সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

কবিতা - তুষ্টি ভট্টাচার্য্য



শীতকাল আর বর্ষাকাল এক হয়ে গেছে
তুষ্টি ভট্টাচার্য্য

দূরত্ব দিয়ে জমি মাপি এখন
জলছবি মুছে পাকা ঘর-বাড়ি রোদে দিই
জানলার গ্রীলে মাকড়শা তাড়াই
রোজ ঝুল ঝেড়ে তকতকে করে দিই দেওয়ালের খাঁজ
বাড়ির পেছনে শ্যাওলা-রঙা রোদ পোওয়াই
জামা-কাপড় শুকোতে দিই
শীত চলে গেলে বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকি
এক ছুটে ছাদে গিয়ে মুঠো মুঠো খই তুলে আনি
জুঁই ফুলের খই ছড়াই বিছানায়
হরিধ্বনি শুনতে পাই ঘুমোতে ঘুমোতে
আমার আর ভয় করে না আজকাল

কিছুদিন আগেও হারাবার ভয়ে চেপ্টে থাকতাম কবিতার পাতায়
কবিতার গা থেকে একটা একটা করে খোলস ছিঁড়তাম চুপিচুপি
কবিতার মই বেয়ে উঠে পড়তাম ভয়ের মগডালে
ওখানে বসে থাকতে থাকতে , বসে থাকতে থাকতে
ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার সখ হত খুব
সন্ধ্যে নেমে গেলে আবার সেঁধিয়ে যেতাম কবিতার গর্তে

দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে হেঁটে গেছি যতবার
ততবারই রাস্তায় দেখা পেয়েছি এক সারসের
সে তার লম্বা ঠোঁট দিয়ে তুলে দিয়েছে আমার গলার কাঁটা
বদলে ওকে কিছু দিই নি একবারও
এভাবেই একতরফা পেতে পেতে হিমাঙ্কের দিকে চলে যাচ্ছিলাম


একদিন গা থেকে বরফ ঝেড়ে চলে গেলাম সমুদ্রে
নীল নীল ঢেউয়ে ভেসে বেড়ালাম নৌকোর মত
রাতের ফসফরাস জ্বলা ঢেউ আগুন জ্বালিয়ে দিল চুলে
তখন জল ভর্তি আগুন , আগুন আর আগুন
বালির বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে গড়ালাম কিছুক্ষণ
সকালের ফোস্কায় ফুল এঁকে দিল চায়ের কাপ

লিকার-চায়ে স্বাদ পাই না বলে গোরু নিয়ে এলো কে যেন
ওকে খুঁটিতে বেঁধে রেখে চলে গেলাম কলতলায়
ট্যাপের জল ঝর্ণার মত সেজেছিল সেদিন
খুব ঝর্ণা মাখলাম , আতর ভরা বালতিতে জামা ধুলাম
গা মুছে নিলাম সুগন্ধী ধানের তোয়ালে দিয়ে

সেদিন থেকেই দূরত্ব মেপে বাড়ি তৈরীর কাজে হাত দিয়েছি
সেদিন থেকেই আর ভয় পাই না 
সেদিন থেকেই শীতকাল আর বর্ষাকাল এক হয়ে গেছে