ধর্ম
অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
ছেলেবেলা থেকে আমার মা-কে
দেখছি, বিবিধ ঈশ্বরের পুজোয় নিয়োজিত। বিবিধ তার উপবাস। বিবিধ আচার। বিবিধ তার
বাজার। আমার আর আমার বাবার এ’ ব্যাপারে যাবতীয়
দৃষ্টিক্ষেপ ছিল প্রথমতঃ দ্বিতীয়তঃ তৃতীয়তঃ এবং শেষ পর্যন্ত প্রসাদের দিকে। মা
নিজে আমাদেরকে কোনদিনও জোর করেননি পুজো করার জন্য। আমরাও তাঁকে জোর করিনি পুজো
না-করার জন্য। তো, এহেন নাস্তিক সন্তান যখন তার বাবার মৃত্যুতে মুখাগ্নি এবং
শ্রাদ্ধাদি কর্মে অংশ নিল না, তখন কিঞ্চিন্মাত্র বুঝেছিলাম ‘সমাজ’ কি চিজ! হুঁ হুঁ... তুমি
যা জিনিস গুরু! যাই হোক, গো অ্যাজ ইউ লাইকে সকল দেশের রাণি সেজে ফার্স্ট হওয়া
আমাদের এই দেশটি সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। অর্থাৎ ভারত রাষ্ট্রের কোনো
ধর্ম নেই (হো হো হো হো হা হা হা হা হি হি হি হি !!!!! :D :D)। ভারত
রাষ্ট্র কোনো ধর্মকেই তার স্বীয় ধর্ম ব’লে স্বীকার করে না। অন্তত
সংবিধানগতভাবে ইহাই সত্য। তবে, (এই যে ‘তবে’, এইখানেই আইনের ফাঁকে
ফাঁকে যত গল্প) এই রাষ্ট্র তার সমস্ত নাগরিককে কিন্তু কোনো না কোনো ধর্মীয়
আইডেন্টিফিকেশনেই চিহ্নিত ক’রে থাকে। সে আমি কোনো ধর্ম
মানি আর না-ই মানি। এই দেশ আমাকে হিন্দু বলেই জানে। এবং মানে। তোমাকে মুসলিম।
উহাকে খ্রিষ্টান। এ’ ব্যাপারে আমার বা তোমার বা উহার
আপত্তির পরোয়া সে করে না। করতে বাধ্যও নয়।
ঈশ্বর বা ভগবান প্রসঙ্গে দুটো ঘটনা আমার মনে অবধারিতভাবে এসে যায়। প্রথমত, আমার প্রথম প্রেমিকাটির বাবার নাম ছিল ভগবান। আমি তখন মাধ্যমিক। সে চার বছরের বড়ো আমার চেয়ে। সেই মেয়েটি তখন হাতে ধ’রে, ওহ্ সরি, ঠোঁটে ধ’রে শেখাচ্ছে কি ক’রে চুমু খেতে হয় ইংলিশ ফিল্মের
মতো। কি ক’রে নাক আসে না মাঝখানে। কিভাবে জিভ আর
দাঁতের কি বিরাট ভূমিকা। তখন, সেই সময়ে, সে বয়েসে, এই ভগবান নামের মানুষটি বোঝাই যাচ্ছে ভগবানের মতোই 'কখন কি ঘ'টে যায় কিচ্ছু বলা যায় না' টাইপের ভয়ের ব্যাপার ছিলেন এই মূঢ় বালকের কাছে। ভগবানের দ্বিতীয় উপাখ্যানটি বেশ উপাদেয়। বেশ কয়েক বছর আগে টিভিতে
(হ্যাঁ, তখনও আমি টিভি দেখতাম) মীর সঞ্চালিত হাস্যরসের একটি প্রোগ্রামে এক ইশকুল
শিক্ষককে এটা বলতে শুনেছিলাম। নীল আর্মস্ট্রং চাঁদ থেকে ফিরে এসেছেন। পৃথিবী জুড়ে সম্বর্ধনা পাচ্ছেন। পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নে তখন ব্রেজনভের আমল। উনি আমন্ত্রণ করলেন আর্মস্ট্রংকে। রাশিয়ায়। ডিনারে বসেছেন দুইজন। ডিনার শেষে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। বৈঠকে ব্রেজনেভ জিগ্যেস করলেন আর্মস্ট্রংকে—
--'আচ্ছা, মিস্টার আর্মস্ট্রং, আপনি তো অনেক ওপরে গেছিলেন। আপনি কি দেখা পেয়েছেন তাঁর?'
-'কার বলুন তো !'
--'গড ! যীশাস !'
--'ওঃ ! আপনি বিশ্বাস করবেন না মিঃ ব্রেজনেভ, আমাকে একটুও খুঁজতে হয়নি। আমি শুধুমাত্র পৃথিবীর গ্র্যাভিটেশান লেভেলটা পেরোতেই তাঁর দেখা পেয়েছি। কী অসাধারণ তাঁর রূপ ! কী অনিন্দ্যকান্তি সে জ্যোতি !'
--'শ্সসসসসস্.... আসতে আসতে, আসতে বলুন মিঃ আর্মস্ট্রং। কেউ শুনতে পাবে। আমি জানি উনি আছেন, কিন্তু কাউকে বলবেন না প্লীজ'
আর্মস্ট্রং ফিরে এলেন দেশে। কিছুদিন বাদে ওঁকে আমন্ত্রণ জানালেন ভ্যাটিক্যান সিটির পোপ। ডিনারে বসেছেন দুইজন। ডিনার শেষে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। বৈঠকে পোপ জিগ্যেস করলেন আর্মস্ট্রংকে--
--'আচ্ছা, মিস্টার আর্মস্ট্রং, আপনি তো অনেক ওপরে গেছিলেন। আপনি কি দেখা পেয়েছেন তাঁর?'
-'কার বলুন তো !'
--'গড ! যীশাস !'
--'ওঃ ! আপনি বিশ্বাস করুন ফাদার ! আমি তন্ন তন্ন ক'রে সারা মহাকাশ তাঁকে খুঁজেছি। কিন্তু কোত্থাও তাঁর দেখা পাইনি। কোত্থাও না !
--'শ্সসসসসস্.... আসতে আসতে, আসতে বলুন মিঃ আর্মস্ট্রং। কেউ শুনতে পাবে। আমি জানি উনি নেই, কিন্তু কাউকে বলবেন না প্লীজ'
২.
আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন একটি বই লিখেছিলেন 'হিন্দু ধর্ম' নামে। পেঙ্গুইন থেকে বেরিয়েছিল বইটি। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের অনুরোধে এই বইটি লিখেছিলেন ক্ষিতিমোহন। সাম্প্রতিক কালে বইটি ‘আনন্দ’ থেকে বেরিয়েছে, অমর্ত্য সেন-এর একটি অনবদ্য ভূমিকা সহ। মাসখানেক আগে পড়ছিলাম বইটি। এবং মাত্র ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পড়া হয়ে গেল এত বিস্তৃত বিষয় নিয়ে লেখা বইটা। হতাশই হয়েছিলাম প'ড়ে। অচেনা অজানা দিকে কেন আলো ফেললেন না হিন্দু ধর্ম নিয়ে এর'ম পণ্ডিত একজন মানুষ ! প্রতিটা পাতাই পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল গ্র্যাজুয়েশন লেভেলে ইণ্ডিয়ান ফিলোসফিতে পড়ে এসেছি। না, বইটির নিন্দে করার জন্যে এত কথা লিখছি না। আমার বিষয় অন্য। সেদিন আমার একটি পোস্টে আমারই এক সহনাগরিক যখন লিখলেন যে ''আমার আপনার দেশের বিপুল ভাবে জিতে আসা সরকার বজরং দলের নয়, নয় কোন পরদেশী ভাবধারায় আধারিত কমিউনিস্ট দলের । এ হল সম্পূর্ণ ভারতীয় ভাবধারার বহুজাতিক, বহুভাষিক ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার।''
তখন এই সহনাগরিক বন্ধু কথিত 'ভারতীয় ভাবধারা'টির দিকে আমি কিঞ্চিৎ মনোযোগ দিই। এবং ‘ভারতীয় জনতা’র দিকেও। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ায় দেখতে পাইনা
গণতন্ত্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ-এর বাইরে ফ্যা ফ্যা ক’রে ঘুরে বেড়ানো
সংখ্যালঘিষ্ঠকে। ওদিকে 'ভাব'
