শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৪

কবিতা - শাশ্বতী সান্যাল



স্নান বিষয়ক একটি চিঠি
শাশ্বতী সান্যাল

আর কোনো দিকে যাবোনা বলেই তোর স্মৃতিকে কোলে নিয়ে বসেছি । আমার আঙুলে এখন কোনো শব্দ নেই, শুধু তোর ভিজে শরীরটাকে আঁকড়ে ধরার একটা চ্যাটচ্যাটে চেষ্টা লেগে রয়েছে অনামিকায়। তোর সেই অলৌকিক স্নানদৃশ্যকে কি করে তুলে আনবো তার সমস্ত সুষমাসহ এই নিরস সাদা পৃষ্ঠার বুকে ? যেসব জলের ফোঁটা তোর শরীর ছুঁয়ে নেমে গেলো অন্য কোনো সমুদ্রের অভিমুখে, তাদের সহস্র-ফণায় ঠিকরে পড়েছে চূর্ণ আলোকণা। আমি মৃত্যুর আগে আর কখনও সেই আলো মেখে দেখবো না বলে বালি ছুঁয়ে বসে আছি... বালিতেই লিখে রাখছি দুপুরের সব না শোনা গান... না লেখা কবিতা... এমনকি দু'চারটে লবণাক্ত জলের ফোঁটাও। তোর শাওয়ারের নীচে যেসব নুন বুদ্বুদের ফেনায় ভেসে গেছে তার ইতিবৃত্ত নাহয় অন্য কেউ লিখুক।

আর কোনোদিকে যাবোনা বলেই বারবার সমুদ্রের অভিমুখ বদলেছি আমি... ভালোবাসাকে ডেকেছি বিষণ্ণতার নামে । আর বিশ্বাস করেছি একদিন তুই ঠিক উঠে আসবি হিস্ হিসে বিষধরের মতো আমার ডুবন্ত অতীতের সমস্ত জল ভেঙে। তোর ছোবলে থাকবে রাঢ় বাতাসের লাল গন্ধ... লেজের ঝাপটায় থাকবে ফুটে ওঠা ছাতিমফুলের মতো কোনো এক বিষাক্ত তীব্রতা। আমার স্নানহীন শরীর অনেক নদীকে শুষে নিয়েছে এযাবৎ । তবু নদীদের মৃত্যু-সংবাদ লিখতে নেই... তাতে পাপ হয়। এরকমই এক পাপের হাত ধরে একদিন তোর চৌকাঠের খর রোদ্দুর পেরিয়ে এসেছি... সমস্ত আহ্বান উপেক্ষা করে এসেছি। আমি আর কোনোদিকে যাবোনা। কোনোদিকে যাবনা বলেই দুচোখে অন্ধকার গিলে বসে আছি... বসে আছি আর একটা গোপন স্নানদৃশ্যের প্রতীক্ষায় ।