রহমান হেনরীর দুটি কবিতা
অস্তিত্ব বিষয়ে
তোমাদের
ঘাটে ঘাটে স্নান করি, আর দেখ, শঙ্কিত শঙ্খের শব্দে কীরকম ভুলে যাই, বিশেষ মুহূর্ত এলে কোনও কোনও শরীরও মন্দির হয়ে যায়; আমি সেই মন্দিরের প্রকাশ্য আলোর নিচে পুড়ে যাই শৈশবের কাল্পনিক নদী। মন্দাকিনী স্রোতে যেন তোমাদেরও বহুকাল আগে কবে চিৎ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি! সহসা নিথর হয়ে স্রোতও ঘুমিয়ে পড়েছে সাথে সাথে; ধারণার ধূম্র-কুহকে শুধু অঙ্কিত হয়েছে সেই স্থিরচিত্রনদী, সীমাহীন সমুদ্রের অসীম দৃশ্যের দিকে চোখ রেখে দৃষ্টিকেও মিথ্যাবাদী ভাবা যেতে পারে। আমি তো মন্দিরে স্থির বসে আছি সফল যন্ত্রণা, পাথরে প্রোথিত প্রাণ, প্রত্নপুরোহিত; ফলে যাকে হেনরী ভাবো, সে তো শুধু ধারণাবিধৃত এক আমার কল্পনা!
শৈশবের অবোধ মন্দিরে শুয়ে, আমি এক নদীস্পর্শে ধুয়েমুছে গেছি, স্লেটে লেখা অক্ষরের মতো; কিন্তু যাকে দেবী ভেবে প্রণয়ের অধিক শ্রদ্ধায় নৈবেদ্য দিয়েছি প্রেমে,
পুজায়-প্রসাদে, সে আমার জননী ছিল না; তাই আজও মাতৃকাম হাহাকার করে ওঠে স্রোতের কল্লোলে… প্রভু, আমি স্নান করি অদৃশ্যত কুসুমনদীতে; রাধিকার ঘাটে কোনও শ্যাম নয়— ধ্বনিমন্ত্রে শিহরিত বিনয়ে ও কামে, এই পোড়া শরীরও মন্দিরে হয়ে যায়
প্রতিমাদর্শন
আকাশ ও পৃথিবীর কানাকানি শুনে একটি দোয়েল পাখি নেচে ওঠে ভোরের বাতাসে, এই গূঢ় দৃশ্যটুকু দেখে নিতে অত্যাধিক ভোরবেলা আমাদের নিদ্রাভঙ্গ হলো; ফলে আজ সকাল সকাল প্রতিমাদর্শনে যাবো। প্রতিমাদর্শনে গেলে আমাদের বহুকিছু দৃষ্টিসুখ হয়— দেবীর প্রতিমা ঘিরে প্রকৃত প্রতিমাগণ কী সুন্দর দৃশ্য সৃষ্টি করে! ফলে কিন্তু এসব প্রতিমা দেখে দেবীও অলক্ষ্যে করে পর্যাপ্ত প্রণাম
(তিনি তো আর অনীর্ষ রমণী নন! আমাদের মা;) এই দৃশ্য বর্ণনাতীতভাবে আমাদের মনে দাগ কাটে; আর বিসর্জন শেষ হলেও আমরা কিন্তু প্রেমের গোপনে রাখি স্বপ্নপ্রতিমা; এর ফলে আমরাও আনন্দিত খুব! সেসব প্রতিমা খুঁজে শহরের বিভিন্ন বিকেলে ছুটে যাই; কেননা যে, সমগ্র বছর জুড়ে আমাদের প্রতিমাদর্শন অব্যাহত থাকে... যার ফলে, দেবীরাও বারো মাস আনন্দিত হয়
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন