অনুবাদ কবিতা
কৌশিক ভাদুড়ী
ফেরার বেলা এসে গেছে।
ক্ষীণতম সম্ভাবনার কাছে
ইতিহাসের মার্তণ্ডও ঝাপসা দেখাচ্ছে।
দূর দেবদারু শিখরে কখন দ্রুত অপসৃত হয়েছে
বৈকালিক কিরণের হেমছটা-
অন্তিম অভিমানের দ্যুতি।
নীল আঁধার মাঝে নিঃশব্দে
অস্পষ্ট ভাবে স্বচ্ছ
নগ্ন কায়াভাসটি ফিরে এসেছে
একেলা একাকী।
যে যেখানে যেমন আছ শুনে রাখ সকলে :
দেনা আছে অনেক, পাওনা নেই কিছুই,
কোন দাবী কোন অভিযোগ নেই আমার
কা’র প্রতি।
কীই বা আছে সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণিত করার,
নিক্কণ শ্রুত হতে না হতে
পিছন পানে কেন চা’ব?
বালি জল মাটি পবন মন বিবেকের সর্বাঙ্গে
রুমঝুম নূপুরের মতন
নিজে নিজে আমি বাজছি।
কত শীঘ্র শেষ হয়ে গেল রাত।
স্পষ্টতর হচ্ছে বাত পিত্ত শ্লেষ্মার শরীর,
ধীরে ধীরে রক্তে বেড়ে উঠছে
আরোহীহীন বিপুল অশ্ববাহিনীর
সম্মিলিত হ্রেষা আর খুরধ্বনি
পুচ্ছছটা গতি।
প্রতিনিয়ত দাও, দিক দাও অসংখ্য
দাও ইচ্ছা-আরোহণ, এবার আমাকে দাও-
অপ্রমিত সংযমন শক্তি।
কোটি কোটি বিগত শতাব্দীর
সকল ঘটনা থেকে গরীয়ান-
যা কিছু ঘটতে যাচ্ছে
পর মুহূর্তে,
সেই অনিশ্চিত বিস্ময় লাগি আমি উৎকন্ঠিত,
যা কিছু ‘আসন্ন’, সেখানে আমি ‘বর্তমান’।
বোমা ফুটুক বা কুঁড়ি ফুটুক
তার সাথে ফুটতে প্রস্তুত আমি
নিঃসর্ত ভাবে।
নায়ক
আমি মঞ্চে যাই না , মঞ্চের নেপথ্যে থাকি না ,
দ্রষ্টা হতে চাই না, ভোক্তা হতে চাই না;
অথচ যোখানে দাঁড়াই,
যত নিভৃত হোক না কেন,
যবনিকা উন্মোচিত হয়ে যায় সমুখে,
স্পটলাইট্ কেন্দ্রিত হয় মুখের উপরে,
একুশ তোপশব্দ ও দুন্দুভি শোনা যায় শূন্যতে,
ব্যতিক্রান্ত হয়ে যায় নির্ধারিত প্রোটোকল,
লোহিত গালিচা আপনি বিছিয়ে যায়
পায়ে পায়ে হাঁটলে।
আমাকেই কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে অহরহ কিংবদন্তি,
ঘিরে আসে গুজবের ঘন কুয়াশা,
নায়কত্ব থেকে মুক্তি নেই আমার।
বাতুল হয়ে ঐতিহাসিক আমাকে নিতে চায় পুরাণে,
কে জানে কিভাবে আমি ফিরে আসি।
কুশলী মিত্র আমাকে নিতে চায় মনোহর বধ্যভূমিতে,
কে জানে কিভাবে আমি ফিরতে পারি!
পদ্মিনী আমাকে নিতে চায় মৃণালের আদিম উত্সে
চিত্রিণী নিতে চায় ভূকম্পিত চন্দ্রশালাপুরে
শংখিনী তা'র তৃষ্ণা-সমুদ্রে
হস্তিনী তা'র সুবিপুল মারক আশ্লেশে।
অক্রূর আমাকে নিতে চায় মথুরায়,
অর্জুন করুক্ষেত্রে,
দ্বারকা থেকে শাম্ব আমাকে কোলে নিতে চায়
এরকা বনে।
আমি কোথাও যেতে চাই না।
বংশী বাজাই না বা বজ্র পুষি না আমি,
নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে দণ্ডায়মান হলে
আরম্ভ হয়ে যায় খেলা।
কী শ্রীরাধা কী রুক্মিণী
ঠিকঠাক চিনতে পারি না সর্বদা,
আমি কোনোখানে ধরা দিই না...
নায়কত্ব থেকে মুক্তি নেই আমার।
আমি প্রকারান্তরে লঘুচাপের মতন দাঁড়িয়ে থাকি
যেখানে পাগল মৌসুমীর মতন
চারপাশ থেকে দৌড়ে এসে জড়ো হয় ঘটনা।
আমি অমর না হতে পারি,
আমার আয়ু কিন্তু ইতিহাস অপেক্ষা দীর্ঘতর।
বীজবিক্ষেপ
প্রতিটি আজ আগামীকাল
প্রতিটি তিথি অক্ষয়তৃতীয়া
মুঠোর পর মুঠো বুনে যা খেতে খেতিতে।
যে বীজের ডানা আছে
তাকে উড়িয়ে দে পবনে
যে সাঁতার জানে তাকে ভাসিয়ে দে জলে ...
আর যে ফুঁড়তে জানে
গুঁজে দে পর্বত প্রমাণ পাথরের ভেতর।
কাঠবিড়ালির পায়ে পাঠিয়ে দে প্রতিবেশী বাগানে
শস্যাহারী পাখির বিষ্ঠায় পাঠিয়ে দে
সাতশ পঞ্চাশ ক্রোশ সুদূর বিন্দুর
মহিম্ন গর্ভাধানকে!
যত্র তাকাস তত্র
অসহ্য আতুরতায় ফেটে পড়ে ফল, বীজাধার;
দ্যাখ-
ফেটে পড়ে চারা, গুল্ম, লতা, কুঞ্জ, দারু
ফেটে পড়ে কানন কেদার।
আড়ি কুনকে মুঠো
সব আজ ভরপুর...
বুনে যা।
বুনে যা
চরু গলাধ:কারী যুবতীর ভিজে লন-ঘাসে ...
বন্দীশালার অন্ধকারে ...
বাড়ির পেছনের বাগানে ... নকশী বাগানে ...
পাঁচ কান পঞ্চায়ত প্রকৃতিতে সুড়সুড়ি
প্রত্যেক বিষ্ণুনাভিতে।
মুঠো কে মুঠো বুণে যা শূন্যতে, মাটিতে।
কে জানে লুকিয়ে রয়েছে কল্পাংকুর
কোন্ গর্ভাধানের লাল অভ্যন্তরে!
কে জানে এবার অষ্টমে না পরার্ধতমে!
কী হবে গোলা, মাড়াই উঠোন
দুই পা তোর সর্বদা খেতে।
সকল ভবিষ্যত কাল তোর দিয়ে দে
এক মুঠো চালের মতন
কোনো এক চকুলিআ পাণ্ডার থালায়।
বীজ তৈরির দায় নেই তোর-
অধিকার কেবল বোনায় !
বোন বৃষ্টি বোন রক্ত বোন অশ্রু বোন কালিমা
বোন পরাগ বোন উপল বোন অঙ্গার
বোন কাঁচ বোন পারদ বোন মাংস বোন শূন্য...
মুঠো খালি হয়ে গেলেও সেঁটে থাক
বপন ভঙ্গিমায়।
প্রতি বর্গইঞ্চি মাটি আজ দোফসলা
প্রতি বর্গইঞ্চি নারী আজ গম্যা, গর্ভযোগ্যা ...
ধরিত্রী আজ কুক্ষিগতা ...
উড়ে যা ভেসে যা ঢুকে যা উঠে আয় বিক্ষিপ্ত হয়ে যা
ওরে বন্য ব্যাকুল বীজস্তূপ!
বোনা হয়ে যা বোনা হতে থাক সর্বদা
চরাচরে।
দ্রষ্টব্য - চকুলিআ উরিষ্যার এক শ্রেণির মানুষ এনারা মাধুকরী করেন। এনাদের এক হাতে বাঁশের আগায় বসান তালপাতার তৈরি ছাতা থাকে, অন্য হাতে ভিক্ষার থালা।
(ওড়িয়া ভাষার কবি শ্রী রাজেন্দ্র কিশোর পণ্ডার দ্রোহ বাক্য গ্রন্থ থেকে)
বোমা ফুটুক বা কুঁড়ি ফুটুকফেরার বেলা এসে গেছে।
ক্ষীণতম সম্ভাবনার কাছে
ইতিহাসের মার্তণ্ডও ঝাপসা দেখাচ্ছে।
দূর দেবদারু শিখরে কখন দ্রুত অপসৃত হয়েছে
বৈকালিক কিরণের হেমছটা-
অন্তিম অভিমানের দ্যুতি।
নীল আঁধার মাঝে নিঃশব্দে
অস্পষ্ট ভাবে স্বচ্ছ
নগ্ন কায়াভাসটি ফিরে এসেছে
একেলা একাকী।
যে যেখানে যেমন আছ শুনে রাখ সকলে :
দেনা আছে অনেক, পাওনা নেই কিছুই,
কোন দাবী কোন অভিযোগ নেই আমার
কা’র প্রতি।
কীই বা আছে সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণিত করার,
নিক্কণ শ্রুত হতে না হতে
পিছন পানে কেন চা’ব?
বালি জল মাটি পবন মন বিবেকের সর্বাঙ্গে
রুমঝুম নূপুরের মতন
নিজে নিজে আমি বাজছি।
কত শীঘ্র শেষ হয়ে গেল রাত।
স্পষ্টতর হচ্ছে বাত পিত্ত শ্লেষ্মার শরীর,
ধীরে ধীরে রক্তে বেড়ে উঠছে
আরোহীহীন বিপুল অশ্ববাহিনীর
সম্মিলিত হ্রেষা আর খুরধ্বনি
পুচ্ছছটা গতি।
প্রতিনিয়ত দাও, দিক দাও অসংখ্য
দাও ইচ্ছা-আরোহণ, এবার আমাকে দাও-
অপ্রমিত সংযমন শক্তি।
কোটি কোটি বিগত শতাব্দীর
সকল ঘটনা থেকে গরীয়ান-
যা কিছু ঘটতে যাচ্ছে
পর মুহূর্তে,
সেই অনিশ্চিত বিস্ময় লাগি আমি উৎকন্ঠিত,
যা কিছু ‘আসন্ন’, সেখানে আমি ‘বর্তমান’।
বোমা ফুটুক বা কুঁড়ি ফুটুক
তার সাথে ফুটতে প্রস্তুত আমি
নিঃসর্ত ভাবে।
নায়ক
আমি মঞ্চে যাই না , মঞ্চের নেপথ্যে থাকি না ,
দ্রষ্টা হতে চাই না, ভোক্তা হতে চাই না;
অথচ যোখানে দাঁড়াই,
যত নিভৃত হোক না কেন,
যবনিকা উন্মোচিত হয়ে যায় সমুখে,
স্পটলাইট্ কেন্দ্রিত হয় মুখের উপরে,
একুশ তোপশব্দ ও দুন্দুভি শোনা যায় শূন্যতে,
ব্যতিক্রান্ত হয়ে যায় নির্ধারিত প্রোটোকল,
লোহিত গালিচা আপনি বিছিয়ে যায়
পায়ে পায়ে হাঁটলে।
আমাকেই কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে অহরহ কিংবদন্তি,
ঘিরে আসে গুজবের ঘন কুয়াশা,
নায়কত্ব থেকে মুক্তি নেই আমার।
বাতুল হয়ে ঐতিহাসিক আমাকে নিতে চায় পুরাণে,
কে জানে কিভাবে আমি ফিরে আসি।
কুশলী মিত্র আমাকে নিতে চায় মনোহর বধ্যভূমিতে,
কে জানে কিভাবে আমি ফিরতে পারি!
পদ্মিনী আমাকে নিতে চায় মৃণালের আদিম উত্সে
চিত্রিণী নিতে চায় ভূকম্পিত চন্দ্রশালাপুরে
শংখিনী তা'র তৃষ্ণা-সমুদ্রে
হস্তিনী তা'র সুবিপুল মারক আশ্লেশে।
অক্রূর আমাকে নিতে চায় মথুরায়,
অর্জুন করুক্ষেত্রে,
দ্বারকা থেকে শাম্ব আমাকে কোলে নিতে চায়
এরকা বনে।
আমি কোথাও যেতে চাই না।
বংশী বাজাই না বা বজ্র পুষি না আমি,
নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে দণ্ডায়মান হলে
আরম্ভ হয়ে যায় খেলা।
কী শ্রীরাধা কী রুক্মিণী
ঠিকঠাক চিনতে পারি না সর্বদা,
আমি কোনোখানে ধরা দিই না...
নায়কত্ব থেকে মুক্তি নেই আমার।
আমি প্রকারান্তরে লঘুচাপের মতন দাঁড়িয়ে থাকি
যেখানে পাগল মৌসুমীর মতন
চারপাশ থেকে দৌড়ে এসে জড়ো হয় ঘটনা।
আমি অমর না হতে পারি,
আমার আয়ু কিন্তু ইতিহাস অপেক্ষা দীর্ঘতর।
বীজবিক্ষেপ
প্রতিটি আজ আগামীকাল
প্রতিটি তিথি অক্ষয়তৃতীয়া
মুঠোর পর মুঠো বুনে যা খেতে খেতিতে।
যে বীজের ডানা আছে
তাকে উড়িয়ে দে পবনে
যে সাঁতার জানে তাকে ভাসিয়ে দে জলে ...
আর যে ফুঁড়তে জানে
গুঁজে দে পর্বত প্রমাণ পাথরের ভেতর।
কাঠবিড়ালির পায়ে পাঠিয়ে দে প্রতিবেশী বাগানে
শস্যাহারী পাখির বিষ্ঠায় পাঠিয়ে দে
সাতশ পঞ্চাশ ক্রোশ সুদূর বিন্দুর
মহিম্ন গর্ভাধানকে!
যত্র তাকাস তত্র
অসহ্য আতুরতায় ফেটে পড়ে ফল, বীজাধার;
দ্যাখ-
ফেটে পড়ে চারা, গুল্ম, লতা, কুঞ্জ, দারু
ফেটে পড়ে কানন কেদার।
আড়ি কুনকে মুঠো
সব আজ ভরপুর...
বুনে যা।
বুনে যা
চরু গলাধ:কারী যুবতীর ভিজে লন-ঘাসে ...
বন্দীশালার অন্ধকারে ...
বাড়ির পেছনের বাগানে ... নকশী বাগানে ...
পাঁচ কান পঞ্চায়ত প্রকৃতিতে সুড়সুড়ি
প্রত্যেক বিষ্ণুনাভিতে।
মুঠো কে মুঠো বুণে যা শূন্যতে, মাটিতে।
কে জানে লুকিয়ে রয়েছে কল্পাংকুর
কোন্ গর্ভাধানের লাল অভ্যন্তরে!
কে জানে এবার অষ্টমে না পরার্ধতমে!
কী হবে গোলা, মাড়াই উঠোন
দুই পা তোর সর্বদা খেতে।
সকল ভবিষ্যত কাল তোর দিয়ে দে
এক মুঠো চালের মতন
কোনো এক চকুলিআ পাণ্ডার থালায়।
বীজ তৈরির দায় নেই তোর-
অধিকার কেবল বোনায় !
বোন বৃষ্টি বোন রক্ত বোন অশ্রু বোন কালিমা
বোন পরাগ বোন উপল বোন অঙ্গার
বোন কাঁচ বোন পারদ বোন মাংস বোন শূন্য...
মুঠো খালি হয়ে গেলেও সেঁটে থাক
বপন ভঙ্গিমায়।
প্রতি বর্গইঞ্চি মাটি আজ দোফসলা
প্রতি বর্গইঞ্চি নারী আজ গম্যা, গর্ভযোগ্যা ...
ধরিত্রী আজ কুক্ষিগতা ...
উড়ে যা ভেসে যা ঢুকে যা উঠে আয় বিক্ষিপ্ত হয়ে যা
ওরে বন্য ব্যাকুল বীজস্তূপ!
বোনা হয়ে যা বোনা হতে থাক সর্বদা
চরাচরে।
দ্রষ্টব্য - চকুলিআ উরিষ্যার এক শ্রেণির মানুষ এনারা মাধুকরী করেন। এনাদের এক হাতে বাঁশের আগায় বসান তালপাতার তৈরি ছাতা থাকে, অন্য হাতে ভিক্ষার থালা।
2 comments:
onubad holeo nijoswota ache
ta hole kintu onubad sarthok noy! amar uddeshyo chhilo kobi rajendra kishor-er elixir jotota somvob unimpaired rakha! :-)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন