সোমবার, ১৬ জুন, ২০১৪

কবিতা -জয়তী অধিকারী

ঘড়ি, বনসাই আর ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিওর





পাশের এপার্টমেন্টের চারতলার বারান্দায়
সযত্নলালিত বনসাই বাগান,
ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিওর করা হাতে গ্লাভস পরে
ছেঁটে দেয় ডানা,
দিদি না বৌদি, ঠিক বোঝা যায় না।
পরিমানমত জল, সার, ওষুধ, আদর
নিয়মিত, বিকেল চারটেয়...
অনেক সময় আমি ঘড়িটা মিলিয়ে নিই।
মাঝে মাঝে দেখতে পাই না...
বেড়াতে যেতে পারে, অথবা বাপের বাড়ি
হয়ত তখন ওর বরের সাথেও আড়ি!
ঠিক জানিনা
আমার ঘড়িটা স্লো হয়ে যায়...
আর টালির ঘরের সামনে বেড়ে ওঠা আগাছায়
পা আটকে যায়।
চোখও আটকে থাকে ওই বনসাই বাগানে,
আহল্যিক অপেক্ষায়।

আজ সকালে ঘুম ভাঙল অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে।
ঘুমভাঙা চোখে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না,
দরমার দরজা খুলে বাইরে এসে দেখি
সারা পাড়ার লোক এপার্টমেন্টের সামনে...
এই প্রথমবার পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম গেটের ভিতর।

স্ট্রেচারে সাদা কাপড়ে ঢাকা কে ও!
দখিনা হাওয়ায় উড়ে যাওয়া চাদরের নীচে
নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছো তুমি, বউদি...
নীলচে ঠোঁটে, কালশিটে পড়া গলায়।
আজ প্রথম দেখলাম দাদাকে
কব্জির কাছে নখের আঁচড়,
বারবার আস্তিন টেনে ঢাকার চেষ্টায় ব্যস্ত।

ঘরে ঢুকে বন্ধ করে দিলাম দরজাটা...
ঘড়িটা হাতে তুলে নিলাম...
রাত দুটোয় বন্ধ হয়ে গেছে,
জানতেই পারিনি!


মুখোশ

একটা মন খারাপ করা বিকেলে তোর উষ্ণতায় রাখতে চেয়েছিলাম আমার দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু তুই বোধহয় তোর হিসেবী খাতার পাতা নষ্ট করতে চাসনি, তাই না? অনায়াসে উইয়ের ঢিবি মাড়িয়ে চলে গেলেও ফিরে তাকাস না। তোর উন্নাসিকতা কি একটু কুঁচকে যায় বিরক্তিতে? আসলে মানবমন বড্ড অবুঝ। আজ যাকে তাড়িয়ে দিতে পারলে বাঁচি, কাল তাকেই বুকে জড়িয়ে ধরে পরম শান্তির আশ্বাস পাই। কখনও হয়তো তোরও ঠিক এমনই কিছু দমকা আবেগ আসতে পারে, এই ভেবেই ক্ষেতি করে যাই ঊষর ফালিটুকু। ঘড়ির তীক্ষ্ণতার সাথে সাথে রোজই পড়ন্ত রোদের ঝাঁঝ ভাঙা দেওয়ালে তোর থেকেও লম্বা ছায়া ফেলে যায়, বিনা প্রত্যাশায়।  গোধূলি আলোয় মুখোশকেও অপরূপ লাগে।


গর্ভযন্ত্রণা
দায়বদ্ধতা উত্তরপুরুষে বর্তায় না
তার জন্যে তো অন্যকিছু রইলোই...
স্থাবর বা অস্থাবর।
বাকী যা কিছু সবই হারিয়ে যাবে
নদীর বাঁকে, ডায়েরীর ছেঁড়া পাতায়
আর কিছু ভোকাট্টা হয়ে ঝুলে থাকবে
ছাদের কার্নিশে...বিবর্ণ ছবির মত।
ওদের দেখে হয়তো আমিও ভাববো...আবার,
চল, গোল্লাছুট খেলি।
আর আমার কবিতা,
টুকরো টুকরো সম্পদগুলো হয়ত থেকে যাবে
কারুর মনের কোণে, নিভৃতে...
যারা বোঝে,
কিছু কিছু কবিতা লেখার সময়
গর্ভযন্ত্রণা অনুভূত হয়!