সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩

মুক্তগদ্য - সাগরিকা বিশ্বাস


 মুক্তগদ্য 

সাগরিকা বিশ্বাস


কোয়ারেন্টিন

অনেকক্ষণ থেকেই মনে হচ্ছিল পড়ে যাবে। ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়া ওজন হলে সেটাই স্বাভাবিক। অথচ অর্ধেক পেটভর্তি জল। তাতেও কি সামান্য ওজন বাড়ে না? গরম হাওয়ায় খানিকটা উবে গেলেও শান্তি। এ হাওয়ায় প্রেম আসে,তাই জানালা খোলা আছে কাল থেকে। কাল জানালা খুলতে গিয়ে ধাক্কা লেগে ক্যালেন্ডারটা তালগোল পাকিয়ে নীচে পড়েছে। তোলার ইচ্ছে হয়নি। কাউকে দিনক্ষণ হিসেবের এতটা অধিকার কেনই বা দিতে হবে ! লাল, কালো সংখ্যাগুলো আসলে এক একটা আনসল্ভড্ বাইনারি কোড। কাসকেড ফ্লোতে সংখ্যাগুলোই তো পড়ে থাকে মাটিতে। শুধু পড়ার গতিটাই একটা ভ্রম রেখে যায়। মাটিতেই থাক বরং। ঝুল, ধুলো মেখে রাজতন্ত্র নিপাত যাক।

হাওয়া দিলে ছাদ থেকে নেমে আসা কাগজের হৃদয় দোলে। এটাও অবশ্য বিশেষ দিনে ঝোলানো হয়েছিল। এ বিষয়টার কোনো স্থিরতা নেই। যখন খুশী খইয়ের মত ফোটে বা গিলোটিনে মাথা দেয়।

অর্ধেকপেট জল খেয়েও ঠিকঠাক দাঁড়াতে পারেনি। তার কারণ অবশ্য ওজন নয়। পায়ের তলায় মাটি নেই যে ! একে অন্যের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে  থাকা ছাড়া আর একটা কাজ ছিল, গভীর রাতে টুপটাপ খসে পড়া বা মোনোটোনিক রিদ্‌মে বাতাসে সাঁতার কাটা। সাঁতার দিতে দিতে বাতাসে নিজের গায়ের প্রিয় গন্ধ বিলি করা।

বিলি করার কথায় খাম আসে। জমা হয় লেটারবক্সে। কথা দেওয়া ছিল, উত্তর দেওয়ার। সেইমত সাদা শরীরে পরপর শুয়ে আছে। কয়েকটা অবাধ্য কোণ উল্টোদিক করে ঝুলে আছে। তা অবশ্য হতেই পারে। ফাগুনের এই হাওয়ায় প্রায়ই চামচিকে আসে। সঙ্গদোষ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

খুব বেশীদিন জল রাখতে নেই পেটে। ছিদ্র বা রেচনক্রিয়া নেই বলে বহুদিন ধরে জলবতী বলে ঠাট্টাতামাশা শুনতে হচ্ছে। নিষ্কর্মাগুলোকে মরার আগে জল দিতে চেয়েও দেওয়া হল না। মরার পরও শুকনো শরীরে দাঁড়িয়ে থাকল। কি ভীষণ অস্বস্তি ! জলে থেকেও এরকম শুকনো মৃত্যু।

লাল, সবুজ উলেরগুলো বরং অনেক বেশী শান্ত! স্রেফ একটা অ্যালুমিনিয়াম তারে নিজেদের জড়িয়ে ফুটে আছে। ফাঁকা পেটেও তারা খুশী। চাই চাই করে জেদ  না দেখিয়ে দিব্যি বেঁচে আছে।

দরজার গায়ে একটা কাগজ লাগিয়ে দিয়েছিল। কালোর উপর সাদা অক্ষরে লেখা “শুভ মাতৃভাষা দিবস”। মাতৃত্ব কী, পেটের নাড়ী ছিঁড়ে প্রসব করা কাকে বলে – আদৌ তা জেনেশুনে লিখেছিল তো ! কয়েকটা মাস জলে মৃত ভ্রূণ ভাসিয়ে রাখা কী যন্ত্রনার তা অবশ্য আজও জানে না।

যেখানে থাকার কথা, সেখানে না রেখে এই অদ্ভুত পরিনতির জন্য অবাক হতে হয়। যেখানে যাওয়ার কথা ছিল তার জন্য গায়ে ধুলোমাটি মাখতে হয়। উল্টোদিকে গাছগাছালিতে ভরা বলে ধুলোও তেমন আসেনি, তাই যাওয়া পিছিয়ে দিতেই হয়। ওরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্রমশঃ ফ্যাকাশে, আমসি রঙের হয়ে যেতে থাকে।

 জীবাণু এসেছিল প্লেব্যাকের ভুমিকায়।

পর্দা জড়িয়ে ওরা দু’জন সরে গেছে।

ভূমিকা এখন গল্প।

 

1 comments:

নামহীন বলেছেন...

জাস্ট অপূর্ব!