অনুরক্ত
সুমেরু মুখোপাধ্যায়
এত বড় শো নিউইয়র্ক মোমায়
এর আগে হয়নি। এই পোড়া দেশের মিডিয়া চিত্রকর-ভাস্করদের নিয়ে কোনওকালেই উৎসাহী ছিল
না। কিন্তু তারকার সমাহার হলে মিডিয়াকুল নড়ে বসে। টাকা দেখলে কাঠের পুতুলও হাঁ
করে। ব্যাণিজ্য তো লক্ষীকে অবধি সুড়সুড় করে টেনে নামায়। এই শোতে টাকা ঢালতে ভারতের
বড় বড় শিল্পপতিরা যেচে এসেছেন। তাদের নিয়ে লেখা হয়। তারকারা তাদের আমেরিকা ভ্রমণের
কথা ফলাও করে লেখেন। সেলফি সমেত ছাপা হয়। কিন্তু এত বড় একজিবেশন নিয়ে কেউ রা কাড়ে
না। সে না কাড়ুক। কনটেম্পোরারি আর্টের ক্ষেত্রে দুঃশাসন সরকার আসলেই একটা নাম। কোন
পার্টিতে তাকে দেখা যায় না ফলে পেজ থ্রিতে তার মুখ দেখা যাওয়ার সম্ভবনা শূন্য।
তিনি সরকার বা বিরোধী কোনও দলেরই অনুগামী নন ফলে তার মত শোনা যায় না সন্ধ্যার নিউজ
চ্যানেলগুলির চ্যাট শোতে। তবু এই বাংলার ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়ারাও তার নাম জানে।
দুঃশাসন নিজেই আজ একটি চলমান আন্দোলন। খুব শিগগির তার জীবনীও স্কুলে পাঠ্য হবে কান
পাতলে এমনটাই শোনা যায়। আর কোন প্রকাশক যদি তাকে আত্মজীবনী লেখাতে রাজী করাতে পারে
তাহলে আগামী দশ বা কুড়ি বছর সেটিই বেস্ট সেলার হবে নিশ্চিত।
কাজেই শিল্পী হিসাবেই
দুঃশাসন স্বনামধন্য। সারা বিশ্বের তারিফ কুড়িয়েছেন। মিউজিয়ামে মিউজিয়ামে লড়াই
হয়েছে তাঁর অন্তত একটি কাজ নিজেদের সংগ্রহে রাখার জন্য। সদবির নিলামে একবার নাকি
তার ছবির দাম উঠেছিল পিকাসোর থেকেও বেশি। অনেক সময় এগুলো সাজানো খবর হয়ে থাকে।
সঠিক দাম অনেকেই গোপন রাখেন। তবে এই উত্থান বা জনপ্রিয়তা এই সবই হালের ঘটনা। দশবছর
আগে তার নাম ক’জনই বা জানত? অথচ প্রচারের আলো আর তোষামোদের কোলাহলের বাইরে বসে
তৈরি করে গেছেন একের পর এক যুগান্তকারী শিল্পকর্ম। তার উত্থানে সকলেই যে খুশি
এমনটা নয়। বরং উল্টোটাই। তার কাজ নিয়ে সারা পৃথিবীতেই ঝড় বয়ে গেছে। টিনের বা টালির
ছাউনির টিমটিমে বাল্বের প্রত্যন্ত পার্টি অফিস থেকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
সবাই গলা ফাটিয়েছে দুঃশাসনের নামে। ঝড় উঠেছে টুইটারে ফেসবুকে। একগাদা ফ্যান ক্লাব
হয়েছে। তাঁর জন্মদিনে কেক কাটা হয় বিভিন্ন মহাদেশের ২৬২টি শহরে। দুঃশাসন সরকার সব
কিছুর অলক্ষ্যে বসে নিজের মত ইতিহাস রচনা করে গেছেন। বছরে একটা প্রদর্শনী আর সার
বছরে হাতে গোনা কয়েকটি স্টেটাস দিয়েছেন ফেসবুকে। সারা বছরে আটটি বা দশটি। তার এক
একটিতে লক্ষ লক্ষ লাইক।
দুঃশাসন রক্ত দিয়ে
ছবি আঁকেন। অবশ্য ছবি আঁকাটাই তার মুখ্য ব্যাপার নয়। আজকালকার শিল্পকলায় সেই সবের
দাম নেই। কী ভাবে বা কী অবস্থায় শিল্পী এগুলি তৈরি করছেন সেগুলি ঢের বেশি
গুরুত্ত্বপূর্ণ। প্রদর্শনীতে
বিশাল আকারের ক্যানভাসে শুকনো রক্তের কিছু আঁকিবুকি থাকে ঠিকই আসল গুরুত্ত্বপূর্ণ
ওই রক্তের দাগ। সেটাই তার কাজে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। দুঃশাসনকে কালোত্তীর্ণ
করেছে তাঁর সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম সিরিজের কাজ। তাপসি মালিকের আধপোড়া ছবিগুলি যখন
প্রকাশ হয় লোকজন উন্মাদের মত করতে থাকে। কলকাতা শহরে মহামিছল বের হয়। লক্ষ লক্ষ
লোক। অভিনেতা লেখক শিল্পী সবাই রাস্তা হাঁটছেন। মোড়ে মোড়ে জনসভা। দুঃশাসনের আঁকা
ছবি তখন হাতে হাতে ঘুরছে। প্লাকার্ডে ফেস্টুনে। লোকে ডিপি করছে ফেসবুকে। তখনও কভার
ফটো আসেনি, এ প্রায় সেই আদিম যুগের কথা। অবশ্য দুঃশাসনের ছবিগুলি দেখে বোঝা যেত
না, কোনটা নন্দীগ্রামের গণধর্ষণ নিয়ে আর কোনটা কাশ্মীরি পন্ডিতদের নির্যাতন বিষয়ক।
হয়ত কোথাও কতগুলি দাগ, ঈষৎ জ্যামিতিক নকশার আভাস। শুকনো রক্তের বিষণ্ণ মলিন
স্পর্শ। কোথাও একেবারেই অস্পষ্ট বা আবছা। যেন আরশোলায় চেটে খেয়েছে কয়েকপ্রস্থ
রক্ত। শিল্প সমালোচকরা বললেন নব্য উত্তর আধুনিক চিত্রকলা এমনটাই হওয়া উচিত।
দুই
দুঃশাসনের শিল্পকলা
অবশ্য কেবল ছবি আঁকা-আঁকিতে আটকে ছিল না। তাঁর প্রদর্শনীগুলো ছিল ছবি ও ভিডিও
ইনস্টলেশনের সমাহার। ইনস্টলেশনটা বিক্রিবাটার জিনিস নয়। কোনও প্রদর্শনীকক্ষ বা
বিশেষ স্থানে সাময়িকভাবে স্থাপন করা হয়। তারপর তা ভেঙ্গেও ফেলা হয়। বিশাল
ক্যানভাসে আঁকা দুই একটা আঁচড় টানা ছবি আর তার পাশে পর্দায় দেখা যেত শিল্পী কিভাবে
তাঁর ছবি আঁকার নমুনা সংগ্রহ করছেন। এখানে নমুনা বলতে রক্ত। কাজেই সেই ভিডিওগুলি
ছিল যেমন দুঃসাহসী তেমনই ভয়ংকর। শিল্পী অকুস্থলে গিয়ে গ্লাভস পরে সেই সব নমুনা
মানে রক্তমাখা মাটি কখনও রক্তমাখা ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো চিমটা দিয়ে তুলে জিপলক
ব্যাগে ভরছেন। ঠিক নিপুন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের মত। তাঁর স্টুডিও ছিল আদতে ল্যাবরেটরি।
অকুস্থল থেকে প্রাপ্ত নমুনাগুলি থেকে কিভাবে তৈরি করছেন রঙ আর কিভাবে আঁকছেন ছবি
সেই সবও ধরা থাকত ভিডিওতে। অনেক দর্শকই সেইসব প্রদর্শনী দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন,
বমি করেছেন। উন্মাদও হয়ে গেছেন বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ বলে শোনা যায়। কিন্তু মোদ্দা
ব্যাপারটা হল দুঃশাসন সরকারের কাজ সারা পৃথিবীকেই টলিয়ে দিল আত্মপ্রকাশের সঙ্গে
সঙ্গেই। পূর্বতন এক নেতা বলেছিলেন রক্তের বদলে স্বাধীনতা কথা। দুঃশাসন রক্তের বদলে
দেখালেন প্রকৃত মুক্তির পথ। শিল্পকলা এতে মুক্তি পেল বটে কিন্তু আগুন ছড়িয়ে পড়ল
জনমানসে। শিল্পী হয়ে দাঁড়ালেন বিপ্লবী। মধ্য পঞ্চাশের দুঃশাসনকে নেতা বলে মেনে নিল
শিল্পদুনিয়া।
পুলিশ ও ভূমি উচ্ছেদ
কমিটির সংঘর্ষে নন্দীগ্রামে মারা যান সুধাচরণ চট্টোপাধ্যায় নামের জনৈক পুলিশ
কর্মী। এর ফলাফল হল ভয়ানক। ২০০৭ এর ১৪ এপ্রিল রাতের অন্ধকারে আক্রমণ করে পুলিশ
হত্যা করে ১৪ জন গ্রামবাসীকে। সরকারি ক্যাডাররা লুঠ চালাল গ্রামের পর গ্রাম। অসংখ্য ধর্ষিতার ক্রন্দনধ্বনীতে মুখরিত পরের দিনের
সন্ত্রস্থ ভোর। একমাসের মধ্যে প্রদর্শনী হল দুঃশাসন সরকারের। এর ফলাফল এখন সকলেরই
জানা। টানা তিন-চার বছর দেশ-বিদেশ ঘুরল ধর্ষিতার কান্না মথিত শিল্পপট। জন জোয়ার
নামল রাস্তায়। সরকার গেল উলটে। পরিবর্তন ঘটল বিধান সভায়। তবে দুঃশাসনের শিল্পকলা
থেমে থাকল না। পৃথিবীতে রক্তঝরা বন্ধ হয়নি। খুন- ধর্ষণ এসব লেগেই আছে। এই সব যখনই
ঘটে ঠিক তখনই গর্জে ওঠে দুঃশাসনের তুলি। নতুন নতুন ভিডিওতে আমরা আবিষ্কার করি
নিজেদের নগ্নতা। পুলিশি সন্ত্রাস বা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নিয়েও নানা গুরুত্ত্বপূর্ণ
কাজ আছে দুঃশাসন সরকারের। ২০১১’র ২৪ নভেম্বর মাও নেতা কীষেনজীকে রহস্যজনক ভাবে
মেরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এনকাউন্টার শীর্ষক দুঃশাসনের কাজগুলিতে ফুটে উঠল নানা
রক্তমাখা ল্যান্ডস্কেপ। মা-মাটি-মার্কসবাদ সব এখন শান্ত। পশ্চিমের শিল্প
ঐতিহাসিকেরা কেউ এদের বললেন ইন্ডিয়ান বডিলাইন সিরিজ কেউ বললেন অপারেশন কার্গিল
উইদিন দ্য কান্ট্রিমেন। প্রাক্তন ইতিহাসের সঙ্গে নবীন ইতিহাসের সংযুক্তি মুক্ত
চিন্তার নিও শিল্পবিপ্লবকে আরও জোরদার করতে লাগল।
সুজেট জর্ডনকে ধর্ষণ
করা হয় পার্কস্ট্রিটে চলন্ত গাড়ির ভেতর। ২০১১’র ৬ ফেব্রুয়ারি। ঠিক একমাস বাদে পার্কস্ট্রিট ভিক্টিম বলে দুঃশাসনের
একজিভিশন হল কলকাতায় চলন্ত গাড়ির ভিতর। জানালাগুলি ঢাকা রক্ত মাখা কাপড়ের টুকরা
দিয়ে। সেগুলি ছবির মত কিন্তু ছবি নয়। তা জানা যায় ভিডিওটি দেখে। দর্শককে ভারি
টেলিভিশন সেট কোলে করে দেখতে হয়। গাড়িটি এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে চলে প্রায় এক
ঘন্টা। রেড রোড খুঁড়ে এবড়ো-খেবড়ো করে দেওয়া হয়েছিল। দুঃশাসন চাইলে সরকার করতে
বাধ্য। কে আর সুখে থাকতে আন্দোলন বিপ্লব এই সব চায়? এইসময় থেকেই দুঃশাসন আমারেকা
প্রবাসী। বিশাল টিম এখন তার হয়ে দেশে কাজ করে। আর্ট কলেজ থেকে বেরিয়ে তার সঙ্গে
কাজ করার জন্য ছেলে মেয়েরা লাইন লাগায়। অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন, অনেক ইন্টারভিউ জিডি
পেরিয়ে তাদের বাছাই করা হয়। এরপর প্রশিক্ষণ। জুতো সেলাই টু চণ্ডিপাঠ। এরাই এখন
স্পেসিমেন সংগ্রহ করে, রঙ বানায়। ভিডিওতে তাদেরই দেখা যায়। ঘরের মেয়ে বৌরা এদের
প্রত্যেককে এখন নামে চেনে। গুরুদেব আবির্ভূত হন ক্ষণিকের জন্য। ভালো যা তা অল্পই
ভালো। ২০১৩’র ৭ জুন কামদুনিতে ২০ বছরের এক কলেজ পড়ুয়াকে গণধর্ষণ করে মেরে ফেলা হল।
এমনই অত্যাচার করা হয়েছিল তাকে যে দুটি পা তারা চিরে আলাদা করে ফেলেছিল অনেকটা।
তারই শরীরের রক্ত দিয়ে দুঃশাসন দুটি ছিন্নপায়ের ছবি আঁকলেন প্যারিসে বসে। যা দেখে
অবশ্য পা বলে ঠিক বোঝা যায় না। দুটি টিক চিহ্ন যেন পড়ে আছে চরাচরে। দর্শকরা তাই
দেখে শিউরে উঠলেন। কেউ কেউ বমি করলেন। কারও কারও মাথা খারাপ হয়ে গেল নিয়মমাফিক।
তিন
ক্ষুদ্র ও সামান্য
ঘটনাও অনেক সময় বৃহৎ সম্ভাবনার সূত্র নির্দেশ করে। রাজ্যের ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্তের স্বল্পতা অনেকদিন
ধরেই খবরে আসছিল। কিন্তু আকস্মিক খরায় আম জনতা খিপ্ত হয়ে উঠল। ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে
ভাঙচুর হল। পুলিশ মন্ত্রী পিটিয়ে সব শান্ত করার চেষ্টা করলেন। ব্যাপারটা যখন রক্ত
তখন জল গড়াবেই। রক্তের অভাবে অপারেশন বন্ধ হয়ে গেল। মানুষ মারা যেতে লাগল রক্তের
অভাবে। রাস্তাঘাটে শুরু হল অবরোধ। হাসপাতালে বসল পুলিশ ক্যাম্প। ভীত ডাক্তাদের
দীর্ঘকালীন ছুটি মঞ্জুর করলেন রাজ্য সরকার। রাজ্য জুড়ে বিশৃঙ্খলা। ব্লাড ডোনেশান
ক্যাম্প করলে লোক আসে না। মানুষ সরে দাঁড়িয়েছে সরকার পক্ষের পাশ থেকে। তাদের এত
সাধের সরকারি পরিকল্পনা সব এখন মাটি। বিভিন্ন ক্যাম্পে রক্তদান করলে ডোনার
সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। ক্ষিপ্ত মানুষ সেগুলো মশালের মত পোড়াতে লাগল। কেন্দ্রীয়
সরকার সেই আগুনে ঘি ছেটাতে লাগল। নানা কমিশন তৈরি হল। বিভিন্ন ব্লাড ডোনেশন
ক্যাম্পে যুক্ত ছিলেন সমাজসেবী নেতা-মন্ত্রীরা। তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞসাবাদ করতে
লাগল ইডি। উত্তর সন্তোষজনক না হলেই গ্রেপ্তার। এক মাস দুই মাস তিন মাস এই ধর পাকড়
চলতে লাগল। জনতা অপেক্ষা করেছিল তাদের তরুন নেতা দুঃশাসন সরকার কী পদক্ষেপ নেন।
মোমায় তার একজিবিশনের পর থেকেই শিল্পী ছিলেন নীরব। জনতা অপেক্ষা করে করে নিজেরাই
নিজেদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিল। কিম্বা প্রতিপ্রশ্ন। রক্তই যদি না থাকে তবে
শিল্পী বোবা তুলি বুলিয়ে কী আঁকবেন?
একে একে
এমেলে-এমপি-মন্ত্রীরা জেলে ঢুকছেন। কেউ হচ্ছেন রাজসাক্ষী। কেউ বলছেন আমাকে মেরে
ফেললেও বলব না কে কে এই স্ক্যামে জড়িত। রক্ত কারচুপির ঘটনা এখন দিনের আলোর মত
পরিস্কার। এম্বুলেন্সে করে লাখ-খাখ প্যাকেট হিম শীতল রক্ত পাঠান হত প্রতিবেশী দেশ
দিয়ে বিভিন্ন দেশে। তার বিনিময়ে আসত সুটকেস ভর্তি ডলার। সেই সব খরচা হত বিধানসভা ও
লোকসভা ভোটে। লোকসভা ভোটের আগে প্রত্যেক প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছিল এমনই এক একটি
সুটকেস। গত চার বছরে কত ব্লাড ডোনেশান ক্যাম্প হয়েছে তার তালিকা বানাতে গিয়ে
অনুসন্ধান কমিটি হিমসিম খেয়ে গেল। কোটি কোটি প্যাকেট রক্ত মানে লাখ লাখ ডলার।
বাইপাস থেকে উদ্ধার হল কিছু পোড়া কিছু আধপোড়া ব্লাড ডোনারের তালিকা। এইসব ক্যাম্পে
মানুষকে উৎসাহ দিতে হাজির হতেন ভিন্ন চলচ্চিত্রশিল্পী ও সিরিয়ালের কলাকুশলীরা। ইডি
ঠিক করল এবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। ইডি ব্ল্যাড ক্যাম্পগুলির ভিডিও খুঁজতে শুরু
করলেন। এক উঠতি যুবনেতা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে কতগুলি জনশূণ্য ব্লাড ডোনেশান
ক্যাম্পের ভিডিও জমা দিয়ে এলেন। মানুষের রক্ত নিয়ে এই ছেলেখেলা কেউ মেনে নিলেন না।
নেতারা চুপ মেরে গেলেন। সরকার টলমল করতে লাগল। নানাদেশ থেকে প্রতিবাদ আসতে লাগল।
সোসাল মিডিয়া ভেসে গেল প্রতিবাদে আর ধিক্কারে। শহরে শহরে মহা মিছিল। অথচ দুঃশাসনের
কোনও প্রদর্শনী শহরে এল না। এমনকি তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেননি বহুদিন।
অবশেষে ইডি ডেকে
পাঠাল দুঃশাসন সরকারকে। যে দুঃশাসনকে নিয়ে মিডিয়া ছিল নিস্তেজ তারাই দুঃশাসনের খবর প্রথম পাতায়
ছাপাতে লাগল। কোন স্কুলে ক’বার ফেল করে অবশেষে কী করে বড় হলেন, লাউ-এর খোসা ভাজা
খেতে ভালবাসতেন, ব্যাংক ব্যালেন্স-জমি জমা, ক্লাস সেভেনের বাল্যপ্রেম, একাধিক
বিবাহ অন্যদেশে থাকার সম্ভাবনা, ফেসবুকে প্রবল নারী আসক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রতিটি নিউজ চ্যানেলের সান্ধ্য আড্ডার বিষয় এখন শিল্পী দুঃশাসন সরকার। ইডি তাকে
বারেবারে জেরা করতে লাগল। তার কথায় অনেক অসঙ্গতি ধরা পড়তে লাগল। তার ছবি বিদেশের
কোন কোন মিউজিয়ামে আছে জিজ্ঞাসা করায় তিনি এক একবার অন্য নাম বলতে লাগলেন। সেই সব
নামে কোন মিউজিয়াম গুগুলে পাওয়া গেল না। দুঃশাসনের প্রতিটি প্রদর্শনীতে যারা যারা
বমি করেছিল আর যাদের যাদের মাথা খারাপ হয়েছিল গোয়েন্দারা তাদের তালিকা তৈরি করলেন।
প্রতিবার একই লোক বমি করেছিল। প্রতিবার প্রদর্শনীর পর একই লোকেদের মাথা খারাপ হয়ে
গিয়েছিল। দুঃশাসন বিরোধী কমেন্টসে ফেসবুক ভরে গেল। ইউটিউবে নিজের মোবাইলে তোলা
দুঃশাসনের নানা কীর্তিকলাপ আপলোড করতে লাগল বিক্ষুব্ধ জনতা। প্রতি ব্লাড ডোনেশন
ক্যাম্পেই তার উপস্থিতি ছিল তা ভিডিওগুলিতে শোভা পেতে লাগল। গোয়েন্দারা দেখলেন তার
ঘরের চার দেওয়ালে চারটি বড় বড় দেওয়াল জোড়া ছবি। তাজমহল, স্ট্যাচু অব লিবার্টির
উল্টোদিকে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার আর গ্রাম্য রাস্তার ছবি। প্রবল জেরার মুখে
দুঃশাসন স্বীকার করলেন ইউরোপ আমেরিকা কেন তিনি কোনওদিনও নন্দীগ্রাম অবধি যাননি।
ইডির অফিসাররা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তার নামে কোনও পাশপোর্ট পেলেন না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন