প্রফেসার গোখেল ও আলেকজান্ডার
রৌপ্য রায়
রৌপ্য রায়
২৪ শে নভেম্বর
আজ ভালোই শিত পড়েছে । গত তিন দিন আগে আমার রির্সাচ শেষ হয়েছে । তবে রির্সাচ এর তৈরি ঔষধ 'ফিকসোসিয়ানজয়েন ' অবশ্য এখনও পরীক্ষা করার হয়নি। যদি আমার রির্সাচ সাকসেস হয় তাহলে যে চিকিত্সা বিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায়ের সুচনা হবে তাতে কোন সন্ধেয় নেই । শুধু মাত্র একটা পরীক্ষা করলেই হয় । নিজের দেহে ঔষধ ' ফিকসোসিয়ানজয়েন ' টেস্ট করতে সাহস পাচ্ছি না । তবে এতে কোন সাইড এফেক্ট হবে না এতে আমি শিয়র । কিন্তু নিজের শরীর ইচ্ছা করে কেটে তো আর আর টেস্ট করতে পারি না । তাই ভেবেছি যত দিন না আকস্মিক ভাবে কাটবে তত দিন ঔষধের সম্পুনতা অসম্পুনতাই থাক । তাতে কোন অসুবিধা নেই ।
৩০শে নভেম্বর
মনটা ভালো নেই , দীর্ঘ গবেষনার পর একটা ছোট বিশ্রাম না নিলে শরীর আর টানছে না । বিশ্রাম মানে কি শুয়ে বসে কাটানো ? শুয়ে বসে কাটে কি মন ভালো হয় ? ভাবছি বৈকালে একটু সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গেলে মন্দ হয় না । সমূদ্র দেখা ও হ’ত আর মন টা ও খানিকটা ফ্রী হত ।
১লা ডিসেম্বর
রাত দেড়টা , হাতে তেমন কোন কাজ নেই । সুতরাং ডাইরি লিখছি । সাধারনত আমি রাতে ডাইরি লিখি না । বেশি ভাগ দুপুরেই লিখি । তবে বিশেষত্ব কোন ঘটনা ঘটলে তখন রাতেই লিখি । গত দিনে বৈকালের ঘটনাটা লিখছি । এই শীত টা যে ভাবে জাঁকিয়ে বসেছে তাতে এই বুড়ো জীর্ন হাড়ে, ফড়িং এর মত শরীর নিয়ে টিকে থাকা দায় । গায়ে দুটো সয়েটার তার উপর একটা জ্যাকেট চাপিয়ে কানে ভালো করে মাপলার জড়িয়ে সমুদ্রের দিকে হাঁটতে শুরু করেছি । হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ গোবিন্দ নারায়নের সাথে দেখা হয়ে গেল । দুজনে কথা বলতে বলতে সমুদ্রের চরে এসে দাড়ালাম । গোবিন্দ বলল - গোখেল তুমি একটু বালিতে হেঁটে আসো । আমি বরং কটা ব্যায়াম সেরে নি । অতএব আমাকে একা সমুদ্রের বালি মাখতে হয় । নরম কাদা বালিতে হাঁটতে বেশ ভালোই লাগছিল । সমুদ্রের ঢেউ মাঝে মাঝে বালি মাখা পা ধয়ে নিয়ে যাচ্ছিল । সমুদ্রের নোনা মাটিতে ছোট ছোট লাল কাঁকড়ার গর্ত । আর গর্ত ভিতর থেকে মাঝে মাঝে লাল কাঁকড়া উকিঁ মারছে । দেখতে মন্দ লাগছিল না । আমি বলুচর ধরে পশ্চিমে হাঁটতে লাগলাম । মিনিট দশেক হাঁটার পর কে যেন পেছন থেকে বলল---
- কৈই হে গোখেল ! কোথায় চলল ? তোমার যে আর দেখা পাওয়া দায় । কি করো এত ঘরে বসে ? একটু বহিরে এলে কথা বার্তা বললে মনটা ও ফ্রী হয় ।
আমি পিছন ফিরে চেয়ে দেখি প্রফেসার কম্পাস ।
হ্যাঁ ঠিক বলেছ ভায়া , কিন্তু কি করব বলল - কদিন কাজের যা চাপ তাই ঘরথেকে আর কোথাও বাহির হতে পারিনে ।
- "তা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে যে ওদিকে আর একটু যাবেন নাকি"
- "না আর ওদিকে গিয়ে কাজ নেই বাপু । যে ভাবে অন্ধকারে আকাশ ঢাকছে তাতে বাড়ি ফিরতে হবে শুভস্র শ্রীঘ্রম"
সুতরাং প্রফেসার কম্পাস কে শুভ সন্ধ্যা বলে বিদায় জানিয়ে বিপরীতমুখী হয়ে হাঁটতে লাগলুম । দশ মিনিট হাঁটার পরে আবার গোবিন্দ নারায়ণের সাথে দেখা, গোবিন্দ নারায়ণ বলল - আর একটু দাড়াও গোখেল আমার আর একটি ব্যায়াম বাকি । অতয়েব ভদ্রতার খাতিরে আমাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে । গোবিন্দ নারায়ণের কাছ হতে হাত তিনেক দূরে জল আর স্থলের সংনিকট এসে দাড়ালুম । মিনিট চারেক কেটে গেল । এমন সময় পূবদিক থেকে এক কাতর অস্পষ্ট চিৎকার শোনা গেল । প্রথমে কীসের চিৎকার বূঝতে পারছিলুম না । কিছুটা কাছে আসতে বুঝতে পারলুম । গ্রামের ক’টা ছেলেপুলে একটা কুকুরের বাচ্চাকে ঢিল ছুঁড়ে মারতে মারতে এদিকে আনছে । কুকুরের বাচ্চাটা আমার কাছাকাছি আসতে আমি গ্রামের ছেলেপুলে কটাতে বেশ ধমক দিলুম । ওরা হাত থেকে ঢিল ফেলে দিয়েআবার পূবের দিকে চলে গেল । আমি ঘুরে দেখি কুকুরের বাচ্চাটা আমার হাত দুয়েক দুরে দাঁড়িয়ে আছে । আস্তে আস্তে কুকুরে বাচ্চাটার কাছে গেলুম। কী আশ্চর্য বাচ্চাটা দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে । আমি ভালো করে দেখলুম । বাচ্চাটার পিছনের ডান পা থেকে ঝরঝর করে রক্ত ঝরছে । কাটা অংশ ভালো করে দেখলুম । মনে হচ্ছে বড়ো পাথর দিয়ে মেরেছে । গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে ক্ষত স্থান রুমাল দিয়ে মুছে দিলুম । পাঞ্জাবির পকেট থেকে আমার নব তৈরী ঔষধ ' ফিকসোসিয়ানজয়েন ' বাহির করে রুমালে করে নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলুম । সর্বনাশ ! ক্ষত স্থানে ফিকসোসিয়ানজয়েন লাগানোমাত্রই কুকুর বাচ্চা মারলো সোজা এক দৌড় । এক বার পূব থেকে পশ্চিমে আবার পশ্চিম থেকে পূর্বে । আবার মাঝে একবার করে সমুদ্রে ডুব দিয়ে আসে । কুকুর বাচ্চার অমন মতিভ্রম দেখে সমুদ্রের চালুচরে বেড়াতে আসা লোকজন যে যেদিকে পারল দৌড় মারল । আশ্চর্যের কথা হল যে কুকুর বাচ্চাটা ঊর্দ্ধবেগে দৌড়াছেদ বটে কিন্তু কারোর তাড়া কিংবা কাটছে না । এমন মতিগতি দেখে ভাবছি এখানে থাকার আর ঠিক হবে না এমন সময় পিছন থেকে গোবিন্দ নারায়ণ বলল - চলো গোখেল বাড়ি যাওয়া যাক । আমি ‘চলো’ বলে গন্থব্যস্থলে উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । পথ চলতে চলতে গোবিন্দ নারায়ণ বলল - কুকুরের পায়ে এমন কী লাগিয়েছেন বলুন তো যে বেচারা উন্মত্তের মত দৌড়াছে দুজনে কথায় কথায় প্রায় গ্রন্থব্যস্থলে পৌঁচ্ছে গেলুম । গোবিন্দ নারায়নকে শুভ সন্ধ্যা জানিয়ে বিদায় জানালুম । এবার ল্যাবের দিকে এগিয়ে গিয়ে ল্যাবের চাবি খুলবো হঠাৎ কিছু একটা শব্দে পিছন ফিরে দেখি সেই ছোট্ট কুকুর বাচ্চা টা । দেখতে নিখুঁত কালো । কখন যে আমাদের পিছন অনুসরণ করেছে বুঝতে পারিনি । হাত নেড়ে ডাকলুম । আমার মুখের দিকে একবার চেয়ে দৌড়ে পায়ের কাছে এসে কুঁইকুঁই করতে লাগল । আমি গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে ভালো করে পিছনের ডান পায়ের ক্ষত স্থান দেখতে লাগলুম । না কোন ক্ষত চিহ্ন নেই । ল্যাবের দরজা খুলে ভিতরে ডাকলুম । পোষ মান কুকুরের মতো আমার টেবিলের নিচে এসে বসল । অল্প সময়ে আলাপ হলেও এখন ওকে বেশ ভালোবেসে ফেলেছি । আদর করে নাম রেখেছি আলেকজেন্ডার ।
হ্যাঁ ঠিক বলেছ ভায়া , কিন্তু কি করব বলল - কদিন কাজের যা চাপ তাই ঘরথেকে আর কোথাও বাহির হতে পারিনে ।
- "তা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে যে ওদিকে আর একটু যাবেন নাকি"
- "না আর ওদিকে গিয়ে কাজ নেই বাপু । যে ভাবে অন্ধকারে আকাশ ঢাকছে তাতে বাড়ি ফিরতে হবে শুভস্র শ্রীঘ্রম"
সুতরাং প্রফেসার কম্পাস কে শুভ সন্ধ্যা বলে বিদায় জানিয়ে বিপরীতমুখী হয়ে হাঁটতে লাগলুম । দশ মিনিট হাঁটার পরে আবার গোবিন্দ নারায়ণের সাথে দেখা, গোবিন্দ নারায়ণ বলল - আর একটু দাড়াও গোখেল আমার আর একটি ব্যায়াম বাকি । অতয়েব ভদ্রতার খাতিরে আমাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে । গোবিন্দ নারায়ণের কাছ হতে হাত তিনেক দূরে জল আর স্থলের সংনিকট এসে দাড়ালুম । মিনিট চারেক কেটে গেল । এমন সময় পূবদিক থেকে এক কাতর অস্পষ্ট চিৎকার শোনা গেল । প্রথমে কীসের চিৎকার বূঝতে পারছিলুম না । কিছুটা কাছে আসতে বুঝতে পারলুম । গ্রামের ক’টা ছেলেপুলে একটা কুকুরের বাচ্চাকে ঢিল ছুঁড়ে মারতে মারতে এদিকে আনছে । কুকুরের বাচ্চাটা আমার কাছাকাছি আসতে আমি গ্রামের ছেলেপুলে কটাতে বেশ ধমক দিলুম । ওরা হাত থেকে ঢিল ফেলে দিয়েআবার পূবের দিকে চলে গেল । আমি ঘুরে দেখি কুকুরের বাচ্চাটা আমার হাত দুয়েক দুরে দাঁড়িয়ে আছে । আস্তে আস্তে কুকুরে বাচ্চাটার কাছে গেলুম। কী আশ্চর্য বাচ্চাটা দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে । আমি ভালো করে দেখলুম । বাচ্চাটার পিছনের ডান পা থেকে ঝরঝর করে রক্ত ঝরছে । কাটা অংশ ভালো করে দেখলুম । মনে হচ্ছে বড়ো পাথর দিয়ে মেরেছে । গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে ক্ষত স্থান রুমাল দিয়ে মুছে দিলুম । পাঞ্জাবির পকেট থেকে আমার নব তৈরী ঔষধ ' ফিকসোসিয়ানজয়েন ' বাহির করে রুমালে করে নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলুম । সর্বনাশ ! ক্ষত স্থানে ফিকসোসিয়ানজয়েন লাগানোমাত্রই কুকুর বাচ্চা মারলো সোজা এক দৌড় । এক বার পূব থেকে পশ্চিমে আবার পশ্চিম থেকে পূর্বে । আবার মাঝে একবার করে সমুদ্রে ডুব দিয়ে আসে । কুকুর বাচ্চার অমন মতিভ্রম দেখে সমুদ্রের চালুচরে বেড়াতে আসা লোকজন যে যেদিকে পারল দৌড় মারল । আশ্চর্যের কথা হল যে কুকুর বাচ্চাটা ঊর্দ্ধবেগে দৌড়াছেদ বটে কিন্তু কারোর তাড়া কিংবা কাটছে না । এমন মতিগতি দেখে ভাবছি এখানে থাকার আর ঠিক হবে না এমন সময় পিছন থেকে গোবিন্দ নারায়ণ বলল - চলো গোখেল বাড়ি যাওয়া যাক । আমি ‘চলো’ বলে গন্থব্যস্থলে উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । পথ চলতে চলতে গোবিন্দ নারায়ণ বলল - কুকুরের পায়ে এমন কী লাগিয়েছেন বলুন তো যে বেচারা উন্মত্তের মত দৌড়াছে দুজনে কথায় কথায় প্রায় গ্রন্থব্যস্থলে পৌঁচ্ছে গেলুম । গোবিন্দ নারায়নকে শুভ সন্ধ্যা জানিয়ে বিদায় জানালুম । এবার ল্যাবের দিকে এগিয়ে গিয়ে ল্যাবের চাবি খুলবো হঠাৎ কিছু একটা শব্দে পিছন ফিরে দেখি সেই ছোট্ট কুকুর বাচ্চা টা । দেখতে নিখুঁত কালো । কখন যে আমাদের পিছন অনুসরণ করেছে বুঝতে পারিনি । হাত নেড়ে ডাকলুম । আমার মুখের দিকে একবার চেয়ে দৌড়ে পায়ের কাছে এসে কুঁইকুঁই করতে লাগল । আমি গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে ভালো করে পিছনের ডান পায়ের ক্ষত স্থান দেখতে লাগলুম । না কোন ক্ষত চিহ্ন নেই । ল্যাবের দরজা খুলে ভিতরে ডাকলুম । পোষ মান কুকুরের মতো আমার টেবিলের নিচে এসে বসল । অল্প সময়ে আলাপ হলেও এখন ওকে বেশ ভালোবেসে ফেলেছি । আদর করে নাম রেখেছি আলেকজেন্ডার ।
২ রা ডিসেম্বর
গত রাতে গোবিন্দ নারায়ণকে সকালে চায়ের আহবান করেছিলুম । সক্কাল সক্কাল গোবিন্দ নারায়ণের পায়ের ধুলো পড়ল আমার ল্যাবে । একটা চেয়ার টেনে বসতে দিলুম । মিনিট সাতেক পরে আমার চাকর ট্যাবলেট দু’পেয়ালা চা আর বিস্কুট দিয়ে গেল । গোবিন্দ নারায়ণ চায়ের পেয়ালায় বার দুয়েক চুমিক দিয়েছে এমন সময় টেবিলের নীচে থেকে আলেকজান্ডার কান ঝাপটাতে ঝাপটাতে আরমোড়া ভেঙে বাহিরে এল । গোবিন্দ নারায়ণ বিস্ময় চোখে আলেকজান্ডারের দিক তাকিয়ে বলল - এটা কী গোখেল ?
আমি হাসতে হাসতে বললুম--- ‘এটা সেই সমুদ্রের বালুচরের আলেকজান্ডার ।’
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন