শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১২

কবিতা - গোপাল লাহিড়ী

তিনটি কবিতা - গোপাল লাহিড়ী
একবার আমাকে


একবার আমাকে নিয়ে চল ওই লোহাচুল্লীর কাছে
একবার তুই আমাকে চিনিয়ে দে আগুনের হা- মুখ
একবার আমাকে ছুটি দে, একেবারে শেষ বিদায়.
তখন, তখনি উঠে বসব গণগনে আগুনের ওপরে
জ্বলে পুড়ে যাবে একটু একটু করে এই পার্থিব শরীর
এত কষ্ট পাবার পরেও খুঁজব সুখ শান্তির চাবিকাঠি.
তারপর ধীরে ধীরে ওঠাবে আমাকে ঝড়ো হাওয়া
ভেসে ভেসে যাব আকাশের মাথায়, মিলিয়ে যাব দশদিগন্তে
ভুলে যাবে পাড়া পড়শি, কাছের দুরের বড় ছোট মানুষ.
দ্যাখো আমারও তোমাদের অনেক অনেক কিছু বলার আছে
যা যা হবার ছিল তার কোনো হিসেব নিকেশ চাইব না
নিঃস্ব মানুষের মনের কোণে জমে থাকে অনেক অন্য কাহিনি.
হঠাৎএকদিন বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে টুপটাপ ঝরে পড়ব খোলা মাঠে
অনেকখানি সুখ আর অল্প দুখ্খ নিয়ে কাটাব দিনরাত
হয়ত বা জুড়োবে সেই দুখ্খ বিলাপ, সেই শরীর তাপ.
ছোটো ছোটো পাখির সঙ্গে গড়ে তুলব হৃদয়ের গভীর সম্পর্ক
হলুদ সবুজ পাতায় লিখে রাখব আমার সাদা কালো দিনলিপি
বুড়ো বটের সরু সরু ঝুরি হয়ে ছুঁয়ে থাকব আমার পৃথিবী.


লুকোনো কথা


ঝাপসা জাল ফ্রেমে তোমার রঙিন ছবি
ছায়ার চাপ ঠিকরে যেন শ্বেতকরবী
ঘন বৃষ্টি এখানে ঢালে জলের ধারা
এই পৃথিবী কবে থেকেই বন্ধুহারা.
পাঁজরে সুখ জমতে থাকে শীত গ্রীষ্মে
আত্মীয়তা বুঝতে পারি নীলসবুজে
পেতে দিয়েছি ধুলোচাদর ছাদের নিচে
বিকেলে জমে যত আগুন মারাঠাবিচে.
হাত পা মুড়ে বসেই থাক চিরটাকাল
পানাপুকুর শিউলিরাত রংমশাল

নিচু হলেও নজরে আসে ঠোঁটের হাসি
কান্না ভেজা ঘুর্ণিটান পাতার বাঁশি.
সারাটা রাত ঘুমিয়ে আছে চুকিয়ে ঋণ
লুকোনো কথা খুঁজতে হবে রাত্রিদিন.


শেষবিকেলের রংখেলা

 
চল চল তুমি আমি সেই তেজি ঘোড়ার পিঠে উঠে বসি
জোরে জোরে চাবুক চালাই, ভাগ ভাগ জলদি জলদি ভাগ.
দ্যাখো বোকাসোকা মানুষেরা কেমন লজ্জায় মুড়ে যাচ্ছে
যেন লম্বা দীর্ঘশ্বাসের জন্য অপেক্ষা সারাদিন সারারাত.
আমরা বুঝি আঙুলের সুখদুঃখ, বুঝি শেষবিকেলের রংখেলা
ভালোবাসায় অমনোযোগী, অসাবধান কখনো হইনি আমরা.
আমরা একটু একটু ওপরে ওপরে উঠেছি বলে কি হিংসা গো!
মানুষের মন এত নিচু, এত ছোট হতে পারে আগে জানা ছিল না.
এত মুর্খ এরা , পায়ের তলায় পিষে যেতেই যেন জন্ম নিয়েছে
তোরা নরকের পথে যা, জাহান্নমে যা আমদের কিছু যায় আসে না.
জীবনভর সবাই খোঁজে আগুনের বর্ণমালা, সুখ হারানোর গন্ধ
আমরা যা করতে চেয়ে ছিলাম তাই করছি প্রানখুলে সারাজীবন.
টুপটাপ ফুল ঝরছে , পাখিরা গাইছে যেন সেই পুরাতনী গান.
আমরা ছুটে চলেছি দিগন্তের দিকে যদি আরও কিছু পেয়ে যাই.