শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১২

কবিতা - কৌশিক গুপ্ত

কৌশিক গুপ্তের তিনটি কবিতা
অন্ধকারের মুখ

আলোকস্রোতার মত ও যখন ছুটে এসে সামনে দাঁড়ায়
ঠিকরে বেরোতে থাকে দ্যুতি সর্ব অঙ্গ থেকে, সপ্তবর্ণী ধাঁধা
প্রাবল্য সামলে নিয়ে দেখি ওর নির্বিকার মাথার পিছনে
এতদিন একসাথে বড় হওয়া সঙ্গী অন্ধকার
কতদূর হাত ধরে এসেছে এবার, শেষ কোন্‌ স্তরে তাকে
একা ছেড়ে গেল, ঠিক সেই বিন্দুটিতে লক্ষ্য করি ক্ষণস্থায়ী
মৃদু দৃশ্যমান জলে পাতলা অন্ধকারের ফুটে ওঠা মুখ
কী আঁকা রয়েছে তাতে? স্পষ্ট অভিযোগ নাকি প্রসন্ন সম্মতি?
ঘুমিয়ে পড়লে বুকে বর্ণচোরা শ্বাসেদের বারোমাস্যা শুনি
গোপন দরজা ঠেলে বাইরে লাফিয়ে পড়া শিশুটিকে নিয়ে
উঠোনের ধাপে বসি, সপ্তর্ষিমন্ডল সাক্ষী থেকে যায় শীর্ষে
যেখানে ফ্লাডলাইটে চেরে না গলির নাড়ি জুড়ে বয়ে চলা
অকৃত্রিম মধ্যরাত, প্রণয়ী তিমির তার নিবুনিবু আলোর আশ্লেষে
যৌবনযাপন করে সমস্ত জীবন, কোনো সূক্ষ্ম ক্যাকটাস
গজিয়ে ওঠার ভুল করেনি এখনো দুঃসাহসে
দুজনের অধরের মাঝে, সেই রাস্তা দিয়ে দ্রুতগামী বাস
উন্মুখ ফুলের গুচ্ছ তছনছ না করেও চলে যেতে জানে --
আমার ঘরের যত জানলা সে পথে রোজ ভোর হতে দেখে
ওর শিয়রের কাছে একে একে সবকটা বড় করে খুলে দিয়ে যাই ।

সমর্পণ

কপালে এঁকেছি চুমা, আবার কর্ণকে রেখে আসি একা একা
প্রব্রাজিকা জাহ্নবীর ঘুমন্ত বুকের কাছে প্রদীপে চন্দনে
এ যুগে নিশ্চিত কোনো রাধা নেই তীরে ওকে আশ্রয় দেবার
অনাথেরও নেই কোনো বিধিলিপি, ধূলিকণা হয়ে লুপ্ত হবি
পরিচয়হীন পাতা হয়ে বুদবুদ খুঁজে সঙ্গী পাবি ঠিক
শহরের জমা জল যেভাবে উঠোনে স্তব্ধ ওলটপালটে
প্রশ্ন করে কয়েদের অর্থ, দূষণের পাশে শুয়ে জীবন্মৃত
শুকনো গাঁদার মালা বিস্মৃত ধুনোর গন্ধ বুকে দেখে যায়
খড়ের কাঠামো ভেসে গেল বহুযুগ আগেকার
বিসর্জিত প্রতিমার প্রেত, বার্ধক্যের শয্যাতলে
অন্ধচোখ ধার ঘেঁষে পড়ে থাকে, তাড়া দেয়া বৃথা --
পথের কুকুরও চেনে বন্ধুহীন ভিখারর মন

অভাবিত ম্যানহোল খুলে গেলে একদিন জলস্তর নামে
ভিজে আস্তাকুঁড়ে কার সর্বনেশে অর্ধেক উত্তর
কালবৈশাখীতে ভাঙা ছোটো ডাল গলিয়ে দিয়েছে
গর্তের ভেতর কবে তার শীর্ণ উপশাখা, হাপিত্যেশ করে
অভিশপ্ত বাকি দেহ আজীবন মূর্খের বিশ্বাসে --
যতক্ষণ না পোড়াবে তাকে, অনাথের মুক্তি নেই চিতাতেও ।

বুদবুদ

সিঁড়িতে নামতে গিয়ে দেখেছি লেটারবক্সে চিঠি ফেলে দিয়ে
ফিরছে পিওন, সাড়া আসবে ওপার থেকে যত দেরি হোক
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে, পাহাড় পেরিয়ে পাল্টা গুলির আওয়াজ
আজ যদি দিশাহারা ব্ল্যাঙ্কফায়ারের দিকে শর্তহীন হাত
তুলে ধরে, বুদবুদ ভেসে আছে স্থির হয়ে দৃষ্টির সম্মুখে
স্পর্শে যেন ফেটে যাবে, রঙীন গোলক হাল্কা কিরণছটায়
আগে আগে হেঁটে চলে, সঙ্গী হয়ে থাকো সারাক্ষণ
ইনজেকশনে ভরে নেব সূক্ষ্ম বর্ণলীলা সূর্যছেঁচা রক্তে
প্রতিটি সেকেন্ডে যত নুড়ি বিনা আর্তরবে থেঁতলেছে পায়ে
বিন্দু বিন্দু জ্যোতি ছিটে কাঙালের তোবড়ানো চোয়ালের পাশে
না হয় গোধূলিটুকু বাঁচো, সন্ধ্যা জুড়ে রেখে যাও অবিরল
বিকীর্ণ বিস্ময়ঘোর, অর্ধস্বচ্ছ পাতলা কাঁচের
অনিশ্চয়তায় বুনে নিতে চাই মনোরম শিফন-আঁচল
জানি না রয়েছে কিনা ঘটভরা দশমীর শেষ শান্তিজল
স্নাত হয়ে ফিরে আসা গতানুগতিকে পুনরায়
বিসর্জনলগ্ন তবু বিলম্বিত হোক আরো, আরো
ভৈরবীর রেশটুকু নীরব শৈবাল থেকে কণায় কণায়
প্রাণপণে আগলাই, ছন্দপতনের ভয়, ভুল শব্দে বুঝি
বুদবুদ ফেটে যায়, ঘরে ঘরে দেয়াল সাজাই
না-খোলা চিঠির সব কল্পিত অক্ষরে, দূর নিরুদ্দেশ গন্ধ
তোমার মানসরূপ ধরে কাছে আসে, রাস্তা পার করে দেয়।

4 comments:

ঘনাদা বলেছেন...

বাঃ ! বেড়ে বেড়ে

kaushik বলেছেন...

kichhu correction kare dile bhaalo hay, Jerakam aamaar paaThaano lekhaay chhilo-

1. budbud kabitaay 6 nambar laaine 'কিরণছটায়' হবে, 'কিরণচ্ছটায়' নয়.

2. samarpaN kabitaay pratham stabake sheshh laaine 'ভিখারীর' হবে,

খেপচুরিয়ানস্ বলেছেন...

কারেকশন দুটি করে দেওয়া হল। ধন্যবাদ।

খেপচুরিয়ানস্ বলেছেন...

কারেকশন দুটি করে দেওয়া হল। ধন্যবাদ।