হিন্দি সাহিত্যিক ফণীশ্বরনাথ রেণুর সঙ্গে তাড়িসন্ধ্যা
মলয় রায়চৌধুরী
পাটনায়, চল্লিশ দশকের ইমলিতলায়, এখন ভাবি, ‘খারাপ’ আচরণ ব্যাপারটা , এখন যেসমস্ত আচরণকে বলা হবে সীমালঙ্ঘণ, তা সম্ভবত ছিল না । আমাদের বাড়ির সামনের রকে আমার শৈশবের বন্ধু কপিলের দাদু একটি খিস্তি শেখাবার স্কুল চালাতেন ; তাঁর কাছে শিশুদের রেখে মায়েরা যে-যার কাজে ব্যস্ত থাকার সময়ে কপিলের দাদু, যাকে আমরা বলতুম রামচন্দর, কোনো পথচারীর দিকে নির্দেশ করে একটি শিশুকে বলতেন, ‘এই তুই ওকে অমুক গালাগালটা দে’। শিশুর কন্ঠ থেকে বেরোত এমন সমস্ত খিস্তি যা শুনলে বর্তমান কালখণ্ডে মারামারি-খুনোখুনি আরম্ভ হয়ে যাবে । নিজে তাড়ি খেতে-খেতে শিশুদেরও খাইয়ে দিতেন এক-আধ ঢোঁক ।
ওই পাড়ায় কারা কারা চুরি পকেটমারি ছিনতাইবাজি ইত্যাদি করে জীবন চালাত তা ইমলিতলার সকলেই জানত । স্বাভাবিক যে পাড়ার তাড়িখোররা তাড়িও চুরি করে এনে খেত। ছেলে-ছোকরারা খবর আনতো যে কোথায় কোন কোন গাছে তাড়ির হাঁড়ি বাঁধা হয়েছে । ব্যাস , ভোর রাতে বেরিয়ে পড়ত একদল লোক । পাড়ায় পৌঁছে যেত বেশ কয়েকটা তাড়ির হাঁড়ি । সকালে নামিয়ে আনা বলে কিছুক্ষণ রেখে দেয়া হতো যাতে রোদের গরমে গেঁজিয়ে ওঠে ।
আমার তাড়ি পানের হাতেখড়ি ওই ইমলিতলা পাড়াতেই, শৈশবে । কিন্তু আমাদের তাড়ি খাওয়াবার জন্য বড়োজ্যাঠা বকুনি দিতেন, আমাকে নয়, যারা তাড়ি খাইয়েছে তাদের । তবে তাড়ি খাওয়াকে খারাপ চরিত্র-লক্ষণ মনে করা হতো না, কেননা আমাদের বাড়িতেও, বিহারি সংস্কৃতির প্রভাবে বোধহয়, বলা হতো যে তাড়ি স্বাস্হ্যের পক্ষে উপকারী ; ভোর রাতের তাড়ি খেলে মোটা হওয়া যায় । গেঁজিয়ে-ওঠা তাড়ির গন্ধ আমার ভালো লাগত না ; নাক টিপে খেতে হতো । তাড়ি খাবার জমায়েত দেখলে তাই এড়িয়ে যেতুম, যদিও পেছন থেকে ডাক পড়ত, টিটকিরিও মারত বয়স্কদের অনেকে ।
হিন্দি সাহিত্যিক ফণীশ্বরনাথ রেণুর সঙ্গে বসে নানা রকমের নেশা করেছি । ওনার গ্রামের বাড়ি ছিল নেপালের সীমান্তে । বিহারি তরুণ কবি-লেখকরা ওনার বাড়িতে একত্রিত হলে কখনো-সখনো গাঁজা খাওয়া হতো ; গাঁজার শৌখিন ছিলিম ছিল রেণুজীর । তবে উনি ভালোবাসতেন রাম খেতে, নিট রাম । আমি দরিয়াপুরের বাড়িতে যাবার পর উনি বাড়ির কাছে এসে আমার নাম ধরে হাঁক পাড়তেন । রিকশায় উঠে আমরা যেতুম একটা বারে; সেটা ছিল ‘সেন্ট্রাল হোটেল’ নামের পোড়োবাড়িতে । আরও অনেকে এসে পৌঁছোত । রাম খাওয়া হতো । রামও আমার প্রিয় নয় । আমি কম খেতুম ।
একবার উনি ওনার রাজেন্দ্রনগরের ফ্ল্যাটে সাহিত্যিক আড্ডার ব্যবস্হা করেছিলেন, হিন্দি সাহিত্যিকরা যাকে বলতেন ‘গোষ্ঠী’ । এখন এই জমায়েতগুলোকে কী বলা হয় জানি না । গোষ্ঠী জমজমাট হয়ে উঠলে ট্রেতে সাজানো কাটগ্লাসের পাত্রে চলে এলো পানীয় । ফিকে কমলা রঙের, ছোটো এলাচের গুঁড়ো ভাসছে তার ওপর। অপরিচিত গন্ধ । ভোর রাতের তাড়ি ফ্রিজে রেখে তার সঙ্গে মেশানো হয়েছে জাফরানের জল আর ওপর থেকে ছোটোএলাচ!
বলাবাহুল্য যে প্রত্যেকের কবিতাপাঠের পর ‘ওয়াহ’ ‘ওয়াহ’ ধ্বনি উঠছিল । ষাটের দশকের পর উঠে গেছে এই ধরণের কবিতাপাঠের আসর।
পাটনায়, চল্লিশ দশকের ইমলিতলায়, এখন ভাবি, ‘খারাপ’ আচরণ ব্যাপারটা , এখন যেসমস্ত আচরণকে বলা হবে সীমালঙ্ঘণ, তা সম্ভবত ছিল না । আমাদের বাড়ির সামনের রকে আমার শৈশবের বন্ধু কপিলের দাদু একটি খিস্তি শেখাবার স্কুল চালাতেন ; তাঁর কাছে শিশুদের রেখে মায়েরা যে-যার কাজে ব্যস্ত থাকার সময়ে কপিলের দাদু, যাকে আমরা বলতুম রামচন্দর, কোনো পথচারীর দিকে নির্দেশ করে একটি শিশুকে বলতেন, ‘এই তুই ওকে অমুক গালাগালটা দে’। শিশুর কন্ঠ থেকে বেরোত এমন সমস্ত খিস্তি যা শুনলে বর্তমান কালখণ্ডে মারামারি-খুনোখুনি আরম্ভ হয়ে যাবে । নিজে তাড়ি খেতে-খেতে শিশুদেরও খাইয়ে দিতেন এক-আধ ঢোঁক ।
ওই পাড়ায় কারা কারা চুরি পকেটমারি ছিনতাইবাজি ইত্যাদি করে জীবন চালাত তা ইমলিতলার সকলেই জানত । স্বাভাবিক যে পাড়ার তাড়িখোররা তাড়িও চুরি করে এনে খেত। ছেলে-ছোকরারা খবর আনতো যে কোথায় কোন কোন গাছে তাড়ির হাঁড়ি বাঁধা হয়েছে । ব্যাস , ভোর রাতে বেরিয়ে পড়ত একদল লোক । পাড়ায় পৌঁছে যেত বেশ কয়েকটা তাড়ির হাঁড়ি । সকালে নামিয়ে আনা বলে কিছুক্ষণ রেখে দেয়া হতো যাতে রোদের গরমে গেঁজিয়ে ওঠে ।
আমার তাড়ি পানের হাতেখড়ি ওই ইমলিতলা পাড়াতেই, শৈশবে । কিন্তু আমাদের তাড়ি খাওয়াবার জন্য বড়োজ্যাঠা বকুনি দিতেন, আমাকে নয়, যারা তাড়ি খাইয়েছে তাদের । তবে তাড়ি খাওয়াকে খারাপ চরিত্র-লক্ষণ মনে করা হতো না, কেননা আমাদের বাড়িতেও, বিহারি সংস্কৃতির প্রভাবে বোধহয়, বলা হতো যে তাড়ি স্বাস্হ্যের পক্ষে উপকারী ; ভোর রাতের তাড়ি খেলে মোটা হওয়া যায় । গেঁজিয়ে-ওঠা তাড়ির গন্ধ আমার ভালো লাগত না ; নাক টিপে খেতে হতো । তাড়ি খাবার জমায়েত দেখলে তাই এড়িয়ে যেতুম, যদিও পেছন থেকে ডাক পড়ত, টিটকিরিও মারত বয়স্কদের অনেকে ।
হিন্দি সাহিত্যিক ফণীশ্বরনাথ রেণুর সঙ্গে বসে নানা রকমের নেশা করেছি । ওনার গ্রামের বাড়ি ছিল নেপালের সীমান্তে । বিহারি তরুণ কবি-লেখকরা ওনার বাড়িতে একত্রিত হলে কখনো-সখনো গাঁজা খাওয়া হতো ; গাঁজার শৌখিন ছিলিম ছিল রেণুজীর । তবে উনি ভালোবাসতেন রাম খেতে, নিট রাম । আমি দরিয়াপুরের বাড়িতে যাবার পর উনি বাড়ির কাছে এসে আমার নাম ধরে হাঁক পাড়তেন । রিকশায় উঠে আমরা যেতুম একটা বারে; সেটা ছিল ‘সেন্ট্রাল হোটেল’ নামের পোড়োবাড়িতে । আরও অনেকে এসে পৌঁছোত । রাম খাওয়া হতো । রামও আমার প্রিয় নয় । আমি কম খেতুম ।
একবার উনি ওনার রাজেন্দ্রনগরের ফ্ল্যাটে সাহিত্যিক আড্ডার ব্যবস্হা করেছিলেন, হিন্দি সাহিত্যিকরা যাকে বলতেন ‘গোষ্ঠী’ । এখন এই জমায়েতগুলোকে কী বলা হয় জানি না । গোষ্ঠী জমজমাট হয়ে উঠলে ট্রেতে সাজানো কাটগ্লাসের পাত্রে চলে এলো পানীয় । ফিকে কমলা রঙের, ছোটো এলাচের গুঁড়ো ভাসছে তার ওপর। অপরিচিত গন্ধ । ভোর রাতের তাড়ি ফ্রিজে রেখে তার সঙ্গে মেশানো হয়েছে জাফরানের জল আর ওপর থেকে ছোটোএলাচ!
বলাবাহুল্য যে প্রত্যেকের কবিতাপাঠের পর ‘ওয়াহ’ ‘ওয়াহ’ ধ্বনি উঠছিল । ষাটের দশকের পর উঠে গেছে এই ধরণের কবিতাপাঠের আসর।
3 comments:
খুব ভাল লাগল
অসাধারণ
khub valo laglo.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন