শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১২

কবিতা - সপ্তাশ্ব ভৌমিক

স্মৃতিকথা
সপ্তাশ্ব ভৌমিক

জরায়ুর কোনো স্মৃতি
শরীর রাখে না
গাঢ় কালো অন্ধকারে
চিহ্ন থেকে যায়
দূর থেকে আরও দূরে
কত দূরে যাবে ?
যতদূরে দৃষ্টি যেতে চায়!
বন্ধ চোখে পলক পড়ে না
স্মৃতি অসহায়।

ছায়া শুধু রাত জাগে
দহের গভীরে
উপরে অনন্ত স্রোত
সময়ের হাত ছুঁয়ে থাকে
প্রিয় স্বপ্ন স্মৃতিকথা
সিঁড়ি ঘরে একা শুয়ে কাঁদে
ওর তো সঞ্চয় নেই
পলে পলে ক্ষয়।

মুঠো মুঠো অলৌকিক
জন্ম নেয় মুঠোর গভীরে
ছেঁড়া ছবি গান হয়ে
উঠোনে দাঁড়ায়
আমি ওকে অপলক দেখি
দেখি ওর কথা সুর তান
স্পর্শ করি
বায়বীয় জীবন্ত শরীর
কিন্তু ও উঠোনে পা ফেলবে না
বাতাসে ভেসে ভেসে
পৌঁছে যাবে
ভিন্ন কোনো ছবির শরীরে
অপরূপ অপরূপ
এই ছবি গান

শাখা আর প্রশাখায়
বেড়ে ওঠে অঙ্কুরিত গাছ
পাতায় পাতায় ওর
সূক্ষ্ম প্রশ্বাস
মাটির ভেতরে
শেকড়
সাম্রাজ্য গড়ে তোলে
কিন্তু ও ছবি হলে
ভাসমান নৌকা মনে হয়
গাছও বাণিজ্যে যায়
বন্দরে বন্দরে
স্বপ্ন তাঁর ডানা
স্বপ্ন আর সমুদ্র অভেদ
হে ঈশ্বর
মাটি কি সমুদ্র হতে পারে!

সিঁড়িঘরে কান্না শুনে
কখনো মেঘেরা ছুটে আসে
অশ্রুকে ধুয়ে দেয়
মেঘেদের জলজ শরীর
আহা মেঘ বিরহকে গানে বেঁধে
অলকায় তুমি গিয়েছিলে
মেঘ তুমি
গান হতে পার
মেঘ তুমি
ছবি হতে পার
মেঘ তুমি
স্বপ্ন হতে পার
মেঘ তুমি
নদী হতে পার
স্মৃতির সরণি ধরে
পৌঁছে যেতে পার সিঁড়িঘরে
তোমার শরীর ছুঁয়ে
আমিও তো মেঘ হতে চাই
কান্না হয়ে ঝরে যাব
ক্ষুধার্ত ধুলোয়
তখনি দুরন্ত মেঘ
ফেলে রেখে একা সিঁড়িঘরে
নিমেষে উধাও

এরপর কতকাল কতকাল
শোক ছুঁয়ে আমি সিঁড়িঘরে
কিন্তু সে মেঘও আসে না
ছবিও আসে না
গানও আসে না
নদীও আসে না
একা আমি একাকিত্বে থাকি
জোড়া পায়ে লাফ দিয়ে
পার হলে যুক্তির সাঁকো
মেঘ বৃক্ষ স্বপ্ন ছবি গান
নিথর পাথর হয়ে যায়
বিপন্ন নদী মুখ ঢাকে
বালুর আঁচলে
স্মৃতিকথা জমা হয়
কাচের বয়ামে

হে স্বচ্ছ কাচ
তোমাকে প্রণাম করি
তোমার নির্মোক নেই
স্পর্শহীন দৃষ্টি
ছুঁয়ে যায় আমার শৈশব
সিঁধ কাটি অন্ধকার ঘরে
নিথর সময় থেকে
খসে পড়ে জীর্ণ বল্কল

জল স্তম্ভন করে
যে ভাবে হ্রদের জলে
ডুবে থাকে একা দুর্যোধন
ক্ষত চিহ্ন দেগে দিয়ে
আমিও ডুবে যাই
স্মৃতির অতলে

জলও দর্পণ হয়ে ওঠে
প্রেতের পোশাক পরে
কে তুমি দু’হাত বাড়াও
আমি ছাড়া অন্য কেউ নেই

ছুটির ঘণ্টা বেজে ওঠে
স্মৃতিকথা ধুলোয় লুটায়।