone hoy 'exist' hobe.

suvendu বলেছেন...

besh daroon laaglo...bhalo lekhen apni...likhoon...pori...

Preetha Roy Chowdhury বলেছেন...

apnar lekha borabori osadharon lage...ebareo tar byatikrom hoy ni :)