মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৩

রম্যরচনা - ঈশিতা ভাদুড়ী

ট্রেনে ট্রেনে
ঈশিতা ভাদুড়ী



স্ক্যান রেল পাসে স্ক্যন্ডিনিভিয়া ঘুরে বেড়ানোটা অনেক সহজ ও সুবিধেজনক। যে কোনো সুবিধেজনক কাজ আমরা করে ফেলি। অতএব স্ক্যান্ডিনিভিয়ার শহরগুলি ট্রেনে করে বেড়ানোর পরিকল্পনা তৈরী হল। আমরা যদিও মোটেই সাহসী নই, কিন্তু যেহেতু এটি আমাদের প্রথম বিদেশ-ভ্রমণ নয় এবং ইতিমধ্যে অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েই গেছে যে ইউরোপে একে একা দুজন তরুণীর ট্রেনে করে ঘুরে বেড়ানোর জন্য কোনোই সাহসের প্রয়োজন হয় না (তখনও আমরা তরুণী-ই ছিলাম), অতএব স্ক্যানরেল পাস কেনা হলো, এই পাসে স্ক্যান্ডিনিভিয়ার যে কোনো রেলে যে কোনো শহর থেকে যে কোনো শহরে যাওয়া যায়।





কোপেনহাগেন থেকে স্টকহোম গিয়েছিলাম আমরা রাতের ট্রেনে। লম্বা ফাঁকা ট্রেন, ফাঁকা প্লাটফর্ম, মহিলা টিকিট-চেকার, স্ক্যান রেল পাস ইত্যাদি প্রভৃতির পর আমাদের কূপে চারজন; আমি, সোমা, আরও দুটি ড্যানিশ মেয়ে, তারা দুই বোন, গ্রীস্মের ছুটিতে বেড়াতে বার হয়েছে। ওপর-নিচ মিলিয়ে চারটে বার্থের একদিকের ওপর-নীচ আমাদের, অন্য দুটি ওই দুই বোনের। তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে ছবি-টবি তুলে শোওয়ার যোগাঢ়। তারা দিব্যি শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ল।

আমরা জ্যাকেট মোজা জুতো ইত্যাদি খুলতে খুলতে লক্ষ্য করলাম ট্রেনের কোনো গতি নেই, চলতেই চায় না। সোমাকে বললাম, এ’ যে দেখি আমাদের ‘জনতা এক্সপ্রেস’-এর চেয়েও খারাপ। তারপর দেখি, ওমা ট্রেনটা যে অর্ধেক হয়ে গেল! আমাদের পরের কামরাগুলি দিব্যি আমাদের পাশে এসে বিরাজ করছে। ছুটে এসে কম্পার্টমেন্টের দরজায় এসে বুঝতে পারলাম, আমাদের যথেষ্ট লম্বা ট্রেনটি আধাআধি হয়ে জাহাজে চেপে বসেছে। এ’ কি কান্ড রে বাবা! মোজা ছাড়াই জুতো দুখানি পায়ে গলিয়ে কোনোরকমে জ্যাকেট গায়ে দিয়ে কম্পার্টমেন্ট থেকে নেমে পড়লাম, জাহাজের ভেতর লবিতে ঢুকবো না? এদিকে কম্পার্টমেন্টের দরজা খোলা, মেয়েগুলো ঘুমে অচৈতন্য। কি আর করবো! অত ভেবে তো চুপ করে বসে থাকতে পারি না। মালপত্র এবং মেয়ে দুটিকে হারা উদ্দেশ্যে রেখে কম্পার্টমেন্ট থেকে নেমে পড়লাম। কিন্তু জাহাজের লবিতে যাবো কিভাবে! সব দরজা বন্ধ। হঠাৎ দেখি, একটি দরজার পাশে কি সব সুইচ রয়েছে, তাদের সাহায্যে দরজা খুলেও গেল চিচিং ফাঁক।

জাহাজের ভেতর ঢুকে অবাক কান্ড ! এত বড় জাহাজ ! এত রোশনাই, গান-বাজনা, হৈ-হৈ ! দূরে শহরের জেটি । ডেনমার্কের হেলসিঙ্গর থেকে সুইডেনের হেলসিঙ্গবর্গ – এ বুঝতে না বুঝতেই পৌঁছে গেল জাহাজ , আর আমাদের হুড়মুড় করে নেমে পড়তে হল , জাহাজ জেটিতে ভিড়বার আগেই , কেন না নির্দিষ্ট কামরাতে পৌঁছাতে যদি না পারি আর ট্রেন যদি ছেড়ে চলে যায় কেলেঙ্কারীর একশেষ হবে। কম্পার্টমেন্টে ফিরে এসে ততোধিক বিস্ময়। আমাদের যাবতীয় মালপত্র একদম নির্ভুলভাবে বিরাজ করছে, এমন কি ঘুমন্ত মেয়ে ছুটিও , একচুল এদিক-ওদিক হয় নি । আমাদের দেশ হলে কি হতো ভাবুন তো একবার !



আমরা প্যারিস থেকে ফ্রাঙ্কফার্ট গিয়েছিলাম ট্রেনে । আমরা সাধারনত রাতের ট্রেনেই এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়া পছন্দ করি , তবে দস্তুরমতো বার্থ সংরক্ষণ করে । প্যারিস থেকে ফ্রাঙ্কফার্ট যাওয়ার সময় আমরা দোটানায় পড়েছিলাম । তখন বেড়ানোর শেষ দিক , পয়সা-কড়িও শেষের দিকে , তার ওপর রেল-কাউন্টারের ছেলেটিও বার্থ-রিজার্ভেশনের বিপক্ষে । ভাবলাম বার্থ রিজার্ভ না করলে কি-ই বা এমন হাতি ঘোড়া ক্ষতি হবে ! বিদেশী ছেলে-মেয়েগুলি তো দিব্য সারারাত বসে বসে চলে যায় এক শহর থেকে অন্য শহরে! আমরাই বা পারবো না কেন ! কিন্তু সোমা খুবই ভীতু মানুষ , আমাকে বোঝালো বিদেশীরা অনেক কিছু পারে , আমরা কি পারি তাই কখনও ! ভয় খুবই সংক্রামক ব্যাধি , অতএব আমিও বুঝলাম যে রাতের ট্রেনে কোনোরকম রিজার্ভেশন ছাড়া মোটেই যাওয়া ঠিক হবে না । কিন্তু কাউন্টারের ছেলেটি নাছোড় , সে আমাদের খুবই বোঝালো , খামোখা মাথাপিছু তেরো ফ্রেঞ্চ ফ্রাঙ্ক বেশি দিয়ে বার্থ সংরক্ষণ না করাই বুদ্ধির পরিচয় হবে , আগে গিয়ে যে কোনো বসার আসন দখল করে নিলেই হবে । ছেলেটি বলে কী ! আগে গিয়ে বসার আসন দখল করা যেন অতই সহজ ! আমাদের দেশের আনরিজার্ভড কম্পার্টমেন্টগুলিতে কিভাবে আসন দখল করা হয় দেখিনি বুঝি কোনোদিন !

অনেক চিন্তাভাবনার পর শেষমেষ অবশ্য আমরা বার্থ সংরক্ষণ করি নি , বসার আসন রিজার্ভ করলাম , তাতে দশ ফ্রেঞ্চ ফ্রাঙ্ক করে মাথা-পিছু বাঁচল । সোমা আবার হেসে হেসে দুটি জানলার পাশে সিটও নিল । যাইহোক ট্রেনে উঠে দেখি কম্পার্টমেন্টে অনেকগুলি কূপ , একেকটি কূপে তিনটি তিনটি করে দুইদিকে মোট ছয়টি বসার জায়গা , দুটি সিটের মধ্যে কোনো হ্যান্ডেল বা ডিভাইডার নেই । টিকিট-চেকার এসে টিকিট দেখে বললো , দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ুন এবার । আমরা বাধ্য মেয়ের মত দরজা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে টানটান হয়ে দুজন দুদিকে শুয়ে পড়লাম । দরজায় অবশ্য ভেতর থেকে বন্ধ করার কোনো ব্যবস্থাই ছিল না । বলা বাহুল্য রাতে অন্য কোনো যাত্রীই সেই কূপে আসে নি । ভাবুন তো দেশী ধ্যান-ধারণা নিয়ে বিদেশে কতগুলো টাকা জলে দিচ্ছিলাম!





জাপানে বেড়াতে যাওয়ার আগেই জাপান রেল পাসের ব্যবস্থা করেছিলাম আমরা । জাপান ঘোরা যায় বুলেট (শিঙ্কানসেন) ট্রেনে চড়ে । অবশ্য ট্রাভেল এজেন্টরা আমাদের বলেছিল , এই পাসে কিন্তু বুলেট ট্রেনে চড়তে পারবেন না। বলে কী ? বুলেট ট্রেনে চড়ার জন্যেই তো জাপানে যাওয়া । তাছাড়া ইন্টারনেট বলছে এই পাসে দিব্যি চড়া যাবে বুলেট ট্রেনে । যতই তাদের বলি বুলেট হল ইংরেজি নাম আর শিঙ্কানসেন হল জাপানি নাম , এজেন্টরা কিন্তু মানে নি আমাদের কথা । আমরাও অবশ্য এজেন্টদের কথা না মেনেই পাসটা কিনে নিয়েছিলাম ।

জাপানে ট্রেনে চড়া অত্যন্ত আনন্দজনক অভিজ্ঞতা । প্রথম দিন অবশ্য কিছুটা অসুবিধেই হল । প্রথম দিন নতুন জায়গা , তার ওপর আবার ইংরেজি প্রশ্নে জাপানি উত্তর । রিজার্ভেশন কাউন্টারের লোকটি আমাদের কথা কিছু বুঝলো না, আমরাও তার কথা বিন্দুবিসর্গ বুঝলাম না । অতএব রিজার্ভেশন করতে পারলাম না । বিরক্ত হয়ে প্লাটফর্মে এসে জানতে পারলাম , এদের প্রত্যেক ট্রেনেই দুচারটে কামরা নন-রিজার্ভ্‌ড্‌ থাকে , কোনো ট্রেনে তিনটে কোনো ট্রেনে ছটা । ট্রেনের দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে কত সংখ্যক থাকবে । প্রত্যেক কম্পার্টমেন্টেই দেখলাম ওঠার জন্য প্লার্টফর্মে লাইন দিতে হয় , নন-রিজার্ভ্‌ড্‌ কামরাতেও । কিন্তু কোনো হুড়োহুড়ি বা ধাক্কাধাক্কি নেই । নন-রিজার্ভ্‌ড্‌ কম্পার্টমেন্টেও নয় , এমন কিছু ভিড়ও নেই সেখানে ।রিজার্ভেশন করার কোনো প্রয়োজনই নেই । রিজার্ভেশন ছাড়াই যথেষ্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা যায় , দুজন মানুষ দিব্যি ছজন মানুষের আসন নিয়ে আরাম করতে করতে যেতে পারে । রিজার্ভেশন করে শুধু ষুধু ৫০০ ইয়েনের মত অতিরিক্ত খরচ করার কোনো মানেই হয় না ।

ট্রেনগুলোও সব নির্দিষ্ট সময় ছাড়ে , আধটি সেকন্ড পরেও না । জাপানে প্রত্যেক ঘড়িতে মিনিট সেকন্ড প্রতিটি কাঁটাই অত্যন্ত নির্ভুল , আমাদের দেশের মতন নয় । ট্রেনে চড়েও বেশ আরাম । মানুষজন চিৎকার চেঁচামিচি করে না , কামরার ভেতর মোবাইলে কথা বলা নিষেধ , কামরার বাইরে মোবাইলে কথা বলার জন্যে ও ধূমপান করার জন্যে নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে । আমাদের টেনগুলি যদি এরকম হত! অন্তত কিছুটাও !

সময়মতন টিকিট-চেকার মাথা নুইয়ে নমস্কার করে কামরাতে ঢুকে টিকিট দেখে কামরা থেকে বেরোনোর পথে সেই একই ভঙ্গিমাতে নমস্কার করে তবে তারা যায় । আমাদের দেশে ভাবা যায় ?

প্রথমদিন ওসাকা থেকে কিওটো যাওয়ার পথে আমাদের অনেকই প্রশ্ন , কম্পার্টমেন্টে উঠেও । আমাদের দিকে পেছন করে আমাদের সামনের সিট-এ এক জাপানি মহিলা বসেছিলেন । আমাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্যে হঠাৎ তিনি তাঁর সিটটিকে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরিয়ে আমাদের যথেষ্ট বিস্মিত করে আমাদের মুখোমুখি হয়ে গেলেন । ‘নমস্তে’ দিয়ে কথা শুরু করলেন । স্বল্প সময়ের পথটি কখন পার হয়ে গেল, তিরিশ বছর আগে তাঁর ‘স্বামী’ বিহারে ভুরকুন্ডা গ্লাস কারখানায় কাজ করতেন, তিনবছর ছিলেন সেখানে । এখনও দুচারটে হিন্দী বেশ ভালই মনে রেখেছেন ।



চিনে প্রথম ট্রেনে চড়েছিলাম শিয়ান শহরে , ইয়ুথ হস্টেলের খুব কাছেই ছিল রেল-স্টেশন , পায়ে হাঁটা পথ । এই চত্বরে গিয়ে আমরা চমকে উঠেছিলাম । কী প্রচন্ড ভিড় করে কত যে মানুষ বসে আছে , এ যে আমাদের শেয়ালদা স্টেশনের ভিড় বা পাটনা স্টেশনের ভিড়কেও হার মানায়। কেন যে এত মানুষ , কিসের আশাতেই বা বসে আছে তারা কে জানে ! দিনের পর দিন একইরকম ভিড় । স্টেশনে ঢোকারও বিরাট লাইন , সিকিওরিটি চেক করে একেবারে ঢুকিয়ে দিল লাউঞ্জে , প্লেনের মত ব্যাপার-স্যাপার । লাউঞ্জেও গিজগিজে ভিড়। আধঘন্টা আগে প্লাটফর্মে যেতে দিল ।

কম্পার্টমেন্টের সামনে মহিলা কন্ডাক্টরকে পুনরায় টিকিট পরীক্ষা করিয়ে উঠে পড়লাম ট্রেনে। চিনে ট্রেনে দুরকম বার্থ , হার্ড এবং সফ্‌ট্‌ স্লিপার । হার্ড স্লিপার কেমন হবে না বুঝে আমরা বেশি দামের টিকিট কেটেছিলাম ।

সফ্‌ট্‌ স্লিপারের টিকিট কেটেছিলাম । সফ্‌ট্‌ স্লিপার কিন্তু আমাদের দেশের ফার্স্ট-ক্লাশ কামরার চেয়েও উন্নত , একেকটি কূপে চারটি করে বার্থ , টিভি রয়েছে প্রত্যেক বার্থের জন্যে আলাদা আলাদা , এছাড়া পায়ের চটি দাঁত মাজার জন্যে পেস্ট-ব্রাশ এবং ফ্লাস্কে গরম চা সব রকম ব্যবস্থাতেই সোনায় সোহাগা আর কী! ভাগ্যিস আমরা শিয়ান থেকে বেজিং যাওয়ার টিকিট প্লেনের বদলে ট্রেনে কেটেছিলাম ।

বেজিং থেকে সাংহাই ট্রেনে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও সেই একইরকম । অবশ্য বেজিং স্টেশনে শিয়ান স্টেশনের মতন গিজগিজে ভিড় নেই । সাংহাই তো আরওই ভালো । সাংহাই-এ মাগ্‌লেভ ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতাও দারুণ । আমরা যতই জেনে থাকি জাপানে বুলেট ট্রেন সবচেয়ে বেশি দ্রুত চলে , আসলে চিনের মাগ্‌লেভ ট্রেনই সবচেয়ে বেশি গতিশীল । সাংহাইএর লুজিয়াজুই ফাইনান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট থেকে পুডং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে যায় এই ট্রেন , তিরিশ কিলোমিটারের পথ মাত্র ন মিনিটে যায় । আমার তো মনে হচ্ছিল উড়েই যাচ্ছি, এত স্পিড! জানলার বাইরে কোনো দৃশ্যেরই ছবি তুলতে পারলাম না ।





কুয়ালালামপুর থেকে পেনাং গিয়েছিলাম ট্রেনে । ভাগ্যিস গিয়েছিলাম । নয়তো মালয়েশিয়ার ট্রেন দেখা হত না আমাদের । সেখানে টু-ট্রায়ারে টিকিট কেটেছিলাম । ভেতরের ডিজাইনটি কিন্তু আমাদের দেশের মতন নয় । আমাদের যেমন পাশাপাশি দুটি বার্থ থাকে এবং প্যাসেজের ওপাশে আরেকটি বার্থ , ওদের কিন্তু তা নয় । ওখানে ট্রেনের দুদিকে বার্থ , মধ্যিখান দিয়ে প্যাসেজ । বিনা টিকিট বা বিনা রিজার্ভেশনের কোনো মানুষ সেখানে ওঠে না । খুবই আরামের জার্নি ছিল।




শুধু কী দূরপাল্লা ট্রেন! আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনগুলির অভিজ্ঞতাও চমৎকার। লন্ডনে আন্ডারগ্রাউন্ড টিউব-রেল তো খুবই উপযোগী এবং সুন্দর একটি নেটওয়ার্ক, শহরের সঙ্গে মফস্বলের সংযোগকারী । এই রেল লন্ডনে খুবই জনপ্রিয় । এছাড়া ডকরেল আছে । এই রেল মূলত ডক এরিয়ার সঙ্গে শহরকে যুক্ত করেছে । এটি খুবই সুন্দর অত্যাধুনিক এবং স্বয়ংক্রিয় রেল-ব্যবস্থা । ট্রেনে উঠে তাজ্জব, এ যে ড্রাইভার ছাড়াই ছুটে চলে , কি জানি বাবা প্রাণটা হাতে নিয়ে ফিরতে পারবো তো! ট্রেন অবশ্য দিব্যি চলে, দিব্যি নয়, যথেষ্ট ভালো চলে, স্টেশন এলে দরজা খুলে যায়, ওঠা-নামা হয়ে গেলে ইন্সপেক্টর দরজার পাশে বোতাম টিপে দরজা বন্ধ করে এবং তৎক্ষণাৎ ট্রেন গড়গড় ছুটতে আরম্ভ করে । কিন্তু এসব কুড়ি বছর আগে দুজন গ্রাম্য তরুণীকে অবাকই করেছিল আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে।



হংকং-এ গিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন (মাস ট্রানজিট রেলওয়ে) চড়তে গিয়ে অপার বিস্ময়ে আমরা । প্লাটফর্ম আর রেললাইনের মাঝে কাঁচের দেওয়াল । মাঝে মাঝে দরজা । ট্রেনের দরজা অনুযায়ী প্লাটফর্মের দরজা , একচুল এদিক-ওদিক হওয়ার নেই । ট্রেন এলে প্রথমে ট্রেনের দরজা খুলে যায় , পরে প্লাটফর্মের দরজা , কিছুতেই অন্যথা হয় না , ট্রেনের দরজা বারংবার খোলা-বন্ধও হয় না আমাদের দেশের মতন । আমাদের দেশেও যদি প্লাটফর্ম আর রেললাইনের মাঝে কাঁচের দেওয়ালের ব্যবস্থা করা যেত তবে মানুষগুলো পটপট করে লাইনে ঝাঁপ দিতে পারতো না । অবশ্য দিল্লীতে এয়ারপোর্ট এক্সপ্রেসে এই ব্যবস্থা করতে পেরেছে আমাদের সরকার এতদিনে!