শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৪

দীর্ঘ কবিতা - সুলতান সালাহ্উদ্দিন


বিচ্ছিন্ন নাবিক

সুলতান সালাহ্উদ্দিন


০১.
সামান্য কিছুতে ভেঙে পড়ে এই ছিন্নপ্রাণ হয়তো ভেঙে পড়তেও পারে
নক্ষত্রের ছাঁদ আর এত যে মানুষ সাদাকালো ছকের জমিনে ভুলে গেলো
গোপন রহস্যটা হ্যাঁ, অবিশ্বাসের ঘরে আসবে নেমে কিছু কাঁচপোকা,
হাতে থাকবে অলিক কবিতার বই কেমন যেন মুখ গম্ভীর, কারণ জানতে
আমরাও বিভ্রান্ত হই যারা ঘুমকে কাজে লাগায়নি কেমন করে জানবে
নিজ-সত্বার ইতিহাস!

জেগে থাকার ইশারা দেওয়া থাকে নামজানা প্রজাপতি কতৃক, পাখায়
রঙিন পথের মানচিত্র আমাকেও ভুল পথে আন্দোলিত করে অথচ অদৃশ্য
সিঁড়িতে বাদুর থাকে ঝুলে অনেকটা লুকিয়ে বসন্তকে চিনতে শিখিনি
এমন কি শীতকুয়াশার আচ্ছন্নতাও না

বেঁচে থাকতে চাইলে নিজের মতো দেয়াল তুলে দেয় কেউ হয়তো আগেও
ছিলো ততটা নয় যতটা দেখলে বুকে সাহস ডুঁবে যায় পাহাড় দেখার ভয়ে

০২.
অভিনয় গিটারের ছিঁড়েছে তার ভুল আঙ্গুলের শাসনে, কিছু আদরের
কৌশলও শিখে নেয়ার প্রয়োজন ছিলো। দরজায় কেন কলিংবেল নেই
তা নিয়ে ভাববার সময় কই বরং মৃদু টোঁকা পড়বে বলে ঠায় দাঁড়িয়ে
থাকা একা। নিজভূমে জাগরণ ঘটে কিছু মানুষের আর আশ্রয়ের শেষ
ট্রেন ছেড়ে দেয়, ঘুম এসে পড়ে মনে মনে বিক্রি করে দেই ঈশ্বরের
ঘরবাড়ি তোমাদের হাসিমুখের বিনিময়ে জানি, ক্লান্তির জমিনে ছুঁয়ে
দিতে এই ঠিকানা তোমাকেও ভাবায় না ছয় তারের সংসারে।

এই বর্ষায় এত এত গাছ বেড়ে উঠে, মৃত হয় ডুবে যাবার ঘ্রাণে,
কেন জানি ওরাও নিঃশ্বাসের ইশারা খোঁজে আর প্রাণ ফিরে পেয়ে
উচ্চতা ধারণ করে লিলুয়া হাওয়া। তুমিও ঘামো!

শব্দের বাজারে আজকাল নিলাম উঠে, শরীরে জোর করে ঠুকে দেয়
বানোয়াট পেরাক যেনবা অস্তিত্বের জাগান দিলে মনে হয় এর চেয়ে
মাছেরাই ভালো আছে ছোট ছোট খালে, নদীতে। সমুদ্রের দাবি করিনা,
ওরা মানুষের আগেই জেনে ফেলেছে প্রকৃত ইতিহাস।
নিজের ভেতরে এতকাল কে বাস করছে তা অজানা যদিও সবজান্তার
ভান রে এইতো ব্যাতিব্যস্ত থাকি!

০৩.
ধূসর শার্ট স্থায়ী হলো বেদনার চলে যাওয়ায়, পথ খুঁজে ক্লান্ত হলে
রয়ে যায় কেউ অতীত পথেই, গন্তব্য যদিও ছিলো...
পথে পথে চাপা পড়ে আপন ওঙ্কার।
ছায়া পড়া পৃথিবীর ধূসরের অবসান তোমাদের বাতিঘরে, আলো
খুঁজে পেলে অজানা পাহাড়ের কাছে বাস করে কান্না নামক নদী।
মেঘেদের প্রাচীর ভেদ করে
আসতে বলি ফাগুনের কোন ভোর, এই শহরে।

চায়ে স্মার্ট চুমুক আর হাত ছুঁয়ে দেখা একটু চুলের ফাঁকে কী গুজে
দিলে ঘ্রাণে মাতাল হয় ঘোড়াগুলো? ব্যস্ত ব্রা খুলে ফেললেই সর্বনাশ!
বিধ্বংসী চৈত্র এসে যায় বর্ষাকালেও

০৪.
শূন্যতার জেলখানায় এলে হাজিরা দিতে যদিও দিকনিশানা বিদ্ধ থাকে
আপনাতে, বধিরেরা আসলের পৃথিবীতে সুদের কারবারি পারো তো ভেজা
অন্তর্বাস শুকাতে এসো না খয়েরী বারান্দায়, গোপনে দেখে ফেলে শেষ পথিক
যদিও আসনে আসনে বেঁধেছিলে যে ঘর আর না দেখা দুয়ার উল্টোপথেই
হারিয়েছিলো। এত রহস্য য়ে গেলো এতকাল, জানতে চেয়ে ভিন্ন মাত্রার
এই শ্রাবণে হারায় কেউ

আমাদের ঘরে ঘরে আলোকিত নয় যারা, পথচলা তাদেরকে আজ বলি
নিজ দুয়ারেই বড়মাত্রা ভালোবাসায় তখন গোধূলি... 

০৫.
সারারাত ব্যর্থতর শূন্য যে বুক নিজের কাছেই ঘোঁচাতে চাইলো নিঃসঙ্গতা,
শুদ্ধবাতাস ঈর্শা করে এতটা স্বাধীন মানব এই শুভ্রতার মোড়কের জমিনে
কোথায় পাবো জানা হয়নি বরং কাকদুপুরে খুঁজে দেখি এইসব বাঘ বাঘিনী
যারা চিন্তার কাছেই পৌছে গেছে আপন আপন।

অন্ধকার আলোর প্রয়োজন যেখান থেকে শুরু তাই আপনাতে না খুঁজে
উপরে তাকানো এতকাল! নক্ষত্ররা নিজ আসনে বিচরণরত যদিও
পতীতারা নির্দোষ, ভালোবাসাই খুন হয়ে যায় খুঁজতে অপ্রাপ্তির সীমানা।

স্নিগ্ধ তুমি হাসছো যখন নিজেকেই ভুলে গেছি! মাটিচাপায় ভরাট যে কুয়ো
তারও কিছু শূন্যতা আছে, হারাবার বেদনাও। ভুল-পথ বলে কোন পথ নেই,
থাকেনা, প্রতিটা পথেই সঠিকের ইশারা ছিলো, থেকে যায়। বিচ্ছিন্ন নাবিকের
অপেক্ষায় হঠাৎ একদিন জাহাজ ফিরে আসে, দেখে কেউ নেই পৃথিবীর মায়া
ছেড়ে সেচ্ছায় গড়তে তোমাদের স্মারক...