বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২

পৃথিবী রসাতলে যাবে - ইন্দ্রাণী সরকার

পৃথিবী রসাতলে যাবে
ইন্দ্রাণী সরকার


পৃথিবী যদি আর কয়েক দিনের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায় কী করবো আমি? এর উত্তর নিজেকে নিজেই দেবার জন্য চোখ বুজে ভাবতে থাকলাম | মন বললো থেমে থাকলে ত' চলবে না | লুকোবই বা কোথায় ? মাটির তলার ঘর, নিজন দ্বীপ কী কাজে আসবে ? কিন্তু এ যে মহাপ্রলয় ! সৃষ্টি তছনছ হয়ে যাবে | এর থেকে ত' আমি পালাতে পারবো না কোন সুরক্ষিত পরিবেশে |

আমি ভাবলাম যে দিনটা যখন জানাই আছে কবে পৃথিবী রসাতলে যাবে তখন নিজের জীবনটা একটু অন্য আঙ্গিকে দেখি | এত দিনের জীবনে যদি কারোর মনে আঘাত দিয়ে থাকি, তাদের কাছে ক্ষমা চাইবার এই ত' সময় | আমার প্রিয় জিনিসগুলো একটু নাড়াচাড়া করে নি | আমার প্রিয় বাগানের গাছগুলিকে মনে মনে বলে দি যে ওদের আমি কত ভালোবাসি | সুন্দর গাছগুলোকে আদর দিয়ে দি | কত বছর ধরে ওরা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আমার বাগানের শোভা হয়ে | বন্ধুদের সঙ্গে কিছু সুখ দুঃখের কথা বলে নি | আমার প্রিয় গানগুলি নতুন করে শুনি, বুঝতে চেষ্টা করি আরো একবার |

আমার বাড়ির সবাইকে অনেক আদর আর ভালোবাসা জানিয়ে তাদের দুটো সান্ত্বনার কথা বলি আর একটু চোখের জল ফেলি | এই আমার প্রিয়জন যাদের সঙ্গে আমি বছরের পড় বছর কাটিয়ে এলাম তাদের কাছ থেকে আমার দূরে চলে যাবার সময় এসে গেছে | আর কিসের মায়া !

এবার আমি আমার পুজোর ঘরে যাচ্ছি | কেউ আমায় আর ডেকো না | আমি এখন সেখানে বসে চোখ বন্ধ করে আমার আর এই পৃথিবীর পরম পিতা মহাদেবের চরণে নিজেকে সমর্পণ করলাম | হে মহাদেব ! হে পরম পিতা, আমায় তোমার চরণে স্থান দাও |


পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে....


পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, আর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে পৃথিবীর প্রাণের স্পন্দন থেমে যাচ্ছে। চোখের সামনে ভেঙে পড়ছে আকাশচুম্বী দালান। নিমিষেই গুড়িয়ে যাচ্ছে মাটিতে। না, বাস্তবে নয়, এটি অতি জনপ্রিয় মুভি ‘২০১২ এর কাহিনী। তবে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে ২০১২ সালে নাকি সত্যিই ধ্বংস যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী। ডুমস্ডে-২০১২ নিয়ে সাপ্রতিক জল্পনা-কল্পনা,ইন্টারনেট পাড়ায় হৈ-চৈ, প্রখ্যাত পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদন এবং বিজ্ঞানীদের অভিমত নিয়ে এই প্রতিবেদন।

বর্তমানে বিশ্বের পরিস্থিতি, বিজ্ঞানীদের গবেষণা আর নানা দিক ব্যাখ্যা করে পৃথিবী ধ্বংসের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে! সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ছিল ২০০০ বছর আগেকার মায়া সভ্যতা। সেই সময় মায়ারা তৈরী করে ছিল এক রহস্যময় ক্যালেন্ডার। মায়াদের সময় বিশ্বজুড়ে স্থাপত্য, সংস্কৃতি আর বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রগতি ছিল নজিরবিহীন। প্রাচীন মিথ, জ্যোতিষশাস্ত্র কিংবা প্রাচীন বুদ্ধিমান সভ্যতার ওপর যাদের আস্থা চরম তাদের প্রথম পছন্দ মায়া সভ্যতা। সত্যিই মায়াদের ভবিষ্যদ্বাণী সফল হতে চলেছে? বিজ্ঞানীরা মায়াদের ক্যালেন্ডারের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে কথা না বললেও জানিয়েছে পৃথিবী ধ্বংসের সম্ভাব্য কিছু নমুনা। এর মধ্যে সূর্যের ভেতরের বিস্ফোরণ ‘সানস্টম’, ভয়ঙ্কর অগ্নুৎপাত, সুইজারল্যান্ডের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার, এবং ‘গেস্নাবাল ওয়ামির্ং -কে পৃথিবী ধ্বংসের সম্ভাব্য দায়ীদের অন্যতম বলে দাবী করা হচ্ছে।

সানস্টর্ম বা সূর্যঝড়কে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ভবিষৎতের জন্য একটি ভয়ঙ্করতম হুমকি বলে মনে করছেন। সূর্যের ভেতরে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের বিস্ফোরণ থেকে তৈরী হয় এনার্জি। আর সেই এনার্জি থেকে ইলেক্ট্রন, প্রোটনের মতো নানা পার্টিকল পৃথিবীতে এসে পৌছায় এবং এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব এসে পরে পৃথিবীর উপর। সেই সঙ্গে সোলার র্স্ট্রম বা সৌরঝড় তো রয়েছেই। ২০১২ সালে সূর্যের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ এনার্জি তৈরি হবে, যার নাম ‘সোলার ম্যাক্সিমাম’। এই সৌরঝড়ের ভয়ংকর রেডিয়েশন এবং এনার্জি নির্গমনের ফলে ভূপৃষ্ঠে বা মহাকাশে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখে দিবে। বেড়ে যেতে পারে মানুষের অসুখ বিসূখ, দুঘর্টনা ও ভয়াবহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ফলে পৃথিবী এগিয়ে যাবে চুড়ান্ত পরিণতির দিকে। অন্যদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি হলো আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ভলকানো। মোটামুটি প্রতি ৬,৫০,০০০ বছর পর ভয়ংকর অগ্ন্যুৎপাত হয় এই আগ্নেয়গিরি থেকে। গবেষনা অনুসারে ২০১২ সালে ভয়ংকর বিষ্ফোরণ ঘটবে ইয়োলোস্টোনে হয়তো সেখান থেকে সাংঘাতিক অগ্ন্যুৎপাত হবে, সব বায়ু মন্ডল ঢেকে যাবে, ছাইয়ে হয়তো চাপা পড়ে যাবে সূর্যও। তখন গোটা পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে যাবে। এভাবে কিছু দিন চললেই পৃথিবী থেকে প্রাণের স্পন্দন থেমে যাবে।

পৃথিবীর জন্য আরেকটি সম্ভাব্য হুমকি হচ্ছে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার’। ব্রহ্মাণ্ড এর জন্মমূর্হূতে পৌঁছতে সুইজারল্যান্ডের জেনাভায় মাটির নিচে তৈরী করা হয়েছে মানুষের তৈরী সবচেয়ে বড় যন্ত্র লার্জ হ্যাড্রন ২৭ কি. মি. লম্বা জোড়া পাইপের ভেতর দিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রোটন কোটি কোটি বার চক্কর খাবে এখানে। তারপর প্রায় আলোর গতির কাছাকাছি পৌছে বিপরীতমুখী প্রোটনের সঙ্গে ভয়ষ্কর ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গ টুকরো টুকরো হয়ে তৈরী হবে ডট্রিলিয়ন ডিগ্রি (১০০,০০০,০০০,০০০) সেন্ট্রিগ্রেড উত্তাপ। মাল্টিপেক্সড অ্যানালগ সিগন্যাল প্রসেসরে জমা হতে থাকবে অগণিত তথ্য। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানবেন বিশ্ব ব্রম্মান্ড সৃষ্টির রহস্য। এর প্রথম পরীক্ষাটি আবার ব্যর্থ হয়েছিল, কিন্তু এর ফলে ঘটতে পারে ভয়ংকর দুঘর্টনা। আর ২০১২ সালেই এই যন্ত্রের সাহায্য চালানো হবে বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ এই পরীক্ষাটি। তাই এই ঝুকিটাও হেলা করার মতো নয়।

আবার সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে, প্রচন্ড উত্তাপে দ্রুত গলে যাওয়া মেরু প্রদেশের বরফ। গলে যাচ্ছে হিমপ্রবাহ। পৃথিবী জুড়ে সমুদ্রের লেভেল বাড়ছে। গ্রীনল্যান্ড ও আ্যন্টার্কটিকার বরফও গলে যাচ্ছে। ফলে এক সময় হয়তো প্রবল জলোচ্ছাসে ভেসে যাবে সারা পৃথিবী। বিজ্ঞানের নানা বিশ্লেষণ ২০১২ সালকে পৃথিবীর অসিৱত্বের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এমনও হতে পারে এর কিছুই হয়তো ঘটবে না। হয়তো ঘটবে আরো কয়েক শতাব্দী পর। সে আশায় আমরা বুক বাঁধতেই পারি।

মায়ান ক্যালেন্ডার রহস্যঃ ২০১২ ছবির ঘটনার মতো ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর সত্যি সত্যি আমাদের পৃথিবীতে ঘটতে যাচ্ছে ধ্বংসলীলা এ কথাই বলছেন মায়ান পঞ্জিকা বিশেষজ্ঞরা। সবচেয়ে বড় ভয়ংকর ব্যাপার হলো, মায়ান পঞ্জিকাতে আজ পর্যন্ত যত ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তার প্রতিটিই কালের আবর্তে সত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর এ কারণেই পৃথিবী ধ্বংসের আশংকা নিয়ে এত বেশী আলোচনা হচ্ছে।

সাপ্রতিককালে বিশ্বজুড়ে প্রকৃতি যে আচরণ শুর করেছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। কয়েক বছর ধরেই পৃথিবীর বুকে আঘাত হানছে বৈরী আবহাওয়া। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ধারাবাহিক ভবে ভূমিকম্প, দাবানল, বন্যা, তুষারঝড়, ঝড়-জলোচ্ছাস ও শৈত্যপ্রবাহ বিশ্বজুরে লেগে আছে। আক্রান্ত হচ্ছে রাশিয়া, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ইউরোপ, কলম্বিয়া, চীন, ভারত, জাপান, বাংলাদেশসহ বিশ্বেও অধিকাংশ দেশ। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছেন ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম কাল। এমনকি আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা WMO ২০১০ সালকে ১৫০ বছরের মধ্যেবিশ্বের সবচেয়ে গরম বছর হিসাবে চিিহ্নত করেছে। তারচেয়েও আতঙ্কের বিষয় সাম্প্রতিক কালে জাপানে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে তাতে পৃথিবীর অক্ষ ১ মিনিট কোণে হেলে গেছে। ফলশ্রুতিতে জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের সব হিসাবনিকাশ ভূল প্রমাণ করে উত্তর গোলার্ধেও এলাকা গ্রীনল্যান্ডে নির্ধারিত সময়ের ২ দিন আগে সূর্যদয় হয়েছে। এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। আর জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ভবিষ্যৎ ফলাফল হল পৃথিবী ধ্বংস।

উপরে উল্লেখিত তথ্যাবলি থেকে অনুমান করা যায়, ২০১২ সালে হয়ত কিছু না কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তবে বিজ্ঞানিরা পৃথিবী ধ্বংসের ব্যাপারে একমত নন। তাদের মতে,২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বরের পর পৃথিবী ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে। অনেকের মতে পৃথিবীতে মহামারি দেখা দিবে অথবা কোনো না কোনো ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানবে। তবে যাই হোক না কেন আমরা নিশ্চয়ই ‘ডুমসডে-২০১২’ মুভিটির বাস্তবরুপ দেখতে আগ্রহী হব না, তাই না?