এপিটাফ
সুবীর সরকার
২৫।
চাদের পূর্ণ আলোয় দেখা গেল ঘোড়া ছুটছে।ঘোড়ার পিঠে ডানকান সাহেব।দীর্ঘকায় গৌরবর্ণ বলশালী পুরুষ।সাহেবের হাতে বন্দুক।ঝাঁ-চকচকে এবং দো-নলা।সাহেব যাচ্ছেন হাটের দিকে।হাট থেকে আবার যাবেন নতুনতর হাটে।এভাবে হাটপর্বের গোলকধাঁধায় ঘুরতে থাকবেন চক্রাকারে।আর আমরা গল্পের উৎসমুখ খুঁজতে খুঁজতে শেষাবধি গল্পের খুব ভিতরে ঢুকে পড়ব।অবশ্যি বন্দুকটা থাকবে।বন্দুক থাকলে খুব অদ্যিকালের সব গ্রামগঞ্জ হাটবাজার মানুষও থাকবে।থাকা না থাকার অস্পষ্টতায় জন্ম নেবে ক্রমান্বয়ে অগণন মিথ.... নদী ও দেশাচার চাঁদের পূর্ণ আলোটুকু কেবল বাঁচিয়ে রাখবে আর ছড়িয়ে দেবে ডানকান সাহেব ও তাঁর ভুমাত্রিক ঘোড়াটি।
২৬।
ডানকানের ঘোড়া অথবা বন্দুক ও ঘোড়াসহ সাহেব ডানকান যখন হাটে ঢুকে পড়বে তখন চাঁদ সরে গেছে।নদী থেকে সর্বত্র ছিটকে যাচ্ছে বাতাস।হাটের ভিতর থেকে জটলার গহন থেকে মিছিলের মতো মানুষ আসতে লাগল আর এসবের ধারাবাহিকতায় ধরাছোয়ার বাইরে চলে যেতে গিয়েও হাটের গানের টানে আবার ফিরেও আসতে হয়।সাহেব যেদিকেই যান তীব্র এক আর্তি তাকে ঘিরেই থাকে আর স্বপ্নের পর স্বপ্ন ভেঙে যেতেও থাকলে শেষাবধি স্বপ্নের কাছে ফিরে আসতে হয়।জঙ্গল সংকীর্ণ ও গভীর হতে থাকে,হাতির পাল দানাশস্যের বিস্তীর্ণতায় নেমে আসতে থাকে খুটামারার অজ্ঞাত এক বাথান থেকে সমবেত হাতি-ধরা গানও ছড়িয়ে পড়তে থাকে... আল্লাহ আল্লাহ বলরে ভাই হায় আল্লা রসুল/কোন মহালের মাহুত রে তুই হায় আল্লা রসুল...। গানের রকমফের থাকে ওঠানামা থাকে আর সব ছাপিয়ে জীবন্ত এক সুরও।নদীও এক সময়ে সাবলীল গান লগ্ন হয়ে ওঠে,আশ্চর্য আহ্লাদে লালন করে গান ও গানের প্রেক্ষিতে স্থাপিত সবুজ এক জনপদ।গীদাল বয়াতি পিঁরফকির কাঁঠালখুটার ময়ুরমুখা দোতারা তালবাদ্য।সব ছাপিয়ে অনিবার্য হয়ে ওঠে সাহেব ও তার ঘোড়া।ঘোড়ার ছুটে চলা ধীরলয় ছন্দপতন পুনর্বার ছন্দের জাদু পাওয়া সমুদয় মিলেমিশে অত্যাশ্চর্য গাথাকাব্য ও মিথ হয়ে ওঠে।মিথপাশের ধুলোর মতো উড়তে থাকে আর গেঁথে যেতে থাকে গ্রাম দেশের উঁলুজোকার ও বিবাহবাজনার সঙ্গে।
২৭।
চা বাগানের হাটের ভিতর ঘন জটলার মধ্যে থেকে কিংবা মোরগলড়াই হাড়িয়ার হাট থেকে সরে এসেও দ্বিধাগ্রস্ত ডানকান সাহেব একসময় দাঁড়িয়ে যান।আদতে সাহেব দাঁড়ান না,দাঁড়িয়ে পড়ে তার ঘোড়াটি।দাঁড়িয়ে থাকার আদিঅন্তহীনতায় অবকাশ যাপনের আবডালে সাহেব চোরাচোখে তার বন্দুকটিকে দেখে নেন।গায়ে হাত বোলান ঘোড়াটিরও।হাট হাটের মতো নিস্পৃহ উদাসীন,বেরিয়ে আসা বাতাসের মতো।অন্তহীন এক কালখন্ড আর আটকে থাকা লেপটে থাকা বাঁশফোঁড় টুডু কুজুরদের গ্রাম সহজ জীবন ধামসার তাল খুটামারার সাঁকো ডোবোর হাট শ্মশান ও সাসানডিরি কীর্তনবাড়ি জিতুমনি বডুয়ার মুখানাচ আড়বাঁশি।অথচ কোথাও জায়মানতা থাকে কি ? সীমায়ন থাকে না, বোধকরি শতাব্দীপ্রাচীন একটা বাড়ি এ কথা জানে আর সমূহ জ্ঞানভান্ডার এঁকে রাখে বাড়ির দেয়াল ও মাটি লেপা উঠোনে আর সামান্য নস্টালজিয়াও থাকে হয়তো বা।আর এসবের অন্তহীনতায় লীল হয়ে গিয়েও পুনশ্চ ফিরে আসে ডানকানসাহেব ঘোড়া ও বন্দুকসহ বড়াইবাড়ির প্রশান্ত বৃক্ষঘেরা উঠোনের মধ্যিখানে।
২৫।
চাদের পূর্ণ আলোয় দেখা গেল ঘোড়া ছুটছে।ঘোড়ার পিঠে ডানকান সাহেব।দীর্ঘকায় গৌরবর্ণ বলশালী পুরুষ।সাহেবের হাতে বন্দুক।ঝাঁ-চকচকে এবং দো-নলা।সাহেব যাচ্ছেন হাটের দিকে।হাট থেকে আবার যাবেন নতুনতর হাটে।এভাবে হাটপর্বের গোলকধাঁধায় ঘুরতে থাকবেন চক্রাকারে।আর আমরা গল্পের উৎসমুখ খুঁজতে খুঁজতে শেষাবধি গল্পের খুব ভিতরে ঢুকে পড়ব।অবশ্যি বন্দুকটা থাকবে।বন্দুক থাকলে খুব অদ্যিকালের সব গ্রামগঞ্জ হাটবাজার মানুষও থাকবে।থাকা না থাকার অস্পষ্টতায় জন্ম নেবে ক্রমান্বয়ে অগণন মিথ.... নদী ও দেশাচার চাঁদের পূর্ণ আলোটুকু কেবল বাঁচিয়ে রাখবে আর ছড়িয়ে দেবে ডানকান সাহেব ও তাঁর ভুমাত্রিক ঘোড়াটি।
২৬।
ডানকানের ঘোড়া অথবা বন্দুক ও ঘোড়াসহ সাহেব ডানকান যখন হাটে ঢুকে পড়বে তখন চাঁদ সরে গেছে।নদী থেকে সর্বত্র ছিটকে যাচ্ছে বাতাস।হাটের ভিতর থেকে জটলার গহন থেকে মিছিলের মতো মানুষ আসতে লাগল আর এসবের ধারাবাহিকতায় ধরাছোয়ার বাইরে চলে যেতে গিয়েও হাটের গানের টানে আবার ফিরেও আসতে হয়।সাহেব যেদিকেই যান তীব্র এক আর্তি তাকে ঘিরেই থাকে আর স্বপ্নের পর স্বপ্ন ভেঙে যেতেও থাকলে শেষাবধি স্বপ্নের কাছে ফিরে আসতে হয়।জঙ্গল সংকীর্ণ ও গভীর হতে থাকে,হাতির পাল দানাশস্যের বিস্তীর্ণতায় নেমে আসতে থাকে খুটামারার অজ্ঞাত এক বাথান থেকে সমবেত হাতি-ধরা গানও ছড়িয়ে পড়তে থাকে... আল্লাহ আল্লাহ বলরে ভাই হায় আল্লা রসুল/কোন মহালের মাহুত রে তুই হায় আল্লা রসুল...। গানের রকমফের থাকে ওঠানামা থাকে আর সব ছাপিয়ে জীবন্ত এক সুরও।নদীও এক সময়ে সাবলীল গান লগ্ন হয়ে ওঠে,আশ্চর্য আহ্লাদে লালন করে গান ও গানের প্রেক্ষিতে স্থাপিত সবুজ এক জনপদ।গীদাল বয়াতি পিঁরফকির কাঁঠালখুটার ময়ুরমুখা দোতারা তালবাদ্য।সব ছাপিয়ে অনিবার্য হয়ে ওঠে সাহেব ও তার ঘোড়া।ঘোড়ার ছুটে চলা ধীরলয় ছন্দপতন পুনর্বার ছন্দের জাদু পাওয়া সমুদয় মিলেমিশে অত্যাশ্চর্য গাথাকাব্য ও মিথ হয়ে ওঠে।মিথপাশের ধুলোর মতো উড়তে থাকে আর গেঁথে যেতে থাকে গ্রাম দেশের উঁলুজোকার ও বিবাহবাজনার সঙ্গে।
২৭।
চা বাগানের হাটের ভিতর ঘন জটলার মধ্যে থেকে কিংবা মোরগলড়াই হাড়িয়ার হাট থেকে সরে এসেও দ্বিধাগ্রস্ত ডানকান সাহেব একসময় দাঁড়িয়ে যান।আদতে সাহেব দাঁড়ান না,দাঁড়িয়ে পড়ে তার ঘোড়াটি।দাঁড়িয়ে থাকার আদিঅন্তহীনতায় অবকাশ যাপনের আবডালে সাহেব চোরাচোখে তার বন্দুকটিকে দেখে নেন।গায়ে হাত বোলান ঘোড়াটিরও।হাট হাটের মতো নিস্পৃহ উদাসীন,বেরিয়ে আসা বাতাসের মতো।অন্তহীন এক কালখন্ড আর আটকে থাকা লেপটে থাকা বাঁশফোঁড় টুডু কুজুরদের গ্রাম সহজ জীবন ধামসার তাল খুটামারার সাঁকো ডোবোর হাট শ্মশান ও সাসানডিরি কীর্তনবাড়ি জিতুমনি বডুয়ার মুখানাচ আড়বাঁশি।অথচ কোথাও জায়মানতা থাকে কি ? সীমায়ন থাকে না, বোধকরি শতাব্দীপ্রাচীন একটা বাড়ি এ কথা জানে আর সমূহ জ্ঞানভান্ডার এঁকে রাখে বাড়ির দেয়াল ও মাটি লেপা উঠোনে আর সামান্য নস্টালজিয়াও থাকে হয়তো বা।আর এসবের অন্তহীনতায় লীল হয়ে গিয়েও পুনশ্চ ফিরে আসে ডানকানসাহেব ঘোড়া ও বন্দুকসহ বড়াইবাড়ির প্রশান্ত বৃক্ষঘেরা উঠোনের মধ্যিখানে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন