শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১২

এই সংখ্যার কবি - ইন্দ্রনীল তেওয়ারী

গুচ্ছ কবিতা - ইন্দ্রনীল তেওয়ারী

রাইকে


রাই,

তীব্র আগুন দরকার।
পুড়ে অঙ্গার হওয়ার আগে
অন্তত একবার উজ্জ্বল সোনা হতে চাই। বিষ ঢাল বিষ।

মরে যেতে যেতে


অন্তত একবার চাই নীলকণ্ঠ রূপ।
ঐ মাতাল চোখে ধরো তীক্ষ্ণ কুঠার
ক্ষত বিক্ষত করে দাও বুক।।
প্রেমের ঐশ্বরিক মুহূর্তে পৌঁছনোর আগে
অন্তত একবার রক্ত মাংসের শরীর চাই।

কারা যায়


কারা পাড়া বেড়াতে যায়?

কারা যায় নদীর খোঁজে?
যখন এখনো তোমার ঘরের আগুন নেভেনি।
যখন এখনো দুয়ারে শ্মশান ভর্তি লোক ।
কারা চলে যায় এইভাবে?
কারা যেতে থাকে,
যখন এখনো থালার থেকে ভাত
আর ঘটির থেকে জল গড়িয়ে নামেনি।
চোখ আর অশ্রু; শরীর আর রক্ত দিয়ে
এইতো নিকনো ঘর।
এইসব থেকে যায়।থেকে যায় স্থির।
তারা চলে যেতে থাকে, তারা চলে যায়
নদীর ধারের থেকে কোনো অন্ধকার পাড়ার দিকে।

প্রলাপ


কি আর পড়বেন বলুন!

সব লেখা থাকে না চোখের সামনে।
কিছু চিঠি ফেলে আসা ডাকঘরে,
কিছু এস এম এস আঙ্গুল ছুঁয়ে
জলের ভেতর ঢুকে যায়।
অথচ দেখুন কি মুশকিল,
জলের রঙ হয় না,জলের রঙ হয় না!

প্রলাপ


এখনো কিছু ক্ষণ কথা বলে যাবো।

এখনো মদের গেলাস ফাঁকা হয়ে যায় নি।
জানো, ওরা বলে, কথা আর খবরের শেষ হয় না।
ওরা কি আমাদের খবর জানে?
এই মুছে যাওয়া, এই বিলকুল খতমের কথা?
এখনো... এখনো কিছু... এখনো কিছুটা...
বেশ ।ওরা যা বলে বলুক, তুমি এবার চোখ বন্ধ কর।
আমি আমার হৃদয় বন্ধ করে আসি।

রাতের কবিতা (গনিকার প্রেমিক)


তুমি পূর্ণিমার মতো উজ্জ্বল হবে বলে,

বারবার অমাবস্যার চৌকাঠ পেরিয়ে এসেছি।
খুলেছি বহুবার শরীর থেকে
সমস্ত অন্ধকার।
অদ্ভুত ঝোঁকে খুঁড়ে খুঁড়ে খুঁজেছি
অপূর্ব জ্যোৎস্না।
সমস্ত চরাচর জুড়ে শিশির
ঝরা শেষ হয়ে গেলে,
কলঙ্কের মতো ঘুমিয়েছি ভিতরে-বাহিরে।

রাতের কবিতা


কবিতার রাত নামে,

ঐ রাতের আকাশে।
তরল সব আঁধার মিশে মিশে যায়
রাতের কবিতায়।
ঝরণার মতো খুলে খুলে পড়ে
টুপটাপ সব ছন্দ।
আদরে আদরে সোহাগি চাঁদ হাসে।
নিষিদ্ধ ভয় ঐ হোঁচটে, হোঁচটে।
তীব্রতা বাড়ে সব শরীরে, শরীরে।
সোহাগের গায়ে জমে ঘাম।
গরম সব ভালোবাসা
গলে জল হয়ে গেলে
আকাশের গায়ে শুয়ে থাকে
কিছু ঘন- জমাট রাতের কবিতা।

শারীরিক


চুমু খেতে শুরু করলে

তুমি চোখ খোলা রাখার কথা ভুলে যাও।
হয়তো মনে মনে দেখো
পিতার প্রশান্ত মুখ;
কৃষ্ণ ঠোঁট চুষে চুষে
সিক্ত হয় রক্ত যোনী।
আর আমার ব্যস্ত
আঙ্গুল খোঁজে
তীব্র মাতৃস্নেহ রস।

খাবার-১


আমাদের জানা নেই।

জানা নেই ,কিভাবে ভাত
বাড়তে বাড়তে, ওরা
অবলীলায় উঠে চলে
যায় কুয়াশার দিকে।
আমাদের খালি চোখ
ক্ষয়ে যেতে থাকে।
দিন কাটে, রাতও। হয়তো বা জীবনও
ছেঁড়া টুকরোর মতো
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে
শূন্য আসনের আশে পাশে।
আমাদের ঠাণ্ডা উনুন,বেআব্রু থালা,
আমাদের আদিম বিলাসিতা,
বিশুদ্ধ কবিতার মতো অপঠিত থেকে যায়।

খাবার-২


ওরা ফিরে আসুক।

ওদের খাবার থালা,জলের ঘটি,
আম কাঠের পিঁড়ি,
এখনো দুয়ারে দাঁড়িয়ে।
ওরা ফিরে আসবে বলেই খাবার জেগে আছে।

খাবার-৪


যে কোন খাবার থালাই

সুঘ্রাণ বয়ে আনে।
যেন কোন সুমিষ্ট স্বপ্ন;
অযুত অন্ধকারের পর।
আমাদের দিন কাটে রাত্রির খোঁজে।
রাত কাটে আগুনের আড়ালে আড়ালে।
আমাদের খাবার জোটে না।

2 comments:

Banibrata বলেছেন...

ফাটাফাটি লিখছো হে নীলেন্দ্রনাথ!
আগের থেকে ভালো হচ্ছে আমার মনে হয়
বিষয় অনেক অন্যরকম ভাবনাঘরও উন্নত -
এভাবেই ধরে থেকো বন্ধুত্বের হাত...

Preetha Roy Chowdhury বলেছেন...

দারুণ... দারুণ... আর দারুণ।