দীর্ঘ কবিতা - রায়ান নূর

রায়ান নূর

অমৃত ভারতি


১.
গরুর পিয়াস জাগে হিমফোয়ারায়
আর্শি জলে দেখে যখন নিজ চেহারা
ভীত হয়ে ছুটে যায় ঘোলা নর্দমায়
সেই জল পিয়ে নাকি প্রভুর পেয়ারা?


২.  
ছাগল চড়ে সবুজ মাঠে
দেখে আকাশ নীল
তাকেই ঘাসের সাগর ভাবে
হয় না সাধের মিল ৷

৩.

মহাজ্ঞানের বারান্দায়
বিজ্ঞজনেই শুধু যায়
সকলি বোঝে ঠিক কা ঠিক
মুল বোঝে সব কো বেঠিক ৷

৪.

ক্যাফেতে জমিদার
খাবার খায় হাতে
ভদ্রসন্তানে দেখে
মুরগীরাণ প্রাতে ৷

৫.

ব্যাংকের ম্যানেজারে হররোজ শনিবারে
চাকরের সাথে কিছু বিড়ি খায়
সমাদরে ওঠে ফুলে সিগারেট জ্বালে পরে
প্রতি প্যাকে চাকরের দিন যায় ৷

৬.
মানুষ তোমার জাত ভাই
কি হিন্দু কী মুসলমান
ধুকবে কেউ সামনে তোমার
হবে তোমার অসম্মান ৷

৭.
পতিতালয়ে থাকলে যদি
বেশ্যাবৃত্তি হয়
ঘরেই যখন পরকীয়া
জাতে তবে আর কী রয় ?

৮.
হাজার টাকার শাড়ি কিনে
এক টাকাতেই ফকির হও
কীসের বড়াই দেখাও তুমি
অন্যরে তুমি ফকির কও ৷

৯.
গোলাপবাগে ফুল ছিল
দাম নিয়েছো সিকি 'আনা
এখন তাতে উঁই ধরেছে
ভ্রমরে তো তাও আসেনা ৷

১০.
হাঁটু পানিতে মাছ ধরেছ
নদীর কদর বুঝবে কী
গভীর জলে লড়াই কর
বুঝবে কেমন জিন্দেগী ৷

১১.
আকাশ যখন মেঘে ভরা
নদীতে জল থই থই
কুল বেয়ে সব উছলে পড়ে
খরায় তার জোয়ার কই ৷

১২.
মরুভূমির বালির ঝরে
বুকটা করলে খাড়া
শরীর শুধু বিবশ হল
পারলেনা তো নড়া ৷

১৩.
রাজা যখন সিংহাসনে
মূল্যবোধের গান গাও
নিজেই যখন রাজা হলে
বিবেকটা কি দেখতে পাও ৷

১৪.
হাসতে তোমার বছর গেল
কাঁদার সময় পেলে কৈ
কেঁদেই একটু দেখো তুমি
জগতটাতো হাসি রৈ ৷

১৫.

টুপিতে যদি লোক চেনা যায়
ধুতি তাতে মামুলি
পদ্য যারা মন্ত্র বানায়
তার কাছে সব আধুলী ৷

১৬.
সংস্কৃত যদি হিন্দুয়ানী
আরবী কি এতই সোজা
ফারসী না হয় পরে দেখ
সবখানেতে তুমিই খোজা ৷

১৭.

নিজের ঠোঁট পর কে দিয়ে
অন্যের নেকাবের খবর নাও
খোঁজ নিলেই জানবে তুমি
তোমার পেটে কয়টি ছাও ৷

১৮.
হাটে বসে সাপের খেলা
নাম না জানা শিঁকর সব
বিদ্বান যদিও হলে তুমি
শিঁকর বলে নিরেট গর্দভ ৷


১৯.

আজরাইল এল বলে
ভাবখানা কেন এমন
হাড়ির ভাত তোলাই রবে
সিদ্ধ চাল ফুটবে তেমন ৷

২০.

দুইয়ে দুইয়ে চার হয়
শাস্ত্র বলে কথা
চারটাকে এক বানাও
বুঝবে কেমন ব্যথা ৷

২১.
খাঁচার পাখি উড়ে গেলে
কারও বুঝি কষ্ট লাগে
নিজের খাঁচায় খেয়াল রাখ
পাখি যেন না যায় আগে ৷

২২.

সাধু শুনায় প্রেমের বানী
পন্ডিতে দেয় যুক্তি
শিষ্য এখন পাগল পারা
কার কাছে হয় মুক্তি ৷

২৩.

পুকুরে আজ হাঁস রাজা
বনে যদিও শেয়াল
ঘরে তোমার গিন্নী রাজা
সেদিকে নেই খেয়াল ৷

২৪.
প্লেনে চড়ে স্বর্গ দেখে
এমন জ্ঞানী কোথায় আছে
সাগরতলে নরক যদিই
কেমন পন্ডিত ধায় পাছে ৷

২৫.
গায়ে তুমি সুবাস মাখো
ঢাকতে নিজের বদনাম
গন্ধে সবাই মাতোয়ারা
এইতো সেই মেকি কাম ৷

২৬.
ফুলবাগানে হাটলে রাতে
গায়ে লাগে সুবাস তার
বউরে সুধাও মেকি কথা
হয় কি তাতে গুপ্ত আর  ৷

২৭.
সূর্য চলে ঊষা ঠেলে
গোধূলিতে হয় পতন
যে বেশে সে আসে ছেড়ে
শেষেও সে একই মতন ৷

২৮.
মর্গে যত লাশ মানুষের
মন তার বাজারে
কঙ্কালেতে সাধ মিটে না
গিয়ে দেখ কবরে ৷

২৯.
মরলে কেও স্বস্তি লাগে
কাঁদো স্মৃতির তাড়নে
মরে যে সেই তো জানে
মরণ হয়না মরণে ৷

৩০.
লুঙ্গি পড়ে বাবুয়ানা
যেন অতি ভদ্রলোক
কাছার মাঝে চলে কত
শয়তানের ইহলোক ৷

৩১.
হাসিই সত্য জগৎ জুড়ে
কান্নার কী দাম আছে
মেকি হাসি মেকি কান্না
চক্রসূত্রে অতি কাছে ৷

৩২.
আমার চুল তোমার বাবার মত
ঝরবে যেদিন বাতাসে
তোমাতে আমাতে মিল কত
দেখবে সেদিন হতাসে ৷

৩৩.
পাকুর গাছে খেজুরগাছ
স্বাস্থ্য তার বাবুয়ানা
তাতেও কত খেজুর ধরে
দেখ সেসব মুন্সিয়ানা ৷

৩৪.
গৃহস্থের রাখাল গরু খোজে
মুখে পুরে খিলিপান
তৃপ্তির তোষামুদে মালিক ভুলে
দিন করছে গুজরান ৷

৩৫.
ভিক্ষুক কয় ভিক্ষাদারে লোকসানে কী হয় লাভ?
হেসে কয় ভিক্ষাদার লাভে কী তবে লোকসান!
সব জায়গায় জীবনের হিসাব মিলে যদি সহজে
তুমি আমি সমান তাতে হত সবার তিরোধান ৷

৩৬.

জন্মিলেই হয়না মানুষ
পশুও হয় তো হঠাৎ
মানুষ যদি পশুরই মত
মানুষ পশুর কিবা তফাৎ ৷