শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১২

কবিতা - ধুলোবালি

ধুলোবালি’র কবিতা

কোথাও না কোথাও

কোথাও না কোথাও মিলে যাবে চিরহরিৎ শ্লোকের মতো দীপ্যমান সাদা উত্তর।
কোথাও না কোথাও; পা চালাও, পথের কিনারে, ঘরের মিনারে, মনের বিহারে-
জলতরঙ্গের ত্বকে হেঁটে হেঁটে-- সান্দ্রতা উপেক্ষা করে, ধীরে; তার বুকের উষ্ণ
শিশিরের মাধুকরী হয়ে অস্তমিত হয়েছিলাম অপূর্ব পূর্বের তটে। আমাকে
ধুলোর আঁখরে শুয়ে থাকতে বলে ঘুমিয়ে পড়েছে পরিস্রুত সৃষ্টির স্বর।
হাজারে হাজারে উত্তর মধ্যমুখী ট্রেনের লাল কামরায় উঠে পেরিয়ে গ্যাছে সীমার
চৌকাঠ; বচনবাণিজ্যের অভিলাস মুগ্ধ করে রেখেছে তাকে, বাণীবিন্যাসের
মেধায় উষ্ণতার বিকিকিনি হয়েছে নিঃসঙ্গতার শীত সরিয়ে দিতে দূরে।
বিছানাকে তীর্থসার জেনে নারী আর পুরুষ উত্তর খুঁজে হয়রান হয়ে মাটির
প্রসবের কিংবদন্তী শুষে নেয় শেষে। দীপ্যমান সাদা উত্তর, চিরহরিৎ শ্লোকের মতো
মিলে যাবে, কোথাও না কোথাও-- বিশ্ব কিংবা বিন্দুর প্রখর অন্তরে।


বিষদাঁতের নিচে

দংশনের সাথে সাথে কালকেউটের তীব্র বিষ আত্মস্থ করে বরং তার দাঁতে ফিরিয়ে দিয়েছি আজন্মের এক ধারালো যন্ত্রণা। সন্ধ্যার পর থেকে আমার সাথে নির্বিরাম কথা বলে চললো সুমহান বটবৃক্ষের হাজার হাজার পাতা। তাদের সবটুকু বিদ্রোহ-উচ্চারণ-বিকার শুষে নিয়েছি আপন শিরায়; তারা অন্তঃক্ষারী আহ্বানে জিজ্ঞাসার সমস্ত শ্মশান পুড়িয়ে দিয়েছে, মানুষের মরদেহ যাতে আর সৎকাররূপী অসৎকাজে লুকোতে না পারে। সাদা সাদা পায়রার পায়ে শহরের শেষ শোক যাদুকরী শ্লোকের মতো, যাকে আহাজারি নাম দিতে তোমাদের ঠোঁটে ওঠে বিদ্রোহের ঝড়- নিয়ত আমার দিকে চেয়ে হেসে হেসে নিভে যায় জাগ্রত ভূমির ভেতর। আমি সমস্ত প্রান্তিক ইতিহাস আকাশের উদোম গায়ের পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে দিয়ে সমস্ত ক্ষুদ্র-ছোট গল্পদের মিশিয়ে দিয়েছি কাহনের ধুলোকণার অখণ্ড অর্ধাংশে; সব নিম্নবর্গদের রক্তে মিলিয়ে দিয়েছি সকল সূর্যের ভরবেগ, যেন তারা হয়ে উঠতে পারে সমস্ত সালোকসংশ্লেষণের অনিবার্য রসদ।
স্টাইলাস হাতে ট্যাবলেট স্ক্রিনে লিখে রাখি গণিতের ক্লাসের সবগুলো নোট; সব্বাই চলে গেলে সত্যেন বোস কাঁধে হাত রেখে বলে যান- একটি পরমাণুর সূক্ষ্ম নিগড়ে বেদনার সব চারা রুয়ে দিয়ে ক্ষান্ত রাত্রির আগাম খবর নিয়ে ফিরে গেছে বজ্রাহত মন। কচুর পাতার উপর টলমল জল শুয়ে শুয়ে ভোরের শান্তিহীনতার নাট্যরূপ দেখে দেখে অবশেষে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে- পড়ে ঐ মাটির উপর; মাটি তাকে শিকড়ের শ্লোগানের সব ভাষা বলে; অনেক অদূরে নিভৃত চরাচর ছলাৎছল সারাৎসারে তাকে মিশিয়ে দেয় বীজের আসন্ন উৎসবে; ধানের শিসে, জরায়ুর প্রকোষ্ঠে, ফসলের ধারণে দানার আদলে আসলে জমা হয় এক চিলতে আশা; আশার চেয়ে প্রখর কোন খনিজ এখনো চেনেনি মন। আমি অন্ধকারে, অ-অন্ধকারে খুঁজে চলি মোক্ষম সেই পরমাণু, সত্যেন বোসের কথা মনে করে। ধরিত্রীর জরায়ু ফুলে ফেঁপে কেঁদে ওঠে জঞ্জাল, বর্জ্য আর আণবিক গরলের উত্তাপে পুড়ে যেতে যেতে। মানুষ তবু কি তাঁর প্রকৃত ধর্ম বুঝতে পারে? দেখতে পায়? উত্তর অপেক্ষা করে হিংসান্ধ কালসাপের বিষদাঁতের নিচে।