যন্ত্র-তন্ত্র
সূর্যনাথ ভট্টাচার্য
'আপনার ওজন ৬৫ কেজি, আপনার বয়স ৬১, আপনি বিবাহিত, আপনার নামে 'এম' অক্ষরটি আছে এবং আপনি বর্ধমান যাচ্ছেন।'
শুনলে মনে হবে জ্যোতিষী ভাগ্যগণনার ফল বলছেন। আসলে কথাগুলি কিন্তু লেখা আছে হতভম্ব রামবাবুর হাতে ধরা একটা টিকিটে। যা তিনি পেয়েছেন, শিয়ালদা ষ্টেশনের এই নতুন ওজন-যন্ত্রে ওজন নিয়ে।
রামবাবু থাকেন বর্ধমানে, ডেলি-প্যাসেঞ্জারি করে কলকাতার বিনোদিনী হাইস্কুলে ফিজিক্স পড়ান। এই মেশিনটার কথা ক'দিন আগে পলটুর কাছেই প্রথম শুনেছিলেন রামবাবু। 'তুমি বললে বিশ্বাস করবে না মামা, সাধারণ মেশিন নয়,' পলটু স্বভাবগত আবান্তর উচ্ছাসে জানিয়েছিল, 'একটা টাকা ফেললেই কত কি বলে দেয় জানো! তোমার ওজন, বয়েস, নাম-ধাম স-ব! অ্যামেরিকা থেকে ইম্পোরটেড, চল্লিশ-লাখ টাকা দাম। বুদ্ধিমান যন্ত্র মামা, না দেখলে বিশ্বাস করবে না।'
সে কথায় তেমন আমল দেন নি রাম বাবু, তড়বড় করে নানান আজে-বাজে বকা পলটুর স্বভাব। আজ স্কুলের পরে টিউশন সেরে বাড়ি ফেরার পথে শিয়ালদা ষ্টেশনে হঠাৎই রামবাবুর চোখে পড়ে গেল মেশিনটা। একটু অদ্ভুত গড়নের যন্ত্রটার সামনে আবার দুটো চোখ আঁকা, ড্যাবড্যাব করে যেন সব প্যাসেঞ্জারের আনাগোনা লক্ষ করছে। ভাবলেন দেখাই যাক না, কি বলে পলটুর এই আজব যন্ত্র।
যা দেখলেন, তাতে আশ্চর্য না হয়ে উপায় রইল না। পলটুর কথামত সবকিছু না মিললেও, যেটুকু মিলেছে তাই বা কম কি?
যন্ত্র যা বলেছে, তাতে কোন ভুল নেই। বয়সটা দেখেই রাম বাবু সতর্ক হলেন। কেউ দেখে ফেলল কিনা কে জানে? আসল বয়স অনুযায়ী গত বছরই তাঁর রিটায়ার করার কথা। কিন্তু স্কুলে ঢোকবার সময়ে বছর তিনেক জল মেশানো থাকায় এখনও তিনি বহাল তবিয়তে চাকরি করে চলেছেন। এটা তাঁর একটা সুরক্ষিত গোপন কথা। যন্ত্রের কাছে কিন্তু তা গোপন থাকে নি।
রামবাবু বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। ভালো করে চিন্তা করলেন। ওজন মাপার যন্ত্র ওজন বলবে সেটা কোনও বড় কথা নয়। ওজন থেকে বয়সটারও একটা স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিলেশন হয়ত বার করা যায়। গন্তব্যটাও নিশ্চই সম্ভবতঃ আগামী ট্রেনের টাইম থেকে লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আর বাকিগুলো? বিবাহিত পুরুষের দুরবস্থা কি যন্ত্রের জ্ঞাতব্য? তারপর নাম? সেটা তো কোনোভাবেই যন্ত্রে ধরবার উপায় নেই।
অনেক ভেবে রামবাবু এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, মেশিনটায় নিশ্চই কয়েকটা তথ্য ভরা আছে, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ওইগুলোই চালিয়ে দিচ্ছে। রামবাবুর ক্ষেত্রে যা একান্ত আকস্মিকভাবে খেটে গেছে। মনটা কিন্তু খচ-খচ করতে থাকলো। এতোটা সমাপতন কি সম্ভব?
একটা ট্রেন এসেছিলো, যাত্রীরা হুড়হুড় করে বেরিয়ে আসছিলো। রামবাবু ভাবলেন আর একজনকে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলে কেমন হয়? সামনেই পেলেন এক গোলগাল বয়স্ক বিধবা ভদ্রমহিলাকে। তাঁকেই বললেন, 'দিদি, আপনি একবার এই ওজন-মেশিনটায় ওজন করাবেন? আমি টাকাটা দিয়ে দিচ্ছি।'
ভদ্রমহিলা এক গাল হেসে 'আর বাবা, আমার আবার ওজন কেন' বলতে বলতে মেশিনটায় উঠে পড়লেন। টিকিট বেরল, রামবাবু দেখলেন তাতে লেখা, 'আপনার ওজন ৭৫ কেজি, আপনার বয়স ৭০, আপনি বিধবা, আপনার নামে 'এস' অক্ষরটি আছে এবং আপনি কাটোয়া থেকে ফিরছেন।'
—'আপনার নামটা বলবেন, দিদি?' রামবাবু কোনোরকমে জিজ্ঞেস করলেন। প্রথম তিনটের ব্যাপারে তাঁর বিশেষ কোনও সন্দেহ ছিল না।
—'ওমা, আমার নাম নিয়ে কি করবে গো? আমি তো শুভলক্ষী, নবদ্বীপ থেকে আসছি। কিন্তু তোমায় তো ঠিক চিনতে পারলাম না ভাই?'
—'নবদ্বীপ?' রামবাবুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
—'হ্যাঁ, কাটোয়ায় গাড়ী পালটে আসতে হল। ...ও বাঞ্ছা, কোথায় গেলি? অত তাড়া দিস না বাবা...' মহিলার সঙ্গী ছোকরাটি খানিকটা এগিয়ে গিয়েছিল, শেষের কথা ক'টা তার উদ্দেশ্যে বলে আবার একগাল হেসে তিনি রামবাবুকে বললেন, 'বাঞ্ছার আবার তোর সয় না। আচ্ছা, আমি চলি ভাই।'
ভদ্রমহিলা হেলতে-দুলতে চলে গেলেন। রামবাবুর ততক্ষণে আক্কেল গুড়ুম! নবদ্বীপ শুনে প্রথমে ভেবেছিলেন, যন্ত্রের তাহলে ভুল হল। কিন্তু তা তো নয়! তাঁর মাথায় তখন যেন গোঁ চেপে গেছে, এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। এদিক-ওদিক চেয়ে দেখলেন অ্যাটাচি হাতে এক ভদ্রলোক হন্তদন্ত হয়ে এদিকেই আসছেন। তাঁকেই রামবাবু মেশিনে তুললেন, ভদ্রলোক বিরক্তভাবে উঠেও পড়লেন। চোখ তাঁর প্ল্যাটফর্মের দিকে, কথা বাড়িয়ে সময় নষ্ট করতে চাইলেন না। এবার টিকিটে লেখা এলো, 'আপনার ওজন ৭২ কেজি, আপনার বয়স ৪৭, আপনি বিবাহিত(?), আপনার নামে 'পি' অক্ষরটি আছে এবং আপনি দিল্লি যাচ্ছেন।'
রামবাবু আগেই দেখেছিলেন, ভদ্রলোকের অ্যাটাচিতে পি-এম অক্ষরদু'টি লেখা ছিল। কিন্তু বিবাহিত-য় প্রশ্নচিহ্ন কেন? রামবাবু মুখ তুলে দেখেন ভদ্রলোক টিকিটের জন্যে আদৌ ব্যস্ত নন, ইতিমধ্যে হনহন করে খানিকটা এগিয়ে গেছেন। রামবাবু তাড়াতাড়ি গলা তুলে জিজ্ঞেস করলেন, 'স্যার, আপনি কি বিবাহিত?'
ভদ্রলোক রাগতভাবে খিঁচিয়ে উঠলেন, 'দুর মশাই, নিকুচি করেছে বিয়ের। আপনার এই ধাস্টামোর জন্যে যদি দিল্লির ট্রেনটা মিস করি তাহলে কিন্তু আপনার বাবার বিয়ে দেখিয়ে ছাড়বো...।' বলতে বলতে ভদ্রলোক ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলেন, রামবাবুও আর ওনাকে ঘাঁটানো সমীচীন বোধ করলেন না। যন্ত্র এবারেও কোনও ভুল করে নি, এমন কি ভদ্রলোকের মেজাজ বুঝিয়ে দিল 'বিবাহিত'-য় প্রশ্নচিহ্ন থাকারও নিশ্চই কোনও সঙ্গত(!) কারণ আছে।
আকাশ-পাতাল ভেবেও কোনও কূল পাচ্ছেন না বিজ্ঞানের শিক্ষক রামবাবু। এ যে ভেল্কিবাজী। শেষ কালে নিজেই আর একবার উঠে পড়লেন মেশিনে, ভাবলেন দেখা যাক এবারেও একই মন্তব্য পাওয়া যায় কিনা। টাকাটা দিতেই যন্ত্র খানিক চুপ করে রইল, তারপর ঘড়ঘড় শব্দ করতে লাগলো। একটু যেন বেশিক্ষণই। রামবাবুর পরিস্কার মনে হল যন্ত্রটি যেন বিদ্রুপের হাসি চাপছে।
তারপর যখন টিকিট বেরিয়ে এলো, তাতে লেখা, 'আপনার ওজন এখনও ৬৫ কেজি, আপনার বয়স এখনও ৬১, আপনি এখনও বিবাহিত, আপনার নামে এখনও 'এম' অক্ষরটি আছে এবং শেষ বর্ধমান লোকালটা কিন্তু আপনি মিস করেছেন।'
'আপনার ওজন ৬৫ কেজি, আপনার বয়স ৬১, আপনি বিবাহিত, আপনার নামে 'এম' অক্ষরটি আছে এবং আপনি বর্ধমান যাচ্ছেন।'
শুনলে মনে হবে জ্যোতিষী ভাগ্যগণনার ফল বলছেন। আসলে কথাগুলি কিন্তু লেখা আছে হতভম্ব রামবাবুর হাতে ধরা একটা টিকিটে। যা তিনি পেয়েছেন, শিয়ালদা ষ্টেশনের এই নতুন ওজন-যন্ত্রে ওজন নিয়ে।
রামবাবু থাকেন বর্ধমানে, ডেলি-প্যাসেঞ্জারি করে কলকাতার বিনোদিনী হাইস্কুলে ফিজিক্স পড়ান। এই মেশিনটার কথা ক'দিন আগে পলটুর কাছেই প্রথম শুনেছিলেন রামবাবু। 'তুমি বললে বিশ্বাস করবে না মামা, সাধারণ মেশিন নয়,' পলটু স্বভাবগত আবান্তর উচ্ছাসে জানিয়েছিল, 'একটা টাকা ফেললেই কত কি বলে দেয় জানো! তোমার ওজন, বয়েস, নাম-ধাম স-ব! অ্যামেরিকা থেকে ইম্পোরটেড, চল্লিশ-লাখ টাকা দাম। বুদ্ধিমান যন্ত্র মামা, না দেখলে বিশ্বাস করবে না।'
সে কথায় তেমন আমল দেন নি রাম বাবু, তড়বড় করে নানান আজে-বাজে বকা পলটুর স্বভাব। আজ স্কুলের পরে টিউশন সেরে বাড়ি ফেরার পথে শিয়ালদা ষ্টেশনে হঠাৎই রামবাবুর চোখে পড়ে গেল মেশিনটা। একটু অদ্ভুত গড়নের যন্ত্রটার সামনে আবার দুটো চোখ আঁকা, ড্যাবড্যাব করে যেন সব প্যাসেঞ্জারের আনাগোনা লক্ষ করছে। ভাবলেন দেখাই যাক না, কি বলে পলটুর এই আজব যন্ত্র।
যা দেখলেন, তাতে আশ্চর্য না হয়ে উপায় রইল না। পলটুর কথামত সবকিছু না মিললেও, যেটুকু মিলেছে তাই বা কম কি?
যন্ত্র যা বলেছে, তাতে কোন ভুল নেই। বয়সটা দেখেই রাম বাবু সতর্ক হলেন। কেউ দেখে ফেলল কিনা কে জানে? আসল বয়স অনুযায়ী গত বছরই তাঁর রিটায়ার করার কথা। কিন্তু স্কুলে ঢোকবার সময়ে বছর তিনেক জল মেশানো থাকায় এখনও তিনি বহাল তবিয়তে চাকরি করে চলেছেন। এটা তাঁর একটা সুরক্ষিত গোপন কথা। যন্ত্রের কাছে কিন্তু তা গোপন থাকে নি।
রামবাবু বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। ভালো করে চিন্তা করলেন। ওজন মাপার যন্ত্র ওজন বলবে সেটা কোনও বড় কথা নয়। ওজন থেকে বয়সটারও একটা স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিলেশন হয়ত বার করা যায়। গন্তব্যটাও নিশ্চই সম্ভবতঃ আগামী ট্রেনের টাইম থেকে লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আর বাকিগুলো? বিবাহিত পুরুষের দুরবস্থা কি যন্ত্রের জ্ঞাতব্য? তারপর নাম? সেটা তো কোনোভাবেই যন্ত্রে ধরবার উপায় নেই।
অনেক ভেবে রামবাবু এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, মেশিনটায় নিশ্চই কয়েকটা তথ্য ভরা আছে, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ওইগুলোই চালিয়ে দিচ্ছে। রামবাবুর ক্ষেত্রে যা একান্ত আকস্মিকভাবে খেটে গেছে। মনটা কিন্তু খচ-খচ করতে থাকলো। এতোটা সমাপতন কি সম্ভব?
একটা ট্রেন এসেছিলো, যাত্রীরা হুড়হুড় করে বেরিয়ে আসছিলো। রামবাবু ভাবলেন আর একজনকে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলে কেমন হয়? সামনেই পেলেন এক গোলগাল বয়স্ক বিধবা ভদ্রমহিলাকে। তাঁকেই বললেন, 'দিদি, আপনি একবার এই ওজন-মেশিনটায় ওজন করাবেন? আমি টাকাটা দিয়ে দিচ্ছি।'
ভদ্রমহিলা এক গাল হেসে 'আর বাবা, আমার আবার ওজন কেন' বলতে বলতে মেশিনটায় উঠে পড়লেন। টিকিট বেরল, রামবাবু দেখলেন তাতে লেখা, 'আপনার ওজন ৭৫ কেজি, আপনার বয়স ৭০, আপনি বিধবা, আপনার নামে 'এস' অক্ষরটি আছে এবং আপনি কাটোয়া থেকে ফিরছেন।'
—'আপনার নামটা বলবেন, দিদি?' রামবাবু কোনোরকমে জিজ্ঞেস করলেন। প্রথম তিনটের ব্যাপারে তাঁর বিশেষ কোনও সন্দেহ ছিল না।
—'ওমা, আমার নাম নিয়ে কি করবে গো? আমি তো শুভলক্ষী, নবদ্বীপ থেকে আসছি। কিন্তু তোমায় তো ঠিক চিনতে পারলাম না ভাই?'
—'নবদ্বীপ?' রামবাবুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
—'হ্যাঁ, কাটোয়ায় গাড়ী পালটে আসতে হল। ...ও বাঞ্ছা, কোথায় গেলি? অত তাড়া দিস না বাবা...' মহিলার সঙ্গী ছোকরাটি খানিকটা এগিয়ে গিয়েছিল, শেষের কথা ক'টা তার উদ্দেশ্যে বলে আবার একগাল হেসে তিনি রামবাবুকে বললেন, 'বাঞ্ছার আবার তোর সয় না। আচ্ছা, আমি চলি ভাই।'
ভদ্রমহিলা হেলতে-দুলতে চলে গেলেন। রামবাবুর ততক্ষণে আক্কেল গুড়ুম! নবদ্বীপ শুনে প্রথমে ভেবেছিলেন, যন্ত্রের তাহলে ভুল হল। কিন্তু তা তো নয়! তাঁর মাথায় তখন যেন গোঁ চেপে গেছে, এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। এদিক-ওদিক চেয়ে দেখলেন অ্যাটাচি হাতে এক ভদ্রলোক হন্তদন্ত হয়ে এদিকেই আসছেন। তাঁকেই রামবাবু মেশিনে তুললেন, ভদ্রলোক বিরক্তভাবে উঠেও পড়লেন। চোখ তাঁর প্ল্যাটফর্মের দিকে, কথা বাড়িয়ে সময় নষ্ট করতে চাইলেন না। এবার টিকিটে লেখা এলো, 'আপনার ওজন ৭২ কেজি, আপনার বয়স ৪৭, আপনি বিবাহিত(?), আপনার নামে 'পি' অক্ষরটি আছে এবং আপনি দিল্লি যাচ্ছেন।'
রামবাবু আগেই দেখেছিলেন, ভদ্রলোকের অ্যাটাচিতে পি-এম অক্ষরদু'টি লেখা ছিল। কিন্তু বিবাহিত-য় প্রশ্নচিহ্ন কেন? রামবাবু মুখ তুলে দেখেন ভদ্রলোক টিকিটের জন্যে আদৌ ব্যস্ত নন, ইতিমধ্যে হনহন করে খানিকটা এগিয়ে গেছেন। রামবাবু তাড়াতাড়ি গলা তুলে জিজ্ঞেস করলেন, 'স্যার, আপনি কি বিবাহিত?'
ভদ্রলোক রাগতভাবে খিঁচিয়ে উঠলেন, 'দুর মশাই, নিকুচি করেছে বিয়ের। আপনার এই ধাস্টামোর জন্যে যদি দিল্লির ট্রেনটা মিস করি তাহলে কিন্তু আপনার বাবার বিয়ে দেখিয়ে ছাড়বো...।' বলতে বলতে ভদ্রলোক ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলেন, রামবাবুও আর ওনাকে ঘাঁটানো সমীচীন বোধ করলেন না। যন্ত্র এবারেও কোনও ভুল করে নি, এমন কি ভদ্রলোকের মেজাজ বুঝিয়ে দিল 'বিবাহিত'-য় প্রশ্নচিহ্ন থাকারও নিশ্চই কোনও সঙ্গত(!) কারণ আছে।
আকাশ-পাতাল ভেবেও কোনও কূল পাচ্ছেন না বিজ্ঞানের শিক্ষক রামবাবু। এ যে ভেল্কিবাজী। শেষ কালে নিজেই আর একবার উঠে পড়লেন মেশিনে, ভাবলেন দেখা যাক এবারেও একই মন্তব্য পাওয়া যায় কিনা। টাকাটা দিতেই যন্ত্র খানিক চুপ করে রইল, তারপর ঘড়ঘড় শব্দ করতে লাগলো। একটু যেন বেশিক্ষণই। রামবাবুর পরিস্কার মনে হল যন্ত্রটি যেন বিদ্রুপের হাসি চাপছে।
তারপর যখন টিকিট বেরিয়ে এলো, তাতে লেখা, 'আপনার ওজন এখনও ৬৫ কেজি, আপনার বয়স এখনও ৬১, আপনি এখনও বিবাহিত, আপনার নামে এখনও 'এম' অক্ষরটি আছে এবং শেষ বর্ধমান লোকালটা কিন্তু আপনি মিস করেছেন।'
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন