সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১২

রহমান মাসুদ

কবি আপন মাহমুদকে স্মরণ


শনিবার সকাল থেকেই ঢাকার আকাশে ছিল মেঘ-রোদ্দুরের লুকোচুরি খেলা। বেলা বাড়তে বাড়তে তা হেমন্তের বৃষ্টিতে রূপ নেয়। প্রকৃতির ও যেন মন খারাপ। মন খারাপ আমাদেরও। এমন বৃষ্টি হলে কি আসতে পারবেন অতিথিরা। আশঙ্কা আর ধোপে টেকেনি। দুপুরেই ঝকঝকে নীল আকাশ। ওরা বেদনায় নীল। আকাশ আমাদের বলল, ভয় নেই। আমার সব নীল তোমাদের দুঃখ। আমারাও আপন স্মরনে ব্যাথিত। তোমরা আগাও। আমরা এগুলাম। দেখলাম কতটা রাজসিক ভাবে অকাল প্রয়াত কবি ও সাংবাদিক আপন মাহমুদকে স্মরণ করল তার বন্ধু ও সুহৃদরা। মাত্র একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেই এমন রাজসিক স্মরণ ক’জনার কপালে জোটে!

(শনিবার) বিকাল ৫টায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের (পাবলিক লাইব্রেরীর) ২য়তলার সেমিনার কক্ষে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

কে নেই ওই সভায়!
দেশের শিক্ষাসচিব চৌধুরী কামাল আবু নাসের (কবি কামাল চৌধুরী), রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কবি আসাদ মান্নান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব কবি আমিনুল ইসলাম, কবি জুয়েল মাজহার, বাংলা একাডেমীর পরিচালক কবি সরকার আমিন, কবি চঞ্চল আশরাফ, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি ব্রাত্য রাইসু, কবি শাহেদ কায়েস, কবি কবির হুমায়ুন, কবি সাখাওয়াৎ টিপু, কবি জহির হাসান, কবি মোস্তফা মল্লিক, কবি কুমার চক্রবর্তী, কবি আমিনুর রহমান সুলতান, কথা সহিত্যিক ও গবেষক ফিরোজ আহমেদসহ অনেক অগ্রজ কবি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আপন স্মৃতি আপন কথায় সবাইকে স্তব্ধ করে রাখেন।


শূন্যর কবিদের মধ্যে ছিলেন, মাহাবুব মোর্শেদ, তুষার কবির, সোহেল হাসান গালিব, তারিক টুকু, বিল্লাল মেহদী, আমজাদ সুজন, সফেদ ফরাজী, মৃদুল মাহবুব, জুয়েল মোস্তাফিজ, আহমেদ ফিরোজ, কাফি কামাল, বিজয় আহমেদ, রুদ্র আরিফ, আরিফ হোসেন, মামুন খান, আফরোজা সোমা, রুদ্র অনির্বান, পান্থজন সুরঞ্জিত, আশফাকুর রহমান, সজল সমুদ্র, অদ্বৈত মারুত, বিক্রম শাহা, দুপুর মিত্র, অচিন্ত চয়ন, পিয়াস মজিদ, শাহিন লতিফ, ফিরোজ এহতেশামসহ অসংখ্য কবি।

ছিলেন দ্বিতীয় দশকের হিজল জোবায়ের, সোয়েব সর্বনাম, সুদীপ্ত সাইদ, সাইয়্যেদ জামিলসহ আরো শতাধিক কবি-সাহিত্যিক।

দুই শতাধিক কবি-সাহিত্যিক আপন মাহমুদের ৩ ঘণ্টার স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রমুগ্ধর মতো আপনকে জানছিলেন পিনপতন নীরবতায়।

কবি কামাল চৌধুরী (শিক্ষা সচিব) বলেন, ‘আপন মাহমুদ ছিলেন শূন্য দশকের এক উজ্জ্বল প্রতিভা। তার অকাল প্রয়ানে তার বন্ধুসহ কবি মহলে যে আলোড়ন তৈরি হয়েছে তা কেবল আমার বন্ধু রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র ক্ষেত্রে হয়েছিল। আপনের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের সকল কবিদেরই একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।’

কবি জুয়েল মাজহার বলেন, ‘সময়ের এক অসামান্য প্রতিভা আপন। তিনি ছিলেন অর্ন্তমুখী ও প্রাণাবন্ত মানুষ। নিজের অসুবিধার কথা তিনি কাউকে টের পাইতে দেননি। অথচ পরিবারের এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন।’

এছাড়াও স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন অকাল প্রায়ত কবির পরিবারের সদস্যরা। আপন মাহমুদের স্ত্রী ফাহমিদা বিথী ও আপনের ছোট ভাই বক্তব্য রাখেন।

এই সভায় ক্ষেপচুরিয়াসের পক্ষ থেকে একটি শোক বার্তা পাঠানো হয় । কবি শৌনক দত্ত তনুর ক্ষেপচুরিয়ানস্‌ ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত আপন মাহমুদের সম্পর্কে প্রকাশিত একটি স্মরণ কথার অংশ বিশেষ পাঠ করেন কবি শাহিন লতিফ।

আপন মাহমুদের কবিতা আবৃত্তি করেন শিমুল মুস্তাফা ও শাকিলা মতিন আব্দুল্লাহ।

আপন মাহমুদের জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৭৬, লক্ষ্মীপুরের কড়ইতলি গ্রাম। মৃত্যু ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল।

তিনি দৈনিক কালেরকণ্ঠের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক ছিলেন। এরআগে তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ ও যায়যায়দিন পত্রিকায় কাজ করেন।

কবি আপন মাহমুদের একমাত্র কাব্যগ্রন্থ সকালের দাঁড়িকমা প্রকাশিত হয় ২০১১ এর অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।

রাজমিস্ত্রী বাবার ১১ সন্তানের মধ্যে আপন ছিলেন ৫ম ও পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। দরিদ্র পরিবারের বোঝা টানতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন আপন।