বিমোচন
ভট্টাচার্য-এর দুটি কবিতা
লোকটা
একটা
ল্যাম্পপোস্টের নীচে বসে ছিলো লোকটা। মুখভর্তি দাড়িগোঁফ, ময়লা জামাকাপড়, আপনমনে কথা বলছিলো নিজের
সঙ্গেই । আমার হাতে কাগজ দেখে বললো
--"একটা
সাদা কাগজ দেবেন, আর একটা পেন"।
কৌতুহলবশতঃ দিলাম দুটোই ।সাদা কাগজটা রাস্তায় রেখে একমনে লিখে চললো লোকটা । লেখা শেষ করে খুব বিনীতভাবে দুটোই ফেরত দিলো আমায় । বললো -"একটা কবিতা লিখলাম, পড়ে বলুন তো কেমন হলো।"
আমি বললাম "আপনি কিভাবে বুঝলেল আমি কবিতা বুঝি?" লোকটা হাসলো, বললো -
"ও আমরা ঠিক বুঝতে পারি।" হাতে নিয়ে দেখি পুরো সাদা কাগজটা জুড়ে হিজিবিজি লিখেছে লোকটা, কিছু কিছু জায়গা ছিঁড়েও গেছে। বললাম - "বেশ লিখেছেন তো।" দাড়িগোঁফ ভর্তি মুখটায় বিদ্যুৎ ঝলসালো যেন,বললো -
"দেখুন, আপনার কি রকম একবার পড়েই ভালো লাগলো, অথচ সবাই বলে আমি নাকি কবিতা লিখতেই পারিনা।"
পরক্ষণেই আমার হাত থেকে সাদা কাগজটা কেড়ে নিয়ে কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলে দিলো রাস্তায়।
আমার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বললো -"আপনি বাল বোঝেন কবিতা,যত্ত সব পাগল...আমার কপালেই জোটে।"
হনহন করে আমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে একটু থেমে খুব জোরে বলে উঠলো -
"জয় কালি", তারপরেই আরো জোরে হাঁটতে হাঁটতে মিলিয়ে গেল জনারন্যে.........।
কৌতুহলবশতঃ দিলাম দুটোই ।সাদা কাগজটা রাস্তায় রেখে একমনে লিখে চললো লোকটা । লেখা শেষ করে খুব বিনীতভাবে দুটোই ফেরত দিলো আমায় । বললো -"একটা কবিতা লিখলাম, পড়ে বলুন তো কেমন হলো।"
আমি বললাম "আপনি কিভাবে বুঝলেল আমি কবিতা বুঝি?" লোকটা হাসলো, বললো -
"ও আমরা ঠিক বুঝতে পারি।" হাতে নিয়ে দেখি পুরো সাদা কাগজটা জুড়ে হিজিবিজি লিখেছে লোকটা, কিছু কিছু জায়গা ছিঁড়েও গেছে। বললাম - "বেশ লিখেছেন তো।" দাড়িগোঁফ ভর্তি মুখটায় বিদ্যুৎ ঝলসালো যেন,বললো -
"দেখুন, আপনার কি রকম একবার পড়েই ভালো লাগলো, অথচ সবাই বলে আমি নাকি কবিতা লিখতেই পারিনা।"
পরক্ষণেই আমার হাত থেকে সাদা কাগজটা কেড়ে নিয়ে কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলে দিলো রাস্তায়।
আমার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বললো -"আপনি বাল বোঝেন কবিতা,যত্ত সব পাগল...আমার কপালেই জোটে।"
হনহন করে আমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে একটু থেমে খুব জোরে বলে উঠলো -
"জয় কালি", তারপরেই আরো জোরে হাঁটতে হাঁটতে মিলিয়ে গেল জনারন্যে.........।
মানুষ-লাশ
এক
রাস্তায় পড়ে আছে দেহটা.. একটু আগেই মারা গেছে মানুষটা....খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল ওকে... রাস্তা দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছে ..হেঁটে , সাইকেলে , বাইকে ... কেউ ঘুরেও দেখছেনা ওকে .... একটু আগে বেঁচে থাকা মানুষটা এখন লাশ ....কেউ একজন একটা গামছা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে ওর মুখটা ...লাশ হয়ে পড়ে থাকা লোকটা কোথাকার ... কোন দলের ... বাড়িতে কে কে আছে ... কেউ জানেনা .... দোকানপাট সব বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ..কিছুক্ষণ এর মধ্যেই রাস্তাটা শুনশান হয়ে গেল ...শুধু মানুষটা পড়ে থাকলো রাস্তায় ... লাশ হয়ে একা .. আজকাল শকুন দেখা যায়না আর খুব একটা ..তবে আকাশে প্রচুর কাক উড়ে বেড়াচ্ছে .. বেশ কয়েকটা শালিখ রাস্তার থেকে খুঁটে খুঁটে কি সব খাচ্ছে ....একটা কুকুর লাশটার পাশে বসে আছে চুপচাপ সামনের দু পায়ে মাথা রেখে.... ... ও কি চিনতো নাকি লোকটাকে....
দুই
লাশটা এখনো পড়ে আছে রাস্তায় ... প্রচুর মানুষের ভিড়... কয়েকটি পুলিশের গাড়ি .... একদিকে লাল আর অন্যদিকে সবুজ রঙের পতাকা ..জানা গেছে লাশটির নাম গদাধর মণ্ডল ... এরই মধ্যে ওখানে ঘটি গরম বেচতে পৌছে গেছে কিছু মানুষ .. বিক্রি ও হচ্ছে প্রচুর ...দু একটা চায়ের দোকান খুলেছে ... বেশ ভিড় সেগুলোতেও ...একধারে কিছু নারী পুরুষ কান্নাকাটি করছেন .. মনে হয় ওঁরা লাশটির বাড়ির লোকজন .... সবাই বলাবলি করছে বড় বড় নেতারা এলেন বলে .... লাশটি ,থুড়ি গদাধর মণ্ডল এখনো ওরকম ভাবেই পড়ে আছে .. রাস্তা অবরোধ করেছে দু দল ই ... .... দু একটি মানুষের দেখা পাওয়া গেছে .. তারা মানুষকে উত্তেজিত করছেন আর মোবাইল এ কথা বলে চলেছেন ক্রমাগত..... ....কাক গুলো আর উড়ছেনা আকাশে ...সামনের পলাশ গাছটা তে কিন্তু বসে আছে দল বেঁধে .....এই দুর্দিনেও দেখি পলাশ ফুটেছে প্রচুর ... সবুজ পাতা আর লাল ফুল নিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ওদের .....সেই কুকুরটা কিন্তু এখনো শুয়ে আছে গদাধরের পাশে ..সামনের পায়ে মুখ রেখে ... শেষ যাত্রার সঙ্গী হবে বলে ... কিন্তু ... গদাধর ঘরে ফিরবে তো ?? নাকি রাজনৈতিক লাশ হয়ে কলকাতা যেতে হবে তাকে ... রাস্তার ভিড় জানেনা ...ঘটি গরম বেচতে আসা লোকগুলো জানেনা.... পুলিশের গাড়ি জানেনা ... ... কাকগুলো জানেনা ...পলাশ গাছ জানেনা..... লাশটি নিজেও জানেনা .. ....এমন কি ওই উত্তেজনা ছড়ানো মানুষের মত দেখতে শকুনগুলো ও জানে না ..যারা জানেন তারা এখনোএসে পৌঁছোন নি .....শুধু কুকুরটি প্রতীক্ষায় ...বসে থাকে ... বসেই থাকে......
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন