শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

গুচ্ছ কবিতা - যুধাজিৎ বসু

 


ঝিল্লির ডাইরি

ঝিল্লির জার্নালটা আমার হাতে আসার পর মাঝে মাঝেই আমি সেটার পাতা উলটোই আর সেই ভীষণ একলা অভিমানী মেয়েটাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি এবং ব্যর্থ হই। নীচের এলোমেলো লাইনগুলো থেকে ঝিল্লি সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও ধারণা তৈরি হয় না জেনেও নিজের ডায়েরিতে কেন যে সেগুলো মাঝে মাঝেই টুকে রাখি এটা আমার কাছেও একটা রহস্য

 

এপ্রিল ( ঝিল্লির কোনও লেখায় সাল থাকে না, শুধু তারিখ )

 আমি আজ বাজারে গেলাম আর সব কটা মরা মাছ দেখে মনে হল
মাছেরা মানুষদের ব্যাপারে এত কিছু জেনে গেছে বলেই বারবার তারা মানুষের পাতা জালেই ধরা পড়ে বিশেষ করে ইলিশ। 

 

জুন ১৭

তোমার শরীরটাকে ভালবাসি। শুধু শরীরটাকে। তোমার কাঁধটা দেখলে মামা ভাগ্নে পাহাড়ের কথা মনে হয়, যেটাকে প্রথমবার দেখে আমি কিছুতেই হাসি থামাতে পারিনি। পাহাড়ের নামে প্রহসন।

জুলাই ২২

বৃষ্টি দেখবার  জন্য আমার জানলা লাগে না। শুধু মনে হয় কোনদিন অন্ধ হয়ে গেলে, সমুদ্রমুখী একটা খোলা জানলা না থাকলে মরে যাব।

মে

সব বিখ্যাত মানুষেরা কেন মে মাসে জন্মায়? মে মাসের নামটা পালটে  মেয়ে মাস রাখতে ইচ্ছে হত একসময়। এখন ভাবলেও হাসি পায়। আমি কী পাগল! ওগো ভিখারিনী..

মার্চ

বললে কেউ বিশ্বাস করবে না আমার ভীষণ গরম ভাল লাগে। ঘামতে ভাল লাগে। এবং এর সঙ্গে কোনও যৌনতার সম্পর্ক নেই। এই কথাটা তোমার মাথায় যেদিন ঢুকবে, মাইরি বলছি সোজা ছাদনাতলায় চলে যাব

(তোমার সাথে নয় অবশ্য ... অন্য একজনের সাথে... যে বোবা বহুগামী ... আমাকে আগলে রাখবে... )

 

মাঝরাতের কবিতা


নিখাদ নিঃশব্দ রাত
দূর থেকে মন্দিরের ঘণ্টা বেজে উঠলো
শান্ত পুষ্করিণীতে একটা পাথর

 
জল, আরও গভীরে নিয়ে চল
কেননা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টাও
সমুদ্রের গভীর থেকেই উঠে এসেছিল একদিন

 
'তোমার মতন তুমি'
এত সহজ একটা ঝর্ণাকথার মধ্যে
ব্রহ্মাণ্ডের একটা আস্ত অনুভব
যেন ছদ্মবেশ ধরে বসে আছে

 
নির্জনতা কোন একাকী বনপথ নয়
হয়ত সে একটা পুরনো সাইনবোর্ড
রোজ দেখি, রোজ ভুলে যাই

 

গাছ বালি জল


শ্যাওলা আর কুয়াশা ভেজা ঢালু পাথুরে ওই
ঘাসবনে মেরুন রঙের ক্যাম্বিস বলটার মত গড়াতে গড়াতে
যখন শেষমেশ জামার ধুলো ঝেড়ে সে উঠে দাঁড়ালো
ততক্ষণে তার বয়ঃসন্ধি কেটে গেছে


সবাই বলেছিল বিকশিত হও
অর্থাৎ সবাই তাকে ফুলের সাথে গুলিয়ে ফেলেছিল
তারপর সবাই বলল ঋজু হও, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াও
অর্থাৎ তখন সবাইকার চোখে সে একটা গাছ
কিন্তু সে জানত আসলে সে ফুলও না গাছও না
মরুভূমির বালি
সূর্যের আলো পড়লে
শিশিরের মত চিকচিক করে ওঠে


একমাত্র কানাগলিগুলোই
আমাদের সুস্থিতির প্রথম দরজা
কেননা সেইখানে
সব নির্বাচন থেমে গেছে

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন