সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩

মুক্তগদ্য - তন্ময় ভট্টাচার্য

 


মুক্তগদ্য 

তন্ময় ভট্টাচার্য


অন্নপূর্ণার দিনকাল

একটা ন্যুব্জ হাত, বাঁদিক থেকে ডানদিকে অর্ধবৃত্তাকারে ঘুরল। সেইসঙ্গে মাথাও। ফিরেও এল আবার যথাস্থানে। লাইটিং-এর খেলা হলে বেশ হত। কিন্তু এ-ঘটনা খানিক আলাদা। নবমীর দুপুর। এক বৃদ্ধা, হাতের গোড়ায় ধরা বাটিতে স্বপ্ন দেখছেন। ভাবছেন, পুজোর দিনে নিশ্চয়ই ভরে উঠবে তাঁর পাত্রও। ঠিক এর বিপরীত দৃশ্য দেখেছিলাম অন্নপূর্ণার পটে। শিব এভাবেই পাত্র ধরে দাঁড়িয়েছেন, অন্নপূর্ণা সেই পাত্রে ঢেলে দিচ্ছেন আহার্য।বৃদ্ধার পাত্র ভরছে না কিছুতেই। সামনে দিয়ে চলে যাওয়া লোকজনদের দিকে বাড়ানো হাত।

অপরিচিত মানুষের গমনপথের শেষ অবধি কেন হাত ছড়িয়ে দেন ভিক্ষাজীবীরা? যদি চলে যেতে যেতেও পিছু ফেরে, সেই আশায়? নবমীর দুপুর। রাজ্যজুড়ে নিশ্চয়ই আনন্দের কমতি নেই। পাড়ায়-পাড়ায় ভোগের আয়োজনও হয়েছে নিশ্চয়ই। সেখানে গেলে কি ফিরিয়ে দেবে কেউ? অথচ বৃদ্ধা, মফস্‌সলের এক স্তিমিত দোকানের সামনে দাঁড়িয়েই মেলাতে চাইছেন সব সমীকরণ। আঁচলের খুঁট খুলে গুনে নিচ্ছেন খুচরো টাকা। পাশের ফলবোঝাই ভ্যানগাড়ি থেকে কিনে নিচ্ছেন কালো-হয়ে-আসা কয়েকটা চাঁপাকলা। নিজের জন্যে নয়? কেনই বা ঝুলিতে ভরে নেবেন নইলে!

শাঁখা-সিঁদুর দেখে বোধ হয়, বাড়িতে আরও কেউ আছে। হ্যাঁ, তিনি আছেন। নাম নিতে নেই মুখে। তিনিও কি অপেক্ষা করছেন পাত্র হাতে? শিবের মতো? বাড়ি ফিরে অন্নপূর্ণা ঢেলে দেবেন চাঁপাকলা? দুজনার শারদোৎসব সেজে উঠবে এভাবেই?

নবমীর দুপুর। রাত পেরোলেই বিদায়ের প্রস্তুতি। পরেরদিন ভাসানে যাবেন দুর্গা। ফিরবেন শিবের কাছে। অন্নপূর্ণার সেসব চিন্তা নেই। তাঁর কাজ সারাবছরের। দুটো হাত—কখনও সংগ্রহ করে, কখনও দাতা হয়ে ওঠে। আর, এইসব লীলার মধ্যেই, মেঘ করে আসে মফস্‌সলে। ধীরপায়ে চলে যেতে যেতে, মনে পড়ে, দুর্গাও তাঁরই সই ছিল একদিন...

3 comments:

নামহীন বলেছেন...

তুমি কবি। আর দেখার চোখ তোমার চিরকালই তীব্র, ইগল!

খুব ভাল লাগল। ভালবাসা জানাই।

নামহীন বলেছেন...

👌

নামহীন বলেছেন...

মুগ্ধতা, মুগ্ধতা এবং মুগ্ধতা।🙏

ভেতরে কী যেন একটা ঝ'রে গেল। রক্ত, না 'লেলিন' ?
এ তো বড়ো রঙ্গ!

তবে যে স্নিগ্ধতায় মুড়ে দিলেন আবহমান অসাম্যের স্থাপত্যটিকে তা থেকে চোখ ফেরানো শক্ত। 👌