পরবাসে
বিদিশা সরকার
(১)
ঝুল বারান্দার নীচে চলমান শ্রমিক শহর
পার্কের কোনায় এক স্বপ্ন নিরুত্তর
গাছ গাছালির ফাঁকে শহুরে সূর্যের
তীর্ষক ঝলক!
(২)
সবই আছে, তবু যেন কিছু নেই
ভীষন শহুরে সব বিনোদন
পাহাড়ি রাস্তায় পাহাড়ি নির্যাস নেই, শুধু স্পীড
আর তুই ও রোমিং দুরত্বে।
(৩)
তোর প্রাকৃতিক বর্ণনার বলিহারি যাই
আপেল গাছের নীচে বসে
ফলন্ত কিছুই চোখে পড়ল না
দেবদারু হাওয়ার শব্দে জানলা বন্ধ করে দিলে
নির্বাসন, শুধু নির্বাসন
গরাদ প্রকট হয়, বনসাই যত্নে বাড়ে মিনারেল জলে।
(৪)
এ ঘরে ছায়ার লিরিক
কবিতা সরিয়ে তোকে কাছে টেনে নিলে
ঘটে যাওয়া জানি বাস্তবিক
হঠাৎ আছড়ে পড়ে দামাল সমুদ্র
কোভালাম বীচে ...
(৫)
চিঠি লিখি, ছিড়ে ফেলি
যেন বাল্যপ্রেম!
মোমের আলোয় কাঁপে দুরত্বের কিছু অনিশ্চয়
সিটি ট্যুর সেরে ফেরে “যাত্রা ট্যুরিজম”
(৬)
ঝড় থেমে গেলে বৃষ্টি নামে
ছাদের দরজা কেউ বন্ধ করে না
আকাশের মুখোমুখি হতে ভয় করে
এ্যাতোটা বিশাল হতে তুমিও পারবে না
(৭)
দাগের মত দাগ হলে
প্রকাশ্যে আনব জখম
এখানে বলির আগে ঢাক বাজে
প্রযোজক স্ক্রীপ্ট রাইটার!
(৮)
ভুল থেকে ভুল ঘরে আরও ভুল ঘরে
ভেষজ ইচ্ছারা সব আসা যাওয়া করে
(৯)
আর কি কি দিবি
ভোডাফোন, টক্ টাইম
প্রেমের পাঁচন
বিষ দিচ্ছি বিষ নিচ্ছি
এসো বৃন্দবন
(১০)
বাজার জানিনা
শপিং মলেও থাকে ভাষা বিনিময়
ক্রেতার পরখ
এখানে পাগল নেই
একটাও নেই ?
শপিং মলেও নেই
কার সঙ্গে কথা বলি তবে ?
(১১)
আবার এসেছ বাঁধভাঙ্গা
অ্যালবাম খুলে বসি
আমার শৈশব
বাতাসিয়া লুপ থেকে উঁচুর আকাশ
হঠাৎ মেঘেরা এলো
ভেজা ভেজা মেঘেরা আবার
আমরা হারিয়ে গেছি অন্ধকারে
স্বপ্নে হারিয়ে যায় যেভাবে টাওয়ার
(১২)
এভাবে আসতেই পারো
গান হয়ে, ডেটল সাবান
এভাবে টার্কিস হয়ে
এভাবে গিজার
সেমিকোলনের পর এভাবে আসতেই পারো
অসমাপ্ত স্থান...
(১৩)
এদেশে আমদানি হয়, রপ্তানিও হয়
ভোগবাদ মাথাপিছু, ওপেন রেস্তোরা
আমি তো মহুয়া ঘোরে ভাঙ্গাচোরা রাত
ক্ষেপনাস্ত্রে বিদ্ধ হই, এমন মরিয়া!
(১৪)
একবার মাঠে এসো, আমাদের মাঠে
মেরুন সবুজ আর গোল পোস্টে
রেফারি ভাবুক!
তবে খেলা কেন
মাঠেই রচনা হ’ক বইমেলা
মন্ত্রীরাও টিকিট কাটুক –
(১৫)
যদি বলি পড়ে ফেল সবটুকু,
সবটুকু আগাথা ক্রিষ্টির
হত্যা, আত্মহত্যা সব ষড়যন্ত্র
পড়ে ফেল ফুটপাতে শীতে
জড়োসড় ঘুম আর রোয়াকের শ্বাপদ ছায়ায়
আমার ট্রিলজি, শৈশবের সেই রানওয়ে
জেরুজালেমের আস্তাকুঁড়
সারারাত জেগে পড় ঋতুর সংহার
(১৬)
গান থেমে গেলে বাঁচব কিভাবে
সব আয়োজন বৃথা হলে
এ ওয়ান সিটি উচ্চকিত
অথচ ময়ূর ঘোরে এ ঘরে ও ঘরে!
(১৭)
গোছানো হলোনা, ঘরদোর জেগে থাকে
গোছাবো কখন
পেপারওয়েট চাপা আমার কবিতা
ঊষসী ভট্টাচার্য –এর তিনটি কবিতা
বিচ্ছিন্ন ভাবেই...
পাশের ঘরে আমার জরাজীর্ণ বাবা
অসুখে ধুঁকছে,
সারা বাড়ি কড়া ওষুধের গন্ধে ম ম,
আর আমার মনের লাইব্রেরিতে তখন
দুশ্চিন্তার মেঘ কাটিয়ে হঠাৎ এক ওইপন্যাসিক বাসা বাঁধতে থাকে,
যার প্রথা মানার তাগিদ নেই,
শুরু করে শেষ করার তাড়া নেই।
যে জটিল ধাঁধায় সব বেঁধে বা ছন্নছাড়া ভাবেই
জীবনের ক্যানভাসে শব্দের ছবি আঁকে ।
যখন ন্যাপথলিনের গন্ধে নেশা কাটে,
অলীক বাস্তব আর কুহক স্বপ্নের ফারাক দেখি চোখে,
তোমার শরীরে বাসা বাঁধা ঝি ঝি পোকা ওঠে ডেকে,
হ্যরিকেনের আলো বদলায় সূর্যে,
এদিকে আমার শরীর জুড়ে সূর্যদয় ।
পিঁপড়ে খাওয়া শরীরে জোনাক পোকা জ্বললে ;
উপন্যসের খাতা বদলায় কবিতায়,
আমার দিনান্তের রাগিণী হয় শেষ,
আর সূর্যাস্তের পথে চলতে থাকো তুমি,
যার শিরোনামে আমার ছদ্মনাম ।।
নিশ্চছিদ্র
বুক জুড়ে তুমুল জোয়ারে
ভেসে যাওয়া মুখ
দূরে থাকা গল্পপাতা বুনো রক্তে ডোবা অসুখ
বিচ্ছিন্ন আবেগে দোলাচলে প্রাণ
বেহায়া গন্ধে আবেগের টান
আনত দিনের সঙ্গে আজের আড়ি
বুকের পাঁজর জুড়ে পরিত্যক্ত বসত বাড়ি ।
প্রত্যাবর্তন
সেদিন রাতে শালপিয়ালের বনে
তুমি একমুঠো হাসি খুঁজতে গেছিলে
ঠোঁটের যখন নিভে যাওয়া হ্যারিকেন
তখন তোমার সেকি ছটফটানি
নিরুদ্দেশ কলামে খোঁজ পাঠিও পাত্তা না পেয়ে
তুমিই নিরুদ্দেশ হলে ।
#
শুকতারা ঝরা রাতে আমার ক্লান্ত পথিকের ঝুলিতে হাজার মণিমুক্ত
তবু হাসি ফিরল না
সারা শরীরে সোনা চমকে উঠল
সূর্যাস্তের বিলাসিতা ফিরল, তুমি ফিরলে না ।
উল্লাস
বাণীব্রত কুণ্ডু
ভেঙেছি পুরোনো নিয়মসকল কোনো এক অর্ধোন্মাদ রাত্রির উল্লাসে।
মৃগয়ার চাঁদ চুঁইয়ে নেমে আসা শিকারি আলোয় যতসব খুনোখুনি
তবু আজও ভালোবাসার দিবারাত্রি জুড়ে প্রহরীর অঘোষিত সায়ে
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ভেজা রক্তবস্ত্র পরিহিতা, কোনো এক অশনাক্ত লাশে!
অনেকেই ছিল সেথা। ছিল ভালোবাসা, ভালোবাসাকথারা সেজেছিল
বিষাক্ত মদে, জাদুকরী শব্দ পান করে মিশেছিল বসন্তরাতের গভীরে
সিঁধ কেটে ঢুকেছিল অন্ধিসন্ধি সব শরীরের মেহগিনি পাতায় পাতায়
দেখেছিল, বুনেছিল বীজ। আদরে আদরে ক্ষত-বিক্ষত ভালোবেসেছিল
মত্স্যগন্ধা যোনিভুখের মিছিল শুষে নেয় রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ যত!
ষড়রিপু প্রকট হয়ে ওঠে কামনার তীব্র আশ্লেষে, অশেষ সাধনায়
অর্জিত দেবসুধা বসুধা করেনি পান কোনো ত্রিকালজয়ী প্রলোভনের
হাতছানি; শুধু এক রাত্রিচরী মন্ত্রপুরষ খুঁজে চলে শব, শবের যাতনা!
ইফ ইউ কান্ট থিংক স্ট্রেইট !?
সাঁঝবাতি
রোদের চিত্কারের মতো আমার প্রেম
আমাদের প্রেম
যাদের পোড়ার কথা তারা তো পুড়বেই
চোখ বা কাঠ
আগুন বা ঘি
তুই বা তোরা
দ্রুত পুড়ে যাবে, উড়ে যাবে...
শরীরের থেকে কত বড়
দুচার পাতা কবিতা, একটা হাত এ হাত
একটা ভাটিয়ালি দুপুর,কয়েকটা ঘুমপাড়ানি রাত
বুঝতে হলে; এতগুলো মেয়ের যৌনতা পেড়িয়ে তোমায় যেতে হবে
এতগুলো বিশ্বাস মাড়াতে মাড়াতে
নিজের দিকে তাকিয়ে হাঁফিয়ে উঠবে
তুমি...
আকাশ তো দূর
নখাগ্র ও স্পর্শ করতে পারবেনা।
কবিতা – উজান
বইমেলার সাত-সতেরো
(১)
এবার বইমেলায় রোজ হাত ধরে ঘুরছে
সোনালি অতীতের সাথে কিছু রূপোলি মিথ্যেকথা
কারুর দৃষ্টি এড়াবার দায় নেই ওদের
(২)
এবার বইমেলায় ধূলো উড়ছেনা,
উড়ছে চাঁদের প্রেমিক-সোহাগ রদ্দুর
(৩)
একটি পলকা কবিতা ধা্ক্কা খেতে খেতে
ভেসে বেড়াচ্ছে বইমেলায়...
ওরা বলেছে “দেখে চলতে পারনা নাকি?”
(৪)
দুম করে কাল বইমেলা হয়ে গেল কারবালা প্রান্তর
আর জল না খেতে পেয়ে মরে গেল কবিতা
(৫)
বইমেলায় পরে যেতেই আমার সবুজ পাঞ্জাবি ধূসর হয়ে গেল;
মেঘ নয়,
গায়ে মাখামাখি ছই ছাই কোন্দল
(৬)
চাঁদ তুই বইমেলায় নামবিনা?
তোর বুনো প্রেমিক মাদল ভালবাসে?
পিছনে তাকাসনা,সোজা গিয়ে বাঁ দিকে ।
(৭)
কাল খবর ছিল
একই রকম একটি মেয়েকে দেখা গেলেও
উজানকে পাওয়া যাচ্ছেনা বইমেলায় ,
নিরুদ্দেশ।
আমার মতন
বিদিশা সরকার
তোমার পায়ের পাতায় বেড়ে ওঠা
শৈবাল আর ব্যাকটেরিয়ায় হারিয়ে যাওয়ার আগে
দুজন দুজনের দিকে পথ চলি...
সরলবর্গীয় বৃক্ষের ভীড়ে হারিয়ে গিয়ে
খুঁজে আনি কিছু ডানা ভাঙা প্রজাপতি ।
কবিতা - সৌরভ ভট্টাচার্য্য এর তিনটি
বারণগুলো
তোমায় বরফ ভাবার ভুল বোঝাবুঝি,
এক কোনে দেওয়ালের গন্ধ শুঁকছি
পায়ের চাপ মুখস্ত করতে করতে---
বদ অভ্যাসগুলো লোহা হয়ে যাচ্ছে
লাল টুকটুকে...
তারপরের ব্যাপারটা খোলস দিয়ে ঢাকা ।
এই জ্যা---
বারণগুলো বলা হয়ে গেছে...!
সাপেক্ষে
আমার সাপেক্ষে যেটা কুয়ো
তোমার সাপেক্ষে সেটা জল হতেও পারে
ঠাণ্ডা...
মগ থেকে গ্লাসে ঢেলে নেওয়া যায়
আমার সাপেক্ষে তুমি জোনাকি
তোমার সাপেক্ষে আমি কিচ্ছু না ।
কারণ দুই আর দুই চার
সাইকেল স্ট্যান্ড এ সাড়ি দিয়ে সাইকেল পড়ে যেতে দেখে
নিজের কথা মনে পড়ে
দিনের পর দিন...
রাতের পর রাত নয় ।
তারপর ব্যাপারতা হাপানি রুগীর মত,
পারফুমের গন্ধেও নাকে রুমাল দিয়ে রাখি!
হুস করে আরও একটা গাড়ি পেরিয়ে গেলে--
দেওয়ালে চাপি..পড়ে যাই..
পিঁপড়ে হওয়া এত সহজ নয় !
অনেকদিনের অভ্যাসে তোরা পেন্ডুলামের মত,
মাধ্যাকর্ষণ টানলেও ওপরে যাস
ঠিক যেমন একটা বাচ্চা ছেলের কাছে
দুই আর দুই চার...
ছোঁয়াচে রোগ পুষে রাখি
পৃথা রায়চৌধুরী
রুক্ষ খয়েরি জট চিরুনির অপেক্ষায়
আশ্চর্য অন্ধত্ব নির্বাক একবিন্দু
নিঃশ্বাস নিতে ধন্দে পড়ে খাবি খাই
ড্রাগনের অস্তিত্ব বরফ জমিয়েছে এন্তার
এক লহমায়
রুপকথার দত্যি দানো;
কোথায় তুমি, অসুস্থ?
চাদরের মলাট ছেড়ে সুস্থতা
হামাগুড়ি দিয়ে বিকৃতির রাজপথ ধরে
আদুল গায়ে পড়ে থাকে
দুর্গা, কালি, ঝুলি, লক্ষ্মী, অলক্ষ্মী;
এখন নেই, তখন ছিলো
লালসার এক সিন্ধু।
মুখোশও গলার নলি চিরে
ফিনকি দিয়ে বিচার চাইছে
কি হট্টগোল,
ওই পাশ ফিরে থাকি
আমি ঘুমন্ত।
যৌথকাব্য - অনুপম মুখোপাধ্যায় এবং উল্কা
উল্কাপম
উৎসর্গঃ জ্যাক কেরুয়াক
১
সকাল কুড়ুনি দুপুর গড়িয়ে ফেরে
বালতি বোঝাই উল জড়ানো চৌরাস্তা
ছোট কুঠুরিতে রসদ তো তার ভালোই
বেঁটে সোয়েটারে কালোকোলো চৌকোনা
২
তপ্ত তরলে চুমুক ব্যগ্র হয়
সেই সুতো যার অন্য প্রান্ত বাঁধা
চোরা উপকূল কাঠপুতুলির চোখ
এবং নৃত্যে ঢেউ গেলা অজুহাত
৩.
মন চুরি চুরি লাল ঝুরি খাপছাড়া
প্ল্যাটফর্ম ছাড়ে গস্পেল পিলগ্রিম
ছবির আড়ালে ছবির উদবেগ
সাধারণ ট্রেন , দেখার কিছুই নেই
৪
এই হলুদ অসামান্য ভারতীয়দের রঙ
এই সবুজ পশ্চিমবঙ্গীয়
পিচকারি হাওয়াদের নিঃশ্বাস বেচে দেয়
আড়াই খড়ম শ্যাওলা লঙ্ঘন
৫.
নির্যাতনে ক্যামেরা পাগল
এরপর থেকে নোনা দেশ-কা-ঠোক্কর
পনীর , ডিম , খেজুর ও গ্যাসস্টোভ
তৈয়ার আছে , আসুন অ্যাডমিরাল
একটি বিকৃতিমূলক
বাপী গায়েন
গাছে গাছে টফি ঝুলে আছে
ছায়ায় ছায়ায় মহা-বিশ্বকোষ
এখানে আমি দুঃখিত হলে
তবেই যে নির্বাণে আসি
সেরকম শীত জানে ,
হয়ত আপস প্রভু প্রভু ভূমিকায় লিপিবদ্ধ থাকে
আমি তার করুণার সব পাশে- মানুষের মত
অর্ধেক ভাঁজ হয়ে থাকি
এই ভাবে কিছু বিকৃতি থেকে যায়
আমাদের দুজনার ঘাড়ে
পুরুষ, তোমাকে
কচি রেজা
তার সুষ্ঠু উরু ছিল ঠিক তোমার প্রেমিকার মতো
তার দৃপ্তস্তনে জ্বলে উঠেছিল আলো
তুমি রুদ্ধ করে দিলে নিজের পিপাসা
আর কুয়াশা ভিজিয়ে লাল করে দিলে ডিসেম্বর
সে মরে যেতে যেতে মেরে গেছে আমাকেও
গাল পেতে কীভাবে চুম্বন নিই বলো?
আলো ভেঙে গেলে
মেঘ অদিতি
অনৃত গল্পের ভেতর পাখি উড়ে এলে
সন্ধি প্রস্তাবে থাকে ঘাসফুল শুধু
বাইরে নেশাতুর ডাক
চিত্রকল্পে ফিরে গেছে ক্রিসমাস ঈভ
বিরুদ্ধ হাওয়ায় সেই ফুলছাপটিও আর নেই..
অথচ রাত্রি অধীর
অধিক সংকেতে ভাসে ঘুম
আত্মশোকের গায়ে মোহবার্তা আসে, ‘জেগেছে বুনো ঘোড়া ওই’
আর উৎসর্গপত্রে ঘাসফুল লিখে যায়
‘আলো ভেঙে যাবার পর সমর্পণের সেই গল্পটা...
স্বপ্নবীজ
পাঞ্চালী সিনহা
দেখেছি রাতের আগুন
কিভাবে এগিয়ে আসে দ্রুত
বাতাসের ভারী হয় বুক
স্তূপীকৃত জমে ওঠে বাসনার ছাই
পতঙ্গের ডানায় সে ভস্মরূপী বীজ
এক এক মৃত্যুর সাথে
আবারও জন্ম নেয়
খেলতে থাকি অস্পষ্ট সেই দোলাচলে
স্বপ্নের জন্ম-মৃত্যুর সাথে
এগোতে থাকি
একটি রাত ভেঙে
আরেকটি রাতের কাছে
নিঃশব্দ নতজানু।
অকালবোধন
মিলন চ্যাটার্জী
আমার আর যাওয়া হয়না
যতবার যেতে চাই
আবাহন করো তুমি অকালবোধনে !
মুহুর্মুহু বেত্রাঘাতে আমার শরীরে
এঁকে দাও প্রণয়ের ঈশ্বরীয় ছাপ !
ক্ষতহীন দহনে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে
কেঁদে ফেলো তবু- দিয়ে যাও
ভালোবেসে ক্ষতের প্রলেপ !
ফিরে ফিরে আসি তাই বারেবার
জীবনের সম্ভবনা দেখে যাই অশনি সংকেতে !
সম্মিলন ...
মধুছন্দা মিত্র ঘোষ
ডুব জলে শিখছি সাঁতার
সেজে উঠছে জলজ আহ্বান
গায়ে মাখি নিভৃত দুঃখসুখ
নানান কুচকাওয়াজে বেজে ওঠে
হাসি মুখ কথা গুলি
ভেসে যাই , আমি , আমরা ,
যুগল সম্মিলনে ...
দার্শনিক
সৈকত ঘোষ
আলোর স্থান পরিবর্তন হলে
বদামি ঠোট কালচে হয়ে যায়
হাতের মুঠোয় ছোট বড় আকাশ
মাঝারি মানের স্পর্ধায় কেঁপে ওঠে
দার্শনিক হবার লোভে
শুন্যতার গলায় দুপেগ হুইস্কি ঢেলে দিলাম
জামার হাতায় গুটিয়ে রাখা পৌরুষ
হেরে গেল জাপানি তেলের কাছে
আমি উবু হয়ে বসে নীরবে
প্রজাপতি ধরছিলাম | আসলে ঈশ্বর
গভীর জলে সাঁতার কাটেন
গোলাপি নগ্নতা খানিকটা ঋতুচক্রে
রঙিন বিসর্গের মত |
যদিও ,
তোমার কোমড়ের নীচ থেকে উকি মারা উল্কি
প্রশ্রয় খোঁজে বুকের আদ্র কঠিন খাঁজে |
মুহৃর্তের মুহূর্ত
সঞ্জয় ঋষি
এই যে এস এম এস এ ভালোবাসার আলো লাফিয়ে ওঠে কিছু শব্দ নিয়ে ।
এই দৃশ্য চিত্রে
একদিন আমি তার আরো ভিতরে আশ্রয় নেবো
তার দেহ ঘিরে কবিতা আর গানের গন্ধ...
স্পর্শ ভালোবাসা
শব্দ ভালোবাসা
জীবনের ছন্দ পয়ার মেলাতে মেলাতে
আমরাও একদিন কবিতা হয়ে যাব ।
নিভে যাওয়ার আগে
ছন্দম মুখোপাধ্যায়
ওর খিদের হিংসাবৃত্তি আমার চিতায় চাল চড়াল ।
এক দৃষ্টে হাঁড়ির দিকে তাকিয়ে । চালের সঙ্গে দুটো মাছও সিদ্ধ হয় ।
ফুটন্ত ভাতের টগবগানি, চিতার চরচর শব্দ, তাছাড়া
সব চুপ । শরীরের সমস্তটা তেলে ফোটাব ,
আমার ধোঁয়ার যা ইচ্ছা শরীরেরও তাই ।
ত্রি
ঋষি সৌরক
হারিয়ে ফেলি নিলাম হাওয়ার চর আঁজলা মোড়া আবেশ বেঁচে থাকে আপাতনিরীহবিষরোদনামঘর বুক পেরোতেই চিতাকাঠ ভেসে ওঠে এই যে এতো হৈহট্টের আসর যে যায় দূরে তার পেছোনেই ছোটা এমনই অনেক গিটার অগোচর স্বর্গের পথ নির্জনতম একা তুমি পাই ভাবো ভবে মানে চাহিদা ভালো ভালো
বেসে হলুদ দেরাম চোখ যত ঘুম আছে হ্যালুসিন সান্দার অচেতন ঠোঁট মৃত্যুকল্পলোক খোলা পিঠ জুড়ে গুহাছবি হয়ে থেকো অপেরা থেকে প্যারালাল মিথ অনেক দুর্বার ঝোড়ো হাসিলের এই রিলে রেস
স্বপ্ন যেমন সমান্তরাল বিত্ত নেই
কবিতা এবং মাষ্টারবেশন -২০
রত্নদীপা দে ঘোষ
মাষ্টারবেশন আর কবিতা উৎপাদনের মধ্যে বস্তুত কোনো তফাত নেই । দু ক্ষেত্রেই আঙুলের আগায় নিশপিশ করে আস্তাবল । ক্ষেত্র বিশেষে ঘোড়সওয়ারও ।মুহূর্তে মানুষ ম্যাজিক-লাইটার যার অর্ধেক রং – মশাল আর বাকী অর্ধেক হাউই। আদুর গায়ে দু চাকার বাধ্য সুষুম্না ! দিগন্তঘোড়ার ফুলে ওঠা শ্বাস । ফাটল অসভ্য হয় ক্রিয়াশীল ছোবলে । ঘামতেল মেখে উঁচিয়ে ওঠে হুইসিল । ঢেউ, কখনো কোণাকোণি কখনো তেরছা টাইটানিক । মুশলধারায় অভ্রগন্ধের মৈথুনবীজ
অজস্র গুটিপোকা। হাত পা মগজ এপাশ ওপাশ ছড়ানো । বালি সুরকি বোল্ডার । শব্দ ঠুকে যায় ব্রেনের জ্যামিতিতে । পশলা দুয়েক ঝুমমেডুলা । হামাগুড়ি দিয়ে অক্ষরসিমেন্ট , আলোকিত অঙ্গুলিনির্দেশ । মগজ থেকে ধরানো সিগার । কোনো কোনো শব্দ আকুপাকু যেন শীতকালীন হাঁসের দুপুর । তারপর কলমের সীমানায় স্পষ্ট হয়ে সত্তা , জ্বলজ্বলে যাপন ! ঘামের নতুন বিন্দুসহ পাক্ষিক কবিতার ইলাস্ট্রেশন ।
মাষ্টারবেশন এক নিশীথমধ্যঘোর । কবিতাও ।
.. সাদা হাত , সাদা পাতার নগ্নরেশ
মোমের আগুন ... সর্বাঙ্গ ঝলসে দিয়ে ...
আমার ছেলেবেলা গুলো
প্রীতমকুমার রায়
তোমাকে জন্মের কথা বলব ভেবেছিলাম
যেখানে মা আমাকে দুধের শুশ্রুষা দিয়েছিলো,
চোখে কাজল দিয়ে, পায়ে প্যাঁক প্যাঁক জুতো পড়িয়ে
আরো অনেক আবদারের ভেতর ঠেলে নিয়ে যেত মামা-বাড়ি।
সেখানে বান্টামামা, পাগলামামা, ঘেন্টুমামা- আরো অনেক
আবদারের নাম দিতে দিতে, ঘুড়ি নিয়ে ছুটতে ছুটতে
আমি কখন যেন ছেলেবেলা গুলো পেড়িয়ে এলাম...
আজ প্রিয়তম বলে যে ডাকে সে আমার মা নয়,
হাতে তালক্ষিরের বাটি নিয়ে এগিয়ে যে আসে
সে-ও আমার মা নয়, বাবা নয়, দাদু-দিদা-মামা-মামি কেউ না।
আমার অর্ধ অংশ হতে চেয়ে, অনেক দাবীর ভেতর বেঁচে থাকতে চেয়ে
যে আমার আশরীর ঘ্রাণে টেনে নেয়
সে কেন আমার ঐ ছেলেবেলা গুলো চেনে না?
প্রীতম ভট্টাচার্য্য এর দুটি কবিতা
পোকা
নির্বান্ধব পোকা একা আলোক বৃত্তে ঘোরে
সাধ তার বৃত্তশালী হতে
সাধ তার সমৃদ্ধি পাথর
বৃষ্টির মতো কাছে যাব ওর
ছায়া ও শিকড় দিয়ে ওকেই আলোক
ওই ইচ্ছুক পোকাটিকে
সার্থক পতাকা বানাবো ।
অনু কবিতা
বালিশের কাঁধ থেকে সরে গিয়ে
সঙ্গিহীন পড়ে থাকে মাথা
আবছা কানে আসে বাসি হাওয়া
আর সাদা কাগজের
নিচুস্বরে ফিস্ ফিস্
খাতার কিনারে পড়ে থাকে
মরা মথ ছেঁড়া মথ ধুসর গুঁড়ো মথ
আর বুকের বোতাম খোলা সবুজ কলম ।
প্রতিবিম্ব
কিরীটি সেনগুপ্ত
দর্পণ রাঙালো সিঁথি
স্বপ্নে ডুবে যাওয়া দুটি চোখ
হোমাগ্নির তাত ও গন্ধ
ভালো বাসার স্পষ্ট প্রতিবিম্ব।
শুভক্ষণে শুভদৃষ্টি
সোহাগী সমর্পণ
নীরব – বাঙ্ময়।
অলক্ষ্যে ঢুলে পড়ে
সদ্য-পরিণীতা….
সংজ্ঞাহীন –
শৈলজা।
আশা নিরাশা
সিধ শর্মা
গায় না বউ কথা কও
মোবাইল-এর ভ্রুকুটিতে
হিজলের মনে ব্যথা দাও
প্রমোটারের দরাদরিতে
ভাটিয়ালি যায় না শোনা মাঝ দরিয়ায়
স্বরলিপি যায় না বোনা কবিতা খাতায়
বৈকালিক প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ সূর্য রথ
ছুটন্ত দিন রাত্রি কারিগর হারিয়েছে পথ
কবিতার পান্ডুলিপি হারায় হেলায়
হৃদয়ের দিনলিপি পথের ধুলায়।
.
পুনর্বাসন নয় চাই পল পল নির্বাসন
সখ্যতা হৃদ্যতা মুর্খ বিলাসিতা
আবাহন না করে ভাসানী বিসর্জন
তবুও আশা দেখায় সন্ধ্যা তারায়
অন্তরে অনাবিল ঢেউ স্বপ্ন চেনায়
অহংগী পরীর চুলের জল গড়ায়
ধবধবে জোত্স্নায় অঙ্ক কষি
টুপটুপিয়ে বৃষ্টি ঝরে বানভাসি
অক্ষম লজ্জাহীন এক গল্প দিতে
নীল খামেতে লাল কালিতে।
.
অস্তিত্বের ভগ্নাবাসে -
রাত গভীরে বিশাল অট্টহাসি
কপোলে জল বিন্দু বানভাসি।
দুই বিড়ালের যুদ্ধ
রাজগোখরো
বিশাল বড় ইস্কুলবাড়ি-
বেঞ্চি পাতা সারি সারি,
হোঁতকা মতো দুই বিড়ালে
করলো শুরু মারামারি।
গোঁফ ফুলিয়ে ফুঁসছে লেলো
লেজ উচিয়ে ডাকছে কেলো,
দুই বিড়ালের রাগের চোটে
বেঞ্চি এবার টলোমলো।
লেলো খামছে দিতে দক্ষ,
কেলো কামড়ায় ঠিক লক্ষ্য;
বুজছে না সাদা বেড়াল
যুদ্ধে নেবে সে কার পক্ষ।
সে কি যুদ্ধ হবে ক্যানে?
ও মা এটা কে না জানে,
ছাদের থেকে টিকটিকি এক
মরে পড়েছে যে মাঝখানে।
শেষে শুরু হল যুদ্ধ,
দুই বিড়াল-ই ভীষণ ক্রুদ্ধ,
আমি এবার পালাই বরং-
লড়াই-এ কাঁপছে যে পাড়াশুদ্ধ...।
অনুবাদ কবিতা – ইন্দ্রাণী সরকার
I Wandered Lonely As A Cloud (by William Wordsworth)
আমি মেঘের মত একা ভেসে যাই
আমি মেঘের মতো একা ভেসে যাই
পাহাড়ি উপত্যকার উপর দিয়ে,
হঠাৎ দেখি পথের ধারে এক ঝাঁক
সোনালী ড্যাফোডিলের গুচ্ছ |
জলের ধারে ধারে, গাছের পাশে পাশে,
তারা হাওয়ায় ওড়ে আর দুলে দুলে নাচে |
ফুলগুলো সুন্দর ওই নক্ষত্রমন্ডলীর
ঝিকমিকে তারাদের মত সারে সারে সাজান |
হাজার হাজার ফুলেরা চারিদিকে ফুটে রয়েছে,
বাতাসের দোলায় যেন তারা মাথা হেলিয়ে
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে |
ড্যাফোডিলের বাগানে বাতাসের দোলায়
ঢেউ ওঠে যা জলের ঢেউকেও হারিয়ে দেয় |
তার মনোলোভা রূপে বিমুগ্ধ আমি
হতবিস্মিত হয়ে তাকিয়ে দেখি |
যখন আমি একাকীত্বের সুরভিতে নিমগ্ন
ড্যাফোডিলের সৌন্দর্য্য আমার অন্তরাত্মায়
অপার্থিব ভাবনার সৃষ্টি করে |
আমি ডুবে যাই অনাস্বাদিত এক অনাবিল
আনন্দে ওই ড্যাফোডিলের সুন্দরতায় ||
Touched by an Angel (by Maya Angelou)
দেবদুতের স্পর্শ
একাকীত্বের খোলসে লুকোনো আমাদের ভীরু মন
অপেক্ষা করে মহিমান্বিত ভালোবাসার আগমন
তার পুণ্য মন্দির থেকে আমাদের চোখের সামনে |
ভালোবাসার সাথে জড়ানো থাকে অতীতের
বেদনা ভরা স্মৃতি যা মনকে আরও ভারাক্রান্ত করে |
কিন্তু অটুট মনের বিশ্বাস আমাদের আত্মগ্লানি আর
ভয়ের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে |
ধীরে ধীরে স্তিমিত মন ভালোবাসার উজ্জ্বল আলোয়
উদ্ভাসিত হয় ভয়ের খোলস থেকে পায় চিরমুক্তি |
আমরা অবশেষে উপলব্ধি করি ভালোবাসাই জীবনে
সুধারস আনে আর মানবাত্মা পায় অনন্ত মুক্তির স্বাদ ||
If You Forget Me (by Pablo Neruda)
যদি তুমি আমায় ভুলে যাও
তোমাকে একটি কথা আজ বলি .....
যখন আমি ওই ঝলমলে চাঁদের দিকে তাকাই,
বা জানালা দিয়ে শরতের লাল শাখা প্রশাখা দেখি,
অথবা আগুনে পোড়া কাঠগুলো ছুঁই
সব কিছুই শুধু তোমার স্মৃতি মনে করায় |
যে কোন আলো, গন্ধ, ধাতব স্পর্শ যেন
নৌকার মত তোমার দ্বীপে ভাসিয়ে নিয়ে যায়
যেখানে তুমি আমার প্রতীক্ষারত |
কিন্তু ধীরে ধীরে যখন তুমি আর আমায়
ভালোবাসতে চাইছো না,
আমিও তোমায় একটু একটু করে আর
ভুলে যেতে চাই |
তাই হঠাত যদি তুমি আমায় ভুলে যাও
আর আমায় না খোঁজো তুমি জানবে
আমি তোমায় আগেই ভুলে গিয়েছি |
যদি তুমি আমায় সমুদ্রচরে নির্বাসন দাও ,
যেখানে আমার মূল আর শাখা প্রশাখা বিস্তারিত,
তবে জেনো সেই মুহুর্তে আমি অন্য কোন
সমুদ্রচরের দিকে যাত্রা করেছি |
কিন্তু যদি প্রতি মুহের্তে তোমার মনে আমার
মধুর স্মৃতি মনে পড়ে যায়,
যদি প্রতিদিন একটি ফুল তোমার ঠোঁটে
আমায় খুঁজে বেড়ায় ,
ওগো প্রিয় আমার জেনে রেখো আমি তোমার
কোন কিছুই ভুলি নি |
আমার ভালোবাসা এখনো তোমার জন্য
অপেক্ষা করে, এখনো তুমি আছ আমার
এই দুই বাহুর মধ্যে চিরদিনের জন্য |
বিদিশা সরকার
(১)
ঝুল বারান্দার নীচে চলমান শ্রমিক শহর
পার্কের কোনায় এক স্বপ্ন নিরুত্তর
গাছ গাছালির ফাঁকে শহুরে সূর্যের
তীর্ষক ঝলক!
(২)
সবই আছে, তবু যেন কিছু নেই
ভীষন শহুরে সব বিনোদন
পাহাড়ি রাস্তায় পাহাড়ি নির্যাস নেই, শুধু স্পীড
আর তুই ও রোমিং দুরত্বে।
(৩)
তোর প্রাকৃতিক বর্ণনার বলিহারি যাই
আপেল গাছের নীচে বসে
ফলন্ত কিছুই চোখে পড়ল না
দেবদারু হাওয়ার শব্দে জানলা বন্ধ করে দিলে
নির্বাসন, শুধু নির্বাসন
গরাদ প্রকট হয়, বনসাই যত্নে বাড়ে মিনারেল জলে।
(৪)
এ ঘরে ছায়ার লিরিক
কবিতা সরিয়ে তোকে কাছে টেনে নিলে
ঘটে যাওয়া জানি বাস্তবিক
হঠাৎ আছড়ে পড়ে দামাল সমুদ্র
কোভালাম বীচে ...
(৫)
চিঠি লিখি, ছিড়ে ফেলি
যেন বাল্যপ্রেম!
মোমের আলোয় কাঁপে দুরত্বের কিছু অনিশ্চয়
সিটি ট্যুর সেরে ফেরে “যাত্রা ট্যুরিজম”
(৬)
ঝড় থেমে গেলে বৃষ্টি নামে
ছাদের দরজা কেউ বন্ধ করে না
আকাশের মুখোমুখি হতে ভয় করে
এ্যাতোটা বিশাল হতে তুমিও পারবে না
(৭)
দাগের মত দাগ হলে
প্রকাশ্যে আনব জখম
এখানে বলির আগে ঢাক বাজে
প্রযোজক স্ক্রীপ্ট রাইটার!
(৮)
ভুল থেকে ভুল ঘরে আরও ভুল ঘরে
ভেষজ ইচ্ছারা সব আসা যাওয়া করে
(৯)
আর কি কি দিবি
ভোডাফোন, টক্ টাইম
প্রেমের পাঁচন
বিষ দিচ্ছি বিষ নিচ্ছি
এসো বৃন্দবন
(১০)
বাজার জানিনা
শপিং মলেও থাকে ভাষা বিনিময়
ক্রেতার পরখ
এখানে পাগল নেই
একটাও নেই ?
শপিং মলেও নেই
কার সঙ্গে কথা বলি তবে ?
(১১)
আবার এসেছ বাঁধভাঙ্গা
অ্যালবাম খুলে বসি
আমার শৈশব
বাতাসিয়া লুপ থেকে উঁচুর আকাশ
হঠাৎ মেঘেরা এলো
ভেজা ভেজা মেঘেরা আবার
আমরা হারিয়ে গেছি অন্ধকারে
স্বপ্নে হারিয়ে যায় যেভাবে টাওয়ার
(১২)
এভাবে আসতেই পারো
গান হয়ে, ডেটল সাবান
এভাবে টার্কিস হয়ে
এভাবে গিজার
সেমিকোলনের পর এভাবে আসতেই পারো
অসমাপ্ত স্থান...
(১৩)
এদেশে আমদানি হয়, রপ্তানিও হয়
ভোগবাদ মাথাপিছু, ওপেন রেস্তোরা
আমি তো মহুয়া ঘোরে ভাঙ্গাচোরা রাত
ক্ষেপনাস্ত্রে বিদ্ধ হই, এমন মরিয়া!
(১৪)
একবার মাঠে এসো, আমাদের মাঠে
মেরুন সবুজ আর গোল পোস্টে
রেফারি ভাবুক!
তবে খেলা কেন
মাঠেই রচনা হ’ক বইমেলা
মন্ত্রীরাও টিকিট কাটুক –
(১৫)
যদি বলি পড়ে ফেল সবটুকু,
সবটুকু আগাথা ক্রিষ্টির
হত্যা, আত্মহত্যা সব ষড়যন্ত্র
পড়ে ফেল ফুটপাতে শীতে
জড়োসড় ঘুম আর রোয়াকের শ্বাপদ ছায়ায়
আমার ট্রিলজি, শৈশবের সেই রানওয়ে
জেরুজালেমের আস্তাকুঁড়
সারারাত জেগে পড় ঋতুর সংহার
(১৬)
গান থেমে গেলে বাঁচব কিভাবে
সব আয়োজন বৃথা হলে
এ ওয়ান সিটি উচ্চকিত
অথচ ময়ূর ঘোরে এ ঘরে ও ঘরে!
(১৭)
গোছানো হলোনা, ঘরদোর জেগে থাকে
গোছাবো কখন
পেপারওয়েট চাপা আমার কবিতা
ঊষসী ভট্টাচার্য –এর তিনটি কবিতা
বিচ্ছিন্ন ভাবেই...
পাশের ঘরে আমার জরাজীর্ণ বাবা
অসুখে ধুঁকছে,
সারা বাড়ি কড়া ওষুধের গন্ধে ম ম,
আর আমার মনের লাইব্রেরিতে তখন
দুশ্চিন্তার মেঘ কাটিয়ে হঠাৎ এক ওইপন্যাসিক বাসা বাঁধতে থাকে,
যার প্রথা মানার তাগিদ নেই,
শুরু করে শেষ করার তাড়া নেই।
যে জটিল ধাঁধায় সব বেঁধে বা ছন্নছাড়া ভাবেই
জীবনের ক্যানভাসে শব্দের ছবি আঁকে ।
যখন ন্যাপথলিনের গন্ধে নেশা কাটে,
অলীক বাস্তব আর কুহক স্বপ্নের ফারাক দেখি চোখে,
তোমার শরীরে বাসা বাঁধা ঝি ঝি পোকা ওঠে ডেকে,
হ্যরিকেনের আলো বদলায় সূর্যে,
এদিকে আমার শরীর জুড়ে সূর্যদয় ।
পিঁপড়ে খাওয়া শরীরে জোনাক পোকা জ্বললে ;
উপন্যসের খাতা বদলায় কবিতায়,
আমার দিনান্তের রাগিণী হয় শেষ,
আর সূর্যাস্তের পথে চলতে থাকো তুমি,
যার শিরোনামে আমার ছদ্মনাম ।।
নিশ্চছিদ্র
বুক জুড়ে তুমুল জোয়ারে
ভেসে যাওয়া মুখ
দূরে থাকা গল্পপাতা বুনো রক্তে ডোবা অসুখ
বিচ্ছিন্ন আবেগে দোলাচলে প্রাণ
বেহায়া গন্ধে আবেগের টান
আনত দিনের সঙ্গে আজের আড়ি
বুকের পাঁজর জুড়ে পরিত্যক্ত বসত বাড়ি ।
প্রত্যাবর্তন
সেদিন রাতে শালপিয়ালের বনে
তুমি একমুঠো হাসি খুঁজতে গেছিলে
ঠোঁটের যখন নিভে যাওয়া হ্যারিকেন
তখন তোমার সেকি ছটফটানি
নিরুদ্দেশ কলামে খোঁজ পাঠিও পাত্তা না পেয়ে
তুমিই নিরুদ্দেশ হলে ।
#
শুকতারা ঝরা রাতে আমার ক্লান্ত পথিকের ঝুলিতে হাজার মণিমুক্ত
তবু হাসি ফিরল না
সারা শরীরে সোনা চমকে উঠল
সূর্যাস্তের বিলাসিতা ফিরল, তুমি ফিরলে না ।
উল্লাস
বাণীব্রত কুণ্ডু
ভেঙেছি পুরোনো নিয়মসকল কোনো এক অর্ধোন্মাদ রাত্রির উল্লাসে।
মৃগয়ার চাঁদ চুঁইয়ে নেমে আসা শিকারি আলোয় যতসব খুনোখুনি
তবু আজও ভালোবাসার দিবারাত্রি জুড়ে প্রহরীর অঘোষিত সায়ে
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ভেজা রক্তবস্ত্র পরিহিতা, কোনো এক অশনাক্ত লাশে!
অনেকেই ছিল সেথা। ছিল ভালোবাসা, ভালোবাসাকথারা সেজেছিল
বিষাক্ত মদে, জাদুকরী শব্দ পান করে মিশেছিল বসন্তরাতের গভীরে
সিঁধ কেটে ঢুকেছিল অন্ধিসন্ধি সব শরীরের মেহগিনি পাতায় পাতায়
দেখেছিল, বুনেছিল বীজ। আদরে আদরে ক্ষত-বিক্ষত ভালোবেসেছিল
মত্স্যগন্ধা যোনিভুখের মিছিল শুষে নেয় রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ যত!
ষড়রিপু প্রকট হয়ে ওঠে কামনার তীব্র আশ্লেষে, অশেষ সাধনায়
অর্জিত দেবসুধা বসুধা করেনি পান কোনো ত্রিকালজয়ী প্রলোভনের
হাতছানি; শুধু এক রাত্রিচরী মন্ত্রপুরষ খুঁজে চলে শব, শবের যাতনা!
ইফ ইউ কান্ট থিংক স্ট্রেইট !?
সাঁঝবাতি
রোদের চিত্কারের মতো আমার প্রেম
আমাদের প্রেম
যাদের পোড়ার কথা তারা তো পুড়বেই
চোখ বা কাঠ
আগুন বা ঘি
তুই বা তোরা
দ্রুত পুড়ে যাবে, উড়ে যাবে...
শরীরের থেকে কত বড়
দুচার পাতা কবিতা, একটা হাত এ হাত
একটা ভাটিয়ালি দুপুর,কয়েকটা ঘুমপাড়ানি রাত
বুঝতে হলে; এতগুলো মেয়ের যৌনতা পেড়িয়ে তোমায় যেতে হবে
এতগুলো বিশ্বাস মাড়াতে মাড়াতে
নিজের দিকে তাকিয়ে হাঁফিয়ে উঠবে
তুমি...
আকাশ তো দূর
নখাগ্র ও স্পর্শ করতে পারবেনা।
কবিতা – উজান
বইমেলার সাত-সতেরো
(১)
এবার বইমেলায় রোজ হাত ধরে ঘুরছে
সোনালি অতীতের সাথে কিছু রূপোলি মিথ্যেকথা
কারুর দৃষ্টি এড়াবার দায় নেই ওদের
(২)
এবার বইমেলায় ধূলো উড়ছেনা,
উড়ছে চাঁদের প্রেমিক-সোহাগ রদ্দুর
(৩)
একটি পলকা কবিতা ধা্ক্কা খেতে খেতে
ভেসে বেড়াচ্ছে বইমেলায়...
ওরা বলেছে “দেখে চলতে পারনা নাকি?”
(৪)
দুম করে কাল বইমেলা হয়ে গেল কারবালা প্রান্তর
আর জল না খেতে পেয়ে মরে গেল কবিতা
(৫)
বইমেলায় পরে যেতেই আমার সবুজ পাঞ্জাবি ধূসর হয়ে গেল;
মেঘ নয়,
গায়ে মাখামাখি ছই ছাই কোন্দল
(৬)
চাঁদ তুই বইমেলায় নামবিনা?
তোর বুনো প্রেমিক মাদল ভালবাসে?
পিছনে তাকাসনা,সোজা গিয়ে বাঁ দিকে ।
(৭)
কাল খবর ছিল
একই রকম একটি মেয়েকে দেখা গেলেও
উজানকে পাওয়া যাচ্ছেনা বইমেলায় ,
নিরুদ্দেশ।
আমার মতন
বিদিশা সরকার
তোমার পায়ের পাতায় বেড়ে ওঠা
শৈবাল আর ব্যাকটেরিয়ায় হারিয়ে যাওয়ার আগে
দুজন দুজনের দিকে পথ চলি...
সরলবর্গীয় বৃক্ষের ভীড়ে হারিয়ে গিয়ে
খুঁজে আনি কিছু ডানা ভাঙা প্রজাপতি ।
কবিতা - সৌরভ ভট্টাচার্য্য এর তিনটি
বারণগুলো
তোমায় বরফ ভাবার ভুল বোঝাবুঝি,
এক কোনে দেওয়ালের গন্ধ শুঁকছি
পায়ের চাপ মুখস্ত করতে করতে---
বদ অভ্যাসগুলো লোহা হয়ে যাচ্ছে
লাল টুকটুকে...
তারপরের ব্যাপারটা খোলস দিয়ে ঢাকা ।
এই জ্যা---
বারণগুলো বলা হয়ে গেছে...!
সাপেক্ষে
আমার সাপেক্ষে যেটা কুয়ো
তোমার সাপেক্ষে সেটা জল হতেও পারে
ঠাণ্ডা...
মগ থেকে গ্লাসে ঢেলে নেওয়া যায়
আমার সাপেক্ষে তুমি জোনাকি
তোমার সাপেক্ষে আমি কিচ্ছু না ।
কারণ দুই আর দুই চার
সাইকেল স্ট্যান্ড এ সাড়ি দিয়ে সাইকেল পড়ে যেতে দেখে
নিজের কথা মনে পড়ে
দিনের পর দিন...
রাতের পর রাত নয় ।
তারপর ব্যাপারতা হাপানি রুগীর মত,
পারফুমের গন্ধেও নাকে রুমাল দিয়ে রাখি!
হুস করে আরও একটা গাড়ি পেরিয়ে গেলে--
দেওয়ালে চাপি..পড়ে যাই..
পিঁপড়ে হওয়া এত সহজ নয় !
অনেকদিনের অভ্যাসে তোরা পেন্ডুলামের মত,
মাধ্যাকর্ষণ টানলেও ওপরে যাস
ঠিক যেমন একটা বাচ্চা ছেলের কাছে
দুই আর দুই চার...
ছোঁয়াচে রোগ পুষে রাখি
পৃথা রায়চৌধুরী
রুক্ষ খয়েরি জট চিরুনির অপেক্ষায়
আশ্চর্য অন্ধত্ব নির্বাক একবিন্দু
নিঃশ্বাস নিতে ধন্দে পড়ে খাবি খাই
ড্রাগনের অস্তিত্ব বরফ জমিয়েছে এন্তার
এক লহমায়
রুপকথার দত্যি দানো;
কোথায় তুমি, অসুস্থ?
চাদরের মলাট ছেড়ে সুস্থতা
হামাগুড়ি দিয়ে বিকৃতির রাজপথ ধরে
আদুল গায়ে পড়ে থাকে
দুর্গা, কালি, ঝুলি, লক্ষ্মী, অলক্ষ্মী;
এখন নেই, তখন ছিলো
লালসার এক সিন্ধু।
মুখোশও গলার নলি চিরে
ফিনকি দিয়ে বিচার চাইছে
কি হট্টগোল,
ওই পাশ ফিরে থাকি
আমি ঘুমন্ত।
যৌথকাব্য - অনুপম মুখোপাধ্যায় এবং উল্কা
উল্কাপম
উৎসর্গঃ জ্যাক কেরুয়াক
১
সকাল কুড়ুনি দুপুর গড়িয়ে ফেরে
বালতি বোঝাই উল জড়ানো চৌরাস্তা
ছোট কুঠুরিতে রসদ তো তার ভালোই
বেঁটে সোয়েটারে কালোকোলো চৌকোনা
২
তপ্ত তরলে চুমুক ব্যগ্র হয়
সেই সুতো যার অন্য প্রান্ত বাঁধা
চোরা উপকূল কাঠপুতুলির চোখ
এবং নৃত্যে ঢেউ গেলা অজুহাত
৩.
মন চুরি চুরি লাল ঝুরি খাপছাড়া
প্ল্যাটফর্ম ছাড়ে গস্পেল পিলগ্রিম
ছবির আড়ালে ছবির উদবেগ
সাধারণ ট্রেন , দেখার কিছুই নেই
৪
এই হলুদ অসামান্য ভারতীয়দের রঙ
এই সবুজ পশ্চিমবঙ্গীয়
পিচকারি হাওয়াদের নিঃশ্বাস বেচে দেয়
আড়াই খড়ম শ্যাওলা লঙ্ঘন
৫.
নির্যাতনে ক্যামেরা পাগল
এরপর থেকে নোনা দেশ-কা-ঠোক্কর
পনীর , ডিম , খেজুর ও গ্যাসস্টোভ
তৈয়ার আছে , আসুন অ্যাডমিরাল
একটি বিকৃতিমূলক
বাপী গায়েন
গাছে গাছে টফি ঝুলে আছে
ছায়ায় ছায়ায় মহা-বিশ্বকোষ
এখানে আমি দুঃখিত হলে
তবেই যে নির্বাণে আসি
সেরকম শীত জানে ,
হয়ত আপস প্রভু প্রভু ভূমিকায় লিপিবদ্ধ থাকে
আমি তার করুণার সব পাশে- মানুষের মত
অর্ধেক ভাঁজ হয়ে থাকি
এই ভাবে কিছু বিকৃতি থেকে যায়
আমাদের দুজনার ঘাড়ে
পুরুষ, তোমাকে
কচি রেজা
তার সুষ্ঠু উরু ছিল ঠিক তোমার প্রেমিকার মতো
তার দৃপ্তস্তনে জ্বলে উঠেছিল আলো
তুমি রুদ্ধ করে দিলে নিজের পিপাসা
আর কুয়াশা ভিজিয়ে লাল করে দিলে ডিসেম্বর
সে মরে যেতে যেতে মেরে গেছে আমাকেও
গাল পেতে কীভাবে চুম্বন নিই বলো?
আলো ভেঙে গেলে
মেঘ অদিতি
অনৃত গল্পের ভেতর পাখি উড়ে এলে
সন্ধি প্রস্তাবে থাকে ঘাসফুল শুধু
বাইরে নেশাতুর ডাক
চিত্রকল্পে ফিরে গেছে ক্রিসমাস ঈভ
বিরুদ্ধ হাওয়ায় সেই ফুলছাপটিও আর নেই..
অথচ রাত্রি অধীর
অধিক সংকেতে ভাসে ঘুম
আত্মশোকের গায়ে মোহবার্তা আসে, ‘জেগেছে বুনো ঘোড়া ওই’
আর উৎসর্গপত্রে ঘাসফুল লিখে যায়
‘আলো ভেঙে যাবার পর সমর্পণের সেই গল্পটা...
স্বপ্নবীজ
পাঞ্চালী সিনহা
দেখেছি রাতের আগুন
কিভাবে এগিয়ে আসে দ্রুত
বাতাসের ভারী হয় বুক
স্তূপীকৃত জমে ওঠে বাসনার ছাই
পতঙ্গের ডানায় সে ভস্মরূপী বীজ
এক এক মৃত্যুর সাথে
আবারও জন্ম নেয়
খেলতে থাকি অস্পষ্ট সেই দোলাচলে
স্বপ্নের জন্ম-মৃত্যুর সাথে
এগোতে থাকি
একটি রাত ভেঙে
আরেকটি রাতের কাছে
নিঃশব্দ নতজানু।
অকালবোধন
মিলন চ্যাটার্জী
আমার আর যাওয়া হয়না
যতবার যেতে চাই
আবাহন করো তুমি অকালবোধনে !
মুহুর্মুহু বেত্রাঘাতে আমার শরীরে
এঁকে দাও প্রণয়ের ঈশ্বরীয় ছাপ !
ক্ষতহীন দহনে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে
কেঁদে ফেলো তবু- দিয়ে যাও
ভালোবেসে ক্ষতের প্রলেপ !
ফিরে ফিরে আসি তাই বারেবার
জীবনের সম্ভবনা দেখে যাই অশনি সংকেতে !
সম্মিলন ...
মধুছন্দা মিত্র ঘোষ
ডুব জলে শিখছি সাঁতার
সেজে উঠছে জলজ আহ্বান
গায়ে মাখি নিভৃত দুঃখসুখ
নানান কুচকাওয়াজে বেজে ওঠে
হাসি মুখ কথা গুলি
ভেসে যাই , আমি , আমরা ,
যুগল সম্মিলনে ...
দার্শনিক
সৈকত ঘোষ
আলোর স্থান পরিবর্তন হলে
বদামি ঠোট কালচে হয়ে যায়
হাতের মুঠোয় ছোট বড় আকাশ
মাঝারি মানের স্পর্ধায় কেঁপে ওঠে
দার্শনিক হবার লোভে
শুন্যতার গলায় দুপেগ হুইস্কি ঢেলে দিলাম
জামার হাতায় গুটিয়ে রাখা পৌরুষ
হেরে গেল জাপানি তেলের কাছে
আমি উবু হয়ে বসে নীরবে
প্রজাপতি ধরছিলাম | আসলে ঈশ্বর
গভীর জলে সাঁতার কাটেন
গোলাপি নগ্নতা খানিকটা ঋতুচক্রে
রঙিন বিসর্গের মত |
যদিও ,
তোমার কোমড়ের নীচ থেকে উকি মারা উল্কি
প্রশ্রয় খোঁজে বুকের আদ্র কঠিন খাঁজে |
মুহৃর্তের মুহূর্ত
সঞ্জয় ঋষি
এই যে এস এম এস এ ভালোবাসার আলো লাফিয়ে ওঠে কিছু শব্দ নিয়ে ।
এই দৃশ্য চিত্রে
একদিন আমি তার আরো ভিতরে আশ্রয় নেবো
তার দেহ ঘিরে কবিতা আর গানের গন্ধ...
স্পর্শ ভালোবাসা
শব্দ ভালোবাসা
জীবনের ছন্দ পয়ার মেলাতে মেলাতে
আমরাও একদিন কবিতা হয়ে যাব ।
নিভে যাওয়ার আগে
ছন্দম মুখোপাধ্যায়
ওর খিদের হিংসাবৃত্তি আমার চিতায় চাল চড়াল ।
এক দৃষ্টে হাঁড়ির দিকে তাকিয়ে । চালের সঙ্গে দুটো মাছও সিদ্ধ হয় ।
ফুটন্ত ভাতের টগবগানি, চিতার চরচর শব্দ, তাছাড়া
সব চুপ । শরীরের সমস্তটা তেলে ফোটাব ,
আমার ধোঁয়ার যা ইচ্ছা শরীরেরও তাই ।
ত্রি
ঋষি সৌরক
হারিয়ে ফেলি নিলাম হাওয়ার চর আঁজলা মোড়া আবেশ বেঁচে থাকে আপাতনিরীহবিষরোদনামঘর বুক পেরোতেই চিতাকাঠ ভেসে ওঠে এই যে এতো হৈহট্টের আসর যে যায় দূরে তার পেছোনেই ছোটা এমনই অনেক গিটার অগোচর স্বর্গের পথ নির্জনতম একা তুমি পাই ভাবো ভবে মানে চাহিদা ভালো ভালো
বেসে হলুদ দেরাম চোখ যত ঘুম আছে হ্যালুসিন সান্দার অচেতন ঠোঁট মৃত্যুকল্পলোক খোলা পিঠ জুড়ে গুহাছবি হয়ে থেকো অপেরা থেকে প্যারালাল মিথ অনেক দুর্বার ঝোড়ো হাসিলের এই রিলে রেস
স্বপ্ন যেমন সমান্তরাল বিত্ত নেই
কবিতা এবং মাষ্টারবেশন -২০
রত্নদীপা দে ঘোষ
মাষ্টারবেশন আর কবিতা উৎপাদনের মধ্যে বস্তুত কোনো তফাত নেই । দু ক্ষেত্রেই আঙুলের আগায় নিশপিশ করে আস্তাবল । ক্ষেত্র বিশেষে ঘোড়সওয়ারও ।মুহূর্তে মানুষ ম্যাজিক-লাইটার যার অর্ধেক রং – মশাল আর বাকী অর্ধেক হাউই। আদুর গায়ে দু চাকার বাধ্য সুষুম্না ! দিগন্তঘোড়ার ফুলে ওঠা শ্বাস । ফাটল অসভ্য হয় ক্রিয়াশীল ছোবলে । ঘামতেল মেখে উঁচিয়ে ওঠে হুইসিল । ঢেউ, কখনো কোণাকোণি কখনো তেরছা টাইটানিক । মুশলধারায় অভ্রগন্ধের মৈথুনবীজ
অজস্র গুটিপোকা। হাত পা মগজ এপাশ ওপাশ ছড়ানো । বালি সুরকি বোল্ডার । শব্দ ঠুকে যায় ব্রেনের জ্যামিতিতে । পশলা দুয়েক ঝুমমেডুলা । হামাগুড়ি দিয়ে অক্ষরসিমেন্ট , আলোকিত অঙ্গুলিনির্দেশ । মগজ থেকে ধরানো সিগার । কোনো কোনো শব্দ আকুপাকু যেন শীতকালীন হাঁসের দুপুর । তারপর কলমের সীমানায় স্পষ্ট হয়ে সত্তা , জ্বলজ্বলে যাপন ! ঘামের নতুন বিন্দুসহ পাক্ষিক কবিতার ইলাস্ট্রেশন ।
মাষ্টারবেশন এক নিশীথমধ্যঘোর । কবিতাও ।
.. সাদা হাত , সাদা পাতার নগ্নরেশ
মোমের আগুন ... সর্বাঙ্গ ঝলসে দিয়ে ...
আমার ছেলেবেলা গুলো
প্রীতমকুমার রায়
তোমাকে জন্মের কথা বলব ভেবেছিলাম
যেখানে মা আমাকে দুধের শুশ্রুষা দিয়েছিলো,
চোখে কাজল দিয়ে, পায়ে প্যাঁক প্যাঁক জুতো পড়িয়ে
আরো অনেক আবদারের ভেতর ঠেলে নিয়ে যেত মামা-বাড়ি।
সেখানে বান্টামামা, পাগলামামা, ঘেন্টুমামা- আরো অনেক
আবদারের নাম দিতে দিতে, ঘুড়ি নিয়ে ছুটতে ছুটতে
আমি কখন যেন ছেলেবেলা গুলো পেড়িয়ে এলাম...
আজ প্রিয়তম বলে যে ডাকে সে আমার মা নয়,
হাতে তালক্ষিরের বাটি নিয়ে এগিয়ে যে আসে
সে-ও আমার মা নয়, বাবা নয়, দাদু-দিদা-মামা-মামি কেউ না।
আমার অর্ধ অংশ হতে চেয়ে, অনেক দাবীর ভেতর বেঁচে থাকতে চেয়ে
যে আমার আশরীর ঘ্রাণে টেনে নেয়
সে কেন আমার ঐ ছেলেবেলা গুলো চেনে না?
প্রীতম ভট্টাচার্য্য এর দুটি কবিতা
পোকা
নির্বান্ধব পোকা একা আলোক বৃত্তে ঘোরে
সাধ তার বৃত্তশালী হতে
সাধ তার সমৃদ্ধি পাথর
বৃষ্টির মতো কাছে যাব ওর
ছায়া ও শিকড় দিয়ে ওকেই আলোক
ওই ইচ্ছুক পোকাটিকে
সার্থক পতাকা বানাবো ।
অনু কবিতা
বালিশের কাঁধ থেকে সরে গিয়ে
সঙ্গিহীন পড়ে থাকে মাথা
আবছা কানে আসে বাসি হাওয়া
আর সাদা কাগজের
নিচুস্বরে ফিস্ ফিস্
খাতার কিনারে পড়ে থাকে
মরা মথ ছেঁড়া মথ ধুসর গুঁড়ো মথ
আর বুকের বোতাম খোলা সবুজ কলম ।
প্রতিবিম্ব
কিরীটি সেনগুপ্ত
দর্পণ রাঙালো সিঁথি
স্বপ্নে ডুবে যাওয়া দুটি চোখ
হোমাগ্নির তাত ও গন্ধ
ভালো বাসার স্পষ্ট প্রতিবিম্ব।
শুভক্ষণে শুভদৃষ্টি
সোহাগী সমর্পণ
নীরব – বাঙ্ময়।
অলক্ষ্যে ঢুলে পড়ে
সদ্য-পরিণীতা….
সংজ্ঞাহীন –
শৈলজা।
আশা নিরাশা
সিধ শর্মা
গায় না বউ কথা কও
মোবাইল-এর ভ্রুকুটিতে
হিজলের মনে ব্যথা দাও
প্রমোটারের দরাদরিতে
ভাটিয়ালি যায় না শোনা মাঝ দরিয়ায়
স্বরলিপি যায় না বোনা কবিতা খাতায়
বৈকালিক প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ সূর্য রথ
ছুটন্ত দিন রাত্রি কারিগর হারিয়েছে পথ
কবিতার পান্ডুলিপি হারায় হেলায়
হৃদয়ের দিনলিপি পথের ধুলায়।
.
পুনর্বাসন নয় চাই পল পল নির্বাসন
সখ্যতা হৃদ্যতা মুর্খ বিলাসিতা
আবাহন না করে ভাসানী বিসর্জন
তবুও আশা দেখায় সন্ধ্যা তারায়
অন্তরে অনাবিল ঢেউ স্বপ্ন চেনায়
অহংগী পরীর চুলের জল গড়ায়
ধবধবে জোত্স্নায় অঙ্ক কষি
টুপটুপিয়ে বৃষ্টি ঝরে বানভাসি
অক্ষম লজ্জাহীন এক গল্প দিতে
নীল খামেতে লাল কালিতে।
.
অস্তিত্বের ভগ্নাবাসে -
রাত গভীরে বিশাল অট্টহাসি
কপোলে জল বিন্দু বানভাসি।
দুই বিড়ালের যুদ্ধ
রাজগোখরো
বিশাল বড় ইস্কুলবাড়ি-
বেঞ্চি পাতা সারি সারি,
হোঁতকা মতো দুই বিড়ালে
করলো শুরু মারামারি।
গোঁফ ফুলিয়ে ফুঁসছে লেলো
লেজ উচিয়ে ডাকছে কেলো,
দুই বিড়ালের রাগের চোটে
বেঞ্চি এবার টলোমলো।
লেলো খামছে দিতে দক্ষ,
কেলো কামড়ায় ঠিক লক্ষ্য;
বুজছে না সাদা বেড়াল
যুদ্ধে নেবে সে কার পক্ষ।
সে কি যুদ্ধ হবে ক্যানে?
ও মা এটা কে না জানে,
ছাদের থেকে টিকটিকি এক
মরে পড়েছে যে মাঝখানে।
শেষে শুরু হল যুদ্ধ,
দুই বিড়াল-ই ভীষণ ক্রুদ্ধ,
আমি এবার পালাই বরং-
লড়াই-এ কাঁপছে যে পাড়াশুদ্ধ...।
অনুবাদ কবিতা – ইন্দ্রাণী সরকার
I Wandered Lonely As A Cloud (by William Wordsworth)
আমি মেঘের মত একা ভেসে যাই
আমি মেঘের মতো একা ভেসে যাই
পাহাড়ি উপত্যকার উপর দিয়ে,
হঠাৎ দেখি পথের ধারে এক ঝাঁক
সোনালী ড্যাফোডিলের গুচ্ছ |
জলের ধারে ধারে, গাছের পাশে পাশে,
তারা হাওয়ায় ওড়ে আর দুলে দুলে নাচে |
ফুলগুলো সুন্দর ওই নক্ষত্রমন্ডলীর
ঝিকমিকে তারাদের মত সারে সারে সাজান |
হাজার হাজার ফুলেরা চারিদিকে ফুটে রয়েছে,
বাতাসের দোলায় যেন তারা মাথা হেলিয়ে
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে |
ড্যাফোডিলের বাগানে বাতাসের দোলায়
ঢেউ ওঠে যা জলের ঢেউকেও হারিয়ে দেয় |
তার মনোলোভা রূপে বিমুগ্ধ আমি
হতবিস্মিত হয়ে তাকিয়ে দেখি |
যখন আমি একাকীত্বের সুরভিতে নিমগ্ন
ড্যাফোডিলের সৌন্দর্য্য আমার অন্তরাত্মায়
অপার্থিব ভাবনার সৃষ্টি করে |
আমি ডুবে যাই অনাস্বাদিত এক অনাবিল
আনন্দে ওই ড্যাফোডিলের সুন্দরতায় ||
Touched by an Angel (by Maya Angelou)
দেবদুতের স্পর্শ
একাকীত্বের খোলসে লুকোনো আমাদের ভীরু মন
অপেক্ষা করে মহিমান্বিত ভালোবাসার আগমন
তার পুণ্য মন্দির থেকে আমাদের চোখের সামনে |
ভালোবাসার সাথে জড়ানো থাকে অতীতের
বেদনা ভরা স্মৃতি যা মনকে আরও ভারাক্রান্ত করে |
কিন্তু অটুট মনের বিশ্বাস আমাদের আত্মগ্লানি আর
ভয়ের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে |
ধীরে ধীরে স্তিমিত মন ভালোবাসার উজ্জ্বল আলোয়
উদ্ভাসিত হয় ভয়ের খোলস থেকে পায় চিরমুক্তি |
আমরা অবশেষে উপলব্ধি করি ভালোবাসাই জীবনে
সুধারস আনে আর মানবাত্মা পায় অনন্ত মুক্তির স্বাদ ||
If You Forget Me (by Pablo Neruda)
যদি তুমি আমায় ভুলে যাও
তোমাকে একটি কথা আজ বলি .....
যখন আমি ওই ঝলমলে চাঁদের দিকে তাকাই,
বা জানালা দিয়ে শরতের লাল শাখা প্রশাখা দেখি,
অথবা আগুনে পোড়া কাঠগুলো ছুঁই
সব কিছুই শুধু তোমার স্মৃতি মনে করায় |
যে কোন আলো, গন্ধ, ধাতব স্পর্শ যেন
নৌকার মত তোমার দ্বীপে ভাসিয়ে নিয়ে যায়
যেখানে তুমি আমার প্রতীক্ষারত |
কিন্তু ধীরে ধীরে যখন তুমি আর আমায়
ভালোবাসতে চাইছো না,
আমিও তোমায় একটু একটু করে আর
ভুলে যেতে চাই |
তাই হঠাত যদি তুমি আমায় ভুলে যাও
আর আমায় না খোঁজো তুমি জানবে
আমি তোমায় আগেই ভুলে গিয়েছি |
যদি তুমি আমায় সমুদ্রচরে নির্বাসন দাও ,
যেখানে আমার মূল আর শাখা প্রশাখা বিস্তারিত,
তবে জেনো সেই মুহুর্তে আমি অন্য কোন
সমুদ্রচরের দিকে যাত্রা করেছি |
কিন্তু যদি প্রতি মুহের্তে তোমার মনে আমার
মধুর স্মৃতি মনে পড়ে যায়,
যদি প্রতিদিন একটি ফুল তোমার ঠোঁটে
আমায় খুঁজে বেড়ায় ,
ওগো প্রিয় আমার জেনে রেখো আমি তোমার
কোন কিছুই ভুলি নি |
আমার ভালোবাসা এখনো তোমার জন্য
অপেক্ষা করে, এখনো তুমি আছ আমার
এই দুই বাহুর মধ্যে চিরদিনের জন্য |
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন