মিলন চ্যাটার্জি - প্রথম দশকের তরুণ কবি।
জন্ম - রাণাঘাটে
পেশায় - শিক্ষক, রাণাঘাট পাবলিক লাইব্রেরীর প্রধান লাইব্রেরিয়ান।
নেশা - ছবিআঁকা , গানশোনা , বইপড়া।
লেখা লিখির শুরু ছোট্ট থেকেই ছড়া লিখে। প্রথম প্রকাশিত কবিতা ' উন্নয়ণ ' - কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত "শিগক" পত্রিকায়। বর্তমানে ক্ষেপচুরিয়াস নামক একটি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত।
১। বৌদ্ধিক
কেউ কেউ বুঝে যায়
কতটা নুন আর হলুদ দিলে সম্পর্কের রসায়ন
সম্পৃক্ত হয় !
অন্যকে নির্বোধ ভেবে গর্বিত তুমি
অনায়াস অবহেলায় উন্মুক্ত করো
...লেখনীর ধারাস্রোত !
গহনকোণে বসে থাকা কূটস্থ বিষাদ প্রেমিক
অক্লেশে পড়ে ফেলে ললাট লিখন !
ওহে রসিক, কিঞ্চিৎসাবধান থাকা ভালো।
কেউ কেউ যে বুঝেই যায় ...
খুব ভালো করেই বুঝে যায়।
২।কূটাভাস
অতন্দ্র প্রহরায় কুলাভিমান রক্ষা
কূটস্থ হওয়া সবার কম্মো নয়।
ক্রমাগত হতাশা নিমগ্ন করে আত্মগ্লানিতে
প্রতিটা রূপক,মাত্রা, অলংকার ...
আত্মমহীয়ান, অন্যকেআক্রমণে উদ্যত !
হে দ্বিজ, বিস্মৃতিরঅতল থেকে উদ্ধার করলে দেখবেন
আপনিও কুসিম্বীর ন্যায় !
ক্ষুভিত মনন মাঝে মাঝে নিরুদ্দেশ ধায়।
নিশ্চিত বলতে পারি ...
ঝিণ্টী কখনও পারিজাত হয় না।
৩।শিরোনামহীন
মাস্কারার কাছে মুকুর অবাধ্য আজ
প্রতিবিম্বে ধরাশায়ী অনন্ত যৌবন !
আনা,পাই, পয়সার হিসেব বুঝতে চেয়ে
বিদ্রোহী ...
মসৃণ ত্বক !
৪।শিরোনামহীন
কলম চেনেনা কালি
চিনে নিতে পারে শুধু বেদনা বিলাস।
বিষাদকে দিতে পারে রূপ ...
আখর বিন্যাসে !
৫। শিরোনামহীন
কবির পাপসমীক্ষা করতে যেও না
প্রতি পদে হোঁচট খেতে হবে !
তারপর নিজেকেই একাত্ম করতে গিয়ে দেখবে
তোমার একটা কবিতাও ...
কবিতা হয়নি।
৬।ছায়ার আড়ালে
নিজস্ব মুখের রূপ দেখেনি বহুদিন
ধুলো জমে দীনহীন একলা আয়না !
জলাশয়ে জলপানে ভীত আজ
মুখের আড়ালে থাকা কুৎসিত মুখ।
কবিকে প্রবোধ দেয় ...
ছায়ার আড়াল।
৭।পুনর্জন্ম
মৃত্যু
কখনও কখনও মহান হয় না !
যদিও ঈশ্বরের হাত বড়ো লম্বা
একমেবাদ্বিতীয়ম্বলে কিছুই হয়না !
এক ঈশ্বরের ক্রোধ প্রশমিত না হতেই
শুধুমাত্র বেলপাতায় তুষ্ট হয় অপর ঈশ্বর
যাবতীয় আদর্শ বিসর্জিত হয়
মহীয়ান হওয়ার আকাঙ্খায় !
পুনর্জন্ম আদতে শক্তি বাড়ানোর কৌশল !
৮।শিরোনামহীন
বাইকের চাকা ত্রিকোণমিতি ভুলে গেলে
দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়।
৯।নির্মাণ
আমার শরীর খুঁড়ে
পেলি যত ধাতব খনিজ,
কিছুটা পেন্ডুলাম হোক আর কিছু দিয়ে
হাতকড়ি বানা।
কাল খেয়ে গেছে বাকি !
১০।শিরোনামহীন
যোনি তে সলতে দিয়ে
পুরাতাত্ত্বিক প্রদীপ খুঁজে পাই।
উচ্চকিত লিঙ্গমুখ প্রতিভার
অপচয় করে।
প্রকৃতি অনেক হল,
লিবিডো এখন ...
কবিতার খাতা গিলে খায় !
১১। শিরোনামহীন
ভুলে যাওয়া সবথেকে সোজা !
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয় ...
শারীরিক প্রেম।
তুমুল আশ্লেষে বলে ফেলা কথা
আদতে নিজে বলা নয়।
অ্যাড্রিনালিন এলোমেলো কথা দিয়ে ফেলে।
সম্পর্কের তলানিতে
পলি এসে জমে কালের নিয়মে।
...
নারীও জলের মত,
নব নব পাত্র খুঁজে নেয় !
কুসুমের মন কবেই শরীরে
ঢাকা পড়ে গেছে।
হাত ধরে দিয়ে ফেলা কথা,
সমর্পিত প্রগাঢ় চুম্বন ...
আসলে সিঁড়ি খুঁজে ফেরে।
বোকার মরণ হয়,
বুদ্ধিমান নিদ্রাসুখ খোঁজে।
১২। শিরোনামহীন
প্রতিমুহূর্তে নিজেকে ঘেন্না
প্রতিটা নিমেষ পুড়ে যায় অশৈলী দাবানলে।
নিজেই নিজের শত্রু হয়ে বারবার ...
যৌবনমুক্তির প্রত্যাশা অবিরাম !
নিবৃত্তির পাকদণ্ডীর অপেক্ষায় থেকে আজ...
বারবার অনুভূত হয় অগ্রজের অভাব !
১৩।অসমাপ্ত
'কতো কি করার আছে বাকি'
শুনে মনে হয় কি কি এখনও করিনি?
করিনি অনেক কিছু
পড়ে থাকি স্তব্ধ মাতাল !
এখনও খাইনি চুমু...
ভেবে দেখো কেমন আঁতাল !
এখনও তোমার বিবস্ত্র শরীর দেখিনি।
তোমাকে বোঝাতে পারিনি?
নাকি তুমি বুঝেও বোঝোনি !
১৪।নকশালবাড়ির উঠোন
নীলরঙ ক্রমশ পোট্রেট হচ্ছে
পাকদণ্ডীতে শ্রেণীশত্রুর অপেক্ষায় অনড় স্কোয়াড !
খতমের তালিকা দীর্ঘ করার প্রয়োজনে
নির্ভুল নিশানায় স্থির আছে শায়কের মুখ।
পিছনে পায়ের শব্দ !
দ্রাম, দ্রামআওয়াজ।
সব শেষ।
অশান্ত মেধার পতন
শরীরী ছিদ্রপথে ঢুকে পরে সর্বনাশা কাল !
দাবানলে পুড়ে যায় ...
যৌথ খামার !
১৫।প্রলাপ চরিত
কিছু একটা প্রলাপ লিখবো আজ
মুখোশ খোলার সময় হলে
শিহরন ওঠে আজও
ঝিঁঝিঁ ধরে মনে।
তীক্ষ্ণ সূচীমুখ যন্ত্রণা বুকের গভীরে।
প্রতারিত হয়ে যায় প্রথম চুম্বন !
হাতে হাত রেখে বলা
প্রতিটা মিথ্যা,
তোর বলা প্রতিটা মিথ্যার ভিতর
সবসেরা'ভালোবাসি'.........
বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে আজও !
কিছু একটা প্রলাপ লিখবো আজ।
১৬।অদৃশ্য আখর
বেনামী শরীর খুঁজে পায়
নিজস্ব আধার।
আখরবৃত্তে লেখা নেই সেই ইতিহাস !
১৭।জ্যামিতি
আসলে আমার দেহে পাপ নেই
কিংবা থাকতেও পারে
অন্য অনেকের মতো।
পাপে বুঝি ঢেকে যায়
অনিমেষ জীবনের ক্ষত !
পাপ - পুন্য কিছু নয়
শরীরের জ্যামিতি তবুও বুঝিনা আমি !
কষে যাই আনমনে
প্রমান না হওয়া ...
অতিরিক্ত উপপাদ্য।
১৮।প্রতিবিম্ব
রাত্রি এখন মৃতবৎ-উদাস
যমদূতেরা আসছে দেখে
পা স্থানুবৎ।
আকাশ বিদীর্ণ করে নামা
বাজের আলোয়
দেখি দাঁড়িয়ে আছি
আমি আর...
অখণ্ড শূন্যতা !
১৯।কমরেড
পাড়ার চায়ের দোকানে দাঁড়ানো ছেলেটা
বাঁ গালে কাটা দাগ
ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট;
উদ্ধত-একরোখা
বিধু জ্যাঠা, পাড়ারবারোয়ারি পুজোর প্রেসিডেন্ট
যাকে দেখলেই বলে ওঠেন- রাবিশ
মেয়েরা যাকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত পায়ে চলে যায়।
অনীশ দা- যিনি কবিতা লেখেন, বলেন
' ওটা নষ্ট প্রতিভা, নরকের কীট,
রানী, যাকেছেলেটা ভালোবাসতো, বলে'অপদার্থ' !
আচমকা একদিন তার নামে শহীদ বেদীতে মালা দিতেআসেন
লোকাল এম.পি।
কমরেড, 'তোমাকেআমাদের লাল সেলাম' বলে গলা মেলায়
বিধু জ্যাঠা, অনীশদা !
সেই অপদার্থ ছেলেটা আজ বোকার মতো কারও হাতথেকে
রানীর সম্মান বাঁচাতে গিয়ে
শহীদ হয়ে গেল !
যারা কোনোদিন ছেলেটাকে একটুও ভালোকথা বলেনি
তারাই ধরা গলায় বলে ওঠে ---
'কমরেড তোমায় লাল সেলাম, আমরা তোমায় ভুলছি না, ভুলবো না'!
শুধু একজন খোলা জানালায় শূন্য চোখে দাঁড়িয়ে
তার ছেলেটা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না।
২০।ইন্দ্রপ্রস্থ
বোধহীন নিশ্চুপ সময় দেখছে
কিছু বলছে না।
এ তো বড় রঙ্গ জাদু !
পড়ছে লাশ, পুড়ছেঘর
শান্তি- শিবির থেকে তবুও তুমি
খুঁজে পাচ্ছ...
জয়ের গন্ধ !
তোমার সাময়িক অক্লান্ত পরিশ্রম
দেবে ...
পাঁচ বছরের ইন্দ্রপ্রস্থ !
তারপর তুমি ফ্লাইং কিস্ছুঁড়ে দেবে ...
ই - জমানায় !
1 comments:
বেশ কয়েকটা ভালো লেগেছে। শুভেচ্ছা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন