সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১২

মিত্রপক্ষ সাঁই

 দীর্ঘ কবিতা






কবি মিত্রপক্ষ সাঁই, ত্রিপুরার আগরতলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে থাকেন । গত দু'দশক ধরে লেখালিখি করছেন। জন্ম – ১১ই নভেম্বর ১৯৭৮, পেশায় সাংবাদিক । শেখালিখি শুরু ৯০ এর গোড়ার দিকে । মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতের পত্রপত্রিকায় অবাধ বিচরণ ।

চন্দ্রমুখীর কাছে


রুপনারায়নের ভাঙ্গনের কালে

শুরু হয়েছিল ফুল ভাঙ্গার সর্বনাশী যন্ত্রণা।
বাঁধ না মানা জল গড়িয়ে পড়ে সবুজ বনানীতে

কুলহীনা নারীর গর্ভ সঞ্চার আর সর্বনাশী নদীর ভাঙ্গনে

তোমায় অভিবাদন প্রিয়তমা, সুতিকাঘরের নৈশ আহারে তোমায় আমন্ত্রণ রইল কমরেড।


মাটিরে খায় নদী, আর মাইনষে খায় নদীরে

শরীরের ভেতর শরীর খায়, বেঁচে যায় প্রকৃতি
ঘুরে ফিরে একই পাঁচালী

এই বিকেলেও তোমার বুক ভেজে।

শরীরে জলের গন্ধ করে
উথালিপাথালি ওঠানামা
পৃথিবীর দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

কচি কোমরে বাঁধা অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি

লাফায় শুধু লাফায় অসংখ্য চিংড়ির ডিম।

মাছ ধরার জালের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে উঁকি মারে বাদামী বুকের অগ্রভাগ

দেখে ডুব দেয় সূর্য।

ডিম থেকে বাচ্চা বেরোয়

বাচ্চা বিক্রি করে বুকে নামে দুধ।
দুধেও গন্ধ রুপনারানের জলের।

অজস্র চিংড়ি শিশু চলে যায় ওপারে


মহাজন গুনে, জালের ফাঁকফোকরে আটকে থাকা ব্লাউজের রঙ

ফ্যাকাশে লাল, সবুজ, কালো, নীল
বাদাম রঙা জলা শরীরের ঘ্রাণ নেয়
জানান দেয়, আমি চরিত্রহীন দেবদাস প্রিয়তমা

রাতের আন্ধাইরে বেলাউজ হাতে মহাজন

ডাক পারে, চল কাশ বনে যাই। সময় শরৎ এখন

যমকুলী ডাকে

রাম নাম ক, রাম নাম ক
লোহা পোড়ান দে

কুপীর আগুনে গরম হয় লোহা

আসমান হয় লাল
একশ কোটির সংক্রমণ আবার রুপনারানের পাড়ে

অহ্ংকারী দেবদাসের সোনার অঙ্গ দেখে, হাসে চন্দ্রমুখী

পুরুষের প্রেমেও সর্বনাশী ভাঙ্গন

বেমালুম ভুলে যায়

ফুল ভাঙ্গার কাব্য
নিশ্চিন্তে ঘুম দেয় মানুষের দল

কত খাবে একসাথে!

বাকি দুধে ভিজে যায় সমুদ্র রঙা শাড়ি।

সাত সকালে মহাজন ডুব দেয় রুপনারায়নের জলে।


ছোঁয়াচে হয় ঠাকুর ঘর

অপবিত্র হয় নারায়ন শিলা
শরৎ চলে গেলে ভরা যৌবন আবার শীতার্ত

একা বার্মিজ টেবিল ধরে বসে থাকা

রুপনারায়নের ভাঙ্গন দেখা
বুকে কাঁপুনি ধরে, শীতের সবুজ বড় কচি



বুক শেল্ফে ব্রিটিশ আইন, অনুশীলন সমিতির দস্তাবেজ

পেয়ারা গাছের কোমর, আর ভারতীয় নারীর সঙ্গম।

কাঠগোলাপির মালা গলায় আটকে ফাঁস


শরৎ বাবুর প্রেয়সী এখন একা আন্ধাইরে

অবাঞ্ছিত ঢেউ গোনে শরীরের
রুপনারানের ভাঙ্গন দেখে মুচকি হাসে চন্দ্রমুখী আজও
পশ্চিমের জানালা ধরে বাড়িয়ে দেয় একটি হাত

যে শিশু কাল জন্ম নেবে তার নাম হবে রুপ

যে শিশু চিংড়ি ভেসে যায় অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি ভর্তি হয়ে ওপারে
তাকে স্বাগত জানায় পদ্মার বুক

এভাবেই আবার গড়ে উঠবে বসতি

নতুন বসতি হবে আবার রুপনারানের
ফুল ভেঙ্গে জলে ভরে যাবে পৃথিবীর সব মাটি
শীতল হবে ঋতু, শরীর আর চন্দ্রমুখী

রাত যায়, বসত যায়, মাটি যায়, যৌবন যায়, ঋতু যায়

আমি বারবার যাই, শুধু রুপনারায়নের পাড়ে।