মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

প্রতিবেদন - আবদুর রহমান রানা

বাংলাদেশের খাদ্য সংকট নিরসনে কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনা
ম. আবদুর রহমান রানা


১৪৭৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট একটি দেশ, বাংলাদেশ। দেশটিতে ১২ কোটি ৯২ লক্ষ লোকের বাস যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে ৮৭৫.৫ জন (বিবিএস, ২০০১)। এ ক্ষুদ্র আয়তনের দেশটির অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ জুড়ে রয়েছে জলাশয়, পাহাড় ও বনভূমি এবং যা একটি দেশের পারিবেশিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যকীয় হিসাবে কাজ করে, যদিও তা বাংলাদেশের পেক্ষাপটে অতি নগণ্য একটি অংশ মাত্র। বিবিএস ২০০১ হতে প্রাপ্ত তথ্যানূযায়ী দেশটির ৮.০৮ মিলিয়ন হেক্টর (মাথাপিছু ৬২৫ বর্গমিটার) নেট কৃষি জমি। ২০০১ এর আদম শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৪১% ধরে প্রতি বছর ১ কোটিরও বেশী জনসমাগম হচ্ছে বলা যায়। এবং এ হিসাবে দেশটির বর্তমান মোট জনসংখ্যা কমপক্ষে ২০ কোটিরও বেশী। এ হিসাবে দেশটিতে বর্তমানে মাথাপিছূ কৃষি জমির পরিমাণ ৪০০ বর্গমিটারেরও কম। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, নিপোর্ট এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৭০ সালে এদেশের জনসংখ্যা ২২ কোটিতে দাঁড়াবে (দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৬, ২০০৯) যা নিতান- প্রলাপ ব্যতীত আর কিছুই নয়। তদুপরি বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন ও সমূদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং জোয়ার-ভাটা প্রবণ নদীসমূহের ঁঢ়ংঃৎবধস পর্যন- পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে পানি ও মাটিতে লবণাক্তার প্রকোপ ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়ায় এসব এলাকায় কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। যার প্রমাণ স্বরুপ বলা যায়, ২০০৯ এর বোরো মৌসুমে চট্টগ্রামের আনোয়ারা, পটিয়া, বাঁশখালী উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির বোরো উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যাহত হয়। এছাড়াও ফি বছর বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগে উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমির কৃষি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে কক্সবাজার, চকরিয়া, মহেশখালী, সাতক্ষীরা, খূলনা ও বাগেরহাটে উপকূলীয় বনাঞ্চল ও কৃষিজমি ধ্বংস করে লবণাক্ত পানিতে (যদিও কোথাও কোথাও মিঠা পানির চিংড়ি চাষ এবং সমন্বিত চিংড়ি ও ধান চাষ হচ্ছে) চিংড়ি চাষের মহড়া চলছে। এতে একদিকে যেমন মারাত্মক ভাবে বিপর্যস- হচ্ছে দেশের উপকূলীয় পরিবেশ অন্যদিকে চাপ বাড়ছে দেশের শস্য নির্ভর কৃষি উৎপাদনের উপর, সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সংঘর্ষ। এতে হয়ত দেশের মুষ্টিমেয় কতিপয় ব্যক্তির হাতে কাঁচা বৈদেশিক মূদ্রার সমাগম হচ্ছে কিন' আর্থিক দৈন্যতা ও খাদ্য সংকটে পতিত হচ্ছে দেশের লাখ লাখ উপকূলীয় সাধারণ প্রানি-ক চাষী। এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে প্রচুর অর্থ থাকলে খাদ্য ক্রয় করে খাদ্য সংকট নিরসন করা সম্ভব নয় কি? স্পষ্ট উত্তর হতে পারে ”না”। যার প্রমাণ হিসাবে বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় কালকে উল্লেখ করা যেতে পারে। ছোট্ট আরো একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হতে পারে। বিগত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময়ে এক নিকট আত্মীয়কে নিয়ে দুপুর ১.৩০ ঘটিকার সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু করে কোন একটি খাবারের দোখান, ক্যান্টিন কিংবা ঝুপড়িতে দুপুরের ভাত পাওয়া যায়নি। যদিও ভাতের প্লেট ৫০০.০০ (পাঁচশত) টাকা হরেও কিনে খাওযার মত অর্থের সংস'ান সে মুহূর্তে ছিল। সুতরাং খাদ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলে কোন ক্রমেই তা দূর্মূল্য দিয়েও পাওয়া সম্ভব নয়। যার আরো একটি হতে পারে বাংলারে ১৩৫০ সালের দূর্ভিক্ষ। দেশের বিস-ীর্ণ দ্বীপ জনপদ যেমন হাতিয়া, সন্দীপ, কুতুবদিয়া এবং বেশীর ভাগ নদীসমূহের তীরবর্তী অঞ্চল ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রতি বছর হারাচ্ছে ৮৮ হাজার একর (৩৫২০০ হেক্টর) কৃষি ও বসতি জমি (বিবিএস, ২০০১)। এতে একদিকে দেশ হারাচ্ছে বিশাল কৃষি ভূমি অন্যদিকে উদ্বাস' হচ্ছে দেশের লাখ লাখ মানুষ। এ সকল উদ্বাস-ু মানুষজন ভিড় জমাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো নগরীসমূহে এবং সৃষ্টি করছে আর্থ-সামাজিক ও পারিবেশিক নানাবিধ সমস্যা। বাংলাদেশ নদীমাতৃক একটি দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রক্ষ্মপুত্রের মতো বড় নদী ছাড়াও নারায়ণগিরি, করমাই, সত্তা, জুরী, পিয়ানগাং প্রভৃতি ছোট নদীসহ দেশটির উপর দিয়ে ৭৫০ টিরও অধিক নদ-নদী জালের মত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যদিও বর্তমানে নদী খেকোদের কবলে পড়ে এবং প্রাকৃতিক কারণে প্রবাহ হারিয়ে অনেকগুলো নদী মৃত এবং মৃতপ্রায় যার অন্যতম বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ইছামতি, ছোট যমুনা, করতোয়া, সাগরদাড়ি, গুমতি ইত্যাদি। এ নদীসমূহের পায়ই প্রত্যেকটি কোন না কোন ভাবে হিমালয় হতে উৎপন্ন হয়ে ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে সুবিশাল অববাহিকা তৈরী করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এ সকল নদীসমূহ বর্ষাকালে বিশাল জলরাশি বয়ে এনে বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন মাত্রার বন্যা ঘটিয়ে থাকে। তাই প্রতি বছর কমপক্ষে বাংলাদেমের ২৫ ভাগ জায়গা বন্যা দ্বারা প্লাবিত হয়ে থাকে। এবং কখনো কখনো তা দেশের ৬০-৭০ ভাগেরও বেশী এলাকা প্লাবিত করে থাকে যেমন ১৯৮৮, ১৯৯৮ এর দীর্ঘ মেয়াদী বন্যা। যদিও পূর্বে দেশে দীর্ঘ সময় পর পর একটি ধ্বংসাত্মক বন্যার আবির্ভাব হতো ইদানিং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রায় প্রতি বছরই দেশটি দীর্ঘ মেয়াদী ধ্বংসাত্মক বন্যা দ্বারা প্লাবিত হচ্ছে। এতে করে প্রতি বছরই দেশটির বিশাল আয়তনের শস্য ভূমি বন্যায় আক্রান- হচ্ছে এবং দেশের খাদ্য সংকটকে আরো ঘনীভূত হরছে। অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাসমূহ যেমন রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ইত্যাদি মারাত্মক কৃষি খরার সম্মুখীন যদিও ইদানিং কালে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভূ-গর্ভস' পানি সেচের মাধ্যমে একধরনের তথাকথিত সবুজ বিপ্লব চলছে। কিন' যথেচ্ছ হারে ভূ-গর্ভস' পানি উত্তোলনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশ বিপর্যয় মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এখানে নীলফামারী জেলার ডুমুরিয়া ও ডিমলা উপজেলার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ দুটি জেলায় কৃষি খরার প্রভাবে কৃষি উৎপাদন বর্তমানে প্রায় শূন্যের কোটায়। উপরোল্লিখিত কারণসমূহ প্রাকৃাতক যদিও কোন না কোন ভাবে মানব কর্মকাণ্ড এগুলোকে ত্বরান্বিত করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে এবং বাংলাদেশের কৃষি তথা কৃষি ব্যবস'া ধ্বংস এবং খাদ্য সংকট তৈরীতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এ সকল প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও নানাবিধ মানব সৃষ্ট কারণ রয়েছে যেগুলো কৃষি জমি ধ্বংস এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। এর অন্যতম অপরিকল্পিত উপায়ে অবকাঠামো উন্নয়ন। বাংলাদেমের গ্রামীণ জনপদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যায় বিভিন্ন কারণে অকারণে একটি মাত্র পরিবারের বাসস'ানের জন্য বিশাল বিশাল আবাদী জমি ধ্বংস করে বাড়ি-ঘর তৈরী করা হয়েছে যেখানে অনায়াসে ৮-১০ টি পরিবারের বাসস'ান গড়া সম্ভব। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আবাদী জমির উপর দিয়ে দীর্ঘ রাস-া তৈরী করে বিলের মাঝে একটি ছোট্ট বাড়ি তৈরী করা হয়েছে যা বিশেষ ভাবে নোয়াখালী অঞ্চলে পরিলক্ষিত হয় সবচেয়ে বেশী। এছাড়াও কোন চৌরাস-ার মোড়ে কিংবা কালভার্ট এবং বিশেষ কোন স'াপনা যেমন মাজার, মসজিদ, মন্দির, কেয়াং ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বাজার ব্যবস'া। যদিও এ সকল হাট-বাজারের অদূরবর্তী স'ানে রয়েছে বিশাল বিশাল হাট-বাজার। যেমন নোয়াখালী জেলার নদী ভাঙ্গন প্রবণ দ্বীপ জনপদ হাতিয়া উপজেলার ১৫০৮.২৩ বর্গ কিলেমিটার (রানা, ২০০৭) এলাকার মধ্যে রয়েছে ২৭১ বড় ও মাঝারি আকারের হাট-বাজার (যদিও বর্তমানে এর বিশাল এলাকা নদী গর্ভে বিলীন)। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট হাট-বাজার ও দোখানপাট বিভিন্ন স'ানে স'ানে। এখানে গড়ে ১০৬৬ জনেরও কম জনসংখ্যার জন্য (মোট জনসংখ্যা ২৯৫৫০১ জন) রয়েছে একটি বড় ও মাঝারি আকারের হাট-বাজার। এ সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী যার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তাই ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায় অনেক হাট-বাজারে দিনের বেলায় তো জনসমাগম হয়ই না, সাপ্তাহিক হাটের দিনেও জনসমাগম খুবই কম চোখে পড়ে যার অন্যতম চেয়ারম্যান বাজার, সুখচর বাজার, দাশের হাট, খবির মিয়ার হাট, খাশের হাট ইত্যাদি। গ্রামাঞ্চলে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, কয়েক শতাংশ এবং কোথাও কোথাও বিঘা পরিমাণ জমির উপর এগুলোর অবস'ান এবং প্রায় ক্ষেত্রে কৃষি জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে এ সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ। সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধর্মীয় উপাসনালয় গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের পথে পথে। ২০০৪ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় হাতিয়ার নলচিরা ইউনিয়নে (বর্তমানে নদী ভাঙ্গার কারণে ইউনিয়নটির অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই) ৭৯ টি মসজিদ ও ৭ টি মন্দির রয়েছে। এ সকল উপাসনালয়গুলো একদিকে যেমন গড়ে উঠেছে কৃষিজমির উপর অন্যদিকে বৃক্ষ আচ্ছাদিত হওয়ায় এর চৌহদ্দির সীমানায় বেশ পরিমাণ জমি বার মাসই থেকে যায় অনাবাদি। এছাড়াও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে অপ্রয়োজনীয় রাস-া, খাল ইত্যাদি। কোথাও কোথাও একই রাস-া পূর্বের রাস-াটিরই পাশ্ববর্তী কোন আবাদি জমির উপর দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ক্ষমতা ও বিত্তের প্রভাব প্রমাণের খাতিরে। তেমনই একটি রাস-া চকরিয়া পৌরসভা হতে মহেশখালী (বদরখালী) যাওয়ার রাস-াটি। ইলিশিয়া নামক স'ানে ক্ষমতার দাপট প্রমাণের জন্য এবং অন্যের আবাদি জমি ধ্বংস করার জন্য প্রায় বিঘা খানেক জমি নষ্ট করে পূর্বের অবস'ান হতে সরিয়ে বাঁকা করে তৈরী করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে আরেক উপদ্রব হিসাবে দেশে আবির্ভূত হয়েছে ইউক্যালিপ্টাস বন-বাগান। এ বৃক্ষটি একদিকে যথেষ্ট পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে অন্যদিকে ধ্বংস করছে কৃষি জমি। গ্রামাঞ্চলে নিরক্ষর/স্বল্প শিক্ষিত মানুষগুলো সরকারের ভ্রান- নীতিতে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় গ্রামীণ কৃষি সম্পদ ও কৃষি জমিকে ধ্বংস করে এ বন-বাগান করে যাচ্ছে দেদারসে। এ প্রসঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা বগুড়া প্রণিধানযোগ্য। বগুড়ার কাহালু, সদর, সোনাতলা, শাহজাহানপুর উপজেলা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সকল উপজেলায় বিশাল বিশাল ইউক্যালিপ্টাস বন-বাগান পরিলক্ষিত। এ বৃক্ষটির পত্রে একরকম পত্ররন্ধ্র না থাকায় গাছটিতে প্রস্বেদনের হার প্রায় অনুপসি'ত বললে অত্যুক্তি হবেনা। তাই এ বৃক্ষ দ্বারা আচ্ছাদিত এলাকার চারিদিকে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের উপসি'তি খুবই কম থাকে। যার ফলে বায়ু অত্যধিক উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে এ গাছ মাটির ভূ-গর্ভস' স'ান থেকে পানি শোষণ করে বলে মাটি শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং এর চারিদিকে অন্যান্য ছোট লতা-গুল্ম ইত্যাদি এর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মরে যেতে বাধ্য হয়। তাই যেখানে এ ধরনের বন-বাগান রয়েছে সেখানে অন্য গাছের অনুপসি'তি বেশ চোখে পড়ার মতো। বগুড়া সদর উপজেলার পল্লীমঙ্গল ইউনিয়নের শাকেরকোল গ্রামের অধিবাসীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায় এখানে আগে যেখানে ১৫-২০ ফুট গভীর হতে টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যেতো বর্তমানে সেখানে পানি স-র নীচে নেমে যাওয়ার কারণে ৭০-৮০ ফুট গভীর হতেও পানি পাওয়া যায় না। আমার বিশ্বাস এ সমস্যা অদূর ভবিষ্যতে আরো প্রকট আকার ধারণ করবে এবং এতে করে এসব অঞ্চলের কৃষি ব্যবস'া আরো গভীর সংকটে পতিত হবে। এছাড়াও জমির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে বিভক্তি কৃষি জমি হ্রাসের আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জমি বিভক্তির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে সমান তালে। যাতে করে জমি বিভক্তির সীমানা নির্ধারণে গড়ে তোলা জমির আইল বিশাল আয়তনের কৃষি জমিকে গ্রাস করে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। তদুপরি আরো একটি বিষয় পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, যে সকল জমি কৃষি উৎপাদনের দিক থেকে গুণগত মান সম্পন্ন সে সকল জমিগুলোর উপরেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলে সবচেয়ে বেশী। এতে করে দেশ হারাচ্ছে দু-ফসলি ও তিন-ফসলি ভালো মান সম্পন্ন কৃষি জমি যা বাংলাদেশের স্বল্প ভূমি সম্পদের জন্য বিশাল একটি হুমকি।