এমন একটি ব্যাপার যে সত্যিই তার ‘ধারা’টি খুঁজে বের করা বড়োই মুশকিল আমার মতো নিতান্ত আনাড়ীর পক্ষে। বিষয়টা কিন্তু 'পরদেশী (এই ‘পরদেশী’ শব্দটা শুনলেই কানে বাজতে
থাকে ‘পরদেশী পরদেশী যানা নেহী মুঝে ছোড়কে... মুঝে ছোড়কে...’) ভাবধারায় আধারিত কমিউনিস্ট দলের'
কথাটি নিয়ে নয়। কেননা শল্যচিকিৎসা থেকে ফেসবুক এর'ম পরদেশী অনেক আছে। বিষয়টা লুকিয়ে আছে ক্ষিতিমোহন সেনের ঐ আশ্চর্য বইটিতে। এই যে বৈদিক ধর্ম,
সোজা বাঙলায় যা হিন্দু ধর্ম,
তা'
যে কত প্রকারে ইসলাম থেকে নিয়ে নিজেকে পুষ্ট করেছে (মানে? সেকি? ছিঃ! কি যা তা
কথা), ঠিক যেভাবে প্রকৃতি ও সমাজ বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মে ঘটে,
সেই নেওয়াটা কবীরের থেকেই হোক কি সুফী থেকে,
আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন সেই 'দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে'র 'ভারতীয় ভাবধারা'টিকেই কত বছর আগে কি জরুরি এবং সহজ ভঙ্গিতে লিখেছিলেন বইটিতে। এই ধর্মের পরতে পরতে কত জায়গায় যে সেই নরম আদরের দাগ লেগে,
তা'
রাজনীতির নিয়মে জানতে দেওয়া যায় না,
বুঝতে দেওয়া যায় না মানুষকে। আজ বড্ড প্রাসঙ্গিক একটা বিষয় উনি অতদিন আগে কিভাবে টের পেলেন জানি না,
জানি না লালন শুনে ভাসে কেন বুকের আঙিনা...
৩.
পড়ছিলাম ইরানের ফারসি ভাষার লেট নাইণ্টিজের কবি মরিয়াম হুলিহ্-এর কবিতা। মাত্র সতেরো বছর বয়েসে এই মেয়েটা পায়ে
হেঁটে ইরান থেকে গ্রিসে পালিয়ে গেছিল। একা। বেআইনি অনুপ্রবেশ। সারারাত পড়ছিলাম ওঁর লেখাগুলো। আমি এটা দেখেছি, যখন যেরকম মানসিক অবস্থা থাকে তখন অনেকটা সেইরকমেরই সঙ্গত ও টিউনিংস্ নিয়ে বই বা লেখাপত্র হাতে চলে আসে যেন কিভাবে। মরিয়ামের লেখাগুলো পড়ার সাথে একইসঙ্গে পড়ছিলাম পোস্ট রেভোলিউশনারি ইরানিয়ান থিয়েটার নিয়ে একটা বই। কি ক'রে একটা ধর্মীয়ে অনুশাসন ভিত্তিক দেশে একজন কবি কবিতা চর্চা করেন,
থিয়েটার কর্মীরা কাজ করেন কি ক'রে সেই থিওক্র্যাসির ভেতরে। আমার দেশকে কোন্ দিকে নিয়ে যাবে এই বজরং দলের সেনা। আমার আজ বড্ড মনে পড়ছে গ্রাহাম স্টুয়ার্ট স্টাইনস্কে। 'শোনো গ্রাহাম স্টুয়ার্ট স্টাইনস্ আমি সংখ্যালঘুর দলে'। শুধু তো ধর্মে নয়,
একজন চিন্তাশীলও সংখ্যালঘু এই অচিন্ত্যনীয় সময়ে। সেক্স্যুয়াল ওরিয়েন্টেশনে আমি যদি প্রজননমুখী না হই,
তাহলেও তাই-ই। যাই হোক,
কি কথা থেকে কি কথায় চলে এলাম। দেখতে পাচ্ছি মরিয়ামের লাইনগুলো কিছুতেই দেশ-কাল-সীমার ভিসা-পাসপোর্ট মানছে না... এও কি তাহলে অনুপ্রবেশকারী ! একেও তাহলে ঘাড়
ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হোক তার নিজের দেশে।
‘‘...religion spits all over my bladder non-stop ...
or is it that my blood pressure is down?...
...
fear and stupidity cannot produce babies
....
The stupidity of this dumb peace is the context for my undoing
....[...]
When the city square has lapped up the city along with the evening tea,
The sugar cube of the people of gangrene
Dense in its constipation,
My spit-urine is erupting
Where is the toilet?
[...]
...Wow!
As the incident was becoming lawful
It was turning into a son of a bitch too!
Reality turns the torrent of your babies into a droplet...
And the desert is still the desert...
As the incident was becoming lawful
It was turning into a son of a bitch too!
Reality turns the torrent of your babies into a droplet...
And the desert is still the desert...
[...]
...Dear leader!
How can I ever trust you?
You don't look at all like thermodynamics
Your mouth is filled with pellets
And black holes fall out of your groin
No! Don’t touch me
If only the children grew up
an odd shoe would ever be good enough for you''
...Dear leader!
How can I ever trust you?
You don't look at all like thermodynamics
Your mouth is filled with pellets
And black holes fall out of your groin
No! Don’t touch me
If only the children grew up
an odd shoe would ever be good enough for you''
এটা সত্যিই ভারতের, থুড়ি ভারতবর্ষের বড়ো,
না না,
বি-রা-ট বড়ো এ্যাচিভমেন্ট। যে দল এবং ব্যক্তি রামাল্লা-র মধ্যে ভেদরেখা নির্মাণ করেন,
যে দল এবং ব্যক্তির প্ররোচনায় ও প্রযোজনায়
২০০২-এ একটি সম্প্রদায়ের ওপর স্টেট স্পনসর্ড ওয়েল-অর্গানাইজড সন্ত্রাস (দাঙ্গা
বলছি না কিন্তু। গুজরাটের ঘটনাকে আমি কখনোই সমাজবিজ্ঞানের চোখে দাঙ্গা বলতে
পারি না। ওটা সন্ত্রাস।) চালানো হয়,
গর্ভবতীর পেটে তলোয়ারের L
চালিয়ে ভ্রূণ বের ক'রে জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে তাঁরা রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন,
যে দল এবং যে ব্যক্তি বাবরি...... থাক,
আর বলছি না,
বলতে ভালোলাগছে না। শুধু মনে হচ্ছে মাত্র বারো বছর এতো কিছু ভুলিয়ে দেবার জন্যে
যথেষ্ট হল কি ক'রে... যাই হোক,
আমার মনে হয় নিঃসন্দেহে এটা সত্যিই ভারতের, ধুৎ আবার ভুল বলছি,
ভারতবর্ষের বড়ো,
দেখেছেন,
আবার ভুল বললাম,
বি-রা-ট বড়ো এ্যাচিভমেন্ট। এবং ঐতিহাসিক ঘটনা তো বটেই। কিন্তু 'ঐতিহাসিক'-এ যে 'হাসি'টা আছে তা' কিন্তু আমি এটা দেখে কিছুতেই
চেপে রাখতে পারছি না। আর, সুপ্রীম কোর্টের রায়ের কথা ব'লে আবার হাসির উদ্রেক করবেন না প্লীজ। জানি, এবারে কথা উঠবে এ'
দেশে এর'ম সন্ত্রাস তো আরও বহু বহু হয়েছে। এ' আর নতুন কি!! আগেও দাঙ্গা
হয়েছে, সন্ত্রাস হয়েছে,
যাঁরা করিয়েছেন তাঁরাই ক্ষমতায় বসেছেন,
তাহলে এটাকেই হাইলাইট করাটা কি ধরনের
পলিটিক্স!! তারপরে গুগুল ঘেঁটে এ যাবৎ ভারতে দাঙ্গার খতিয়ান তুলে আনতে কতক্ষণ। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আমার প্রতিটির
বিরুদ্ধেই। 'গীটার আমার গরগর করে রাগে'
এই প্রতিটির বিরুদ্ধেই। আমার সমস্যা হয় না এই সবগুলোরই প্রতিবাদ করতে। কেননা আমি জানি 'এ বাদী বারণ ও বাদী কারণ /
সরকারী খুন আইনসিদ্ধ / যৌথবাহিনী রাষ্ট্রকাহিনি/ রাষ্ট্র মানেই অপাপবিদ্ধ।'
আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দিয়ে ভোটে
জিতিয়ে ক্ষমতায় আনবো আবার তাদের খিস্তিও করবো,
এটা দ্বিচারিতা। আমি পারছি না উর্ধবাহু হয়ে আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে গাইতে। প্রত্যক্ষভাবে এবং স্বেচ্ছায় আমি অংশ নিই না এই ভোট পলিসিতে এবং
ভোটদানেও, আমার সমস্যা হয় না এই সবকটা
ঘটনারই প্রতিবাদ করতে। যাঁরা ইতিপূর্বে এ দেশে দাঙ্গা করিয়েছিলেন,
তাঁদেরকে এই গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ঐ
শুয়োরের খোঁয়াড়ে পাঠাবার জন্যে ক্ষমতায় এনেছিলেন তাঁরাই,
যাঁরা আজ এই মানুষটিকে এবং দলটিকে ক্ষমতায়
আনলেন, এবং এনে নৃত্য করছেন। কিন্তু 'কোথায় যেন মানুষ কাঁদে,
কোথায় যেন কাঁদছে হায়,
মানুষ বড়ো ভয় পেয়েছে,
মানুষ বড়ো নিঃসহায়'
এটা শুনবার মতো কান এই গর্ভঘাতী
নেতা-নেত্রী বা দলগুলোর আছে ব'লে কারোর সে বিশ্বাস থাকতে
পারে, আমার নেই। আমার যেটা আছে, তা'
হল,
শরীরে যত বেদনা সাড়া দেয়,
সব দেয় বাঁ-দিক জুড়ে। চোখে একটা কিছু, সেটা বাঁ চোখেই। পায়ে কিছু হল, তো বাঁ পায়েই। হাতে চোট পেলাম তো সেটাও বাম। এই রে! বাম বললাম ব'লে আবার সিপিএম ভেবে নিয়েন না। হৃদয় ভাঙলেও বাঁ দিকেই চিনচিন। কি? চীন বললাম ব'লে এবারে কি মাও ভাববেন?
আমাদের দেশে রাজনৈতিক আচরণের ক্ষেত্রে
অন্যতম সমস্যা হল এটাই, আমি যদি বর্গা আইনের সাপোর্টে
কথা বলি তাহলে আমি সিপিএম। আমি মরিচঝাঁপি বা
নন্দীগ্রাম হত্যার নিন্দে করলে কং বা তৃণ। আমাকে যেন এই চতুষ্কোণের এক কোণ ধ'রে ঝুলতেই হবে !
'পক্ষ নাও পক্ষ নাও কৃষ্ণ কিম্বা শুক্ল
বুদ্ধি যাদের তীক্ষ্ণ তারা ঠিক শিবিরেই ঢুকলো''
'পক্ষ নাও পক্ষ নাও কৃষ্ণ কিম্বা শুক্ল
বুদ্ধি যাদের তীক্ষ্ণ তারা ঠিক শিবিরেই ঢুকলো''
৪.
মাসতিনেক আগে কবি স্বদেশ সেন মারা গেছেন।
তারপরে আরও একটা আইপিএল টুর্নামেন্ট হয়ে গেছে। হয়ে গেছে পৃথিবীর বৃহত্তম
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্বাচন। এবং তার মার্কস শিট হাতে নিয়ে নতুন একটি সরকার।
তারপরে ফুটবল বিশ্বকাপ। এসবের মধ্যেই গার্সিয়া মার্কেজও চলে গেলেন। চলে গেলেন মায়া
অ্যাঞ্জেলিউও। পত্রিকাগুলোতে শুরু হয়ে গেল স্বদেশ সেন সংখ্যা। মার্কেজ সংখ্যা।
মায়া অ্যাঞ্জেলিউ সংখ্যা। আমরা যাঁরা লেখলিখি করি, সম্পাদকদের কাছ থেকে আমন্ত্রণ
আসতে শুরু হয়ে গেল এঁদের নিয়ে গদ্য লেখার। স্বদেশ সেনকে নিয়ে গদ্য লিখছেন কবি।
লিখছেন মার্কেজ নিয়ে। মায়াকে নিয়েও। তাঁকে ফুটবল নিয়েও লিখতে হবে গদ্য । সম্পাদক
বলেছেন। ফেসবুকে মার্চ মাস জুড়ে প্রচুর পোস্ট চোখে প’ড়েছে ‘রাখা হয়েছে কমলালেবু’ কিম্বা ‘মাটিতে দুধের কাপ’ বই থেকে কোট ক’রে। ওহ্, সরি, বলতে ভুলে গেছি, এই বই দুটো কবি স্বদেশ
সেন-এর দুটি কবিতার বইয়ের নাম। এরপর এপ্রিল-মে জুড়ে ভোটের যুক্তি। জোটের তক্কো।
তারপরেই তো কেকেআর না পাঞ্জাব। আইপিএল-এর এই পোস্টগুলো শেষ হ’ল ইডেন ঠ্যাঙানির নিন্দে দিয়ে। তারপরেই আতাকেলানের মতো
ব্রাজিল না জর্মানি না আর্জেন্টিনা নাকি আর্খেন্তিনা (এই আরেক মহা বিপদ। কিছু কিছু
স্প্যানিশ জানা, ওহ্, আবার ভুল বললাম, ওটা তো এস্পানিওল, বিদ্বজ্জন আছেন যাঁরা
ঐ-দেশীয় উচ্চারণটিই করবেন। কেন না সেখানে এরকমই উচ্চারণ হয়। বোঝো! আর সারা দেশ যখন
‘অর্জুন’কে ‘আরজুন’ বলে, মহারাষ্ট্রীয় ‘আক্শায়’কে আমরা বাঙালিরা দিব্যি ‘অক্ষয়’ বলি, তখন? আমার গাঙ্গেয় উপত্যকার এই অর্বাচীন জিভে বাপু
‘জ’-কে ‘খ’ বলার কোনো ঐতিহ্য নেই, এবং আমার জিভে কোনো দারোয়ান
নেই।) এই নিয়ে চলছে এবং চলবে আরো কিছুদিন স্টেটাস কমেন্ট। এসবের মাঝে খালি দিন
দুয়েক মার্কেজ আর মায়া অ্যাঞ্জেলিউ উঠে এসেছিলেন দু-চারলাইন ক’রে। নেমে এসেছিলেন ওঁরা পণ্ডিতপ্রবরদের বইয়ের তাক থেকে।
কিন্তু, এই এতসবের মধ্যেও জগতে আনন্দযজ্ঞে ইতিমধ্যে আষাঢ় এসেছে। আবার এসেছে আষাঢ়।
নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে দেখতে পাচ্ছি দেবব্রত বিশ্বাসের সেই অমোঘ ঢ-এ শূন্য ‘র’-এর উচ্চারণ নিয়ে থমকে আছে মেঘ জানলার বাইরে। এবং ঝড় উঠেছে....। ঝড় উঠেছে... এই কথাটা মুখ দিয়ে বেরোলেই
কানের পেছন থেকে হেমন্তের গলাটা ভেসে আসতে থাকে আমার.... অদৃশ্য ঝাড়বাতিগুলো এদিক
ওদিক এলোপাথাড়ি দুলতে থাকে.... সেদিন ঝড় উঠেছে কোলকাতায়... আকাশ
গোলাপিবর্ণ... গাছেরা নাচছে... আমি মনে মনে বলছি স্বাগত আজবৈশাখী... দৌড়ে পাঁচতলার ছাদে গেলাম...। গিয়ে
দেখি আকাশ ভরা দুধে কে ছেটালো আলতা, এভাবে? কে করলো এত এত অপচয়! না, সত্যিই আমি ব্রাজিল আর্জেণ্টিনা স্পেন চীন ভারত পাক ভুটান মায়ানমার ইন্দোনেশিয়া
আফঘানিস্তান কারও পক্ষেই নই... আমি শুধু ঐ রংবাজ রংমিস্ত্রীটার
পক্ষে... যে এই আলতা ছেটালো আকাশ-দুধে ... ঈশ্বর ছবি তুলছিলেন তখন নিজেরই
এক্সিবিশনের... আর আমি একটু পোজ দেব না !... হাতে তার কত মেগা পিক্সেল? পাঁচতলার ছাদের এ দিক থেকে বালি ব্রিজ, বিদ্যাসাগর সেতু, হালকা চিলতে হাওড়া ব্রিজ... ওদিকে কাশীপুর
গানস্ ফ্যাক্টরি... এ'
পাশে আদ্যাপীঠ,
দক্ষিণেশ্বর... পেছনে আই.এস.আই...
প্রশান্ত মহালানবীশ, বিজ্ঞানী জে.বি.এস. হ্যাল্ডেন হাত ধ’রে পাশাপাশি আম্রপালীতে ঘুরছিলেন কি তখন?
আমি দেখি নি ... দেখছিলাম কোলকাতা কি
প্রেমে ও পুলকে স্নান করছে প্রসন্ন....। কি ভাগ্যিস এই ঝড়ের কোনো ধর্ম নেই। দলও
নেই। রাষ্ট্রও নেই। আমিও নেমে এলাম তখন ছাদ
থেকে.. যাই, কচুরি খেয়ে আসি ভিজতে ভিজতে...
......................................................................................................................................
চিত্রঋণ : কোরিয়ার ভাস্কর্য শিল্পী জুয়াং চোই-এর একটি ভাস্কর্য।
1 comments:
কবিতার শেষ পংক্তিটি প্রতিটি নেতাকে পুরানো জুতোয় পা গলাবার ইঙ্গিত উপহার দিচ্ছে না তো? সোমালিয়ার মহিলা কবিদের নিয়ে একটা লেখা অনুবাদ করতে গিয়ে দেখেছি, বারে বারে নেতারা মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আর তার সবচেয়ে বড় শিকার দেশের মেয়েরাই। একের পর এক অভ্যুত্থান হয়, গয়নাগাঁটি অস্ত্রশস্ত্র পোশাকআশাক এমনকি ঘরের পুরুষটিকে পর্যন্ত দিয়ে দেওয়া সংগ্রাম সংগ্রামান্তে নারীকেই বিট্রে করে, লিভ দেম লিটরালি পেনিলেস। এভাবেই ক্রমশঃ রাষ্ট্রনায়ক থেকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই ক্রমশঃ কলম উঠে আসে কবিদের হাতে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন