অনুবাদ – অত্রি ভট্টাচার্য
"To write a republic" - "প্রজাতন্ত্র লিখতে গিয়ে "
আমেরিকার রাজনৈতিক কবিতাঃ হুইটম্যান থেকে ৯/১১
- টমি কোতোনেন
[“সাহিত্যে রাজনীতির প্রভাব” বিষয় হিসেবে খুব গণ্ডগোলের লেগেছে আমার ! সাহিত্য রাজনীতিকে প্রভাবিত ক’রে - আমার মতে এই কথাটার মধ্যে কিছু গলদ আছে। প্রথমতঃ, সাহিত্য সমাজের ও সময়ের দর্পণ – এই বিষয়ে বোধ হয় বামপন্থী বা ডানপন্থী কোন রাজনীতিতেই দ্বিমত নেই। আর রাজনীতি আমার মতে, একটি সংগঠিত সমাজের অনেকগুলি ধারকের বা স্তম্ভের মধ্যে একটি। সুতরাং সময়ের কথা যেখানে লেখা হয়, সেখানে আসলে রাজনীতির কথাই লেখা হয়। তাই, প্রথমেই এই সম্ভাবনা বাতিল হয়ে গেল যে, সাহিত্যে রাজনীতি “প্রভাব” ফ্যালে। না, বরং বিষয়টি হতে পারত “সাহিত্যের রাজনৈতীক সংগঠন” বা “সাহিত্যের রাজনীতিগত অংশগুলি”। আমি এক বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেম। “রাজনীতিতে সাহিত্যের প্রভাব”। কিন্তু কেউ উৎসাহ দেখাল না। এই সুতোটি তাই ভবিষ্যতের কোন সাহিত্য-গবেষকের উদ্দেশ্যে ঘুড়িতে লাগিয়ে দিলেম, যদি এখনোও লেখা না হয়ে থাকে এ বিষয়ে। আপাততঃ ফাঁকীবাজী করেই মৌলিক কিছুর বদলে হাফ-মৌলিক-এ চলে গেলেম, অর্থাৎ অনুবাদে। প্রসঙ্গতঃ, কবিতার উদ্ধৃতিগুলি অনুবাদের দুঃসাহস বা অভদ্রতা দেখাইনি। - অত্রি ভট্টাচার্য ]
Tommi Kotonen-এর “To Write a Republic – American Political Poetry from Whitman to 9/11”-এর দ্বিতীয় অধ্যায় “আমেরিকান রাজনৈতীক কবিতাঃ ইতিহাস, প্রেক্ষাপট ও তত্ত্ব” থেকে অংশবিশেষ।
১) রাজনৈতিক কবিতার রণনীতি অথবা কবিতার রাজনৈতীক পাঠ
“in truth / We have no gift to set a statesman right” – Yeats
ইতিপূর্বে আমরা কবিতার রাজনৈতীক দিকগুলি ব্যাখা করবার একাধিক প্রচেষ্টা দেখেছি। সাধারনতঃ লোকের মনে কবিতা এবং রাজনীতি বা “রাজনৈতীক” সম্পর্কে মোটামুটি সংহত কিছু ধারণা থাকে। কিন্তু এই দুটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটলে তা বোঝার পক্ষে অনেক বেশী কঠিন হয়ে পড়ে। কবিতা এবং রাজনীতিকে সম্পূর্ন পৃথক বৃত্তের দু’টি কার্য্যক্রম হিসেবে দেখা হয়।
রাজনীতি এবং কবিতার সম্পর্ক এক আধুনিক প্রশ্ন। ডেনিস লেভেরতভ, যিনি কবিও ছিলেন, এই বিষয়ে বলেছেন যে, এই প্রশ্নটি রোম্যান্টিক যুগের আগে তেমন সমস্যার ছিল না এবং কবিতার পৃথগীভূত লিরিক আঙ্গিককে এখনও প্রায়ই যাবতীয় কবিতার সমার্থক হিসেবে ধরা হয়। পুরাতনী আঙ্গিক, যেমন মহাকাব্য বা ব্যালাড ছিল স্পষ্টতঃ গোষ্ঠীগত, কিন্তু বিশিষ্ট নয় এবং এদের উপজীব্য বিষয়গুলিও বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ও সুবিধাজনকভাবে উপস্থাপিত হত।
রাজনৈতীক কবিতাকে দেখা হয়েছে নীচু নজরে, যেভাবে কবিতা ও রাজনীতি – উভয়কেই দেখা হয়ে থাকে। রাজনৈতীক কবিতা বললেই অনেকের মনে হবে সেইসব কবিদের কথা যারা রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ এবং বিখ্যাত রাজনীতিবিদদের স্তুতিমূলক কবিতা লিখে থাকেন। এইভাবে দেখলে, রাজনৈতীক কবিকে হয় সুযোগসন্ধানী অথবা স্রেফ বোকাসোকা মানুষ হিসেবেই বোধ হয়। কিন্তু এইভাবে ভাবা ঠিক নয়। বহু বিখ্যাত কবি রাজনৈতীক বিষয়বস্তু নিয়ে লিখেছেন এবং সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত-ও হয়েছেন। পাবলো নেরুদা, ওসিপ ম্যাণ্ডেলস্ট্যাম, ডব্লিউ এইচ অডেন – প্রমুখ অনেকের নামই এক্ষেত্রে মাথায় আসে এবং তারা যে কবি হিসেবে নিম্নমানের – তাও নয়; যদি তা হন-ও, কারণগুলি সেক্ষেত্রে কবিতার থেকে বেশী রাজনৈতীক। তাদেরকেও দুঃসহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল, যেমন নেরুদা (১৯৫০) যখন লিখছেন – “Molotov and Voroshilov are there / I see them with the others, the high generals / the indomitable ones” । কিন্তু কবিদের বারবার দেখা গিয়েছে রাজনীতির শিকার হতে, যেমন ম্যাণ্ডেলস্ট্যাম স্তালিনের হাতে হয়েছিলেন।
২) কবিতা কোনকিছু ঘটায় না
এই দু-নৌকায় পা রেখে চলা অনেক কবির মধ্যে একজনের নাম ডব্লিউ এইচ অডেন। তিনি আইরিশ বংশোদ্ভূত ছিলেন কিন্তু পরে আমেরিকায় চলে আসেন এবং সেখান থেকে পরে দক্ষিণ ইউরোপে গিয়ে স্থিত হন। সমাজে কবির ভূমিকা বিষয়ে অডেনের সেরা উক্তি বোধ ক’রি ইয়েটসের উদ্দেশ্যে লেখা তার এলিজিখানি, “In Memory of W.B.Yeats”. এই কবিতার দ্বিতীয় এবং সবথেকে বেশী উদ্ধৃত অংশটি হ’ল -
You were silly like us; your gift survived it all:
The parish of rich women, physical decay,
yourself. Mad Ireland hurt you into poetry.
Now Ireland has her madness and her weather still,
For poetry makes nothing happen: it survives
In the valley of its making where executives
Would never want to tamper, flows on south
From ranches of isolation and the busy griefs,
Raw towns that we believe and die in; it survives,
A way of happening, a mouth. (১৯৯১)
পাতি বিশ্লেষকেরা এই কবিতা থেকে সাধারনতঃ যে সারমর্ম উদ্ধার ক’রে থাকেন তা হ’ল – “কবিতা কিছু ঘটাতে পারে না” এবং এই তত্ত্বের আলোকে কবিতাকে ব্যাখা করেন রোজকার জীবন এবং রাজনীতির সম্পূর্ন বিসদৃশ এক উদযাপন হিসেবে। কিন্তু এই বক্তব্যটি পরে কবিতার মধ্যেই বর্জিত হয় এবং এই পাঠের পুরোপুরি বিপরীত এক বক্তব্য উঠে আসে। কবিতা সত্যিই কিছুমিছু ঘটিয়ে থাকে, কিন্তু তা প্রত্যক্ষভাবে নয় –
Follow, poet, follow right
To the bottom of the night,
With your unconstraining voice
Still persuade us to rejoice.
With the farming of a verse
Make a vineyard of the curse,
Sing of human unsuccess
In a rapture of distress.
In the deserts of the heart
Let the healing fountains start,
In the prison of his days
Teach the free man how to praise.
কবিতা ঘটমানতাকে তরান্বিত ক’রে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, অথবা নিত্যদিনের দৃষ্টিকোণের বদল ঘটিয়ে; যে কবি স্বাভাবিকতার স্তরগুলিকে অতিক্রম করেন তিনি পরিবর্তনের সূচনা করেন। এখানে, অডেন অনুসরন করেন শেলীকে, যিনি কবিকে দেখেছিলেন “বিধানদাতা” (Legislator) হিসেবে। এই কবিতায় একই সময়ের দুই ভিন্ন রাজনৈতীক ধারাও অনুভূত হয়। প্রথম ধারণায়, কবি কেবল তার শ্বাশ্বত শব্দগুচ্ছের মধ্যেই বেঁচে থাকেন; কবি যা অর্জন করেন তা শুধু তার মুষ্টিমেয় অনুসারীই স্মরণে রাখেন। কিন্তু দ্বিতীয় ধারণাটি কিঞ্চিৎ ভিন্ন রকমের। ১৯৩৯ সালে রচিত তার ভলতেয়ার-সংক্রান্ত প্রবন্ধে অডেন গণতন্ত্র সম্পর্কে তার ধারণাটিও ব্যাক্ত করছেন এইভাবেঃ- "For democracy is not a political system or party but an attitude of mind" । এই আলোচ্য কবিতাটি সম্ভবতঃ প্রথম অথবা প্রথম কবিতাগুলির মধ্যে একটি, যা অডেন আমেরিকায় বসে লিখেছিলেন। নিউইয়র্ক আসবার তিনদিনের মাথায় অডেন ইয়েটসের মৃত্যুসংবাদ পান। অডেন আমেরিকা গিয়েছিলেন “উন্মাদ আয়ার্ল্যাণ্ড” আর তার উন্মাদ রাজনীতির আবর্ত থেকে মুক্তি খুঁজতে। তিরিশের দশকে অডেন কবির কর্তব্যের সঙ্গে মার্কসীয় রাজনীতির সমন্বয়ের চেষ্টা করেন, যদিও সাম্যবাদ হাতেকলমের থেকে আদর্শ হিসেবেই তার কাছে অধিকতর গ্রহনযোগ্য ছিল এবং স্বীয় কমরেডদের প্রতি তার মনোভাব তারাও খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে রিপাবলিকানদের ধ্বজাধারী হিসেবে অডেনের অভিজ্ঞতা তাকে রাজনীতির প্রতিই বীতশ্রদ্ধ ক’রে তোলে এবং সিনো-জাপানী যুদ্ধের রিপোর্টাজ লেখবার শেষে তিনি তার রাজনীতির পথ বদলান, তার কবিতায় রাজনীতির অতীত বা উর্দ্ধের পথকে বেছে ন্যান।
অডেন, অনেকের ধারণায়, কবিতার সঙ্গে রাজনীতির অঙ্গাঅঙ্গি জড়িত থাকবার কথা বলেছিলেন, যেহেতু উভয়-ই ভাষাভিত্তিক চর্চা । যদিচ, তিনি কবিতায় ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা সঞ্চারের উপরেও গুরুত্ব আরোপ করেন। অডেনের মতে, সনাতন মূল্যবোধ এবং কার্য্যক্রমের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকবে, পাশাপাশি, অভিজ্ঞতা ও বক্তব্য ভাষার কাঠামোগত উপাদানগুলির সঙ্গে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ । এই দ্বন্দ্বটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের কবিতায় এবং কবিতার বিশ্লেষণে ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
৩) কোনকিছুই তর্কাতীতভাবে গ্রহণ করা নয়
রাজনৈতীক কবিতার ক্ষেত্রে, সুস্পষ্ট কোন ইঙ্গিত-ও তর্কাতীতভাবে গ্রহন ক’রা উচিত নয়। কবিতাকে এক প্রত্যক্ষ অঙ্গ হিসেবে ব্যবহার ক’রা সম্ভব, যা রাজনীতির মত ধারাবাহিক ও মসৃণ নয়, কিন্তু তারই একাংশ। কবিতাকে সরাসরি রাজনীতির বার্তাবহ বয়ান হিসেবে গড়ে তোলা যায়ঃ সেক্ষেত্রে তা স্রেফ রাজনৈতীক ভাষ্য হয়ে দাঁড়াবে। সাধারনতঃ এইধরনের কবিতাকে বলা হয় agit-prop (agitation-prpaganda). কিন্তু এই তীক্ষ্ণ অ্যাজিটপ্রপের বাইরেও কবিতায় রাজনীতি থাকা সম্ভব। সাবেকী থেকে শুরু ক’রে ননসেন্স কবিতা, যার মধ্যে কোন নির্দিষ্ট অর্থ বা পরিচিত শব্দ না-ও থাকতে পারে, সঠিকভাবে পাঠ করলে তাদের শরীরেও রাজনৈতীক চিহ্নাবলী আবিষ্কার ক’রা যায়। বলা হয় যে, প্রতিটি কাব্যকলাই রাজনৈতীক শক্তিকে বহন ক’রে। উদাহরনস্বরূপ, ব্রুস এণ্ড্রুজ-এর “Give Em Enough Rope” কাব্যগ্রন্থ থেকে “Sound Machines” কবিতাটি নেওয়া যাকঃ-
Equation Sphinxlike Pmphlet
Misinform Sweet Business Miss Dot Your Eye Favorably
Impressive Rough Interest
Sensational Base Natural Problematize Hey Look
Dominate Ruler Passion
Added Passing Sharp Policy Moving Loco Fancy Line Vibration
Talking Cognitive I'm When Touched
Detention (বানানপ্রমাদগুলি কবিকৃত)
সমস্যা হচ্ছে, এর রাজনৈতীক ব্যাখার সূচনা কোথা থেকে হবে, বা এর ভিত্তিই বা কি? ধরুন দেরিদা যেমন বলেন, যে বয়ানের বাইরে কিছুই নেই, সাথে সাথে এটাও সত্যি, যে বয়ানের মধ্যেও কিছু থাকে না। বাস্তবে শব্দ একটি ধ্বনীমাত্র, যা থেকে কিছুই বোঝায় না। একে প্রসঙ্গে আনতে হয়, অন্যান্য ধ্বনীর সঙ্গে, অন্যান্য অর্থপদ্ধতির সঙ্গে সাযুজ্যে আনতে হয়, বিন্যস্ত করতে হয়। এখানেই আমরা রাজনৈতীকে প্রবেশ ক’রি, আর এখান থেকেই সমস্যার শুরু হচ্ছে।
এণ্ড্রুজ, যিনি যুগপৎ কবি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন, তার রচিত উল্লিখিত অংশটি ননসেন্স বলেই বোধ হয়। আমরা ধরে নিতে পারি এ স্রেফ তার প্রলাপ নয়, বরং তিনি আমাদের, অথবা কাউকে কিছু বলতে চাইছেন। কিন্তু তিনি কি সিরিয়াস? একটি মুদ্রিত গ্রন্থ কি ঠাট্টা হতে পারে? এবং যেহেতু কবিতা হিসেবে ছাপা হয়েছে, সুতরাং এটা কবিতাই। অতএব আমরা মেনে নিচ্ছি যে এটি কবিতা আর এর কোন অর্থ-ও রয়েছে। কিন্তু আমরা কি নিছক ওই কয়টি উদ্ধৃত পংক্তি থেকেই এর অর্থসুত্রটি উদ্ধার করতে সক্ষম? যে শিল্পটি আমাদের চিন্তা করানোর উদ্দেশ্যে উপস্থাপিত – তাকে কি আমরা দূর থেকে দেখেই কাজ সারব? আসলে “কবিতা”-কে দেখেই মনে হয় হাতেগরম, স্রেফ শব্দ তুলে তুলে জুড়ে জুড়ে একসাথে সেঁটে দেওয়া।
কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি মনগড়া নয়। এখানে এক আবছা খসড়া নকশা, শব্দেরা পংক্তির মধ্যে ব্যকরণ-বহির্ভূতভাবে সাজানো এবং কান পাতলে হয়তো অন্ত্যমিলের অস্পষ্ট প্রতিধ্বনীও মিলবে। শব্দেরা যেন দমন ও স্বাধীনতার মধ্যে দোদুল্যমান এক ধারণাকে বহন করছে।
কবিতার ক্ষেত্রে যা প্রয়োজনীয় তা হ’ল, একে এক স্পেস বা ক্ষেত্র হিসেবে দেখা। এণ্ড্রুজ তার “কবিতা”য় সৃষ্টি করেছেন স্পেসকে ভাষা দিয়ে ভরিয়ে তোলার উপায়, যার সঙ্গে জড়িত এর যাবতীয় অপবিত্রতা, বাস্তবিকতা এবং অবশ্যই – রাজনীতি ! এ হচ্ছে এক ব্যাপক বিশৃঙ্খলার পর্যবেক্ষণ যার নাম জীবন, তাৎক্ষণিকভাবে বাঁচা যে জীবন ! একে পংক্তিবদ্ধ করতে, এর বিশৃঙ্খল অস্তিত্বকে প্রকাশ করবার জন্য একে পাঠকের কাছে টাটকা ও সদ্যজাত হিসেবে তুলে ধরতে হয় ! পাঠক এই আপাত-অসমাপ্ত বয়ানকে অর্থবহ ক’রে সাজিয়ে নেয়, এবং এই অমসৃণ পাঠ্যবস্তু, পংক্তি ও কাঠামোয় পাওয়া ইঙ্গিতময়তা পাঠকের কাজকে আরো বিশদে নিয়ে যায়। কবিতা তার স্বকীয় ভঙ্গিমায় আমাদের সামনে আনে, খড় ও মাটি থেকে গোটা ভাষাটি গড়ে তোলার পুঙ্খনাপুঙ্খ বর্ণনা । পাঠপদ্ধতির রাজনীতি ও রাজনৈতীক অর্থাবলী এর অবিভাজ্য অঙ্গ।
তাই কবিতা সংক্রান্ত প্রশ্নটি একই সাথে এর রাজনৈতীক কাঠামোর প্রতিও নির্দেশ ক’রে থাকেঃ কার কাছে বয়ানের সঠিক অর্থ থাকে, এবং কার পাঠ বেশী গুরুত্ব পাবে – পাঠকের নাকি কবির নিজের? যে কোন ভাষান্তর-ই এক দুরূহ ক্রিয়া, তা সে কবির দ্বারাই হোক বা অন্য কারো দ্বারা।
উপন্যাস এবং প্রাক্-আধুনিক যুগের কবিতা স্বতন্ত্র এবং নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অংশবিশেষ কাল্পনিক হ’লেও, কবিতা হচ্ছে বাস্তব জীবনের এক খণ্ডাংশের উপস্থাপনা এবং কবিতারা এখানে আলোচনামাত্র; ভাষা বাস্তবের যে মৌলিক উপাদানগুলিকে একই সঙ্গে সৃষ্টি ও অবিশ্বাস ক’রে থাকে – তাদের নিয়ে আলোচনা।
এই আলোচনায় আলোচক স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একইসঙ্গে দুইপ্রকার কবিতার সমন্বয় ঘটিয়েছেন – ভাষাপ্রধান ও বক্তব্যপ্রধান কবিতা। শুরু থেকেই তার উদ্দেশ্য এইসব কাজগুলির রাজনৈতীক উপবয়ানগুলিকে উন্মোচিত ক’রা। যদিও, এর সীমানাগুলি যতটা স্পষ্ট মনে হয়, আসলে ততটা নয়। মনে রাখা উচিত, কবি রন সিলিম্যান কিভাবে রবার্ট গ্রেনিয়ারের বক্তব্য-বিরোধীতার সংশোধন করেছিলেনঃ- “আমি বক্তব্যকে ঘৃণা ক’রি, কিন্তু কথাকে ভালোবাসি”। ভাষাকবিরা যদিও ভাষাচর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন, তবু তারা কথোপকথনের ভঙ্গীতে অগ্রসর হওয়ার উপরেও প্রাধান্য দিতেন। তর্ক উঠতে পারে, যে “সংলাপধর্মীতা” দীর্ঘকাল ধরেই আমেরিকান কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, একইভাবে জাতীয় স্ব-প্রতিফলনের প্রতি এর প্রবণতাও । কিভাবে আমেরিকার কথা বলা যায় এবং একে বিষয় ক’রে তোলা যায় – এসব-ই হুইটম্যানের ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছিল এবং পরবর্তীকালে আরো অনেকানেক সাহিত্যিককে উৎসাহিত করেছে। ভাষাকে স্বয়ং মাধ্যমে পরিণত ক’রে এগনোর মধ্যে দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যায়।
রাজনীতির প্রত্যক্ষ যন্ত্র হিসেবে কবিতাকে ব্যবহার ক’রা যায় আলংকারিকভাবে, রাজনৈতীক উদ্দেশ্যাবলীর কথা আরোও তীক্ষ্মভাবে ব্যাক্ত ক’রার জন্য, অথবা উল্টোটা, অন্যান্য সাহিত্যধারায় যেসব মত মোটামুটি স্পষ্ট, তাদেরকে ধোঁয়াটে ক’রে তোলবার উদ্দেশ্যে। ভাষা-দর্শনের প্রতিনিধিদের কাছে কবিতা চিরকালই ভাষার এক বিশিষ্ট ধারা হিসেবে পরিগণিত হয়ে এসেছে। কারণ কবিতাতেই ভাষাকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, ভাষার এমন এক আঙ্গিক যা তার সাংগঠনিক প্রকৃতির সঙ্গে সবচেয়ে গভীরভাবে ওতপ্রোত। ভাষার সর্বশেষ স্তর, সবচেয়ে সচেতনভাবে উপস্থাপনার দশা। কবিতায় সবই “সন্দেহজনক”, কোনকিছুই স্থায়ী নয়, শব্দেরও কোন স্থায়ী অর্থ নাই, এবং বিষয় আর আঙ্গিকের পারস্পরিক সম্পর্কটিকে এমন জটিল ক’রে তোলা হয় যে, কোনটি প্রাথমিক তা সন্ধান ক’রা সঙ্গিন হয়ে ওঠে। রাজনৈতীক ধারণা ও ডিসকোর্সের এই পুনঃক্রিয়া আলংকারিক পুনর্বয়ন হিসেবে, অথবা, এণ্ড্রুজের কবিতার মত রাজনৈতীক কর্মকাণ্ডগুলিকে প্রতিটি ভাষাবৃত্তে উন্মোচনের দায়িত্ব পালন ক’রে থাকে।
আদ্যন্ত রাজনৈতীক বিষয়গুলিও এই আঙ্গিকের অংশ হয়ে ওঠে, যখন তথাকথিত “কাব্যিক পরিভাষা” নামক তন্ত্রকে ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্যে রাজনৈতীক সুরকে ব্যবহার ক’রা হয়। উদাহরনস্বরূপ, চার্লস ওলসেন-এর কবিতার কথা বলা যায়। দৈনন্দিন জীবন, রাজনীতি, বাণিজ্য, আমোদপ্রমোদ মিলেমিশে গিয়ে সাধারণ-রহিত চিন্তার উদ্যাপন ক’রে এবং প্রতিটি ভাষা ও কাব্যতত্ত্বের নশ্বর স্বরূপকে পরাকাব্যিক (meta-poetical) বক্তব্য হিসেবে রূপদান ক’রে। এটি অগ্রসর হবার একটি জঙ্গম মাধ্যম, শুন্যে বিন্যস্ত এবং রাজনীতিকে অবশ্যই তার অংশ হতে হবে। রাজনৈতীক উপাদান তার কাব্যতত্ত্বে আবশ্যিক, একই সাথে এটি ভাষায় আমাদের অস্তিত্বের-ও অঙ্গ।
সর্বোপরী, কবিতা আমাদের সমাজে ইন্দ্রিয়নির্ভর ধারণাগুলিকে বিকশিত করতে সাহায্য করে, নতুন অর্থ এবং নতুনভাবে দেখতে ও অনুভব করতে শেখায়। সুতরাং কবিতা এই নতুন চেতনায় গতি আনার ফলে এর থেকে নতুন রাজনীতি জন্ম নিতে পারে, যেন এক “অস্বীকৃত বিধানদাতা” (unacknowledged legislator), শেলীর মতে, অথবা “অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে রাজনীতির স্থান ও ভূমিকা স্থির করে”, (“the place and stakes of politics as form of experience”), রাজনৈতীক পরিমণ্ডলে শিল্পের ভূমিকা বিষয়ে Ranciere যা উদ্ধৃত করেছিলেন।
এই ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের রাজনৈতীক কবিতাকে অনুভূমিক বিন্যাসের বদলে এক বা একাধিক স্তরের সমষ্টি রূপেও দেখা যেতে পারে। আলংকারিক স্তরে ভাষা হচ্ছে অতিভাষামূলক চর্চার মাধ্যম । ভাষাকে এখনও প্রশ্নের মুখে ফেলে, সম্ভাবনার বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে গিয়ে চিরে দেখা হয়নি, বরং একে রাজনীতির জন্য ব্যবহৃত হাতবাক্সের মধ্যে রাখা একটি ছেনি বা হাতুড়ির মত ব্যবহার ক’রা হয়েছে। পরবর্তী স্তরে, কবিতা বিকশিত হয় যখন প্রশ্নপদ্ধতি রাজনীতির বৃত্তের অন্তর্গত হতে শুরু ক’রে। ভাষাকে ব্যবহার ক’রে রাজনৈতীক প্রশ্নাবলী ও সীমাবদ্ধতা, ভাষা ও রাজনীতির সীমাবদ্ধতা এবং তাদের পরীক্ষা ক’রা ও খুলে দেখা এবং সব শেষে ভাষা রাজনৈতীক হয়ে ওঠে। সর্বশেষ স্তরে ভাষা এবং রাজনীতি – উভয়কেই আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি হিসেবে গ্রহন ক’রা হয়। এই স্তরে, রাজনীতির বাইরে এসে রাজনীতির অস্তিত্ব-ই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়, রাজনীতি ও ভাষা দুই-ই একটু একটু ক’রে বদলাতে আরম্ভ করে। এই স্তরটি একটি অনুভূতি প্রাগ্রাজনৈতীক, (sense protopolitical) বা Philippe Lacoue-Labarthe-এর দেওয়া পরিভাষা অনুযায়ী, “arche-political”। এভাবেই আমরা রাজনীতির ব্যবহারিক দশা থেকে জ্ঞানদর্শনচর্চাগত হয়ে তত্ত্ববিদ্যার দশায় এসে পৌঁছেছি। চার্লস বার্নস্টাইনের সিদ্ধান্ত, “কবিতা রাজনীতির সূচনা”-তেই বেশীরভাগ কবি এসে উপনীত হন, যখন তারা রাজনৈতীক কবিতার সীমার মধ্যেই এর অতুল সম্ভাবনা আবিষ্কার করেন, তাদের নিজ-নিজ কাব্যিক পূর্বশর্ত নির্বিশেষে।
আলোচক দেখিয়েছেন, এই আপাত-অদৃশ্য স্তরগুলি একে অপরকে ধারণ ক’রে রাখে। কোন স্তর কতটুকু গুরুত্ব পাবে তা লেখকের লক্ষ্য ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর ক’রে। কিন্তু এ কথা নিশ্চিত ক’রেই বলা যায় যে, আলোচিত স্তরগুলির প্রায় প্রত্যেকটিকেই যে কোন রাজনৈতীক কবিতায়, এমনকি তথাকথিত agit-prop কবিতাতেও খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
"To write a republic" - "প্রজাতন্ত্র লিখতে গিয়ে "
আমেরিকার রাজনৈতিক কবিতাঃ হুইটম্যান থেকে ৯/১১
- টমি কোতোনেন
[“সাহিত্যে রাজনীতির প্রভাব” বিষয় হিসেবে খুব গণ্ডগোলের লেগেছে আমার ! সাহিত্য রাজনীতিকে প্রভাবিত ক’রে - আমার মতে এই কথাটার মধ্যে কিছু গলদ আছে। প্রথমতঃ, সাহিত্য সমাজের ও সময়ের দর্পণ – এই বিষয়ে বোধ হয় বামপন্থী বা ডানপন্থী কোন রাজনীতিতেই দ্বিমত নেই। আর রাজনীতি আমার মতে, একটি সংগঠিত সমাজের অনেকগুলি ধারকের বা স্তম্ভের মধ্যে একটি। সুতরাং সময়ের কথা যেখানে লেখা হয়, সেখানে আসলে রাজনীতির কথাই লেখা হয়। তাই, প্রথমেই এই সম্ভাবনা বাতিল হয়ে গেল যে, সাহিত্যে রাজনীতি “প্রভাব” ফ্যালে। না, বরং বিষয়টি হতে পারত “সাহিত্যের রাজনৈতীক সংগঠন” বা “সাহিত্যের রাজনীতিগত অংশগুলি”। আমি এক বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেম। “রাজনীতিতে সাহিত্যের প্রভাব”। কিন্তু কেউ উৎসাহ দেখাল না। এই সুতোটি তাই ভবিষ্যতের কোন সাহিত্য-গবেষকের উদ্দেশ্যে ঘুড়িতে লাগিয়ে দিলেম, যদি এখনোও লেখা না হয়ে থাকে এ বিষয়ে। আপাততঃ ফাঁকীবাজী করেই মৌলিক কিছুর বদলে হাফ-মৌলিক-এ চলে গেলেম, অর্থাৎ অনুবাদে। প্রসঙ্গতঃ, কবিতার উদ্ধৃতিগুলি অনুবাদের দুঃসাহস বা অভদ্রতা দেখাইনি। - অত্রি ভট্টাচার্য ]
Tommi Kotonen-এর “To Write a Republic – American Political Poetry from Whitman to 9/11”-এর দ্বিতীয় অধ্যায় “আমেরিকান রাজনৈতীক কবিতাঃ ইতিহাস, প্রেক্ষাপট ও তত্ত্ব” থেকে অংশবিশেষ।
১) রাজনৈতিক কবিতার রণনীতি অথবা কবিতার রাজনৈতীক পাঠ
“in truth / We have no gift to set a statesman right” – Yeats
ইতিপূর্বে আমরা কবিতার রাজনৈতীক দিকগুলি ব্যাখা করবার একাধিক প্রচেষ্টা দেখেছি। সাধারনতঃ লোকের মনে কবিতা এবং রাজনীতি বা “রাজনৈতীক” সম্পর্কে মোটামুটি সংহত কিছু ধারণা থাকে। কিন্তু এই দুটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটলে তা বোঝার পক্ষে অনেক বেশী কঠিন হয়ে পড়ে। কবিতা এবং রাজনীতিকে সম্পূর্ন পৃথক বৃত্তের দু’টি কার্য্যক্রম হিসেবে দেখা হয়।
রাজনীতি এবং কবিতার সম্পর্ক এক আধুনিক প্রশ্ন। ডেনিস লেভেরতভ, যিনি কবিও ছিলেন, এই বিষয়ে বলেছেন যে, এই প্রশ্নটি রোম্যান্টিক যুগের আগে তেমন সমস্যার ছিল না এবং কবিতার পৃথগীভূত লিরিক আঙ্গিককে এখনও প্রায়ই যাবতীয় কবিতার সমার্থক হিসেবে ধরা হয়। পুরাতনী আঙ্গিক, যেমন মহাকাব্য বা ব্যালাড ছিল স্পষ্টতঃ গোষ্ঠীগত, কিন্তু বিশিষ্ট নয় এবং এদের উপজীব্য বিষয়গুলিও বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ও সুবিধাজনকভাবে উপস্থাপিত হত।
রাজনৈতীক কবিতাকে দেখা হয়েছে নীচু নজরে, যেভাবে কবিতা ও রাজনীতি – উভয়কেই দেখা হয়ে থাকে। রাজনৈতীক কবিতা বললেই অনেকের মনে হবে সেইসব কবিদের কথা যারা রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ এবং বিখ্যাত রাজনীতিবিদদের স্তুতিমূলক কবিতা লিখে থাকেন। এইভাবে দেখলে, রাজনৈতীক কবিকে হয় সুযোগসন্ধানী অথবা স্রেফ বোকাসোকা মানুষ হিসেবেই বোধ হয়। কিন্তু এইভাবে ভাবা ঠিক নয়। বহু বিখ্যাত কবি রাজনৈতীক বিষয়বস্তু নিয়ে লিখেছেন এবং সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত-ও হয়েছেন। পাবলো নেরুদা, ওসিপ ম্যাণ্ডেলস্ট্যাম, ডব্লিউ এইচ অডেন – প্রমুখ অনেকের নামই এক্ষেত্রে মাথায় আসে এবং তারা যে কবি হিসেবে নিম্নমানের – তাও নয়; যদি তা হন-ও, কারণগুলি সেক্ষেত্রে কবিতার থেকে বেশী রাজনৈতীক। তাদেরকেও দুঃসহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল, যেমন নেরুদা (১৯৫০) যখন লিখছেন – “Molotov and Voroshilov are there / I see them with the others, the high generals / the indomitable ones” । কিন্তু কবিদের বারবার দেখা গিয়েছে রাজনীতির শিকার হতে, যেমন ম্যাণ্ডেলস্ট্যাম স্তালিনের হাতে হয়েছিলেন।
২) কবিতা কোনকিছু ঘটায় না
এই দু-নৌকায় পা রেখে চলা অনেক কবির মধ্যে একজনের নাম ডব্লিউ এইচ অডেন। তিনি আইরিশ বংশোদ্ভূত ছিলেন কিন্তু পরে আমেরিকায় চলে আসেন এবং সেখান থেকে পরে দক্ষিণ ইউরোপে গিয়ে স্থিত হন। সমাজে কবির ভূমিকা বিষয়ে অডেনের সেরা উক্তি বোধ ক’রি ইয়েটসের উদ্দেশ্যে লেখা তার এলিজিখানি, “In Memory of W.B.Yeats”. এই কবিতার দ্বিতীয় এবং সবথেকে বেশী উদ্ধৃত অংশটি হ’ল -
You were silly like us; your gift survived it all:
The parish of rich women, physical decay,
yourself. Mad Ireland hurt you into poetry.
Now Ireland has her madness and her weather still,
For poetry makes nothing happen: it survives
In the valley of its making where executives
Would never want to tamper, flows on south
From ranches of isolation and the busy griefs,
Raw towns that we believe and die in; it survives,
A way of happening, a mouth. (১৯৯১)
পাতি বিশ্লেষকেরা এই কবিতা থেকে সাধারনতঃ যে সারমর্ম উদ্ধার ক’রে থাকেন তা হ’ল – “কবিতা কিছু ঘটাতে পারে না” এবং এই তত্ত্বের আলোকে কবিতাকে ব্যাখা করেন রোজকার জীবন এবং রাজনীতির সম্পূর্ন বিসদৃশ এক উদযাপন হিসেবে। কিন্তু এই বক্তব্যটি পরে কবিতার মধ্যেই বর্জিত হয় এবং এই পাঠের পুরোপুরি বিপরীত এক বক্তব্য উঠে আসে। কবিতা সত্যিই কিছুমিছু ঘটিয়ে থাকে, কিন্তু তা প্রত্যক্ষভাবে নয় –
Follow, poet, follow right
To the bottom of the night,
With your unconstraining voice
Still persuade us to rejoice.
With the farming of a verse
Make a vineyard of the curse,
Sing of human unsuccess
In a rapture of distress.
In the deserts of the heart
Let the healing fountains start,
In the prison of his days
Teach the free man how to praise.
কবিতা ঘটমানতাকে তরান্বিত ক’রে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, অথবা নিত্যদিনের দৃষ্টিকোণের বদল ঘটিয়ে; যে কবি স্বাভাবিকতার স্তরগুলিকে অতিক্রম করেন তিনি পরিবর্তনের সূচনা করেন। এখানে, অডেন অনুসরন করেন শেলীকে, যিনি কবিকে দেখেছিলেন “বিধানদাতা” (Legislator) হিসেবে। এই কবিতায় একই সময়ের দুই ভিন্ন রাজনৈতীক ধারাও অনুভূত হয়। প্রথম ধারণায়, কবি কেবল তার শ্বাশ্বত শব্দগুচ্ছের মধ্যেই বেঁচে থাকেন; কবি যা অর্জন করেন তা শুধু তার মুষ্টিমেয় অনুসারীই স্মরণে রাখেন। কিন্তু দ্বিতীয় ধারণাটি কিঞ্চিৎ ভিন্ন রকমের। ১৯৩৯ সালে রচিত তার ভলতেয়ার-সংক্রান্ত প্রবন্ধে অডেন গণতন্ত্র সম্পর্কে তার ধারণাটিও ব্যাক্ত করছেন এইভাবেঃ- "For democracy is not a political system or party but an attitude of mind" । এই আলোচ্য কবিতাটি সম্ভবতঃ প্রথম অথবা প্রথম কবিতাগুলির মধ্যে একটি, যা অডেন আমেরিকায় বসে লিখেছিলেন। নিউইয়র্ক আসবার তিনদিনের মাথায় অডেন ইয়েটসের মৃত্যুসংবাদ পান। অডেন আমেরিকা গিয়েছিলেন “উন্মাদ আয়ার্ল্যাণ্ড” আর তার উন্মাদ রাজনীতির আবর্ত থেকে মুক্তি খুঁজতে। তিরিশের দশকে অডেন কবির কর্তব্যের সঙ্গে মার্কসীয় রাজনীতির সমন্বয়ের চেষ্টা করেন, যদিও সাম্যবাদ হাতেকলমের থেকে আদর্শ হিসেবেই তার কাছে অধিকতর গ্রহনযোগ্য ছিল এবং স্বীয় কমরেডদের প্রতি তার মনোভাব তারাও খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে রিপাবলিকানদের ধ্বজাধারী হিসেবে অডেনের অভিজ্ঞতা তাকে রাজনীতির প্রতিই বীতশ্রদ্ধ ক’রে তোলে এবং সিনো-জাপানী যুদ্ধের রিপোর্টাজ লেখবার শেষে তিনি তার রাজনীতির পথ বদলান, তার কবিতায় রাজনীতির অতীত বা উর্দ্ধের পথকে বেছে ন্যান।
অডেন, অনেকের ধারণায়, কবিতার সঙ্গে রাজনীতির অঙ্গাঅঙ্গি জড়িত থাকবার কথা বলেছিলেন, যেহেতু উভয়-ই ভাষাভিত্তিক চর্চা । যদিচ, তিনি কবিতায় ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা সঞ্চারের উপরেও গুরুত্ব আরোপ করেন। অডেনের মতে, সনাতন মূল্যবোধ এবং কার্য্যক্রমের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকবে, পাশাপাশি, অভিজ্ঞতা ও বক্তব্য ভাষার কাঠামোগত উপাদানগুলির সঙ্গে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ । এই দ্বন্দ্বটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের কবিতায় এবং কবিতার বিশ্লেষণে ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
৩) কোনকিছুই তর্কাতীতভাবে গ্রহণ করা নয়
রাজনৈতীক কবিতার ক্ষেত্রে, সুস্পষ্ট কোন ইঙ্গিত-ও তর্কাতীতভাবে গ্রহন ক’রা উচিত নয়। কবিতাকে এক প্রত্যক্ষ অঙ্গ হিসেবে ব্যবহার ক’রা সম্ভব, যা রাজনীতির মত ধারাবাহিক ও মসৃণ নয়, কিন্তু তারই একাংশ। কবিতাকে সরাসরি রাজনীতির বার্তাবহ বয়ান হিসেবে গড়ে তোলা যায়ঃ সেক্ষেত্রে তা স্রেফ রাজনৈতীক ভাষ্য হয়ে দাঁড়াবে। সাধারনতঃ এইধরনের কবিতাকে বলা হয় agit-prop (agitation-prpaganda). কিন্তু এই তীক্ষ্ণ অ্যাজিটপ্রপের বাইরেও কবিতায় রাজনীতি থাকা সম্ভব। সাবেকী থেকে শুরু ক’রে ননসেন্স কবিতা, যার মধ্যে কোন নির্দিষ্ট অর্থ বা পরিচিত শব্দ না-ও থাকতে পারে, সঠিকভাবে পাঠ করলে তাদের শরীরেও রাজনৈতীক চিহ্নাবলী আবিষ্কার ক’রা যায়। বলা হয় যে, প্রতিটি কাব্যকলাই রাজনৈতীক শক্তিকে বহন ক’রে। উদাহরনস্বরূপ, ব্রুস এণ্ড্রুজ-এর “Give Em Enough Rope” কাব্যগ্রন্থ থেকে “Sound Machines” কবিতাটি নেওয়া যাকঃ-
Equation Sphinxlike Pmphlet
Misinform Sweet Business Miss Dot Your Eye Favorably
Impressive Rough Interest
Sensational Base Natural Problematize Hey Look
Dominate Ruler Passion
Added Passing Sharp Policy Moving Loco Fancy Line Vibration
Talking Cognitive I'm When Touched
Detention (বানানপ্রমাদগুলি কবিকৃত)
সমস্যা হচ্ছে, এর রাজনৈতীক ব্যাখার সূচনা কোথা থেকে হবে, বা এর ভিত্তিই বা কি? ধরুন দেরিদা যেমন বলেন, যে বয়ানের বাইরে কিছুই নেই, সাথে সাথে এটাও সত্যি, যে বয়ানের মধ্যেও কিছু থাকে না। বাস্তবে শব্দ একটি ধ্বনীমাত্র, যা থেকে কিছুই বোঝায় না। একে প্রসঙ্গে আনতে হয়, অন্যান্য ধ্বনীর সঙ্গে, অন্যান্য অর্থপদ্ধতির সঙ্গে সাযুজ্যে আনতে হয়, বিন্যস্ত করতে হয়। এখানেই আমরা রাজনৈতীকে প্রবেশ ক’রি, আর এখান থেকেই সমস্যার শুরু হচ্ছে।
এণ্ড্রুজ, যিনি যুগপৎ কবি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন, তার রচিত উল্লিখিত অংশটি ননসেন্স বলেই বোধ হয়। আমরা ধরে নিতে পারি এ স্রেফ তার প্রলাপ নয়, বরং তিনি আমাদের, অথবা কাউকে কিছু বলতে চাইছেন। কিন্তু তিনি কি সিরিয়াস? একটি মুদ্রিত গ্রন্থ কি ঠাট্টা হতে পারে? এবং যেহেতু কবিতা হিসেবে ছাপা হয়েছে, সুতরাং এটা কবিতাই। অতএব আমরা মেনে নিচ্ছি যে এটি কবিতা আর এর কোন অর্থ-ও রয়েছে। কিন্তু আমরা কি নিছক ওই কয়টি উদ্ধৃত পংক্তি থেকেই এর অর্থসুত্রটি উদ্ধার করতে সক্ষম? যে শিল্পটি আমাদের চিন্তা করানোর উদ্দেশ্যে উপস্থাপিত – তাকে কি আমরা দূর থেকে দেখেই কাজ সারব? আসলে “কবিতা”-কে দেখেই মনে হয় হাতেগরম, স্রেফ শব্দ তুলে তুলে জুড়ে জুড়ে একসাথে সেঁটে দেওয়া।
কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি মনগড়া নয়। এখানে এক আবছা খসড়া নকশা, শব্দেরা পংক্তির মধ্যে ব্যকরণ-বহির্ভূতভাবে সাজানো এবং কান পাতলে হয়তো অন্ত্যমিলের অস্পষ্ট প্রতিধ্বনীও মিলবে। শব্দেরা যেন দমন ও স্বাধীনতার মধ্যে দোদুল্যমান এক ধারণাকে বহন করছে।
কবিতার ক্ষেত্রে যা প্রয়োজনীয় তা হ’ল, একে এক স্পেস বা ক্ষেত্র হিসেবে দেখা। এণ্ড্রুজ তার “কবিতা”য় সৃষ্টি করেছেন স্পেসকে ভাষা দিয়ে ভরিয়ে তোলার উপায়, যার সঙ্গে জড়িত এর যাবতীয় অপবিত্রতা, বাস্তবিকতা এবং অবশ্যই – রাজনীতি ! এ হচ্ছে এক ব্যাপক বিশৃঙ্খলার পর্যবেক্ষণ যার নাম জীবন, তাৎক্ষণিকভাবে বাঁচা যে জীবন ! একে পংক্তিবদ্ধ করতে, এর বিশৃঙ্খল অস্তিত্বকে প্রকাশ করবার জন্য একে পাঠকের কাছে টাটকা ও সদ্যজাত হিসেবে তুলে ধরতে হয় ! পাঠক এই আপাত-অসমাপ্ত বয়ানকে অর্থবহ ক’রে সাজিয়ে নেয়, এবং এই অমসৃণ পাঠ্যবস্তু, পংক্তি ও কাঠামোয় পাওয়া ইঙ্গিতময়তা পাঠকের কাজকে আরো বিশদে নিয়ে যায়। কবিতা তার স্বকীয় ভঙ্গিমায় আমাদের সামনে আনে, খড় ও মাটি থেকে গোটা ভাষাটি গড়ে তোলার পুঙ্খনাপুঙ্খ বর্ণনা । পাঠপদ্ধতির রাজনীতি ও রাজনৈতীক অর্থাবলী এর অবিভাজ্য অঙ্গ।
তাই কবিতা সংক্রান্ত প্রশ্নটি একই সাথে এর রাজনৈতীক কাঠামোর প্রতিও নির্দেশ ক’রে থাকেঃ কার কাছে বয়ানের সঠিক অর্থ থাকে, এবং কার পাঠ বেশী গুরুত্ব পাবে – পাঠকের নাকি কবির নিজের? যে কোন ভাষান্তর-ই এক দুরূহ ক্রিয়া, তা সে কবির দ্বারাই হোক বা অন্য কারো দ্বারা।
উপন্যাস এবং প্রাক্-আধুনিক যুগের কবিতা স্বতন্ত্র এবং নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অংশবিশেষ কাল্পনিক হ’লেও, কবিতা হচ্ছে বাস্তব জীবনের এক খণ্ডাংশের উপস্থাপনা এবং কবিতারা এখানে আলোচনামাত্র; ভাষা বাস্তবের যে মৌলিক উপাদানগুলিকে একই সঙ্গে সৃষ্টি ও অবিশ্বাস ক’রে থাকে – তাদের নিয়ে আলোচনা।
এই আলোচনায় আলোচক স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একইসঙ্গে দুইপ্রকার কবিতার সমন্বয় ঘটিয়েছেন – ভাষাপ্রধান ও বক্তব্যপ্রধান কবিতা। শুরু থেকেই তার উদ্দেশ্য এইসব কাজগুলির রাজনৈতীক উপবয়ানগুলিকে উন্মোচিত ক’রা। যদিও, এর সীমানাগুলি যতটা স্পষ্ট মনে হয়, আসলে ততটা নয়। মনে রাখা উচিত, কবি রন সিলিম্যান কিভাবে রবার্ট গ্রেনিয়ারের বক্তব্য-বিরোধীতার সংশোধন করেছিলেনঃ- “আমি বক্তব্যকে ঘৃণা ক’রি, কিন্তু কথাকে ভালোবাসি”। ভাষাকবিরা যদিও ভাষাচর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন, তবু তারা কথোপকথনের ভঙ্গীতে অগ্রসর হওয়ার উপরেও প্রাধান্য দিতেন। তর্ক উঠতে পারে, যে “সংলাপধর্মীতা” দীর্ঘকাল ধরেই আমেরিকান কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, একইভাবে জাতীয় স্ব-প্রতিফলনের প্রতি এর প্রবণতাও । কিভাবে আমেরিকার কথা বলা যায় এবং একে বিষয় ক’রে তোলা যায় – এসব-ই হুইটম্যানের ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছিল এবং পরবর্তীকালে আরো অনেকানেক সাহিত্যিককে উৎসাহিত করেছে। ভাষাকে স্বয়ং মাধ্যমে পরিণত ক’রে এগনোর মধ্যে দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যায়।
রাজনীতির প্রত্যক্ষ যন্ত্র হিসেবে কবিতাকে ব্যবহার ক’রা যায় আলংকারিকভাবে, রাজনৈতীক উদ্দেশ্যাবলীর কথা আরোও তীক্ষ্মভাবে ব্যাক্ত ক’রার জন্য, অথবা উল্টোটা, অন্যান্য সাহিত্যধারায় যেসব মত মোটামুটি স্পষ্ট, তাদেরকে ধোঁয়াটে ক’রে তোলবার উদ্দেশ্যে। ভাষা-দর্শনের প্রতিনিধিদের কাছে কবিতা চিরকালই ভাষার এক বিশিষ্ট ধারা হিসেবে পরিগণিত হয়ে এসেছে। কারণ কবিতাতেই ভাষাকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, ভাষার এমন এক আঙ্গিক যা তার সাংগঠনিক প্রকৃতির সঙ্গে সবচেয়ে গভীরভাবে ওতপ্রোত। ভাষার সর্বশেষ স্তর, সবচেয়ে সচেতনভাবে উপস্থাপনার দশা। কবিতায় সবই “সন্দেহজনক”, কোনকিছুই স্থায়ী নয়, শব্দেরও কোন স্থায়ী অর্থ নাই, এবং বিষয় আর আঙ্গিকের পারস্পরিক সম্পর্কটিকে এমন জটিল ক’রে তোলা হয় যে, কোনটি প্রাথমিক তা সন্ধান ক’রা সঙ্গিন হয়ে ওঠে। রাজনৈতীক ধারণা ও ডিসকোর্সের এই পুনঃক্রিয়া আলংকারিক পুনর্বয়ন হিসেবে, অথবা, এণ্ড্রুজের কবিতার মত রাজনৈতীক কর্মকাণ্ডগুলিকে প্রতিটি ভাষাবৃত্তে উন্মোচনের দায়িত্ব পালন ক’রে থাকে।
আদ্যন্ত রাজনৈতীক বিষয়গুলিও এই আঙ্গিকের অংশ হয়ে ওঠে, যখন তথাকথিত “কাব্যিক পরিভাষা” নামক তন্ত্রকে ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্যে রাজনৈতীক সুরকে ব্যবহার ক’রা হয়। উদাহরনস্বরূপ, চার্লস ওলসেন-এর কবিতার কথা বলা যায়। দৈনন্দিন জীবন, রাজনীতি, বাণিজ্য, আমোদপ্রমোদ মিলেমিশে গিয়ে সাধারণ-রহিত চিন্তার উদ্যাপন ক’রে এবং প্রতিটি ভাষা ও কাব্যতত্ত্বের নশ্বর স্বরূপকে পরাকাব্যিক (meta-poetical) বক্তব্য হিসেবে রূপদান ক’রে। এটি অগ্রসর হবার একটি জঙ্গম মাধ্যম, শুন্যে বিন্যস্ত এবং রাজনীতিকে অবশ্যই তার অংশ হতে হবে। রাজনৈতীক উপাদান তার কাব্যতত্ত্বে আবশ্যিক, একই সাথে এটি ভাষায় আমাদের অস্তিত্বের-ও অঙ্গ।
সর্বোপরী, কবিতা আমাদের সমাজে ইন্দ্রিয়নির্ভর ধারণাগুলিকে বিকশিত করতে সাহায্য করে, নতুন অর্থ এবং নতুনভাবে দেখতে ও অনুভব করতে শেখায়। সুতরাং কবিতা এই নতুন চেতনায় গতি আনার ফলে এর থেকে নতুন রাজনীতি জন্ম নিতে পারে, যেন এক “অস্বীকৃত বিধানদাতা” (unacknowledged legislator), শেলীর মতে, অথবা “অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে রাজনীতির স্থান ও ভূমিকা স্থির করে”, (“the place and stakes of politics as form of experience”), রাজনৈতীক পরিমণ্ডলে শিল্পের ভূমিকা বিষয়ে Ranciere যা উদ্ধৃত করেছিলেন।
এই ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের রাজনৈতীক কবিতাকে অনুভূমিক বিন্যাসের বদলে এক বা একাধিক স্তরের সমষ্টি রূপেও দেখা যেতে পারে। আলংকারিক স্তরে ভাষা হচ্ছে অতিভাষামূলক চর্চার মাধ্যম । ভাষাকে এখনও প্রশ্নের মুখে ফেলে, সম্ভাবনার বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে গিয়ে চিরে দেখা হয়নি, বরং একে রাজনীতির জন্য ব্যবহৃত হাতবাক্সের মধ্যে রাখা একটি ছেনি বা হাতুড়ির মত ব্যবহার ক’রা হয়েছে। পরবর্তী স্তরে, কবিতা বিকশিত হয় যখন প্রশ্নপদ্ধতি রাজনীতির বৃত্তের অন্তর্গত হতে শুরু ক’রে। ভাষাকে ব্যবহার ক’রে রাজনৈতীক প্রশ্নাবলী ও সীমাবদ্ধতা, ভাষা ও রাজনীতির সীমাবদ্ধতা এবং তাদের পরীক্ষা ক’রা ও খুলে দেখা এবং সব শেষে ভাষা রাজনৈতীক হয়ে ওঠে। সর্বশেষ স্তরে ভাষা এবং রাজনীতি – উভয়কেই আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি হিসেবে গ্রহন ক’রা হয়। এই স্তরে, রাজনীতির বাইরে এসে রাজনীতির অস্তিত্ব-ই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়, রাজনীতি ও ভাষা দুই-ই একটু একটু ক’রে বদলাতে আরম্ভ করে। এই স্তরটি একটি অনুভূতি প্রাগ্রাজনৈতীক, (sense protopolitical) বা Philippe Lacoue-Labarthe-এর দেওয়া পরিভাষা অনুযায়ী, “arche-political”। এভাবেই আমরা রাজনীতির ব্যবহারিক দশা থেকে জ্ঞানদর্শনচর্চাগত হয়ে তত্ত্ববিদ্যার দশায় এসে পৌঁছেছি। চার্লস বার্নস্টাইনের সিদ্ধান্ত, “কবিতা রাজনীতির সূচনা”-তেই বেশীরভাগ কবি এসে উপনীত হন, যখন তারা রাজনৈতীক কবিতার সীমার মধ্যেই এর অতুল সম্ভাবনা আবিষ্কার করেন, তাদের নিজ-নিজ কাব্যিক পূর্বশর্ত নির্বিশেষে।
আলোচক দেখিয়েছেন, এই আপাত-অদৃশ্য স্তরগুলি একে অপরকে ধারণ ক’রে রাখে। কোন স্তর কতটুকু গুরুত্ব পাবে তা লেখকের লক্ষ্য ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর ক’রে। কিন্তু এ কথা নিশ্চিত ক’রেই বলা যায় যে, আলোচিত স্তরগুলির প্রায় প্রত্যেকটিকেই যে কোন রাজনৈতীক কবিতায়, এমনকি তথাকথিত agit-prop কবিতাতেও খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
1 comments:
ভাল লাগল বেশ...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন