শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কবিতা - প্রগতি বৈরাগী

 


অন্নকথা

()
এক ঠোনা, দুই ঠোনা, তিন ঠোনাতেও রা না কাড়লে, হঠাৎ মুখ নামিয়ে, বসে থাকা আপনার ঠোঁটে ধারালো দাঁতে বাঁকা চাঁদ ছাপ দিতে হয়। খবরে দেখলাম, উনচল্লিশ বছরের মেয়েটিকে কেউ সঙ্গ দেয় না বলে, মরে গেল একা একা। কেউ সঙ্গ দেয় না বলে... স্বামী ছিল, শিশু ছিল,- "তবু সে দেখিল কোন ভূত?"

মরণ খেয়ে গলে নেই হয়ে গেল অভিমান-পুতুল। বালাই ষাট! ওকে কি কেউ ছিল না বলার, "স্নান করেছেন? ভাত খেয়েছেন? বেশ, এবার চুপটি করে বসুন। কবিতা শুনুন।"

পিঙ্গলা অবধি বাসমতী বাংলা কবিতা ভরে দিয়ে অর্ধ-মাতাল আমায় দুই সুতায়  জাগন দিয়ে রেখেছেন আপনি। ভাগ্যিস! খাই, ঘুমাই, মৈথুন সারি। টকটকে বিষয়ভাবনার মাঝেও কবিতার দম নিই। নাকমুখ লাল হয়ে, গায়েপায়ে চিহ্ন ফুটে ওঠে। আধ ঠাহরে কবিতা বমি করি। নাকমুখ বুজে পড়ে থাকলে, কী আচানক, নেমে আসেন আপনি অবাক জ্বীন! ঠোঁট ধুয়ে, জিভ, মুখের ভরাট সাফ করেন। জামার টিপবোতাম, ব্রেসিয়ারের ফিতে আলগা করে বাতাস দ্যান শরীরের অস্থির কোনায়। লি লি করে চরাচরে আপনার ধানের শীষের মতন গৌর আঙুল। এক জগৎ থেকে সোনা রুপোর কাঁটা বদল করে অন্য দিগরে ঘরবসত। ঢাক ঢোল মৃদঙ্গ বাজে, পথে ঘাটে কড়া চক্ষু পাখপাখালিও কানাকানি করে, "কুলটা, কুলটা!" আমি শুনি কালা, কালা, কালা। আন্ধারমানিক, আমি রাধা নই যে মহাকাব্য প্রশস্ত করে অভিমানে নেই হয়ে যাব। তালপত্রে, শ্মশানে, রাজদ্বারে কোথাও, কোত্থাও থাকবে না আঁশ গন্ধ, রক্তফোঁটা, দাগ?

মাধব হে, প্রেমে পড়লে আমি ব্যান্ডপার্টি। তোমাকে স্কন্ধে করে ঘুরে ফিরব ত্রিভূবনময়। খেলকাব্য ছিঁড়ে খুঁড়ে ছেপে উঠছে দারুণ কাষায়। কণ্ঠা, বৃন্ত, ত্রিবলীতে একে তুলব চরম আশনাই।

"মীরা কে প্রভু গিরিধারি নাগর" দেহ ফুঁড়ে উড়ে যাচ্ছে বিরহ। উল্লাস। ভারহীন নেচে যাচ্ছে শূন্য দেবালয়। শুনতে পাচ্ছো, দেখতে পাচ্ছো না তুমি? ধরে রেখে ছুঁড়ে ফেলব, নেই থেকে হয়। ব্যতিব্যস্ত গাথা লিখব, জাদু প্রণয়।

 

()
আজকাল ভাতের থালার আঁকিবুঁকতে আপনার নাম লিখে ফেলি বারবার। থইথই ঘরকন্নার মাঝে কুকারের সিটি আর বুজকুড়ি কাটা ফ্যানের গন্ধে ভাসো তুমি...  ঘুম থেকে উঠেছো? খেয়েছো নাকি ছড়িয়ে থাকা নোটেশন আর ইকোয়েশনের মাঝে জড়িয়ে মড়িয়ে হাঁটু মুড়ে শুয়ে এখনো! দুপুরবেলা অফিস পাড়ার জানালা দিয়ে ক্ষিদে ক্ষিদে হাওয়া ঢুকে আসে। লাঞ্চ বক্স খুলতে খুলতে আমি মুখ বাড়িয়ে দেখি, নীচের রাস্তায় ভাত, ডাল, নুডলস, পাউরুটি বিক্রি হয় এন্তার।

কলেজ থেকে বেরিয়ে কোনদিকে গেলি তুই আজ, ঠিকঠাক হোটেল খুঁজে পেলি? দুমুঠো গরম ভাতে এক চামচ মায়া মিশিয়ে দেয় নি কেউ?
শনিবার সকাল থেকে আমার ব্যালকনিতে বার বার শিস দেয় তোর নামের সবুজ প্ল্যাকার্ড। বিকেল গড়িয়ে আসিস, দূর থেকে জানান দেয় তোর পিঠে উঁচু হয়ে থাকা গিটারের মুখ। গলির সামনে এসে পকেট থেকে ফোন বার করিস, কথা বলিস। তোর প্রেমিকা আছে ভাবতে ভিতর কেটে যায় আমার। আহা মেস-বালক, ভেবে নিই তোর মায়ের কথামফঃস্বল থেকে বাষট্টি মাইল রোদ্দুর পার হয়ে আসা শান্ত ঝিলের মত অন্নগন্ধী জিজ্ঞাসাদের।

আঙুলের মোচড়ে টানটান বাজাস আমায়, ঠোঁট ছুঁয়ে ছুঁয়ে সবকটি তার জুড়ে দিস। তোর নিঃশ্বাস আর ঘামের ফোঁটা থেকে গড়ায় দুধেল বাস। দুমুঠো উত্তাপে মিশে যায় এক চামচ মায়া।

তোকে নিতে নিতে কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিই, “খোকন, দুপুরে ভাত খেয়েছিস তুই ?”

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন