মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৪

কবিতা - জয়দীপ মৈত্র

তিনটি কবিতা
জয়দীপ মৈত্র



বাগান

এখন যে ঘরে থাকি
বহু আগে এখানেই একটা বাগান ছিলো

দরজার জায়গায় তখন জানালা
আর বিছানার বদলে প্রচুর গাছ
ওই জানালার নিচেই আমি প্রথম ঝুলন পেতেছি
একটা একটা করে বাবা চিনিয়েছে পাখী

দিনরাত্রি বাগানের আলো
এসে পড়তো আমাদের খাবার ঘরে

টেবিলে এত ওষুধ-পত্র রাখা থাকতো না
দিব্বি নিশ্চিন্তে বসে
দুধের গেলাস নিয়ে আলোছায়া খেলতাম

আজ এত গরম ! এত তেষ্টা !
এ মেঝেতে ফাটল ধরাতে
বাগানের শীর্ণ দীর্ঘশ্বাস কতটুকু পারে ?

মনে পড়ে , উড়ন্ত চড়ুই ঘরে ঢুকলেই
তাড়াতাড়ি ফ্যান বন্ধ করে দিতো মা
এমনই চমত্কার হাওয়া খেলতো ঘরে


ভাস্করকে

আপনার সঙ্গে কখনও দেখা হয়নি , অথচ
বহুবার আমার ঘরে এসেছেন
সেই সময় বাড়ি ছিলাম না
এই শহরের গলিতে গলিতে
ছেঁড়া পর্দাগুলো নিয়ে
খুঁজছিলাম সেলাই পারদর্শী লোক
আমার বিছানা বালিশ কোনদিন স্পর্শ না করেও
প্রত্যেকটা বিনিদ্র রাত আপনার মুখস্থ
এরপর সিঁড়িঘর বেছে নিয়েছেন
কাউকে যা প্রকাশ করতে পারিনি
সেইসব ভাঙা গীটার , বইয়ের তাক আর
চেয়ারের অকেজো বাতিল এক পায়ার গল্প
আপনি আঠা হাতে বসে বসে শুনেছেন

যাপন আসলে কি ভয়ংকর এক বীজ
আমি বুঝেছিলাম
দুটো মৃত বাগান কাছাকাছি আসার সময়

কি অদ্ভুতভাবে জানতেন আপনি
রিয়া চলে যাওয়াকালীন
উভচরের রক্তমাখা ছুঁচ আমাকেও ফোটানো হয়েছিলো
যখন শরীর পুড়ে যাচ্ছে চোখের সামনে , আর
কয়েক ফুট দূরেই আপনি কেরোসিনে গড়াগড়ি খাচ্ছেন
চিঠি না আসতে আসতে দুজনের দীর্ঘশ্বাস
মিলিয়ে ভরাট হচ্ছে যুগের ফাটল

কাঠবেড়ালির বাদাম আপনি পেয়েছিলেন কিনা
জানিনা ভাস্কর
কিন্তু সেই গাছের দীর্ঘ ছায়া শহরে নেমে আসলে
তার নিচে দাঁড়িয়ে
বাবা মা আর রিয়াকে আজও
আমার সম্পর্কে নিচুস্বরে কথাবার্তা বলতে শোনা যায়


শিরোনামহীন

যা কিছু দেখি , তার ভেতর
একটা করে পানকৌড়ি মরে পড়ে আছে
এ হ্রদে ঝাঁপ দিয়ে
আমি তুলে আনছিলাম শ্রেষ্ঠ আগুনের সূত্র
কোনজন্মে কামড়ে দিয়েছিলো
সেই জ্বালা সইতে সইতে শীতকাল
সারাজীবন আমার ঠোঁট ফেটে রক্ত গড়ায়
রক্তের দাগ লেগে থাকে চাকার গভীরে

যে খনিতে অন্ধকার ছাড়া আর কোনো ধাতু নেই
তার ভেতরে ঢুকে বসে থাকি

চিহ্ন হারিয়ে তার দেহগন্ধে ধাঁধাময় শহর
লম্বা ডাল দিয়ে শেষরাতে আমি উস্কে দিচ্ছি আগুন

দু-একটা বিষণ্ন চামড়া উড়ে যায়

দু-একটা কাঠ , আমি ছুঁড়ে দিই কবিতায়