গুচ্ছ কবিতা
গোপাল লাহিড়ী
সনাতন মানুষ
তখনও মোমের গলন কেউ টের পায় নি
পুড়েছে ঘরবাড়ি, পুড়েছে শুকনো পাতার স্তুপ,
রক্ত নদী বইছে কুলুস্বরে.
নিজের দেয়াল সরিয়ে উঠে এলে তুমি
কপালে কালো মেঘের কারুকাজ
ধুসর হয়ে গেল মোহময় বিকেল.
রাত্রি খুলে ফেলেছে তার রুপোলি পোষাক
আলোর মুখ এখন অভিশপ্ত, পান্ডুর,
শামুকের খোলে বিলীন প্রকৃত জীবন.
এভাবেই অন্ধকার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে,
এভাবেই ঝরে গেছে সমস্ত কাঠগোলাপ,
অবশিষ্ট থাকে নি একটিও সনাতন মানুষ.
চতুর্দিকে যত পচে যাওয়া উদ্ভিদ,
যে মন্ত্র বুকের মধ্যে নিয়ে বাঁচব,
তা ঠোঁটে নিয়ে উড়ে গেল সাদাকালো পাখি ।
দুপুরবেলার রাগ রাগিনী
ঠিক দুপুরেই সোনা দীঘির জলে দু একটা ডুব
চোখের সামনে ভেসে ওঠে যেন কবেকার
একটা মস্ত পাহাড়ের উত্তুঙ্গ শিখরের রং বদল,
শুনতে পাই পাইন ও ইউক্যালিপ্টাস জঙ্গলের গান.
আকাশ যেন আজ যা খুশি করার অধিকার পেয়েছে
একফালি অন্ধকার গাছের ছায়া, নরম ঘাস
যেন জমাট রক্তের মধ্যে ভীষণ ভাবে বেঁচে থাকা,
সহজ সরল অঙ্ক কষে বোঝা যায় না.
হাঁসেদের হলুদ পায়ে বেঁধে দিয়েছি যত লুকোনো প্রতিশ্রুতি
মেঘকুয়াশা, গোধুলির রং একদিন প্রাণের বন্ধু ছিল,
ছিল প্রবল উত্তাপ, পায়ে হেঁটে বেড়ানো সবুজ মাঠ,
আগুনে পুড়িয়েছি ছোটবেলা, বড়বেলা, অতন্দ্র প্রহর.
আজ হারিয়ে গেছে দিনের আলোয় ঝলমলে সেই পৃথিবী
আর শোনা যায় না দুপুরবেলার রাগ রাগিনী,
দু কথা, চার কথা, গুণগুণ গান, আর চুপচাপ বসে থাকা
কত কত বার এমনটাই কেন হয়ে থাকে।
ভালবাসার রোজনামচা
যতটা অকৃপণ আকাশ ততই সংকীর্ণ গাছের ছায়া
টুপ টুপ ফুল ঝরা যেন মানুষের আত্মসমর্পণ
অশান্তির তীব্রতায় কেঁপে ওঠে কালরাত্রি.
বৃষ্টি জলে ধুয়ে ধুয়ে পাতারা আজ কী ভীষণ বিবর্ণ !
থচ পোড়া সমস্ত শিকড় বাকড় কোনো বিকল্প খুঁজে পায় না.
মেঘেরা আজ কেন জানি থেকে থেকে ঈষৎ অধৈর্য্য
কবেকার লালমাটি, উষ্ণ জলপ্রপাত, মৌন পাহাড়,
তরতাজা, সুন্দর, আদুরে, উদার সরু সরু শিরা-উপশিরা ,
সুগন্ধী জলের ছোট ছোট কণা, ভিজে চুলের স্নিগ্ধ আমেজ,
সবকিছু মেনে নিয়ে তোমার দিকে নিষ্পলক চেয়ে চেয়ে থাকা.
রোদ্দুর মেখে ঠোঁটে তুমি রাত্রির দুরত্ব অনেক লঘু করেছ,
সময়ের শাসন মানতে মানতে দিন গেল কত সহজে ফুরিয়ে,
এদিকে বিষাদের রেখাচিত্র পেরিয়ে মুখখানি নিয়ে এলে কাছে,
উতলা ডালপালায় লেখা আছে আমার কবিতার প্রতিটি শব্দ
বেমালুম ভুলে গেলে পলক না পড়তে ভালবাসার রোজনামচা.
মায়াবী স্বপ্নপুরী
যেন আর ফিরে যাওয়ার তাগিদ নেই
পুড়ে পুড়ে কালো ছেঁড়া কাঁথা, ঘরবাড়ি
জমিতে এখনো তাজা গণগনে আগুন.
বুকের পাথর ফেলে চলে যায় ঝড়ো হাওয়া.
বিস্তারের সংস্পর্শে আসে না কেন প্রকৃতি
জোয়ার ভাটার চিন্হ জেগে থাকে ভিতরে,
অজান্তে সৃষ্টি করে এক অদ্ভূত কোলাহল
এখনো কিছুটা পিছনে হাঁটে স্বাধীনতা.
ঝাপসা কোনো পাখি বসে আছে গাছের ডালে
আজ আর উড়ে যাওয়ার দরকার নেই
ঠোঁটে ফুটে ওঠে যেন পুরনো স্বরলিপি.
সন্চারিতে ভেসে ওঠে আলো অন্ধকার.
টুপটুপ করে ঝরে যায় পাতা, পুড়ে মরার জন্য
নিজের সবকিছু ছেড়ে ঝাঁপ দিতে চায়,
এদিকে দু'একটা মানুষ এখনো পায়ে হেঁটে
যেতে চায়, ছুঁতে চায় এক মায়াবী স্বপ্নপুরী।
ঝোড়ো সময়
আর কিছু নয়, স্রেফ পাতার ঘেরাটোপে এক নিঃশর্ত ঘুম
প্রকৃতই মানতে পারি না এই শান্তিপর্ব.
সমবেত ঘৃনা, চকচক করে নির্ভুল পাথরের চোখ
একটা মুখের সঙ্গে আরেকটা মুখের কত পার্থক্য.
অশ্রুপাতের পর মুছে যায় শরীরের মালিন্য
তোমার সমর্পিত দুরের মোমবাতি জ্বলে ওঠে.
বাইরে ভিতরে অস্থিরতা, নাকি কিছু নয় !
অনর্গল, স্বচ্ছ, কল্পনার অনিঃশেষ প্রেম উদারতা.
তুমি ফিরে যাও ম্লানমুখে বন্দীশিবিরে
অলংকার ছেড়ে চলে যায় নিঃশব্দে শব্দেরা.
নির্ভুল কবে হবে মেঘহীন ভোরের আকাশ
আর কিছু নয়, ফিরিয়ে আনো ঝোড়ো সময়.
গোপাল লাহিড়ী
সনাতন মানুষ
তখনও মোমের গলন কেউ টের পায় নি
পুড়েছে ঘরবাড়ি, পুড়েছে শুকনো পাতার স্তুপ,
রক্ত নদী বইছে কুলুস্বরে.
নিজের দেয়াল সরিয়ে উঠে এলে তুমি
কপালে কালো মেঘের কারুকাজ
ধুসর হয়ে গেল মোহময় বিকেল.
রাত্রি খুলে ফেলেছে তার রুপোলি পোষাক
আলোর মুখ এখন অভিশপ্ত, পান্ডুর,
শামুকের খোলে বিলীন প্রকৃত জীবন.
এভাবেই অন্ধকার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে,
এভাবেই ঝরে গেছে সমস্ত কাঠগোলাপ,
অবশিষ্ট থাকে নি একটিও সনাতন মানুষ.
চতুর্দিকে যত পচে যাওয়া উদ্ভিদ,
যে মন্ত্র বুকের মধ্যে নিয়ে বাঁচব,
তা ঠোঁটে নিয়ে উড়ে গেল সাদাকালো পাখি ।
দুপুরবেলার রাগ রাগিনী
ঠিক দুপুরেই সোনা দীঘির জলে দু একটা ডুব
চোখের সামনে ভেসে ওঠে যেন কবেকার
একটা মস্ত পাহাড়ের উত্তুঙ্গ শিখরের রং বদল,
শুনতে পাই পাইন ও ইউক্যালিপ্টাস জঙ্গলের গান.
আকাশ যেন আজ যা খুশি করার অধিকার পেয়েছে
একফালি অন্ধকার গাছের ছায়া, নরম ঘাস
যেন জমাট রক্তের মধ্যে ভীষণ ভাবে বেঁচে থাকা,
সহজ সরল অঙ্ক কষে বোঝা যায় না.
হাঁসেদের হলুদ পায়ে বেঁধে দিয়েছি যত লুকোনো প্রতিশ্রুতি
মেঘকুয়াশা, গোধুলির রং একদিন প্রাণের বন্ধু ছিল,
ছিল প্রবল উত্তাপ, পায়ে হেঁটে বেড়ানো সবুজ মাঠ,
আগুনে পুড়িয়েছি ছোটবেলা, বড়বেলা, অতন্দ্র প্রহর.
আজ হারিয়ে গেছে দিনের আলোয় ঝলমলে সেই পৃথিবী
আর শোনা যায় না দুপুরবেলার রাগ রাগিনী,
দু কথা, চার কথা, গুণগুণ গান, আর চুপচাপ বসে থাকা
কত কত বার এমনটাই কেন হয়ে থাকে।
ভালবাসার রোজনামচা
যতটা অকৃপণ আকাশ ততই সংকীর্ণ গাছের ছায়া
টুপ টুপ ফুল ঝরা যেন মানুষের আত্মসমর্পণ
অশান্তির তীব্রতায় কেঁপে ওঠে কালরাত্রি.
বৃষ্টি জলে ধুয়ে ধুয়ে পাতারা আজ কী ভীষণ বিবর্ণ !
থচ পোড়া সমস্ত শিকড় বাকড় কোনো বিকল্প খুঁজে পায় না.
মেঘেরা আজ কেন জানি থেকে থেকে ঈষৎ অধৈর্য্য
কবেকার লালমাটি, উষ্ণ জলপ্রপাত, মৌন পাহাড়,
তরতাজা, সুন্দর, আদুরে, উদার সরু সরু শিরা-উপশিরা ,
সুগন্ধী জলের ছোট ছোট কণা, ভিজে চুলের স্নিগ্ধ আমেজ,
সবকিছু মেনে নিয়ে তোমার দিকে নিষ্পলক চেয়ে চেয়ে থাকা.
রোদ্দুর মেখে ঠোঁটে তুমি রাত্রির দুরত্ব অনেক লঘু করেছ,
সময়ের শাসন মানতে মানতে দিন গেল কত সহজে ফুরিয়ে,
এদিকে বিষাদের রেখাচিত্র পেরিয়ে মুখখানি নিয়ে এলে কাছে,
উতলা ডালপালায় লেখা আছে আমার কবিতার প্রতিটি শব্দ
বেমালুম ভুলে গেলে পলক না পড়তে ভালবাসার রোজনামচা.
মায়াবী স্বপ্নপুরী
যেন আর ফিরে যাওয়ার তাগিদ নেই
পুড়ে পুড়ে কালো ছেঁড়া কাঁথা, ঘরবাড়ি
জমিতে এখনো তাজা গণগনে আগুন.
বুকের পাথর ফেলে চলে যায় ঝড়ো হাওয়া.
বিস্তারের সংস্পর্শে আসে না কেন প্রকৃতি
জোয়ার ভাটার চিন্হ জেগে থাকে ভিতরে,
অজান্তে সৃষ্টি করে এক অদ্ভূত কোলাহল
এখনো কিছুটা পিছনে হাঁটে স্বাধীনতা.
ঝাপসা কোনো পাখি বসে আছে গাছের ডালে
আজ আর উড়ে যাওয়ার দরকার নেই
ঠোঁটে ফুটে ওঠে যেন পুরনো স্বরলিপি.
সন্চারিতে ভেসে ওঠে আলো অন্ধকার.
টুপটুপ করে ঝরে যায় পাতা, পুড়ে মরার জন্য
নিজের সবকিছু ছেড়ে ঝাঁপ দিতে চায়,
এদিকে দু'একটা মানুষ এখনো পায়ে হেঁটে
যেতে চায়, ছুঁতে চায় এক মায়াবী স্বপ্নপুরী।
ঝোড়ো সময়
আর কিছু নয়, স্রেফ পাতার ঘেরাটোপে এক নিঃশর্ত ঘুম
প্রকৃতই মানতে পারি না এই শান্তিপর্ব.
সমবেত ঘৃনা, চকচক করে নির্ভুল পাথরের চোখ
একটা মুখের সঙ্গে আরেকটা মুখের কত পার্থক্য.
অশ্রুপাতের পর মুছে যায় শরীরের মালিন্য
তোমার সমর্পিত দুরের মোমবাতি জ্বলে ওঠে.
বাইরে ভিতরে অস্থিরতা, নাকি কিছু নয় !
অনর্গল, স্বচ্ছ, কল্পনার অনিঃশেষ প্রেম উদারতা.
তুমি ফিরে যাও ম্লানমুখে বন্দীশিবিরে
অলংকার ছেড়ে চলে যায় নিঃশব্দে শব্দেরা.
নির্ভুল কবে হবে মেঘহীন ভোরের আকাশ
আর কিছু নয়, ফিরিয়ে আনো ঝোড়ো সময়.
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন