শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ছোটগল্প - অর্পিতা দাস প্রহরাজ

ম্যাজিক বড়ি
অর্পিতা দাস প্রহরাজ



· ‘একটা বড়ি?’

· ‘মানে একটা ট্যাবলেট। দিনে। এমন কিছু ব্যাপার না।’

· ‘না, তা তো নয়ই। কিন্তু একটা ডাউট...’

· ‘না না বাবুদা...ডাউটের কিছু নেই। কোন অসুবিধেই নেই। তুমি বেনিফিটগুলো দ্যাখো...রিয়েলিটি থেকে ভ্যানিশ করে যাবে আস্তে আসস্‌তে।’ সাপের মত হিসহিসিয়ে উঠল সর্বজ্যোতি তপাদার।

আজ অনেকদিন অন্ধকারের সাথে সহবাস হয়ে গেল বাবুদার, ওরফে অভিজিতের। সেই কলেজ লাইফ থেকে আস্তে আস্তে গলিতে হাঁটা শুরু। প্রথম প্রথম অদ্ভূত লাগত। বাবা-মা-ভাইয়ের আদরের মেয়ে যখন শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের জল ফেলে বেশী রাতে স্বাদহীন তরকারী দিয়ে রাতের খাবার খেতে শুরু করে, সেরকম। এটা তো লজ্জা। চরম লজ্জার। নিজের কাছে। নর্দমার ভেতর দিয়ে হাঁটার কথা ভেবে কেউ হাঁটতে শেখে নাকি? কিন্তু আস্তে আস্তে সয়ে যায়। আস্তে আস্তে রিয়্যালিটি বদলে যায়। তখন সেই মেয়েটাই নিজের পছন্দের রান্না রাঁধতে শিখে যায়, রাত্তিরবেলা নেগোশিয়েট করতে শিখে যায়। মিশকালো রাতে হিড়িক দিতে দিতে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বন্ধু পেয়ে যায় তো। ল্যাম্পপোস্ট, বেপরোয়া ট্রাক আর শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের ডিমভাজা? ফোন কমে যায় বাড়ি থেকে। আহ্‌ নিচে নামা কি সহজ! কি আরামের! আড়ালের জীবন যে কি মজার! নাকের সামনে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তোমায় ঠকাবো, তুমি জানতেই পারবে না। এম্মা, ধরতে পারে না! এই দ্যাখো আমি...বোতল, মরফিন, পাতালু দ্রব্যের ম্যাজিকে বুঁদ হয়ে আছি। কোথায় লাগে তোমাদের ক্যাচর ম্যাচর থোড় বড়ির দুনিয়ার কাছে আমাদের কুছ পরোয়া নেইয়ের বেফিকর মেজাজ? ঠোক্কর খেলে তোমরা পা সরাও। আমরা পা কেটে বাদ দিয়ে দিই। অথবা পা আছে সেটা ভুলে যাই। দরকার কি? পা নিয়ে কতদূর হাঁটবে হে শুনি? আসল জার্নি তো শুরু হয় সারিয়াল হুঁশে। বেহুঁশেও বলতে পারো। ন্যাংটো হয়ে পড়ে থাকব, শাল্লাহ্‌ লজ্জাও লাগবে না। না লাগবে ব্যথা।

কিন্তু ব্যাথাও শেষ হয়ে যায় একসময়। তড়পানি, ধমকানি বন্ধ হয়ে যায় একসময়। তখন শুধু নেশা কেটে যাওয়ার পর সারা গায়ে বমির গন্ধ আর নোংরা জামাকাপড়। ঘেন্না, লজ্জার তলানিটাও সাংঘাতিক। কিন্তু সেটা এই জীবনের সাথে বেশ খাপ খায়।

‘কি ভাবছ?’

‘হ্যাঁ? না...মানে পুরোটা ভুলে যাব বলছিস?’

‘বাবুদা...তুমি আলাদা। তোমার ভাবনাচিন্তা তো পুরো অন্য লেভেলের। সেই জন্যই না তুমি আমাদের গুরু বস্‌! এটা পুরো অন্য পৃথিবী। মানে ধরো, তোমার সেই লেখাটা মনে আছে? যেটা ‘মনবিকাশ’-এ বসে লিখেছিলে? উফ্‌ কি কনসেপ্ট! ভাবা যায়? মানে তখন তো তোমার পুরো উন্মাদ অবস্থা, মনে আছে? তোমার মনে থাকবে কি করে? ওহ্‌ আমার সে দৃশ্য এখনও চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে বাবুদা। বৌদি আর তোমার ভাই দু’দিক থেকে তোমার হাত চেপে আছে। তুমি হার্পিক খেয়ে নিয়েছিলে গো। মনে আছে? পুরো পাগলাটে মেরে গেছিলে মাইরি। মানে আমাদের এই নন্দন চত্ত্বরে একটা পাগলা আছে না? ওর চেয়েও ঘটিয়া অবস্থা। সেই আমি খাওয়াতে গেলাম। তুমি আমার হাত কামড়ে দিলে! তখনই তো বৌদি আর তোমার ভাই ডিসিশান নিল তোমাকে মনবিকাশে ভর্তি করার। ওখানে ইলেকট্রিক শক-টক দিয়েছিল। তোমার মনে নেই। সে যাই হোক। সেই টাইমটা ভাবো। পুরো উন্মাদ অবস্থা। তখন তো রিয়্যালিটিটাই বদলে গেছে তোমার। কি চলছে তোমার মাথায় সেটা তুমিই জানো? তোমার মনে নেই হয়ত। বৌদিকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবে। সেই অবস্থায় তোমার একটা ওষুধ চলত। ডঃ সরকার? যে তোমার চিকিৎসা করত? উনিই প্রেসক্রাইব করেছিলেন। ওটা ছিল তোমার রিয়্যালিটির সেন্স ফেরানোর জন্য। ধরে নাও এটা ওটার ঠিক উলটো। মানে তোমাকে পুরোপুরি রিয়্যালিটির সেন্সটাই ভুলিয়ে দেবে।’

‘মানে শালা পুরো পাগলাচোদা হয়ে যাব।’

‘আরে! সে তো তুমি আছোই! অসুবিধে কি আছে? বুঝতে পারছ না তুমি? আরে! ম্যাজিকটা ভাবো! এই দুনিয়া ভ্যানিশ! প্রবলেম ভ্যানিশ!’

অভিজিত এখনো নন- রিয়্যালের মধ্যে থুম মেরে আছে। সর্ব বলে যাচ্ছে।

‘তুমি তো লেখার জন্যই জন্মেছ বাবুদা। সবাই ডাল-ভাত খেলে চলবে? তোমার জন্য তো এটা নয়। এসব নেশা ধোপেই টিকবে না দ্যাখো না। এটা পুরো অন্য লেভেলের। তারপর লেখা বেরোবে দেখবে। আহ্‌ বাবুদা ভেবে দ্যাখো...এতদিন শুধু অন্ধকারে ঢুকে ছটফট করেছ, বুঝতে পারোনি। এবার পুরো অন্ধের মত...কালার মত। কোন আলো নেই। ঝ্যামেলাও নেই। শুধু নতুন নতুন ফর্ম নেচে নেচে উঠবে মনের ডার্করুমের মধ্যে। আনকন্ট্রোল্‌ড মানেহীন আওয়াজ।’



আস্তে আস্তে ফেড হয়ে গেল এই আওয়াজগুলো। অভিজিত দেখলো ও বাড়ির দিকে হাঁটছে। বাড়িতে ঢুকল। ওর বৌ মণি যথারীতি দরজা খুলল। আহা! কি আনন্দ! এই দৃশ্যটা প্রতি মূহুর্ত কেন যে হয় না! সারাদিন পর দেখল বৌকে। রাগী। ছোট্ট বৌটা। খুব নরম, এক্কেবারে পায়রার মত। এবার ডানা ঝাপটানো শুরু হবে। শুরু হল। ঝটপট, খচর মচর, বকুম বুকুম, গুম গুম।

‘আবার খেয়ে এসেছ? কেন?’

‘জানি না যাও!’

‘আমি চলে যাব!’

‘আমি কোন মতেই এটা মেনে নেব না ব্যস্‌।’

অভিজিৎ একটু হড়কে গেল যেন। খাটের পায়ায় ঠোক্কর লেগে গেল। মণি ধরে ফেলল ওকে। কি আরামের ওর ধরাটা। একবার তাকাল ওর পুরো মুখের দিকে। কি প্রচণ্ড মায়া! উফ্‌! এবার কষ্ট হল। কেন এরকম হয়? শালাহ্‌, বেইমানদের কখনও সৎ লোকের সংগত হতে নেই। অসুবিধে হয়। মনের ধড়ফড়ানিকে আষ্টেপৃষ্ঠে মাথার মধ্যে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল সেরাতকার মত অভি।

হাল্কা আলোর ছেঁকা খেয়ে ঘুম ভাঙল আস্তে আস্তে অভিজিতের। সকাল হচ্ছে বোধহয়। ও শুয়ে শুয়েই ট্র্যাক করতে চাইল সময়, গতিবিধি। মণি উঠে পড়েছে। বাথরুম সেরে বেরিয়েছে বোধহয়। ও এটা সেটা কাজ সারতে সারতে অভিজিতের চারপাশে ঘোরে। ওকে দেখে। আজকেও দেখছিল, একদৃষ্টে।

‘একি! আবার এরকম ঝুলে ঝুলে ঘুমোচ্ছ?’ পরক্ষণেই ও দেখল মণি ওর হাত আর পা-টা আস্তে করে খাটে তুলে দিচ্ছে। মণির হাত ঠান্ডা আর গায়ে সাবানের গন্ধ। কি স্নিগ্ধ। খুব ভালোলাগা! খুউব!

‘আবার যদি হাতে ব্যথা হয়, আমি দেখতে পারব না কিন্তু।’ বকম্‌ বকম্‌ বকম্‌ বকম্‌। কি যে বকে না মেয়েটা!

গুগুম গুগুম শুনতে শুনতে আবার ঘুমিয়ে পড়ল অভিজিৎ। যখন আবার ঘুম ভাঙল দেখল মণি বেরিয়ে গেছে। খাট থেকে নামল। দুম্‌ দাম্‌ ধাক্কা খেল একটু জোরেই। পায়ে লাগল। ধ্যুৎ। প্রচন্ড বিরক্ত লাগল। কি হচ্ছে কি? সব ভেঙে চুরে দিতে ইচ্ছে করল। জঘন্য! এটা একটা লাইফ? দড়াম করে পাশ বালিশটা ছুঁড়ে ফেলে দিল খাটের এপাশ থেকে ওপাশে। ফোনটা দেখল, চারটে মিস্‌ড কল। অহনার। ‘কাটাকুটি’ ম্যাগাজিনের একটা মেয়ে। মাঝ রাত্তিরে ফোন করে। এইবারের সংখ্যার জন্য লেখার তাগাদা দিতে ফোন করেছে। ধুত্তোর! কোথায় লেখা? একটা লাইনও লেখা নেই। ল্যাপটপের ব্যাগটা কোথায়?

‘মণি!’

ও, মণি নেই, বেরিয়ে গেছে। অদ্ভূত মেয়ে একটা। ল্যাপটপের ব্যাগ লুকিয়ে রাখে! ও এইভাবে আটকাবে ওকে? রাত জাগা থেকে? নেশা করা থেকে? উদ্ভট লজিক! ধ্যুর্‌! দালানে, ডাইনিং টেবিলের ওপর খাবার রান্না করে ঢাকা দিয়ে রাখা আছে। ও নোংরা হাতেই তুলে দেখল। ভাল। কাঁচা টমেটো আর বেগুনের ঝাল ওর খুব প্রিয়। আহ্‌...ওর হঠাৎ খুব খিদে পেয়ে গেল। মণির যেন কোন দায়িত্ব নেই ওর খিদে পেয়েছে কিনা, ও খেয়েছে কিনা, এগুলো জানার। কাঁচা হাতে রান্না বান্না করে, গুছিয়ে গাছিয়ে রেখে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে চললেন কাজে। ঠিকঠাক পৌঁছেছে তো? ইদানিং একটু গোলমাল হচ্ছিল অফিসে দেরী করে যাওয়ার জন্য। ভাবল একটা ফোন করে। তারপর ভাবল, যাক্‌। আবার জেরার মুখে পড়তে হবে। ‘এইসবে উঠলে? কেন? অফিস যাবে কখন? আদৌ যাবে কিনা?’ ধুর্‌র্‌বাল।



খাটের পাশে টেবিলের তলায় ল্যাপটপের ব্যাগটা রাখা আছে। ও চালু করল। ওর ফাইলগুলো আস্তে আস্তে খুলতে থাকল। অলক্ষিত ভাবনাগুলো আগড়ুম-বাগড়ুম শব্দ দিয়ে ভরানো...তাতে অক্ষরের পর অক্ষর গাঁথা। এটা অভিজিতের চেনা দুনিয়া।

কিন্তু হতভাগা এই সংখ্যার লেখাটা এখনও হয়নি। এভাবে মিডল্‌ পাথ ধরে চলা কতক্ষণ সম্ভব? আর কতদিন? এভাবে ব্যালেন্স করে, তাপ্পি দিয়ে লাইফ চলে না। শুদ্ধ আলো চাই, অথবা শুদ্ধ অন্ধকার। কমপ্লিটলি উন্মুক্ত। একটা সুতোও যেন না থাকে, মনে, যাপনে। ঝেড়ে ফেলতে হবে। সব ঝেড়ে ফেলতে হবে। কাল কি একটা ট্যাবলেটের কথা বলছিল না সর্ব? কোথায় যেন ছিল? এই ত্তো। ল্যাপটপের ব্যাগের চেনেই। এক্সট্যাসির মত নাকি? ও যদিও এই সব ম্যাজিক ট্যাবলেটগুলোর নাম শুনেছে। খায়নি কখনও। হোক না। ক্ষতি কি! ওর এখন একটাই মিশন – সুতো ছিঁড়ে ফেলা।

..........................................................................................


‘পুরো তার কেটে গেছে?’

‘মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গোয়েজ সর্ব। ও অসুস্থ! তোমরা তো ওকে কম জোগান দাওনি!’

‘কি যে বলেন বৌদি! যাই হোক! ডাক্তার কি বলল?’

‘কি আবার! নেশা বন্ধ। ও কি একটা ট্যাবলেট খাচ্ছিল কদিন ধরে। জানো কিছু?’

‘অ্যাঁ? না-হ্যাঁ মানে...কত কিছুই তো খেত। এত করে বোঝাতাম আমরা...। ওর মাথায় যে কি ঘুরত, কে জানে। যাই হোক...তার মানে...এই সংখ্যার লেখাটা তাহলে আর হল না।’

‘শুধু এই সংখ্যা কেন, আগামী কয়েক সংখ্যার কথা এখন ভুলে যাও। সর্ব, এই এইখানে একটু ধরো তো। ওকে ওষুধটা খাইয়ে দিই।’

সর্ব অভিজিতের ঝুঁকে পড়া মাথাটা তুলতে গেল।

‘দেখি অভিদা। মাথাটা তোল।’

‘ওই! মাথায় হাত দিবি না...দিবি না একদম...নার্সটাকে বল!...নার্সটাকে...’

মণির চোখ থেকে এক ফোঁটা কষ্ট গড়িয়ে পড়ল।

‘মাথাটা তোল অভি’ মণি এগিয়ে গেল। অভি মাথা তুলে মণির দিকে একদৃষ্টে তাকাল। এই নার্সটা খুব মিষ্টিভাবে ওকে ডাকে। বোধহয় ওকে খুব ভালোবাসে। ওর ধরাটা খুব নরম। কাল রাতে ও যখন ঘুমোচ্ছিল, তখন ও মাথার কাছে দাঁড়িয়ে দেখছিল। কিরকম গুলি গুলি বোকার মত চোখ। এই চোখটা কোথায় যেন...কার যেন...ওর একটা বৌ ছিল বোধহয়...সে কি? কোথায়? উফ্‌, কিচ্ছু মনে পড়ছে না! একটা সুতো...প্রথম থেকে শেষ...সুতোটাই নেই মনে হচ্ছে। এদিক ওদিক আগে পরে অনেক ছবি মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। আর একটা ভয় আছে। খুব ভয় আছে। ওই জায়গাটা একদম ভাল ছিল না। ওখানে কাউকে চেনে না। মাঝে মাঝে এসে কেউ মারের ভয় দেখায়। খুউব ভয়। ‘অভি’ ওই নরম নার্সটা আবার ডেকে উঠল। অভি ওর হাত ধরে ফেলল ভয়ে। মণি সর্বর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘একটা শর্ট টার্ম অ্যামনেসিয়ার মত। মেমরি লস হয়েছে কিছুটা। মনে পড়ে যাবে আস্তে আস্তে। প্রোভাইডেড ও নেশা থেকে দূরে থাকে। তবে মাথার ওপর দারুণ স্ট্রেন পড়ছে এখন। তাই এখন একসাথে সব কিছু মনে করার চেষ্টা না করাই ভাল।’



‘বৌদি একটা কথা বলি? দেখুন না...নতুন দু’একটা লেখা যদি এদিক-ওদিক থেকে পাওয়া যায়।’

‘পেয়েছি দু-একটা। দেখবে? দাঁড়াও।’

মণি সর্বর সামনে দু’একটা ছেঁড়া মোচড়ানো খাতার পাতা ধরল।

‘একি? একি হাতের লেখা?’

অভি হঠাৎ করে ছিনিয়ে নিল পাতাগুলো। ইস্‌স্‌ কি ভয়ঙ্কর! এটা কি লেখা? অভি নিজের লেখা চিনতে পারল না। নরম নার্সটা ওকে বলল, ‘দেখছ অভি? দেখছ? চিনতে পারছ? অক্ষরগুলো? এগুলো আঁচড়! তোমায় বিকৃত মস্তিষ্কের আঁচড় ! লাগে না? এই আঁচড়গুলো দেখে কষ্ট হয় না? এগুলোই তোমার জীবনের অ্যামবিশান? দ্যাখো তো এগুলোকে পাল্লায় বসিয়ে? বাকি সব ভালোলাগা, প্রিয় মানুষগুলোকে আরেক দিকে বসিয়ে? এদিকটা এত ভারী লাগল তোমার? বল তো? ভেবে বলো!’



ইস্‌! নরম নার্সটা খুব চেঁচাচ্ছে। অভি খুব ভয় পেল। খুব ভয়। চমকে চমকে উঠল অভি। পারছে না। এত চেঁচামিচি ভাল লাগে না ওর। কষ্ট হয় খুব।

‘আহ্‌’ অভি মাথা চেপে ধরল। পারছে না। কিছুতেই পারছে না।

‘কি হল?’ নরম নার্সটা আবার ওকে ধরল। খুব আরাম লাগল অভির। ও জোরে জড়িয়ে ধরল মেয়েটাকে।

মেয়েটা বোধহয় খুবই ভালোবাসে ওকে। কিছু বলে না ওকে। সর্ব আস্তে আস্তে সিন থেকে বিদায় নিল। মেয়েটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে। এবাবা, এভাবে কাঁদছে কেন? ইস্‌ কেন? অভির ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট। শেষ হওয়া দরকার। এক্ষুনি শেষ হওয়া দরকার।

‘আমি...আমি আর কষ্ট হতে দেব না’ অভি খুব জোরে নরম মেয়েটাকে ধরে বলতে থাকল। ‘না না...এটা আমি পারছি না। আমি পড়ে গেছি অনেক নীচে। অনেক...অনেক নীচে...আমাকে তুমি ধরে থাকো প্লীজ। আমি ধরে ধরে আবার উঠব। আস্তে আস্তে। ঠিক হবে। আমি ঠিক করব। ঠিইক করব।’

নরম নার্সটা তখনও কেঁদে চলেছে। ভালোবাসার হাতটা এখনও ওকে ধরে আছে জোরে। চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে ওর পেটের কাছের মায়া রঙের শাড়িটা।