শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৪

কল্পবিজ্ঞানের গল্প - রৌপ্য রায়




প্রফেসার গোখেল আলেকজান্ডার 
রৌপ্য রায়


২৪ শে নভেম্বর  

আজ ভালোই শিত পড়েছে গত তিন দিন আগে আমার রির্সাচ শেষ হয়েছে তবে রির্সাচ এর তৈরি ঔষধ 'ফিকসোসিয়ানজয়েন ' অবশ্য এখনও পরীক্ষা করার হয়নি  যদি আমার রির্সাচ সাকসেস হয় তাহলে যে চিকিত্সা বিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায়ের সুচনা হবে তাতে কোন সন্ধেয় নেই শুধু মাত্র একটা পরীক্ষা করলেই হয় নিজের দেহে ঔষধ ' ফিকসোসিয়ানজয়েন ' টেস্ট করতে সাহস পাচ্ছি না তবে এতে কোন সাইড এফেক্ট হবে না এতে আমি শিয়র কিন্তু নিজের শরীর ইচ্ছা করে কেটে তো আর আর টেস্ট করতে পারি না তাই ভেবেছি যত দিন না আকস্মিক ভাবে কাটবে তত দিন ঔষধের সম্পুনতা অসম্পুনতাই থাক তাতে কোন অসুবিধা নেই

৩০শে নভেম্বর

মনটা ভালো নেই , দীর্ঘ গবেষনার পর একটা ছোট বিশ্রাম না নিলে শরীর আর টানছে না বিশ্রাম মানে কি শুয়ে বসে কাটানো ? শুয়ে বসে কাটে কি মন ভালো হয় ? ভাবছি বৈকালে একটু সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গেলে মন্দ হয় না সমূদ্র দেখা হ’ত আর মন টা খানিকটা ফ্রী হত


১লা ডিসেম্বর

রাত দেড়টা , হাতে তেমন কোন কাজ নেই সুতরাং ডাইরি লিখছি সাধারনত আমি রাতে ডাইরি লিখি না বেশি ভাগ দুপুরেই লিখি তবে বিশেষত্ব কোন ঘটনা ঘটলে তখন রাতেই লিখি গত দিনে বৈকালের ঘটনাটা লিখছি এই শীত টা যে ভাবে জাঁকিয়ে বসেছে তাতে এই বুড়ো জীর্ন হাড়ে, ফড়িং এর মত শরীর নিয়ে টিকে থাকা দায় গায়ে দুটো সয়েটার তার উপর একটা জ্যাকেট চাপিয়ে কানে ভালো করে মাপলার জড়িয়ে সমুদ্রের দিকে হাঁটতে শুরু করেছি হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ গোবিন্দ নারায়নের সাথে দেখা হয়ে গেল দুজনে কথা বলতে বলতে সমুদ্রের চরে এসে দাড়ালাম গোবিন্দ বলল - গোখেল তুমি একটু বালিতে হেঁটে আসো আমি বরং কটা ব্যায়াম সেরে নি অতএব আমাকে একা সমুদ্রের বালি মাখতে হয় নরম কাদা বালিতে হাঁটতে বেশ ভালোই লাগছিল সমুদ্রের ঢেউ মাঝে মাঝে বালি মাখা পা ধয়ে নিয়ে যাচ্ছিল সমুদ্রের নোনা মাটিতে ছোট ছোট লাল কাঁকড়ার গর্ত আর গর্ত ভিতর থেকে মাঝে মাঝে লাল কাঁকড়া উকিঁ মারছে দেখতে মন্দ লাগছিল না আমি বলুচর ধরে পশ্চিমে হাঁটতে লাগলাম মিনিট দশেক হাঁটার পর কে যেন পেছন থেকে বলল---
-
কৈই হে গোখেল ! কোথায় চলল ? তোমার যে আর দেখা পাওয়া দায় কি করো এত ঘরে বসে ? একটু বহিরে এলে কথা বার্তা বললে মনটা ফ্রী হয়
আমি পিছন ফিরে চেয়ে দেখি প্রফেসার কম্পাস
হ্যাঁ ঠিক বলেছ ভায়া , কিন্তু কি করব বলল - কদিন কাজের যা চাপ তাই ঘরথেকে আর কোথাও বাহির হতে পারিনে
- "
তা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে যে ওদিকে আর একটু যাবেন নাকি"
- "
না আর ওদিকে গিয়ে কাজ নেই বাপু যে ভাবে অন্ধকারে আকাশ ঢাকছে তাতে বাড়ি ফিরতে হবে শুভস্র শ্রীঘ্রম"
সুতরাং প্রফেসার কম্পাস কে শুভ সন্ধ্যা বলে বিদায় জানিয়ে বিপরীতমুখী হয়ে হাঁটতে লাগলুম দশ মিনিট হাঁটার পরে আবার গোবিন্দ নারায়ণের সাথে দেখা, গোবিন্দ নারায়ণ বলল - আর একটু দাড়াও গোখেল আমার আর একটি ব্যায়াম বাকি অতয়েব ভদ্রতার খাতিরে আমাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে গোবিন্দ  নারায়ণের কাছ হতে হাত তিনেক দূরে জল আর স্থলের সংনিকট এসে দাড়ালুম মিনিট চারেক কেটে গেল এমন সময় পূবদিক থেকে এক কাতর অস্পষ্ট চিৎকার শোনা গেল প্রথমে কীসের চিৎকার বূঝতে পারছিলুম না কিছুটা কাছে আসতে বুঝতে পারলুম গ্রামের ক’টা ছেলেপুলে একটা কুকুরের বাচ্চাকে ঢিল ছুঁড়ে মারতে মারতে এদিকে আনছে কুকুরের বাচ্চাটা আমার কাছাকাছি আসতে আমি গ্রামের ছেলেপুলে কটাতে বেশ ধমক দিলুম ওরা হাত থেকে ঢিল ফেলে দিয়েআবার পূবের দিকে চলে গেল আমি ঘুরে দেখি কুকুরের বাচ্চাটা আমার হাত দুয়েক দুরে দাঁড়িয়ে আছে  আস্তে আস্তে কুকুরে বাচ্চাটার কাছে গেলুম কী আশ্চর্য বাচ্চাটা দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে আমি ভালো করে দেখলুম বাচ্চাটার পিছনের ডান পা থেকে ঝরঝর করে রক্ত ঝরছে কাটা অংশ ভালো করে দেখলুম মনে হচ্ছে বড়ো পাথর দিয়ে মেরেছে গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে ক্ষত স্থান রুমাল দিয়ে মুছে দিলুম পাঞ্জাবির পকেট থেকে আমার নব তৈরী ঔষধ ' ফিকসোসিয়ানজয়েন ' বাহির করে রুমালে করে নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলুম সর্বনাশ ! ক্ষত স্থানে ফিকসোসিয়ানজয়েন লাগানোমাত্রই কুকুর বাচ্চা মারলো সোজা এক দৌড় এক বার পূব থেকে পশ্চিমে আবার পশ্চিম থেকে পূর্বে আবার মাঝে একবার করে সমুদ্রে ডুব দিয়ে আসে কুকুর বাচ্চার অমন মতিভ্রম দেখে সমুদ্রের চালুচরে বেড়াতে আসা লোকজন যে যেদিকে পারল দৌড় মারল আশ্চর্যের কথা হল যে কুকুর বাচ্চাটা ঊর্দ্ধবেগে দৌড়াছে বটে কিন্তু কারোর তাড়া কিংবা কাটছে না এমন মতিগতি দেখে ভাবছি এখানে থাকার আর ঠিক হবে না এমন সময় পিছন থেকে গোবিন্দ নারায়ণ বলল - চলো গোখেল বাড়ি যাওয়া যাক আমি চলো’ বলে গন্থব্যস্থলে উদ্দেশ্যে রওনা হলাম পথ চলতে চলতে গোবিন্দ নারায়ণ বলল - কুকুরের পায়ে এমন কী  লাগিয়েছেন বলুন তো যে বেচারা উন্মত্তের মত দৌড়াছে দুজনে কথায় কথায় প্রায় গ্রন্থব্যস্থলে পৌঁচ্ছে গেলুম গোবিন্দ নারায়নকে শুভ সন্ধ্যা জানিয়ে বিদায় জানালুম এবার ল্যাবের দিকে এগিয়ে গিয়ে ল্যাবের চাবি খুলবো হঠাৎ কিছু একটা শব্দে পিছন ফিরে দেখি সেই ছোট্ট কুকুর বাচ্চা টা দেখতে নিখুঁত কালো কখন যে আমাদের পিছন অনুসরণ করেছে বুঝতে পারিনি হাত নেড়ে ডাকলুম আমার মুখের দিকে একবার চেয়ে দৌড়ে পায়ের কাছে এসে কুঁইকুঁই করতে লাগল আমি গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে ভালো করে পিছনের ডান পায়ের ক্ষত স্থান দেখতে লাগলুম না কোন ক্ষত চিহ্ন নেই ল্যাবের দরজা খুলে ভিতরে ডাকলুম পোষ মান কুকুরের মতো আমার টেবিলের নিচে এসে বসল অল্প সময়ে আলাপ হলেও এখন ওকে বেশ ভালোবেসে ফেলেছি আদর করে নাম রেখেছি আলেকজেন্ডার


রা ডিসেম্বর


গত রাতে গোবিন্দ নারায়ণকে সকালে চায়ের আহবান করেছিলুম সক্কাল সক্কাল গোবিন্দ নারায়ণের পায়ের ধুলো পড়ল আমার ল্যাবে একটা চেয়ার টেনে বসতে দিলুম মিনিট সাতেক পরে আমার চাকর ট্যাবলেট দুপেয়ালা চা আর বিস্কুট দিয়ে গেল গোবিন্দ নারায়ণ  চায়ের পেয়ালায় বার দুয়েক চুমিক দিয়েছে এমন সময় টেবিলের নীচে থেকে আলেকজান্ডার কান ঝাপটাতে ঝাপটাতে আরমোড়া ভেঙে বাহিরে এল গোবিন্দ নারায়ণ বিস্ময় চোখে আলেকজান্ডারের দিক তাকিয়ে বলল - এটা কী গোখেল ?
আমি হাসতে হাসতে বললুম--- এটা সেই সমুদ্রের বালুচরের আলেকজান্ডার