শিশু ও অবিচার বিক্রি হয় না
মৌ মধুবন্তী
বয়েস মাত্র ৮ এবং ৯। ব্যস্ততম উন্নত দেশের সর্ববৃহৎ আলোকোজ্জ্বল নগরী নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের উল্টো দিকেই রমারমা ব্যবসা। খদ্দের-এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিনটে কচিলতা মুখ। নির্ভীক উচ্চারণ, একজন নিলে ২০ ডলার ৩ জন নিলে ১০ ডলার কম। আমরা তিনজনই বান্ধবি। টেক অল থ্রি অফ আস।
এই প্রেজেন্টেশান শেষ করে ঘরে ফিরে নিজের মেয়েকে বুকে জড়িয়ে রেখেছি সারা রাত। কোনটা শিশুশ্রম?
একি শিশুশ্রম নাকি আর কিছু? সময়ের বিবর্তন কি এইভাবে টোল বসায় জীবন নগরের উপর? কি গ্রাম, কি শহর, কি উন্নত দেশ আর অনুন্নত দেশ চিত্রের ভেদ ন্যুনতম।
আজকের উন্নত বিশ্বে প্রায় ৮০ ভাগ ছাত্রছাত্রী ছাত্রাবস্থায় কাজ শুরু করে। বয়েস একেক প্রভিন্সে একেক রকম হলেও ন্যুনতম বয়েস ১৪ থেকে ১৬ বছর। এরা প্রতি ঘণ্টায় পায় বড়োদের যা মিনিমাম বেতন তার চেয়ে অন্তত এক ডলার কম। তবে অনেকেই বেআইনিভাবে ও কাজ করে যাদের বয়েস উল্লেখ করতে গেলে আত্মা কেপে ওঠে। ৮ বছর থেকেই শুরু করে দুর্বার কঠিন সংগ্রাম। দুইরকম জীবনের গন্ধে এদের শ্বাস রোধ হয়ে আসে। এক নিম্ন বেতন। আরেক বেআইনিভাবে কাজের অভিজ্ঞতা । ক্রমশই আইনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে এদেরকে। কারন এরা বিচার পায়না প্রকৃত অর্থে কার ও কাছেই। না ঘরে, না কাজের জায়গায়। এদের মৃত্যুতে কেউ শোক গাথা গায় না। কেন এদের জীবনের শুরু হয় এমন অন্ধকারে?
অনিশ্চয়তা, অভাব ও অন্ধত্বই শিশুদেরকে অবেলায় কাজে যেতে বাধ্য করেছে। জানা নেই সেই সব বাবা মায়ের যে শিশুর বেড়ে উঠতে একটা নির্দিষ্ট বয়েস সীমা লাগে। চারিদিকে হাহাকার। সবাইকেই কাজে নামতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশান নেমে আসে পৃথিবীর বুকে, ঘরের কাজগুলো চলে গেছে ফ্যাক্টিরিতে। বাবা মা বোঝেনি যে একদিন যে শিশু ঘরের আঙ্গিনায় ফলমুল লাগাতে সাহায্য করত, আজকে তাকে ও কারাখানায় কত কঠিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে। শুরুটা ঘরের চাহিদা মেটাতে এমনই বলা যায়। তারপর ক্রমশঃ ক্যাপিটালিস্ট সমাজ সুযোগ নিতে থাকে এই শিশুদের শ্রমের উপর। গতর ছোট, হাত ছোট, উৎপাদন কম( আসলেই কি কম ছিল?) তাই বেতন ও কম।
“Injustice doesn’t sell”- এই সব শিশুশ্রম নিয়ে বিশ্বে জাগরূক কিছু লোক কাজে মেতেছে। এতে বড়োদের পেটে ভাত জুটাবার আরেকটা উপায় বেরিয়েছে। কিন্তু শিশুদের অবস্থার কতটা উন্নতি হয়েছে তা কেবল সময়ের কাছে প্রশ্ন রেখে থমকে যাচ্ছে বিবেক।
বিশ্বের যাবতীয় শিশুকে দেখবার সময় একসাথে কারোই হবে না, হয় না। সম্ভব না। যেদিন আমি ডান্ডার্ণ ক্যাসেল, হ্যামিল্টন, অন্টারিওতে ঘুরে ঘুরে দেখছি আর ইতিহাস শুনছি, সেই ১৮৩০ সালের তৈরি ক্যাসেলের উন্নত সভ্য ডিসরুমে ঢুকে বাহারি সব ডিসের নমুনা দেখছি। তখন জানতে পেলাম সেই সময়ে ১০ বছর বয়েসের একটি মেয়ে মাসে মাত্র ১ ডলার বেতনে সারাদিন ঐ ব্যাসম্যান্টের কক্ষে ডিস ধোয়ার কাজে রত থাকতো। কোন ডিস ভাঙলে এক বেলা খাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হতো। সেই কক্ষেই তার জীবনের এক বৃহৎ অংশ কেটে গেছে, বাবা মা আত্মীয় প্রিয়জনহীন। তার কেউ ছিল না। তবে কি সে না খেয়ে মরে যেত? কাজ তো কেউ দেবেই। সেদিন কি তার কাছে কোন উপায় ছিল? তার উপর মেয়ে বাচ্চা। নিরাপত্তা কোথায়? ধর্ষিত হতে মেয়ে হলেই তো হয়। বয়েস লাগে না। একটা গুহার দিকে ইঁদুরটা হা করে থাকে ।শুধু সুযোগটা এলেই হয়। ভালো কথা, একটা পরিচয় ও ইতিহাস এখানে সংযুক্ত আছে। স্যার এলান নেপিয়ার ম্যাকনাব, তৎকালীন রেলের একজন ম্যাগনেট ছিলেন। আর ছিলেন পেশায় ল’ইয়ার। পরবর্তিতে তিনি ইউনাইটেড কানাডা (১৮৫৪-১৮৫৬) এর প্রথম প্রিমিয়ার ছিলেন। তার পরিবার সহ তিনি উপরের কক্ষে আয়েশে বসবাস করতেন আর মাটির নীচের ব্যাসম্যান্টের কক্ষে থাকত চাকর-বাকর যারা তার বিলাসী জীবনের রসদ যোগান দিয়ে জীবিকা অর্জন করত। ইউনাটেড কানাডায় এই ছিল ইউনিটি।
ছোট একটি ঘটনার বহুল হৃদয় বিদারক কাহিনীটা বলি। যে কাহিনী পত্রিকায় আসেনি। কিন্তু আমার কাজের ক্ষেত্র থেকে আমি জানতে পারি। ২২ বছর বয়েসের একটি বিবাহিতা মহিলা তার একমাত্র মেয়ে যার বয়েস তখন ৫ বছর, কোন এক উপায়ে এসে হাজর হয়েছে কানাডায়। স্বামী ব্যবস্থা করেই পাঠিয়েছে, একদিন সেও কানাডায় আসবে এই আশা নিয়ে। কাজের অনুমতি নেই বলে যে কোন কাজেই যেতে বাধ্য এই মা। কিন্তু মেয়েকে কোথায় রাখবে? কাজ নিয়েছে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির বাসায়। ঘর দোর পরিষ্কার থেকে শুরু করে রান্নায় সাহায্য করা সবই তার কাজ। দু’জনের থাকার জায়গা হয়েছে বেশ। আনন্দে মন ভরে উঠেছে। যে পরিচিত লোক তাকে কাজ দিয়েছে, সে কোন চুক্তিতে কাজ দিয়েছে সে তো জানতো না? মাসের শেষে যে কয় টাকা বেতন পেত সব তার হাতে যেত। বাসার বাসিন্দা মাত্র চারজন। স্বামী স্ত্রী আর দুই ছেলেমেয়ে। কথা হলো নেয়েটি তাদের বাচ্চাদের সাথেই স্কুলে যাবে। যায়। ভাষার যে দেয়াল ছিল তা ক্রমশ সরতে থাকে। মেয়ে মাকে দু একটা করে ইংরেজি শেখায়। একদিন মেয়ে দেখে ফেলে মালিকের কাছ থেকে সেই আংকেল টাকা নিচ্ছে এবং যেহেতু সে ইংরেজি বোঝে তার বুঝতে বাকী রইলো না যে তার মায়ের ও তার কাজের পয়সা তাদের ঠকিয়ে আংকেল নিয়ে যায়। আংকেল ও বুঝতে পেরেছে মেয়ে জেনে গেছে। সেই সন্ধ্যায় আংকেল অনেক কৌশল করে মেয়েকে কিছু কাপড় কিনে দেবে বলে পাশের শপিং মলে নিয়ে গেল। মায়ের আপত্তি করার কিছু নেই। এই লোক প্রথন দিন থেকেই তাকে সাহায্য করছে। সেই যে মেয়ে গেল আর কোনদিন মা জানতে পারেনি তার মেয়ে কোথায় কেমন আছে। সেদিন থেকে আংকেল কে আর কোঠাও খুঁজে পাওয়া যায় নাই। সেই মায়ের করুণ আর্তি আমি বর্ণনা করতে অক্ষম । আজকাল এই ধরনের ঘটনা থেকে ছেলে বাচ্চারাও রেহাই পাচ্ছে না।
আজকের বিশ্বের দিকে তাকালে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তার একটা ছোট্ট চিত্র তুলে ধরছি, গড়ে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়েসের শিশুরা প্রতি ৬ জনে একজন কাজে নিয়োজিত। এই বয়েসের শিশুদের শতকরা ১৬ ভাগ কাজে রত- এ হোলও ডেভেলপিং দেশের চিত্র। তার চেয়েও নিম্মানের দেশগুলোতে শতকরা ৩০ ভাগ শিশুরা শিশুশ্রমে নিয়োজিত। সারা বিশ্বে ১২৬ মিলিয়ন শিশু কাজ করে খুবই হ্যাজাডাস পরিবেশে। প্রায়শ তারা মারধরের, গালাগাল থেকে শুরু করে যৌন নির্যাতনের পর্যন্ত শিকার ।প্রায় ১।২ মিলিয়ন শিশু ( বালক ও বালিকা) প্রতিবছর পাচারের শিকার হয়। অতপর এদের ঠাই হয় কখনো কখনো কৃষি কাজে,খনিতে , কারাখানায়, অস্ত্র কারাখানা সহ কমার্শিয়াল যৌন বিক্রি কারাখানায়। যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি কি করে নিউ ইয়র্কের উজ্জ্বল আলোর চারিদকে তাদেরকে দিয়ে ব্যবসা করানো হয়। এই ট্রাফিকিং এর শিকার হয় বিশেষ করে মেয়েরা, সর্বনিম্ন ১৮ মাস থেকে উর্ধে ৭৯ বছর পর্যন্ত। নিরাপত্তা কোথায় মেয়েদের জন্য? নো সেফ হোম। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী শিশু শিশুশ্রমের সাথে জড়িত সাব-সাহারা, আফ্রিকাতে।
এর সাথে অবশ্যই জড়িত আছে দেশে আর্থসামাজিক অবস্থা এবং শ্রেণিভেদ। এই শ্রেণিভেদের শিকার হয় গরীব শ্রেণি ও মধ্যবিত্ত সমাজ। এখানে এসে প্রশ্নের মুখোমুখি হই। জম্নেই যে শিশু দুধ পায়না খেতে তাকে কে পাঠালও দুনিয়াতে? যদি সে ঈশ্বর, তবে ঈহস্বরের ঘরে কেন তার জায়গা হয় নাই? কোন দোষে তাকে বিনা আহারের ব্যবস্থায় এই পৃথিবীর ধ্বংসযজ্ঞে নেমে আস্তে বাধ্য করেছে? কেন তার জন্য বাসস্থান তৈরি হবার আগেই সে এসে পড়েছে জন্মলাভের টিকেট কেটে এই ধরায় অধরা হয়ে থাকতে? কে তুমি ঈশ্বর। তোমার কাছে জিজ্ঞাসা বিচার কি কিনলে পাওয়া যায়? কে তবে বিক্রি করে? তুমি? তোমার অনুচর সাগরেদ? আমি এর বিচার চাই। কোথায় তোমার দোকান বলো, আমি কিনে নেব আমার অসহায় শিশুদেরকে এই অসহায় পৃথিবীর আবর্জনা থেকে। শিশুদের জন্য গড়ে তোলও এক মুক্ত পৃথিবী ভেদাভেদ হীন একটি মঞ্চ শিশু মঞ্চ।
বয়েস মাত্র ৮ এবং ৯। ব্যস্ততম উন্নত দেশের সর্ববৃহৎ আলোকোজ্জ্বল নগরী নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের উল্টো দিকেই রমারমা ব্যবসা। খদ্দের-এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিনটে কচিলতা মুখ। নির্ভীক উচ্চারণ, একজন নিলে ২০ ডলার ৩ জন নিলে ১০ ডলার কম। আমরা তিনজনই বান্ধবি। টেক অল থ্রি অফ আস।
এই প্রেজেন্টেশান শেষ করে ঘরে ফিরে নিজের মেয়েকে বুকে জড়িয়ে রেখেছি সারা রাত। কোনটা শিশুশ্রম?
একি শিশুশ্রম নাকি আর কিছু? সময়ের বিবর্তন কি এইভাবে টোল বসায় জীবন নগরের উপর? কি গ্রাম, কি শহর, কি উন্নত দেশ আর অনুন্নত দেশ চিত্রের ভেদ ন্যুনতম।
আজকের উন্নত বিশ্বে প্রায় ৮০ ভাগ ছাত্রছাত্রী ছাত্রাবস্থায় কাজ শুরু করে। বয়েস একেক প্রভিন্সে একেক রকম হলেও ন্যুনতম বয়েস ১৪ থেকে ১৬ বছর। এরা প্রতি ঘণ্টায় পায় বড়োদের যা মিনিমাম বেতন তার চেয়ে অন্তত এক ডলার কম। তবে অনেকেই বেআইনিভাবে ও কাজ করে যাদের বয়েস উল্লেখ করতে গেলে আত্মা কেপে ওঠে। ৮ বছর থেকেই শুরু করে দুর্বার কঠিন সংগ্রাম। দুইরকম জীবনের গন্ধে এদের শ্বাস রোধ হয়ে আসে। এক নিম্ন বেতন। আরেক বেআইনিভাবে কাজের অভিজ্ঞতা । ক্রমশই আইনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে এদেরকে। কারন এরা বিচার পায়না প্রকৃত অর্থে কার ও কাছেই। না ঘরে, না কাজের জায়গায়। এদের মৃত্যুতে কেউ শোক গাথা গায় না। কেন এদের জীবনের শুরু হয় এমন অন্ধকারে?
অনিশ্চয়তা, অভাব ও অন্ধত্বই শিশুদেরকে অবেলায় কাজে যেতে বাধ্য করেছে। জানা নেই সেই সব বাবা মায়ের যে শিশুর বেড়ে উঠতে একটা নির্দিষ্ট বয়েস সীমা লাগে। চারিদিকে হাহাকার। সবাইকেই কাজে নামতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশান নেমে আসে পৃথিবীর বুকে, ঘরের কাজগুলো চলে গেছে ফ্যাক্টিরিতে। বাবা মা বোঝেনি যে একদিন যে শিশু ঘরের আঙ্গিনায় ফলমুল লাগাতে সাহায্য করত, আজকে তাকে ও কারাখানায় কত কঠিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে। শুরুটা ঘরের চাহিদা মেটাতে এমনই বলা যায়। তারপর ক্রমশঃ ক্যাপিটালিস্ট সমাজ সুযোগ নিতে থাকে এই শিশুদের শ্রমের উপর। গতর ছোট, হাত ছোট, উৎপাদন কম( আসলেই কি কম ছিল?) তাই বেতন ও কম।
“Injustice doesn’t sell”- এই সব শিশুশ্রম নিয়ে বিশ্বে জাগরূক কিছু লোক কাজে মেতেছে। এতে বড়োদের পেটে ভাত জুটাবার আরেকটা উপায় বেরিয়েছে। কিন্তু শিশুদের অবস্থার কতটা উন্নতি হয়েছে তা কেবল সময়ের কাছে প্রশ্ন রেখে থমকে যাচ্ছে বিবেক।
বিশ্বের যাবতীয় শিশুকে দেখবার সময় একসাথে কারোই হবে না, হয় না। সম্ভব না। যেদিন আমি ডান্ডার্ণ ক্যাসেল, হ্যামিল্টন, অন্টারিওতে ঘুরে ঘুরে দেখছি আর ইতিহাস শুনছি, সেই ১৮৩০ সালের তৈরি ক্যাসেলের উন্নত সভ্য ডিসরুমে ঢুকে বাহারি সব ডিসের নমুনা দেখছি। তখন জানতে পেলাম সেই সময়ে ১০ বছর বয়েসের একটি মেয়ে মাসে মাত্র ১ ডলার বেতনে সারাদিন ঐ ব্যাসম্যান্টের কক্ষে ডিস ধোয়ার কাজে রত থাকতো। কোন ডিস ভাঙলে এক বেলা খাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হতো। সেই কক্ষেই তার জীবনের এক বৃহৎ অংশ কেটে গেছে, বাবা মা আত্মীয় প্রিয়জনহীন। তার কেউ ছিল না। তবে কি সে না খেয়ে মরে যেত? কাজ তো কেউ দেবেই। সেদিন কি তার কাছে কোন উপায় ছিল? তার উপর মেয়ে বাচ্চা। নিরাপত্তা কোথায়? ধর্ষিত হতে মেয়ে হলেই তো হয়। বয়েস লাগে না। একটা গুহার দিকে ইঁদুরটা হা করে থাকে ।শুধু সুযোগটা এলেই হয়। ভালো কথা, একটা পরিচয় ও ইতিহাস এখানে সংযুক্ত আছে। স্যার এলান নেপিয়ার ম্যাকনাব, তৎকালীন রেলের একজন ম্যাগনেট ছিলেন। আর ছিলেন পেশায় ল’ইয়ার। পরবর্তিতে তিনি ইউনাইটেড কানাডা (১৮৫৪-১৮৫৬) এর প্রথম প্রিমিয়ার ছিলেন। তার পরিবার সহ তিনি উপরের কক্ষে আয়েশে বসবাস করতেন আর মাটির নীচের ব্যাসম্যান্টের কক্ষে থাকত চাকর-বাকর যারা তার বিলাসী জীবনের রসদ যোগান দিয়ে জীবিকা অর্জন করত। ইউনাটেড কানাডায় এই ছিল ইউনিটি।
ছোট একটি ঘটনার বহুল হৃদয় বিদারক কাহিনীটা বলি। যে কাহিনী পত্রিকায় আসেনি। কিন্তু আমার কাজের ক্ষেত্র থেকে আমি জানতে পারি। ২২ বছর বয়েসের একটি বিবাহিতা মহিলা তার একমাত্র মেয়ে যার বয়েস তখন ৫ বছর, কোন এক উপায়ে এসে হাজর হয়েছে কানাডায়। স্বামী ব্যবস্থা করেই পাঠিয়েছে, একদিন সেও কানাডায় আসবে এই আশা নিয়ে। কাজের অনুমতি নেই বলে যে কোন কাজেই যেতে বাধ্য এই মা। কিন্তু মেয়েকে কোথায় রাখবে? কাজ নিয়েছে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির বাসায়। ঘর দোর পরিষ্কার থেকে শুরু করে রান্নায় সাহায্য করা সবই তার কাজ। দু’জনের থাকার জায়গা হয়েছে বেশ। আনন্দে মন ভরে উঠেছে। যে পরিচিত লোক তাকে কাজ দিয়েছে, সে কোন চুক্তিতে কাজ দিয়েছে সে তো জানতো না? মাসের শেষে যে কয় টাকা বেতন পেত সব তার হাতে যেত। বাসার বাসিন্দা মাত্র চারজন। স্বামী স্ত্রী আর দুই ছেলেমেয়ে। কথা হলো নেয়েটি তাদের বাচ্চাদের সাথেই স্কুলে যাবে। যায়। ভাষার যে দেয়াল ছিল তা ক্রমশ সরতে থাকে। মেয়ে মাকে দু একটা করে ইংরেজি শেখায়। একদিন মেয়ে দেখে ফেলে মালিকের কাছ থেকে সেই আংকেল টাকা নিচ্ছে এবং যেহেতু সে ইংরেজি বোঝে তার বুঝতে বাকী রইলো না যে তার মায়ের ও তার কাজের পয়সা তাদের ঠকিয়ে আংকেল নিয়ে যায়। আংকেল ও বুঝতে পেরেছে মেয়ে জেনে গেছে। সেই সন্ধ্যায় আংকেল অনেক কৌশল করে মেয়েকে কিছু কাপড় কিনে দেবে বলে পাশের শপিং মলে নিয়ে গেল। মায়ের আপত্তি করার কিছু নেই। এই লোক প্রথন দিন থেকেই তাকে সাহায্য করছে। সেই যে মেয়ে গেল আর কোনদিন মা জানতে পারেনি তার মেয়ে কোথায় কেমন আছে। সেদিন থেকে আংকেল কে আর কোঠাও খুঁজে পাওয়া যায় নাই। সেই মায়ের করুণ আর্তি আমি বর্ণনা করতে অক্ষম । আজকাল এই ধরনের ঘটনা থেকে ছেলে বাচ্চারাও রেহাই পাচ্ছে না।
আজকের বিশ্বের দিকে তাকালে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তার একটা ছোট্ট চিত্র তুলে ধরছি, গড়ে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়েসের শিশুরা প্রতি ৬ জনে একজন কাজে নিয়োজিত। এই বয়েসের শিশুদের শতকরা ১৬ ভাগ কাজে রত- এ হোলও ডেভেলপিং দেশের চিত্র। তার চেয়েও নিম্মানের দেশগুলোতে শতকরা ৩০ ভাগ শিশুরা শিশুশ্রমে নিয়োজিত। সারা বিশ্বে ১২৬ মিলিয়ন শিশু কাজ করে খুবই হ্যাজাডাস পরিবেশে। প্রায়শ তারা মারধরের, গালাগাল থেকে শুরু করে যৌন নির্যাতনের পর্যন্ত শিকার ।প্রায় ১।২ মিলিয়ন শিশু ( বালক ও বালিকা) প্রতিবছর পাচারের শিকার হয়। অতপর এদের ঠাই হয় কখনো কখনো কৃষি কাজে,খনিতে , কারাখানায়, অস্ত্র কারাখানা সহ কমার্শিয়াল যৌন বিক্রি কারাখানায়। যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি কি করে নিউ ইয়র্কের উজ্জ্বল আলোর চারিদকে তাদেরকে দিয়ে ব্যবসা করানো হয়। এই ট্রাফিকিং এর শিকার হয় বিশেষ করে মেয়েরা, সর্বনিম্ন ১৮ মাস থেকে উর্ধে ৭৯ বছর পর্যন্ত। নিরাপত্তা কোথায় মেয়েদের জন্য? নো সেফ হোম। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী শিশু শিশুশ্রমের সাথে জড়িত সাব-সাহারা, আফ্রিকাতে।
এর সাথে অবশ্যই জড়িত আছে দেশে আর্থসামাজিক অবস্থা এবং শ্রেণিভেদ। এই শ্রেণিভেদের শিকার হয় গরীব শ্রেণি ও মধ্যবিত্ত সমাজ। এখানে এসে প্রশ্নের মুখোমুখি হই। জম্নেই যে শিশু দুধ পায়না খেতে তাকে কে পাঠালও দুনিয়াতে? যদি সে ঈশ্বর, তবে ঈহস্বরের ঘরে কেন তার জায়গা হয় নাই? কোন দোষে তাকে বিনা আহারের ব্যবস্থায় এই পৃথিবীর ধ্বংসযজ্ঞে নেমে আস্তে বাধ্য করেছে? কেন তার জন্য বাসস্থান তৈরি হবার আগেই সে এসে পড়েছে জন্মলাভের টিকেট কেটে এই ধরায় অধরা হয়ে থাকতে? কে তুমি ঈশ্বর। তোমার কাছে জিজ্ঞাসা বিচার কি কিনলে পাওয়া যায়? কে তবে বিক্রি করে? তুমি? তোমার অনুচর সাগরেদ? আমি এর বিচার চাই। কোথায় তোমার দোকান বলো, আমি কিনে নেব আমার অসহায় শিশুদেরকে এই অসহায় পৃথিবীর আবর্জনা থেকে। শিশুদের জন্য গড়ে তোলও এক মুক্ত পৃথিবী ভেদাভেদ হীন একটি মঞ্চ শিশু মঞ্চ।
টরন্টো, কানাডা
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন